পর্ব ১। পর্ব ২

(গ) লেখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণ :

পবিত্র কুরআনের সাথে হাদীছ সংকলন ও সংরক্ষণ প্রচেষ্টাও একই সাথে শুরু হয়েছিল। তবে রাসূল (ছা.) প্রথম পর্যায়ে কুরআনের মত হাদীছ লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, لَا تَكْتُبُوا عَنِّي، وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ ‘তোমরা আমার বাণী লিপিবদ্ধ করো না। কুরআন ব্যতীত আমার কোন কথা কেউ যদি লিপিবদ্ধ করে থাকে, তবে সেটা যেন মুছে ফেলে’।[1] ফলে ছাহাবীরা সাধারণত হাদীছ মুখস্থই সংরক্ষণ করতেন। তবে যেটি লক্ষ্যণীয় তা হ’ল, হাদীছ লিখিতভাবে সংরক্ষণে রাসূল (ছা.) ছাহাবীদেরকে সাধারণভাবে নিষেধ করেছিলেন, আবার একই সাথে কোন কোন ছাহাবীকে অনুমতিও দিয়েছিলেন। সমসাময়িক বিদ্বানগণ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং রাসূল (ছা.)-এর এই বিপরীতমুখী নির্দেশনার জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হ’ল।

নিষেধাজ্ঞার হাদীছসমূহ :

ক. আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, لَا تَكْتُبُوا عَنِّي، وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ، وَحَدِّثُوا عَنِّي، وَلَا حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ، ‘তোমরা আমার বাণী লিপিবদ্ধ করো না, যে ব্যক্তি আমার থেকে কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু লিপিবদ্ধ করে, সে যেন তা মুছে ফেলে। তোমরা আমার পক্ষ থেকে (যা শোন তা) বর্ণনা কর, তাতে কোন অসুবিধা নেই। আর যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়’।[2]

খ. আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, اسْتَأْذَنَّا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الكِتَابَةِ فَلَمْ يَأْذَنْ لَنَا، ‘আমরা রাসূল (ছা.)-এর নিকট (হাদীছ) লেখার অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন’।[3]

 গ. আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَنَحْنُ نَكْتُبُ الْأَحَادِيثَ- فَقَالَ: مَا هَذَا الَّذِي تَكْتُبُونَ؟ قُلْنَا: أَحَادِيثَ سَمِعْنَاهَا مِنْكَ. قَالَ: أَكِتَابًا غَيْرَ كِتَابِ اللهِ تُرِيدُونَ؟ مَا أَضَلَّ الْأُمَمَ مِنْ قَبْلِكُمْ إِلَّا مَا اكْتَتَبُوا مِنَ الْكُتُبِ مَعَ كِتَابِ اللهِ ‘রাসূল (ছা.) আমাদের নিকট আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা হাদীছ লিখছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, এটা কি লিখছ তোমরা? আমরা বললাম, সেসব হাদীছ লিখছি, যা আপনার নিকট থেকে শুনেছি। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কিতাব বাদ দিয়ে অন্য কোন কিতাব কামনা কর? তোমাদের পূর্বে যে উম্মতই আল্লাহর কিতাবের সাথে অন্য কোন কিতাব রচনা করেছে, তারা ধ্বংস হয়েছে’।[4]

ঘ. যায়েদ ইবনু ছাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ نَهَى أَنْ يُكْتَبَ حَدِيثُهُ ‘রাসূল (ছা.) তাঁর হাদীছ লিখতে নিষেধ করেছেন’।[5]

অনুমতি প্রদানের হাদীছসমূহ :

