পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ ।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তাওহীদ, পরকাল, জান্নাত এবং জাহান্নাম সম্পর্কে যে সকল আয়াত নাযিল করেছেন তাতে আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ব প্রকাশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদান করেছেন, যা দ্বারা পৃথিবীবাসী দুনিয়ার জীবনে উপকৃত হ’তে পারে। আমরা কুরআনে জান্নাতের যে পরিবেশের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করব। এছাড়া পৃথিবীর পানযোগ্য সুপেয় পানি যে পর্বতের মধ্যে সংরক্ষিত আছে সে বিষয়ে কুরআনের নিদর্শন এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগ সম্পর্কে যে নিদর্শন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের নিকট মহা বিস্ময় তার ধারাবাহিক বিবরণ পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
জান্নাতের পরিবেশ হবে নাতিশীতোষ্ণ :
জান্নাতীরা যে ধরনের পরিবেশে বসবাস করবে তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন,مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا، ‘তারা সেদিন সুসজ্জিত আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসবে। সেখানে তারা অতি গরম বা অতি শীত কোনটাই অনুভব করবে না’ (ইনসান ৭৬/১৩)। এখন আমরা দেখব উক্ত আয়াতে যে ধরনের পরিবেশের বিবরণ দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কি তথ্য প্রদান করেছেন।
১৯৯৬ সালে থমাস হোয়াইটমোর যিনি আমেরিকার Syracuse University-এর আবহাওয়া বিজ্ঞান গবেষণা বিভাগের পরিচালক তিনি গবেষণার মাধ্যমে দেখান যে, ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জের আবহাওয়া হ’ল পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো আবহাওয়া। ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ হ’ল উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে একটি স্প্যানিশ দ্বীপপুঞ্জ। পৃথিবীর ৬শ’র অধিক স্থানের উপর বৃষ্টি, পানি ও তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে এই তথ্য প্রদান করেন যে, ক্যানারী দীপপুঞ্জের আবহাওয়া পৃথিবীর সর্বোত্তম আবহাওয়া।
ক্যানারী দীপপুঞ্জ গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত এবং এর উত্তর-পূর্ব দিক হ’তে বাতাস প্রবাহিত হয় এবং এই দ্বীপপুঞ্জের সারা বছরের তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এই দ্বীপে না থাকে অত্যধিক গরম, না থাকে অত্যধিক ঠান্ডা। যাকে আমরা বলি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। ক্যানারী দীপপুঞ্জের বৃষ্টি এবং প্রচুর সূর্যালোক মানুষের শরীরে শক্তি তৈরী করে এবং অতিরিক্ত ভিটামিন ‘ডি’ মানুষের শরীর শোষণ করে যা দেহের মানসিক চাপ এবং অনিদ্রা হ্রাস করে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মেজায ভালো রাখে (Reports: Consumer Travel Publication)।
The American Heritage Dictionary of the English Language অনুযায়ী সাচ্ছন্দ্যদায়ক তাপমাত্রা হ’ল ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। Oxford English Dictionary অনুযায়ী এই তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গ্রীষ্মকালের জন্য সাচ্ছন্দ্যদায়ক তাপমাত্রা হ’ল ২৩-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালের জন্য সাচ্ছন্দ্যদায়ক তাপমাত্রা হ’ল ২০-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।[1]
১৯৮৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা তথ্য প্রকাশ করে যে, সাচ্ছন্দ্যদায়ক তাপমাত্রা হ’ল ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সংস্থা এটাও প্রকাশ করে যে, সাচ্ছন্দ্যদায়ক তাপমাত্রার সাথে আর্দ্রতা এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর সম্পর্কিত নয়।
