কাঁঠাল খুবই সুস্বাদু ও রসাল ফল। অনেকেই এই ফলটি খেতে পসন্দ করে। কিন্তু এর বীজ খেতে চায় না। অথচ এই বীজটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে থিয়ামিন এবং রাইবোফ্লেবিন, যা এনার্জির ঘাটতি দূর করে। তাছাড়া কাঁঠালের বীজে বিদ্যমান জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ত্বককে সুন্দর করে তোলে। একাধিক রোগকে দূরে রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিম্নে কাঁঠালের বীজের গুণাগুণ উল্লেখ করা হ’ল।-

প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয় : শরীরকে সচল এবং রোগমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় উপাদনগুলোর অন্যতম হ’ল প্রোটিন। কাঁঠালের বীজে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন মওজুদ থাকে, যা দেহের ভিতরে এই উপাদানটির ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় : অল্প সময়েই ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করতে নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খাওয়া যেতে পারে। এতে বিদ্যমান ফাইবার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি ত্বকের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বের করে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সংক্রমণের আশঙ্কা কমায় : বর্ষাকালে নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে কাঁঠালের বীজ দারুনভাবে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান একাধিক অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এলিমেন্ট জীবাণু দূরে রাখার মাধ্যমে নানাবিধ ফুড-বন এবং ওয়াটার বন রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া হজমের সমস্যা কমাতেও কাঁঠালের বীজ দারুন কাজে আসে। ক্যান্সারের মতো মরণ রোগকে দূরে রাখে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে বেশ কিছু শক্তিশালী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট্রসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

বলি রেখা কমায় : ত্বককে তরতাযা এবং সুন্দর রাখতে ব্যবহার করা যায় কাঁঠালের বীজ। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো বীজ নিয়ে প্রথমে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর এতে অল্প পরিমাণ দুধ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি প্রতিদিন মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য আরো বৃদ্ধি পায়।

অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে : কাঁঠালের বীজে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা খুব অল্প দিনেই রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। এই প্রাকৃতিক উপাদানটি অ্যানিমিয়া রোগের প্রকোপ কমাতে সক্ষম।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে : কাঁঠালের বীজ রোদে শুকিয়ে তারপর সেগুলো বেটে গুঁড়ো করে এই গুঁড়ো পাউডারটি খেলে নিমিশেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা কমে যায়। এতে থাকা ডায়াটারি ফাইবার কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।  

স্ট্রেসের মাত্রা কমায় : কাঁঠালের বীজ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারী মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা মস্তিষ্কের ভিতরে কেমিকেল ব্যালেন্স ঠিক রাখার মাধ্যমে স্ট্রেস কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে : কাঁঠালের বীজে বিদ্যমান ভিটামিন এ, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি চোখ সম্পর্কিত একাধিক সমস্যাকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই কাঁঠালের বীজ খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন।

তেলাকুচা পাতার ঔষধী গুণ

সবজি হিসাবে তেলাকুচা পাতা অনেকের কাছে পসন্দনীয়। এ পাতার গুণাগুণের কারণেই সকলের কাছে এই ভালো লাগা। তাই তেলাকুচা পাতার ঔষধী গুণ ও উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস হ’লে তেলাকুচার কান্ডসহ পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়।

জন্ডিস : জন্ডিস হ’লে তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ খেতে হবে।

পা ফোলা রোগে : গাড়িতে ভ্রমণের সময় বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ফুলে যায়, একে শোথ রোগ বলা হয়। তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩-৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খেতে হবে।

শ্বাসকষ্ট : বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট (হাঁপানি রোগ নয়) হ’লে তেলাকুচার মূলও পাতার রস হালকা গরম করে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ ৩ থেকে সাত দিন প্রত্যহ সকালে ও বিকেলে খেতে হবে।

কাশি : শ্লেস্মাকাশি হ’লে শ্লেস্মা তরল করতে এবং কাশি উপশমে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে ৩ থেকে ৭ দিন প্রত্যহ সকালে ও বিকেলে খেতে হবে।

শ্লেম্মাজ্বর : শ্লেষ্মাজ্বর হ’লে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ২-৩ দিন সকাল ও বিকেল খেতে হবে।

মায়ের দুধ স্বল্পতা : সন্তান প্রসবের পর অনেকের বুকে দুধ আসে না বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে ১টা করে তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকেল ১ সপ্তাহ খেতে হবে।

ফোঁড়া ও ব্রণ : ফোড়া বা ব্রণ হ’লে তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ব্যবহার করতে হবে।

আমাশয় : প্রায়ই আমাশয় হ’তে থাকলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩-৪ চা চামচ ৩ থেকে ৭ দিন সকালে ও বিকেলে খেতে হবে।

অরুচিতে : অরুচি হ’লে তেলাকুচার পাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মত রান্না করতে হবে। খাবার গ্রহণের প্রথমেই সেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে। এই শাক খেলে পেটের গোলমাল কমে। পেটে সমস্যা ও বদহজমের জন্য এই শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তেলাকুচার ভেষজ গুণ অনন্য। এর পাতা, লতা, মূল ও ফল সবই ব্যবহার করা যায়।                            \ সংকলিত \






আরও
আরও
.