ক. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল ‘আছ (রা.) বলেন,كُنْتُ أَكْتُبُ كُلَّ شَيْءٍ أَسْمَعُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ أُرِيدُ حِفْظَهُ- فَنَهَتْنِي قُرَيْشٌ- فَقَالُوا : إِنَّكَ تَكْتُبُ كُلَّ شَيْءٍ تَسْمَعُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَرَسُولُ اللهِ بَشَرٌ- يَتَكَلَّمُ فِي الْغَضَبِ وَالرِّضَا- فَأَمْسَكْتُ عَنِ الْكِتَابِ- فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ فَقَالَ: اكْتُبْ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا خَرَجَ مِنِّي إِلَّا حَقٌّ- ‘আমি রাসূল (ছা.) থেকে যা কিছু শুনতাম, তা লিখে রাখতাম। এর দ্বারা আমি তা সংরক্ষণ করতে চাইতাম। কিন্তু কুরায়েশরা আমাকে এটা করতে নিষেধ করল এবং বলল, তুমি রাসূল (ছা.) থেকে যা-ই শোন তা-ই লেখ, অথচ রাসূল (ছা.) একজন মানুষ। তিনি কখনও রাগতবস্থায় কিংবা কখনও প্রশান্ত অবস্থায় কথা বলেন। তখন আমি লেখা থেকে বিরত হ’লাম এবং রাসূল (ছা.)-কে বিষয়টি অবহিত করলাম। তখন রাসূল (ছা.) বললেন, তুমি লেখ। সেই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! আমার মুখ থেকে সত্য ব্যতীত কিছুই বের হয় না’।[6] রাসূল (ছা.)-এর উক্ত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হাদীছের একটি সংকলন তৈরী করেছিলেন। যা ‘ছহীফাহ ছাদিক্বাহ’ নামে পরিচিত।

খ. আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, مَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَحَدٌ أَكْثَرَ حَدِيثًا عَنْهُ مِنِّى، إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو فَإِنَّهُ كَانَ يَكْتُبُ وَلاَ أَكْتُبُ، ‘রাসূল (ছা.)-এর এমন কোন ছাহাবী ছিলেন না যিনি রাসূল (ছা.) থেকে আমার চেয়ে অধিক হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তবে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ব্যতীত। কেননা তিনি হাদীছ লিখতেন আর আমি লিখতাম না’।[7]

গ. রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ছা.)-কে বললাম, আমরা আপনার নিকট থেকে অনেক কিছু শুনি। আমরা কি সেগুলি লিখে রাখব না? রাসূল (ছা.) বলেন, اُكْتُبُوْا وَلاَ حَرَجَ ‘তোমরা লেখ, কোন সমস্যা নেই’।[8]

ঘ. মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছা.) একটি বক্তব্য প্রদান করেন। তখন শ্রোতাদের মধ্যে একজন আবূ শাহ ইয়েমেনী রাসূল (ছা.)-এর কাছে এই বক্তব্য লিখিত আকারে চাইলেন। তখন রাসূল (ছা.) ছাহাবীদেরকে বললেন, اكْتُبُوا لأَبِى شَاهٍ ‘তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও’।[9]

ঙ. আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেছেন, قَيِّدُوا العِلمَ بالكِتابِ،তোমরা জ্ঞানকে কলমবন্দী কর’।[10]

চ. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আছ (রা.) বলেন, রাসূল (ছা.) বলেন, قيدوا العلم ‘তোমরা জ্ঞানকে সংরক্ষণ কর’। আমি বললাম, কিভাবে সংরক্ষণ করব? তিনি বললেন, ‘লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে’।[11]

ছ. রাসূল (ছা.) আমর ইবনু হাযম সহ অন্যান্যদেরকে ছাদাকাহ, দিয়াত, উত্তরাধিকার সম্পত্তি এবং নানাবিধ সুন্নাহ লিখিত আকারে প্রদান করেছিলেন।[12]

জ. ইবনু আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) মৃত্যুশয্যায় যখন কাতরাচ্ছিলেন তখন বলেন, ائْتُونِى بِكِتَابٍ أَكْتُبُ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّوا بَعْدَهُ، আমার কাছে একটি খাতা নিয়ে এসো। আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দেব, যাতে তোমরা পরবর্তীতে পথচ্যুত না হও’।[13] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, লেখনীর অনুমতি প্রমাণে এই হাদীছও একটি দলীল। তিনি উম্মতের জন্য এমন কিছু লিখতে চেয়েছিলেন যার দ্বারা তারা মতভেদ থেকে বাঁচতে পারে। আর তাঁর এই ইচ্ছা প্রকাশ নিঃসন্দেহে যথার্থ ছিল।[14]

