আমীরে জামা‘আতের স্মৃতিচারণ : (১) ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত রাবি যোহা হলে এসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর থাকাকালে একই খুলনা যেলার মানুষ হিসাবে তিনি একদিন এসে আমার সঙ্গে হল কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর অর্থনীতি বিষয়ে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উপর গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি আরবী শিখতে চান। এই উদ্দেশ্যে তিনি একাধিকবার হলে এসেছেন। এভাবে তার সাথে আমার বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
(২) তিনি আমাদের গবেষণা মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় বিশেষ করে অর্থনীতির পাতার নিয়মিত লেখক ছিলেন। অক্টোবর ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তাঁর মোট ২৬টি লেখা প্রকাশিত হয়। অতঃপর ২০১৩ সালে তার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তাঁর বর্ণনা মতে উক্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে ইসলামী ব্যাংকের এমডি তাঁকে ফোন করে বলেন, স্যার! আপনি ইসলামী ব্যাংক শেষ করে দিলেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন, তোমরা এর জবাব লেখ। আমি তাহরীক সম্পাদককে বলে তোমাদের জবাবটি সেখানে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু তারা জবাব লেখেনি। তাঁর সব লেখনীই ছিল নিঃস্বার্থভাবে। অসুস্থ অবস্থায় ২০১৬ সালে নওদাপাড়া মারকাযে অনুষ্ঠিত লেখক সম্মেলনে তিনি আত-তাহরীকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব সমূহ পেশ করেন। আমরা সাধ্যমত সেগুলি পূরণ করার চেষ্টা করছি।
(৩) ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ থেকে ২০০৯ সালে তাঁর ‘সূদ’ (বাংলা) বইটি প্রথম বের হয়। অতঃপর ২০১২ সালে ইংরেজী সংস্করণ বের হয়। যার প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে। বইটি লেখক হাফাবা-কে দান করে যান। সবশেষে তাঁর দেওয়া তথ্য মতে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সঊদী ধনকুবের শেখ ছালেহ কামেল-এর ১৯৯৭ সালে জেদ্দায় প্রদত্ত ভাষ ণ ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয়। অতঃপর ‘সূদমুক্ত’ ব্যাংকিং কি সম্ভব? এ মর্মে তাঁর সাক্ষাৎকার সহ ‘সূদ’ বইটির ৩য় সংস্করণ বের হয়। যা মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্বে তাঁর হাতে পৌঁছানো হয়। তাতে তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং তাঁর বড় মেয়ের ভাষ্য মতে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৩ সালের ১৩ই মার্চ ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর তিনি ১৯৮৪ থেকে একবছর বাদে ২০০৭ পর্যন্ত ২৩ বছর ইসলামী ব্যাংক শরী‘আহ বোর্ডের সদস্য ছিলেন (ঐ, মোবাইলে বক্তব্য ০৪.০৩.২০২৩ ইং)।
(৪) তিনি আমাদের সাথে অনেকগুলি সম্মেলন ও সুধী সমাবেশে যোগদান করেন। (ক) ২০০০ সালে তাহেরপুরের বাছিয়াপাড়া সম্মেলনে যাওয়ার সময় রাবি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার থেকে স্বভাব সুলভ হাফ শার্ট পরে টুপী বিহীনভাবে বের হয়ে আসলে আমি তাকে পুনরায় বাসায় ফেরত পাঠাই এবং পায়জামা-পাঞ্জাবী ও টুপী পরে আসতে বলি। বেশ দেরীতে ফিরে এসে বললেন, আসলে ঈদের দিন ছাড়া তো এ পোষাক পরা হয় না। তাই খুঁজে পেতে দেরী হ’ল। অতঃপর গাড়ীতে বসে বললেন, আমার অভিজ্ঞতায় বলে, এদেশে ইসলামী বিপ্লব কেবল আপনাদের মাধ্যমেই সম্ভব হবে। কেননা আপনারা কথায় ও কর্মে স্বচ্ছ ও বাস্তববাদী।
(খ) পরের বছর ২০০১ সালের ৫ই জুন সিরাজগঞ্জ শহরের ভাসানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে সূদের বিরুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ শুনে উপস্থিত জাসদ থেকে আসা সচেতন কর্মী দাঁড়িয়ে বলেন, সূদের উপর যদি স্যার বই লিখেন, তবে সেই বইটি ছাপার জন্য আমি ১ লক্ষ টাকা দেব। পরে সেই টাকা দিয়ে হাফাবা থেকে তাঁর ‘সূদ’ বই প্রকাশ করা হয়।
আজ তাঁর মৃত্যুর পর আমাদের সঙ্গে তাঁর সোনালী স্মৃতিগুলি বারবার ভেসে উঠছে। আত-তাহরীকে প্রকাশিত তাঁর সমস্ত লেখনী এবং বিভিনণ সমাবেশে তাঁর দেওয়া ভাষণ সমূহ তাঁর জন্য ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ হিসাবে আল্লাহ কবুল করুন এবং আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন- আমীন!।