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে স্বীয় বান্দাদের বসবাসের জন্য যে তাপমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থাৎ যা গরমও নয় ঠান্ডাও নয় তা পৃথিবীর আবহাওয়াবিদরা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, একটি সাচ্ছন্দ্যদায়ক এবং আরামদায়ক স্থান তাকেই বলা হবে যে স্থান গরমও নয় ঠান্ডাও নয়। যার উদাহরণ হচ্ছে ক্যানারী দীপপুঞ্জ। যেখানে পর্যটকেরা ভ্রমণ করে সবচেয়ে বেশী আরাম এবং সাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের আবহাওয়ার বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষকে এটাই জানিয়ে দিচ্ছেন যে, ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে মানুষ যে ধরনের স্থানে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে, আরাম অনুভব করে অনন্তকালের জান্নাতে সেই পরিবেশ তাদের প্রদান করা হবে।
বাগানের ছায়ার উপকারিতা :
আমরা বিভিন্ন ধরনের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে থাকি। যেমন দালানের ছায়া, ছাউনির ছায়া, গাছের ছায়া ইত্যাদি। দালানের ছায়া বা ছাউনির ছায়াগুলোতে বেশীক্ষণ অবস্থান করলে অস্বস্তি লাগে এবং গরম অনুভূত হয়। এর কারণ হ’ল দালান বা ছাউনি সূর্যরশ্মি হ’তে তাপ শোষণ করতে থাকে এবং পরবর্তীতে সেই তাপ পরিবেশকে প্রদান করে। ফলে পরিবেশ গরম হয়ে যায় এবং ঐ স্থান অবস্থানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অপরদিকে বাগানের ছায়া বা গাছের ছায়া উপকারী।
আল্লাহ বলেন, وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا ‘বাগিচার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফল-মূল সমূহ তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে’ (ইনসান ৭৬/১৪)।
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদের জন্য উদ্যানের ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন। এখন প্রশ্ন হ’ল আল্লাহ তা‘আলা কেবল ছায়া না বলে উদ্যানের ছায়া কেন বলেছেন? উদ্যানের ছায়া অন্যান্য ছায়া অপেক্ষা কেন ব্যতিক্রম? এবার আসুন আমরা জেনে নিই উদ্যানের ছায়া কেন উপকারী?
ছায়া কি? যখন কোন বস্ত্ত হ’তে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে তখন আমরা ঐ বস্ত্তকে দেখতে পাই। ছায়া হ’ল একটি অন্ধকার অঞ্চল যা আলোক রশ্মির গতিপথে কোন অস্বচ্ছ বস্ত্ত রাখার ফলে তৈরী হয়। (Dictionary of Oxford) প্রকৃতপক্ষে ছায়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যা দ্বারা ছায়া উৎপন্ন হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। তাই এখানে উদ্যানের ছায়ায় উদ্যানের বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ।
গাছ দু’ভাবে তার পরিবেশের বায়ুকে ঠান্ডা রাখে। এক. দালান, রাস্তা বা খোলা ময়দান তার আপতিত প্রায় সকল আলো শোষণ করে নেয়, ফলে তা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। অন্যদিকে গাছপালা তার ক্যানোপির (শাখা, পাতা ও এর অংশবিশেষ) সাহায্যে প্রায় ৯০ভাগ সূর্যের তাপ ভূমিতে পেঁŠছাতে দেয় না।
দুই. গাছ শিকড় হ’তে পানি পাতায় নিয়ে আসে ফলে সালোকসংশ্লেষণ সংঘটিত হয়। কিন্তু আনিত পানির ৯৯ভাগ জলীয়বাষ্প আকারে পরিবেশে চলে আসে যখন পাতা তার স্টোমাটা (পাতার পৃষ্ঠের খোলা অংশ) খুলে পরিবেশের সাথে অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিনিময় করে। এটাকে বলা হয়, গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস। একটি গাছ দিনে ৭০ লিটার থেকে ১২০ লিটার জলীয়বাষ্প পরিবেশে ছাড়ে তাদের ক্যানোপি এবং পাতার সাইজের উপর নির্ভর করে।
এই পানি জলীয়বাষ্পে পরিণত হওয়ার জন্য পাতা পরিবেশের গরম বায়ু হ’তে সুপ্ততাপ গ্রহণ করে। এভাবে গরম বায়ুর তাপ শক্তির সংরক্ষণশীল নীতি অনুসারে পানি সুপ্ত তাপ হিসাবে গ্রহণ করার কারণে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ফলে পরিবেশ ঠান্ডা থাকে।[2]