সমন্বয়ী মত :

আজ্ঞা ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত উভয়মুখী হাদীছসমূহের মাঝে সমন্বয়ে ওলামায়ে কেরাম বেশ কিছু সমাধানসূচক মন্তব্য করেছেন। যেমন -

ক. নিষেধাজ্ঞাটি পরবর্তীকালে অনুমোদনের হাদীছ দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে নিষেধ করা হ’লেও পরবর্তীতে অনুমতি প্রদান করা হয়। যার প্রমাণ হ’ল ছাহাবীদেরকে রাসূল (ছা.) আবূ শাহের জন্য লিখে দিতে নির্দেশ দেন। আর তা ছিল মক্কা বিজয়ের দিন।[15] 

খ. প্রাথমিক যুগে কুরআনের সাথে সংমিশ্রিত হওয়ার আশংকায় হাদীছ লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এমন শংকা দূর হ’লে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।[16] খত্বীব আল-বাগদাদী (৪৬৩হি.) বলেন, ونهي عن كتب العلم في صدر الإسلام وجدته لقلة الفقهاء في ذلك الوقت , والمميزين بين الوحي وغيره، لأن أكثر الأعراب لم يكونوا فقهوا في الدين ولا جالسوا العلماء العارفين، فلم يؤمن أن يلحقوا ما يجدون من الصحف بالقرآن، ويعتقدوا أن ما اشتملت عليه كلام الرحمن ‘হাদীছ লেখার ব্যাপারে প্রাথমিক যুগে শক্ত নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিল এই যে, তখন এমন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কম ছিল, যারা অহী এবং অন্য কিছুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। কেননা অধিকাংশ আরব বেদুঈনরা তখনও দ্বীনের ব্যাপারে ভাল জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়নি এবং জ্ঞানী-গুণীদের সংস্পর্শে আসেনি। ফলে তারা সেসব (হাদীছের) পান্ডুলিপি কুরআনের সাথে মিশিয়ে ফেলবে না এবং তা আল্লাহর কালাম হিসাবে বিশ্বাস করে বসবে না, এমন নিশ্চয়তা ছিল না।[17]

গ. নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ছিল কুরআনের সাথে একই স্থানে হাদীছ লিপিবদ্ধকরণের সাথে সম্পৃক্ত। কেননা তারা রাসূল (ছা.)-এর নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শুনতেন এবং কেউ সম্ভবতঃ তা কুরআনের সাথেই লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ফলে তাতে সংমিশ্রণ এবং পাঠকের জন্য বিভ্রান্তির আশংকা সৃষ্টি হয় কিংবা একই ছহীফাতে উভয়টি লিখলে ক্বারী বা পাঠক তা একই বস্ত্ত মনে করার আশংকা তৈরী হয়। সেজন্য এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। তবে কুরআন ব্যতীত পৃথক কোন পৃষ্ঠা বা বস্ত্তুতে হাদীছ লিপিবদ্ধ করার অনুমতি বহাল ছিল।[18]

ঘ. এই নিষেধাজ্ঞা কেবল অহী লেখক ছাহাবীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। যদি তাদেরকে হাদীছ লিপিবদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হ’ত, তাহলে তা কুরআনের সাথে নিশ্চিতভাবে সংমিশ্রিত হয়ে যেত। অন্যদের ক্ষেত্রে এ আশংকা না থাকায় এটি জায়েয ছিল।[19]

ঙ. যাদের স্মরণশক্তি নির্ভরযোগ্য ছিল এবং ভুল থেকে নিরাপদ ছিল তাদের জন্য এরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়, কেননা তারা হয়তো কেবল লেখনীর উপর নির্ভর করে বসতো। তবে যাদের ভুলে যাওয়ার আশংকা ছিল এবং স্মরণশক্তি দুর্বল ছিল তাদের জন্য লেখনীর অনুমতি ছিল।[20] 

