রাত মানেই অনেকের কাছে বিশ্রামের সময়। অনেকের কাছে আবার রাত এক বিভীষিকার নাম। অনিদ্রায় ভোগা মানুষদের কাছে রাত এক কৃষ্ণগহবর। যার শুরু আছে, শেষ নেই। সারা রাত এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে দেন। দুই চোখের পাতা এক করতে পারেন না। ঘুমের ব্যাঘাত জীবনের গুণগতমানকে ব্যাহত করে। দিনের পর দিন যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তবে নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বাড়ে, মনোযোগ কমে যায়, অবসাদ আর ক্লান্তিবোধ গ্রাস করে। এক্ষণে ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ নিম্নরূপ :

  • প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনগুলোতেও ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন।
  • শয়নের দো‘আ ও আয়াতুল কুরসী পাঠ করুন। সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ তিন বার করে পাঠ করে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে সারা শরীর তিনবার মাসাহ করুন। অন্যান্য তাসবীহ পাঠ করুন এবং ডান কাতে শয়ন করুন।
  • তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিন। তরল খাদ্যের আধিক্যে রাতে বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হ’তে পারে। ঘুমের অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন।
  • প্রতিদিন অল্পবিস্তর ব্যায়াম করুন। প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম উপহার দিতে পারে। অ্যারোবিক ব্যায়াম হ’ল সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন, জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, দড়িলাফ, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
  • আরামদায়ক বিছানা ও নরম বালিশ বেছে নিন। যদি কেউ আপনার সঙ্গে শয়ন করে, তবে দেখতে হবে দু’জনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি-না।
  • ঘুমানোর অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে যদি ঘুম না আসে তবে অবশ্যই বিছানা ছেড়ে দিতে হবে। এরপর পরিবেশ বদলে দিতে হবে। কোন কাজে বা অধ্যয়নে লেগে পড়ুন। তবে এমন কাজ করা ভালো যাতে মস্তিষ্কের তেমন কিছু ভাবতে হবে না। তারপর ক্লান্তি লাগলে আবার ঘুমাতে যান। ঘুম নিয়ে অযথা কোন দুশ্চিন্তা করবেন না।
  • ঘুমানোর আগে মোবাইলসহ যেকোন স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। এসব আসক্তির কারণে অনিদ্রার সমস্যা বেড়ে যায়। স্ক্রিন থেকে আসা আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমানোর আগে তাই গ্যাজেট সঙ্গে রাখবেন না।

কতক্ষণ ঘুমাবেন?

প্রতিদিন রাত ও দুপুর মিলে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। দুপুরে অল্প সময় হ’লেও ঘুমানোর অভ্যাস রাখা ভালো। তবে ঘুমের মূল সময় হওয়া উচিত রাত। সেজন্য সারা দিনে শারীরিক পরিশ্রমও প্রয়োজন। তাহ’লে একদিকে যেমন ক্যালরি পোড়ানো হবে, অন্যদিকে শরীর ক্লান্তও হবে। ফলে ভালো ঘুমও হবে। ঘুমের সময়কালের সাথে সাথে ঘুমের গুণগত মান ভালো হচ্ছে কি-না, সেটা নিশ্চিত করাও যরূরী।

অনেকের মধ্যে ধারণা কাজ করে যে, পাঁচ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমানোই যথেষ্ট। কিন্তু ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ গবেষকরা বলেছেন যে, পাঁচ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমানোকে স্বাস্থ্যকর বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে সেটা বরং স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।

গবেষক ড. রেবেকা রবিন্স বলেন, ‘দিনের পর দিন পাঁচ ঘণ্টা বা তারও কম সময় ঘুমানো যে স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ঝুঁকি অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়, তার বহু প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে’। এর মধ্যে রয়েছে হৃদযন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি, যেমন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং আয়ুষ্কাল কমে যাওয়া ইত্যাদি।







আরও
আরও
.