অতএব আমরা জানলাম আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদের জন্য যে উদ্যানের ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন তার বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য কি হবে।
পৃথিবীর পানযোগ্য সুপেয় পানি সংরক্ষিত আছে পর্বতে :
আল্লাহ বলেন, وَجَعَلْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَّأَسْقَيْنَاكُمْ مَاءً فُرَاتًا- ‘আর আমরা তাতে স্থাপন করেছি সুউচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি’ (মুরসালাত ৭৭/২৭)। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সুপেয় পানির উৎস সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। এখন আমরা দেখব সুপেয় পানির উৎস সম্পর্কে গবেষকরা কি তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
পৃথিবীর চার ভাগের তিনভাগ হ’ল পানি অর্থাৎ ৭১% হ’ল পানি। পৃথিবীর পানির ৯৭% বিদ্যমান সমুদ্রে। এছাড়া পানি আছে নদীতে, হরদে, বাতাসের জলীয় বাষ্পে, বরফ এবং হিমবাহে এবং আমাদের দেহে।
পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ৩% পানযোগ্য যা মানুষ, পশুপাখি এবং উদ্ভিদ জীবনধারণের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
পৃথিবীর পানযোগ্য বা সুপেয় পানির মূল উৎস হ’ল পাহাড়-পর্বত। পাহাড়-পর্বতকে বলা হয় প্রাকৃতিক ‘ওয়াটার-টাওয়ার’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পানির প্রধান উৎস হ’ল স্নোপ্যাক। এই পর্বতসমূহের বরফ গলে নদী, হরদে চলে যায় এবং সর্বশেষ সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছায়। এশিয়ার হিমালয় থেকে শুরু করে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে উত্তর আমেরিকার রকিস পর্যন্ত, উচ্চ-উচ্চ-পর্বতগুলি নিম্নভূমির কোটি কোটি মানুষের জন্য জলের প্রধান উৎস (Nationalgeographic, research, mountain as water tower)।
পৃথিবীর মোট ভূমির ২৫ ভাগ হচ্ছে পাহাড়-পর্বত। আর এই পর্বতসমূহ হচ্ছে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। হিমালয় প্রায় ১.৩৫ বিলিয়ন মানুষের জন্য সুপেয় পানির সরবরাহ করে যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। পেরুর শুষ্ক প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের কাছাকাছি আন্দিজ পর্বতমালা থেকে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে এটি আঞ্চলিক কৃষি এবং শিল্পের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। আর লিমা যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি শহর। আন্দিজ পর্বতমালার ঢাল থেকে নেমে আসা পানির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। পূর্ব আফ্রিকায়, মাউন্ট কেনিয়া ৭ মিলিয়নেরও বেশী মানুষের জন্য মিঠা পানির একমাত্র উৎস (Mountain as the water of the world, SDGs)।
উক্ত আয়াতের বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে তাঁর সৃষ্টিকূলের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করেন।
ফিংগার প্রিন্ট :
আল্লাহ বলেন, بَلَى قَادِرِيْنَ عَلَى أَنْ نُسَوِّيَ بَنَانَهُ ‘হ্যাঁ, আমরা তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আমাদের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ বা আঙ্গুলের অগ্রভাগে রেখাসমূহ যেভাবে রয়েছে মৃত্যুর পর দেহ এই মাটিতে মিশে যাওয়ার পর যখন পুনরায় উত্থিত করা হবে, তখন মৃত্যুর পূর্বে আঙ্গুলের বিন্যাস যেভাবে ছিল ঠিক সেরূপ পুনর্বিন্যাস্ত করা হবে। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে আঙ্গুলের অগ্রভাগের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন তাই বুঝতে হবে এর বিশেষত্ব রয়েছে। এবার আমরা এর বিশেষত্ব জেনে নেই।