চ. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ছিলেন পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের পাঠক। তিনি সুরিয়ানী এবং আরবী ভাষা লিখতে জানতেন। কিন্তু অন্য ছাহাবীরা অধিকাংশই লেখনীতে পারদর্শী ছিলেন না। ফলে তারা ভুল করবেন এই আশংকায় তাদের নিষেধ করা হয় এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আমরের জন্য এই আশংকা না থাকায় তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল।[21]

পর্যালোচনা :

প্রথমতঃ নিষেধাজ্ঞার হাদীছগুলির মধ্যে কেবল আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত হাদীছটি ব্যতীত বাকি সবগুলিই যঈফ।[22] উপরন্তু হাদীছটি মারফূ‘ না মাওকূফ তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ইমাম বুখারী (২৫৬হি.) বলেন, এটি মাওকূফ হওয়াই ছহীহ।[23] আর ছাহাবী এবং তাবেঈদের মধ্যে যারা লিপিবদ্ধকরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন যেমন আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা.), আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রা.), আবূ হুরায়রা (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) প্রমুখ, তারা প্রত্যেকেই মুখস্থ ছেড়ে লেখনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া এবং ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়ার শংকা থেকে এমন অবস্থান নিয়েছিলেন। যা তাদের বর্ণনায় স্পষ্ট। কিন্তু পরবর্তীতে তারা অধিকাংশই উক্ত অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন এবং তাঁদের পক্ষ থেকেও হাদীছ লিপিবদ্ধ করার দলীল পাওয়া গেছে।

রামহারমুযী (৩৬০হি.) বলেন, وإنما كره الكتاب من كره من الصدر الأول، لقرب العهد، وتقارب الإسناد ولئلا يعتمده الكاتب فيهمله، أو يرغب عن تحفظه والعمل به، فأما والوقت متباعد، والإسناد غير متقارب، والطرق مختلفة، والنقلة متشابهون، وآفة النسيان معترضة، والوهم غير مأمون، فإن تقييد العلم بالكتاب أولى وأشفى، والدليل على وجوبه أقوى ‘যারা লেখনী অপসন্দ করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন প্রথম যুগের মানুষ। কেননা তাঁরা ছিলেন রাসূল (ছা.)-এর সমসাময়িক যুগের এবং তাঁদের সনদসূত্র ছিল নিকটবর্তী। এছাড়া তাঁরা এজন্য অপছন্দ করেছিলেন যেন লেখকরা লেখনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে অবহেলা না করে বসে এবং তা মুখস্থ সংরক্ষণ ও আমলে পরিণত করতে গাফলতী না করে। তবে যখন সময় অনেক দূরবর্তী হ’ল, সনদসূত্র দীর্ঘতর ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হ’ল, বর্ণনাকারীগণ পরস্পর মিশ্রিত হয়ে যেতে লাগল, ভুলে যাওয়ার বিপদ উপস্থিত হ’ল, সন্দেহ থেকে বাঁচার পথ অনিরাপদ হয়ে গেল, তখন লেখনীর মাধ্যমে হাদীছ সংরক্ষণই ছিল অধিক অগ্রগণ্য ও নিরাপদ। আর এটা যে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছিল সে ব্যাপারে শক্তিশালী দলীল বিদ্যমান।[24]

সুতরাং হাদীছ লিপিবদ্ধকরণে রাসূল (ছা.)-এর নিষেধাজ্ঞা এবং ছাহাবী ও তাবেঈদের বিরূপভাব সবই ছিল একটি সাময়িক প্রেক্ষাপটে। এছাড়া লক্ষ্যণীয় বিষয় হ’ল, তাঁরা হাদীছ সংরক্ষণের প্রশ্নে কখনই বিতর্ক করেননি, বরং তাঁদের মধ্যে বিতর্ক ছিল কিভাবে সংরক্ষিত হবে- মুখস্থকরণ না কি লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে?

দ্বিতীয়তঃ খত্বীব আল-বাগদাদী (৪৬৩হি.) তাঁর ‘তাক্বয়ীদুল ইলম’ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে এই বিতর্কটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। এর প্রথম অংশে তিনি লেখনীর ব্যাপারে অনীহা প্রকাশক হাদীছ এবং ছাহাবী ও তাবেঈদের আছার উল্লেখ করেন। পরের অংশে ৩ জন ছাহাবী ও তাবেঈ’র নেতিবাচক অবস্থানের কারণ উল্লেখ করেছেন। আর শেষাংশে সে সকল হাদীছ এবং ছাহাবী ও তাবেঈদের আছার নিয়ে এসেছেন, যা হাদীছ লেখনীর বৈধতা প্রমাণ করে।[25] অতঃপর ড. মুছত্বফা আল-আ‘যামী (২০১৭খ্রি.) তাঁর সুদীর্ঘ আয়াসসাধ্য বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, যে সকল ছাহাবী এবং তাবেঈ অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তাদের দু’একজন বাদে সকলের পক্ষ থেকেই হাদীছ লিপিবদ্ধকরণের উদাহরণ রয়েছে। এতে তিনি ৫২ জন ছাহাবীর তালিকা সহ ১ম হিজরী শতকে হাদীছ লিপিবদ্ধকারী জ্যেষ্ঠ ৫৩ জন তাবেঈ এবং কনিষ্ঠ ২৫২ জন তাবেঈ’র তালিকা বৃত্তান্ত সহকারে উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাদের হাদীছ লেখনীর অনুমোদন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।[26] নববী (রহঃ) বলেন, ثم أجمع المسلمون على جوازها وزال ذلك الخلاف অর্থাৎ ‘(প্রাথমিক দ্বিধাগ্রস্থতার পর) মুসলমানরা লেখনীর বৈধতার ব্যাপারে সকলেই ঐক্যমত পোষণ করেন এবং এ বিষয়ে মতপার্থক্য দূর হয়ে যায়’।[27] সুতরাং এ বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

তৃতীয়তঃ হাদীছ সংকলন সম্পর্কে রাসূল (ছা.)-এর গৃহীত নীতি থেকে স্পষ্ট হয় যে, হাদীছ সংকলন প্রাথমিক পর্যায়ে দু’টি ধাপ অতিক্রম করেছিল। প্রথম ধাপে হাদীছ সংকলন নিষিদ্ধ করা হয় যেন তা কুরআনের সাথে সংমিশ্রিত না হয়ে যায়। কেননা ছাহাবীগণ তখন ছিলেন সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী। আর দ্বিতীয় ধাপে হাদীছ সংকলনের অনুমতি দেয়া হয় যখন দ্বীন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ছাহাবীগণ কুরআনকে সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন ও কুরআনের সাথে অন্যান্য লেখনীর পার্থক্য বুঝে নিয়েছিলেন। আস-সিবাঈ (১৯৬৪খ্রি.) বলেন, وأعتقد أنه ليس هنالك تعارض حقيقي بين أحاديث النهي وأحاديث الإذن، إذا فهمنا النهي على أنه نهي عن التدوين الرسمي كما كان يُدَوِّنُ القرآن، وأما الإذن فهو سماح بتدوين نصوص مِنَ السُنَّةِ لظروف وملابسات خاصة أو سماح لبعض الصحابة الذين كانوا يكتبون السُنَّةَ لأنفسهم ‘আমার বিশ্বাস এই যে, নিষেধাজ্ঞা ও অনুমোদনের হাদীছ সমূহের মধ্যে মৌলিক কোন বিরোধ নেই। যেহেতু আমরা বুঝতে পেরেছি যে, নিষেধাজ্ঞা ছিল কুরআনের মত হাদীছের আনুষ্ঠানিক সংকলনের ব্যাপারে। আর অনুমতি ছিল বিশেষ পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সুন্নাহ লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অথবা কিছু ছাহাবীর জন্য যারা ব্যক্তিগত সংরক্ষণের জন্য সুন্নাহ লিখে রাখতেন’।[28]