বিজ্ঞানীরা গবেষণার সাহায্যে নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন যে, প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলের অগ্রভাগ ভিন্ন ভিন্ন। এই কারণে আঙ্গুলের ছাপকে বায়োমেট্রিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
Oxford Dictionary অনুসারে Biometric অর্থ-Involving the automated recognition of individuals by means of unique physical characteristics, typically for the purposes of security. অর্থাৎ মানুষের শরীরের এমন কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্য মানুষ হ’তে সম্পূর্ণ আলাদা থাকে এবং একজন মানুষকে শনাক্ত করা যায়। যেমন: হাতের লেখা, চোখের আইরিশ, আঙ্গুলের ছাপ।
১৯ শতকের শুরুর দিকে ইংরেজ বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম হার্শেল সর্বপ্রথম ভারতে চুক্তিতে স্বাক্ষরের জন্য আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করেছিলেন। তবে ১৯ শতকের শেষের দিকে আঙ্গুলের ছাপ ফরেনসিক টুল হিসাবে বেশী ব্যবহার হ’ত। ফরেনসিক মানে হ’ল, অপরাধ তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশল। ১৮৯২ সালে স্যার ফ্রান্সিস গাল্টন, একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ‘আঙ্গুলের ছাপ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন যে আঙ্গুলের ছাপ ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্যার ফ্রান্সিস গাল্টন এবং স্যার এডওয়ার্ড হেনরি সর্বপ্রথম আদর্শ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহারের পদ্ধতি দেখিয়েছিলেন, যা ১৯০১ সালে স্কটল্যান্ডে পরিচিতি পায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের নিকট ২৫০ মিলিয়নের অধিক লোকের ফিঙ্গার প্রিন্ট রয়েছে যাদের একজনের ফিঙ্গার প্রিন্টের সাথে অপরজনের মিলে না।[3]
সকল মানুষের আঙ্গুলের ছাপ একে অপর হ’তে ভিন্ন। এমনকি যমজ সন্তানেরও আঙ্গুলের ছাপ একের অপর হ’তে ভিন্ন। মানুষের এই আঙ্গুলের ছাপ তৈরী হয় যখন ভ্রূণ মায়ের গর্ভে মাত্র তিন ইঞ্চি লম্বা থাকে। একজন মা গর্ভবতী হওয়ার ১০ম সপ্তাহে বাচ্চার আঙ্গুলের ছাপ তৈরী হওয়া শুরু হয় এবং ১৪তম সপ্তাহে এটি পূর্ণতা পায়।[4]
আঙ্গুলের ছাপ যে মানুষের একটি একক বৈশিষ্ট্য তা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করার পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এর বর্ণনা পেশ করেছেন। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা এক. কাফেরদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, দুই. জ্ঞানের একমাত্র নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তা‘আলা অর্থাৎ কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে মানুষ আঙ্গুলের ছাপ সম্পর্কে জানতো না। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এই সম্পর্কিত আয়াত নাযিল করার পরে আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর মানুষকে এই সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ দিয়েছেন। তিন. পৃথিবীর চিন্তাশীল গবেষকদের জন্য রয়েছে নিদর্শন যে, তারা অর্থ, শ্রম, সময় দিয়ে যে বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেছে তা ১৪শ’ বছর আগে কুরআনে কে দিল? এর উত্তর হচ্ছে যিনি মায়ের গর্ভে এই আঙ্গুলের ছাপ এককভাবে সৃষ্টি করেছেন তিনিই কুরআনে এই তথ্য বর্ণনা করেছেন। তিনিই হ’লেন সর্বজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলা। অতএব এই কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। [ক্রমশঃ]
ইঞ্জিনিয়ার আসীফুল ইসলাম চৌধুরী
[1]. Burroughs, H. E.; Hansen, Shirley (2011).Managing Indoor Air Quality.Fairmont Press. pp. 149–151.
[2]. ECO-INTELLIGENT, may 23, 2020.
[3]. Britannica, Encyclopedia, vol-4, page:44.
[4]. India Today, 17/02/21.