মুছত্বফা আল-আ‘যামী (২০১৭খ্রি.) বলেন, ‘সন্দেহ নেই যে, বিভিন্ন যুগে বেশ কিছু মুহাদ্দিছ ছিলেন যারা হাদীছ লিপিবদ্ধ করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল তাদের ব্যক্তিগত অভিরুচি এবং বিশেষ পরিস্থিতির কারণে। অবশ্য তারা পরে কোন একসময়ে হাদীছ লেখার ব্যাপারে পুনরায় প্রবৃত্তও হয়েছিলেন। যাইহোক প্রথম যুগে লিখিত কুরআনের সাথে কিছু ব্যাখ্যামূলক শব্দ লিপিবদ্ধ হওয়ার কারণে কুরআনুল কারীমের কিছু কিছু অপ্রচলিত পাঠ্য (কিরাআত) সৃষ্টি হওয়া এবং বৃহৎ একদল ছাহাবীর হাদীছ সংকলন কর্ম খুব স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, লেখনীর প্রতি তাদের বিরূপভাব কখনই সর্বব্যাপী এবং স্থায়ী ছিল না’।[29]

চতুর্থতঃ রাসূল (ছা.) তাঁর বাণীসমূহ উম্মতের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদি তা সংরক্ষণ না করা হ’ত, তবে এই প্রচারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না। কেননা এতে ইলম হারিয়ে যেত এবং বহু হাদীছ এমন হ’ত যে উম্মতের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছাতই না। আর ভুলে যাওয়া অধিকাংশ মানুষের প্রাকৃতিক প্রবণতা। সুতরাং মুখস্থকরণ ভুলের হাত থেকে নিরাপদ নয়। সেজন্য রাসূল (ছা.) কেউ ভুলে যাওয়ার আশংকা করলে তাকে লিখে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের দিনে আবূ শাহকে হাদীছ লিখে দিতে বলেছেন। পরে ছাদাকা, মুক্তিপণ প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ অবস্থায় ছাহাবীদেরকে প্রদান করেছিলেন। রাবীগণ এ ঘটনাগুলি বর্ণনাও করেছেন। পূর্ব যুগের এবং পরবর্তী যুগে কোন আলেমই এ বিষয়ে আপত্তি তোলেননি। সুতরাং এখান থেকে হাদীছ লেখনীর বৈধতা সুস্পষ্ট হয়।[30]

পঞ্চমতঃ রাসূল (ছা.) ছিলেন মুসলিম উম্মাহর শিক্ষক। শরী‘আত প্রণয়নকালে তিনি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণার্থে কোন বিষয়ে তিনি শুরুতে সাময়িকভাবে একরকম নির্দেশ দিয়েছেন, পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করেছেন। যেমন ইসলামের প্রথম যুগে মুত‘আহ বিবাহের অনুমতি ছিল।[31] কিন্তু খায়বারের যুদ্ধের দিন এটি নিষিদ্ধ করা হয়।[32] অতঃপর মক্কা বিজয়ের দিন সাময়িকভাবে আবার মুত‘আহ বিবাহের অনুমতি দেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর তা ক্বিয়ামত অবধি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।[33] তেমনিভাবে রাসূল (ছা.) প্রাথমিকভাবে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।[34] সুতরাং একইভাবে বিশেষ প্রেক্ষাপটে রাসূল (ছা.) লেখনীর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। আবার সেই বিশেষ অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তিনি হাদীছ লেখার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং নির্দেশও প্রদান করেছিলেন, যা বিগত দলীলসমূহে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

(ক্রমশঃ)


[1]. মুসলিম হা/৩০০৪।

[2]. মুসলিম হা/৩০০৪।

[3]. তিরমিযী হা/২৬৬৫; খত্বীব আল-বাগদাদী, তাক্বয়ীদুল ইলম (বৈরূত : ইহইয়াউস সুন্নাহ আন-নাবাভিয়াহ, ২য় প্রকাশ : ১৯৭৪খ্রি.), পৃ. ৩৩। হাদীছটির সনদ দুর্বল ও মুনকার। দ্র. মুছত্বফা আল-আ‘যামী, দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নাবাভী, পৃ. ৭৭)। তবে নাছিরুদ্দীন আলবানী সুনানুত তিরমিযীর তাহক্বীকে হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।

[4]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৩৩। হাদীছটির সনদ দুর্বল। দ্র. মুছত্বফা আল-আ‘যামী, দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নববী, পৃ. ৭৭।

[5]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৩৫। হাদীছটির সনদ দুর্বল। দ্র. দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নববী, পৃ. ৭৮।

[6]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৮০।

[7]. বুখারী হা/১১৩।

[8]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৭২।

[9]. বুখারী হা/২৪৩৪, ৬৮৮০।

[10]. ইবনু আব্দিল বার্র, জামেঊ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহি হা/৩৯৫।

[11]. বায়হাক্বী, আল-মাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, তাহক্বীক : ড. যিয়াউর রহমান আল-আ‘যামী (কুয়েত, দারুল খুলাফা, ১৪০৪হি.) হা/৭৬৬; জামেঊ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহি হা/৪১২।

[12]. জামেঊ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহি হা/৩৯২।

[13]. বুখারী হা/১১৪, ৩০৫৩, ৩১৬৮, ৪৪৩১, ৪৪৩২, ৫৬৬৯, ৭৩৬৬।

[14]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ১/২১০।

[15]. ইবনু কুতায়বা আদ-দীনাওয়ারী, তা’বীলু মুখতালাফিল হাদীছ (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৯৯খ্রি.), পৃ. ৪১২; আল-খাত্তাবী, মা‘আলিমুস সুনান শারহু আবূদাঊদ (আলেপ্পো : আল-মাতবা‘আহ আল ইলমিয়াহ, ১৯৩২ খ্রি.), ৪/১৮৪; আন-নববী, আল-মিনহাজ শারহু মুসলিম, ৯/১৩০; আস-সাখাভী, ফাৎহুল মুগীছ, ৩/৩৯। আব্দুল গনী আব্দুল খালেক এটিকে ‘নসখ’ বলতে রাযী নন। তিনি বলেন, সংমিশ্রণের আশংকা ব্যতীত সাধারণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারী করার কোন কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং প্রথমদিকে সম্পূর্ণভাবে হাদীছ লিখতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সাধারণভাবে অনুমতি দেয়া হয় এ কথা ঠিক নয়। বরং ইবনু হাজারের কথাটিই যথার্থ যেখানে তিনি বলেছেন, النهي متقدم والإذن ناسخ له عند الأمن من الالتباس‘নিষেধাজ্ঞাটি প্রথম যুগের। আর অনুমোদনের বিষয়টি পরবর্তী যা পূর্বতন হুকুমকে বাতিল করেছে যদি না সেখানে সংমিশ্রণের আশংকা থাকে’ (ফাৎহুল বারী, ১/২০৮)। অর্থাৎ সংমিশ্রণের আশংকা থাকলে সর্বাবস্থায় লিপিবদ্ধ করা নিষিদ্ধ। তবে সে আশংকা না থাকলে সর্বাবস্থায় জায়েয। সুতরাং এখানে ‘নসখ’ শব্দটি ব্যবহার করা অপ্রাসঙ্গিক। দ্র. আব্দুল গনী আব্দুল খালেক, হুজ্জিয়াতুস সুন্নাহ, পৃ. ৪৪৪। আমার মতে, এখানে ‘নসখ’ শব্দটি পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম শাব্দিক অর্থে ব্যবহার করেছেন, পারিভাষিক অর্থে নয়। সুতরাং শব্দ যেটিই ব্যবহৃত হোক না কেন, উদ্দেশ্য এটাই যে, প্রথমাবস্থায় কুরআনের সাথে সংমিশ্রণের আশংকা ছিল। পরবর্তীতে সে আশংকা দূর হয়ে যাওয়ায় মুসলিম উম্মাহ হাদীছ লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছে।- গবেষক।

[16]. জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, তাদরীবুর রাবী, ১/৪৯৫।

[17]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৫৭।

[18]. আল-খাত্তাবী, মা‘আলিমুস সুনান, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ১৮৪; ফাৎহুল বারী, ১/২০৮; তাদরীবুর রাবী, ১/৪৯৫।

[19]. আব্দুল গনী আব্দুল খালেক, হুজ্জিয়াতুস সুন্নাহ, পৃ. ৪৪৪।

[20]. ফাৎহুল বারী, ১/২০; নববী, শরহ মুসলিম, ৯/১৩০; আস-সাখাভী, ফাতহুল মুগীছ, ৩/৩৯।

[21]. ইবনু কুতায়বা আদ-দীনাওয়ারী, তা’বীলু মুখতালাফিল হাদীছ, পৃ. ৪১২।

[22]. মুছত্বফা আল-আ‘যামী, দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নববী, ১/৭৬-৭৮; আব্দুর রহমান আল-মু‘আল্লিমী, আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ, পৃ. ৩৪-৪৩; রিফ‘আত ফাওযী, তাওছীকুস সুন্নাহ ফিল ক্বারনিছ ছানী আল-হিজরী, পৃ. ৪৬।

[23]. ফাৎহুল বারী, ১/২০৮; খত্বীব আল-বাগদাদীও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন (তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৩১)।

[24]. তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৩৬-৪৩, ৪৯-৬১, ৮৭-৯৮। দ্র. আর-রামহারমুযী, আল-মুহাদ্দিছুল ফাছিল, পৃ. ৩৮৬।

[25]. তিনি বলেন, ‘(হাদীছের গ্রন্থ রচনায়) প্রাথমিক বিরূপ মনোভাবের পর লোকেরা ব্যাপকাকারে হাদীছের কিতাবসমূহ ব্যবহার করা শুরু করল এবং তা লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠল। কেননা বর্ণনাসমূহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সনদসূত্রসমূহ অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়। হাদীছ বর্ণনাকারী ব্যক্তিদের নাম, উপনাম, বংশীয় উপাধি প্রভৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হাদীছের বর্ণসমষ্টিতেও বিভক্তি দেখা দিতে থাকে। এমতবস্থায় এত সব কিছু মুখস্ত রাখা মানুষের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠতে লাগল। ফলে হাদীছের কিতাবসমূহ এই যুগে মুখস্তকারীর চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠল। এর সাথে যুক্ত হ’ল সেসব লোকদের জন্য রাসূল (ছা.)-এর হাদীছ লিখনের অনুমতি যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল এবং সেই সাথে ছাহাবী, তাবিঈ এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের আমল, যারা একসময় লেখনীর বিরোধী ছিলেন। দ্র. খত্বীব আল-বাগদাদী, তাক্বয়ীদুল ইলম, পৃ. ৬৪।

[26]. দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নববী, ১/৮৪-৩২৫।

[27]. আল-মিনহাজ শারহু মুসলিম, ১৮/১৩০।

[28]. মুছত্বফা আস-সিবাঈ, আস-সুন্নাতু ওয়া মাকানাতুহা, পৃ. ৬১।

[29]. দিরাসাতুন ফিল হাদীছ আন-নববী, ১/৮৩।

[30]. মা‘আলিমুস সুনান, ৪/১৮৪।

[31]. বুখারী হা/৫১১৭; মুসলিম হা/১৪০৫।

[32]. বুখারী হা/৪২১৬, ৫১১৫, ৫৫২৩, ৬৯৬১; মুসলিম হা/১৪০৭।

[33]. মুসলিম হা/১৪০৬।

[34]. মুসলিম হা/৯৭৭, ১৯৭৭।






মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
পেরেনিয়ালিজম এবং ইসলাম - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
তিন শ্রেণীর মুছল্লী জাহান্নামে যাবে - যহূর বিন ওছমান, দিনাজপুর
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ : একটি পর্যালোচনা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
শারঈ মানদন্ডে ঈদে মীলাদুন্নবী - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
হজ্জ : গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পাঁচ দফা মূলনীতি : একটি বিশ্লেষণ (প্রথম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
মুমিন কিভাবে রাত অতিবাহিত করবে - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৭ম কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.