বুড়িচং, কুমিল্লা ২৫শে নভেম্বর শুক্রবার : অদ্য বাদ জুম‘আ যেলার বুড়িচং উপযেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত বুড়িচং সালাফিইয়াহ মাদ্রাসা ময়দানে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ কুমিল্লা যেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি বলেন, মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির আন্দোলন হ’ল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’। এ আন্দোলন মানুষের সার্বিক জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে। এ আন্দোলন মানুষকে শাশ্বত সত্যের পথ দেখায়। তিনি সূরা আনকাবূত ৫৭ আয়াত উল্লে­খ করে বলেন, জন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দু’টির কোনটিরই ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। জীবন দাতার কাছে হাযির হয়ে ৫টি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কোন আদম সন্তান তার পা বাড়াতে পারবে না। ৫টি প্রশ্ন হ’ল- ১. তার জীবন সম্পর্কে, কিসে তা অতিবাহিত করেছিল। ২. তার যৌবন সম্পর্কে, কিসে তা নিঃশেষ করেছিল। ৩. তার মাল সম্পর্কে, কোন পথে তা অর্জন করেছিল এবং ৪. কোন পথে তা ব্যয় করেছিল। ৫. তার ইল্ম সম্পর্কে, তদনুযায়ী সে আমল করেছিল কি-না’ (তিরমিযী হা/২৪১৬)। তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শাশ্বত সত্য তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণের মাধ্যমেই উপরোক্ত পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া সম্ভব। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ এ পথেই মানুষকে আহবান জানায়।

যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন, ঢাকার মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, খতীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইহসান ইলাহী যহীর, ‘আহলেহাদীছ পেশাজীবী ফোরাম’-এর সভাপতি ডা. শওকত হাসান, ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর শিক্ষক হাফেয আব্দুল মতীন প্রমুখ। সম্মেলনে প্রস্তাবনা পেশ করেন, যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আমজাদ হোসাইন। সঞ্চালক ছিলেন যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ অলিউল্লাহ।

কোরপাই মহিলা মাদ্রাসার জায়গা পরিদর্শন : ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জ যেলা সম্মেলন শেষে ফজরের পর রওয়ানা দিয়ে (১) সকাল সাড়ে ৮-টায় আমীরে জামা‘আত কুমিল্লা যেলার বুড়িচং থানাধীন কোরপাই পৌঁছলে যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ ও অন্যান্য দায়িত্বশীলগণ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সেখানে আত-তাহরীক সম্পাদকের শ্বশুর ও যেলা ‘আন্দোলন’-এর সেক্রেটারী জামীলুর রহমানের পিতা মরহূম হাফেয মাওলানা আব্দুল মতীন সালাফীর বাসায় সকালের নাশতা গ্রহণ করেন। অতঃপর (২) সকাল সাড়ে ৯-টায় তিনি পার্শ্ববর্তী ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স রাজশাহী’র নামে দানকৃত প্রস্তাবিত ‘মহিলা মাদ্রাসা’র স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে দাতাদের সাথে এবং ‘আন্দোলন’-এর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মাদ্রাসার পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময়ে তিনি মাদ্রাসার জমিদাতা আব্দুল হক ছাহেবের পিতা মরহূম আব্দুল আযীয ডিলারের কবর যিয়ারত করেন। (৩) অতঃপর পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে শায়িত যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোরপাই ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা শরাফত আলীর কবর যিয়ারত করেন। তিনি তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। (৪) কোরপাই থেকে বেরিয়ে আমীরে জামা‘আত লাকসাম থানাধীন অশ্বতলা আহলেহাদীছ জামে মসজিদ উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

(৫) পথিমধ্যে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট-এর নিকটবর্তী আলেখার চর বিশ্বরোড সংলগ্ন জনাব আব্দুল হালীম কর্তৃক ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স রাজশাহী’র নামে দানকৃত ১২ শতাংশ জমি পরিদর্শন করেন। এখানে তাদের মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমীরে জামা‘আত জমিদাতার জন্য খাছ দো‘আ করেন। (৬) অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে যেলার লালমাই থানাধীন দক্ষিণ হাজাতিয়া গ্রামে ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স রাজশাহী’র নামে রেজিষ্ট্রিকৃত নির্মাণাধীন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তিনি সেখানে সমবেত সুধীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ পেশ করেন।

অশ্বতলা মসজিদ উদ্বোধন : (৭) লালমাই থেকে রওয়ানা হয়ে আমীরে জামা‘আত যেলার লাকসাম থানাধীন অশ্বতলা গ্রামে পৌঁছেন। সেখানে জুম‘আর খুৎবা প্রদানের মাধ্যমে তিনি নবনির্মিত অশ্বতলা আহলেহাদীছ জামে মসজিদ উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় কয়েকজন মুছল্লী আহলেহাদীছ আক্বীদা গ্রহণ করার পর তারা প্রথমে টিনের চালা দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তখন থেকে বিরোধীদের তীব্র বাধা মোকাবেলা করে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে পাকা মসজিদটি নির্মিত হ’ল। ফালিল্লাহিল হাম্দ। মসজিদের মূল উদ্যোক্তা কামাল আহমাদকে তিনি ধন্যবাদ দেন। অতঃপর বলেন, ইমামের মাথার উপরে খতীবের মিম্বর স্থাপন সুন্নাত সম্মত নয়। এটা ভেঙে ফেলে সমতল স্থানে মেহরাবের সাথে মিম্বর স্থাপন করা উচিৎ। অতঃপর আমীরে জামা‘আত হাঁটু ব্যথ্যার কারণে নীচে চেয়ারে বসে খুৎবা দেন। 

উদ্বোধনী খুৎবায় আমীরে জামা‘আত মসজিদ আবাদের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, মসজিদ নির্মাণের চাইতে মসজিদ আবাদ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সবাইকে মসজিদে জামা‘আতের সাথে নিয়মিত ছালাত আদায় ও সংগঠনের নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন বাদ এশা ১টি করে হাদীছ পাঠ, বাদ ফজর ১০ মিনিট তাফসীর পাঠ, সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠক, মাসিক তাবলীগী ইজতেমা ইত্যাদি কর্মসূচী চালু রাখার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, এই মসজিদ থেকেই অত্রাঞ্চলে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র দাওয়াত ছড়িয়ে যাক, আমরা সেই দো‘আ করি। তিনি যেকোন প্রতিবন্ধকতা ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করার এবং সবার সাথে সর্বোত্তম আচরণের মাধ্যমে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার আহবান জানান।

এসময় স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহর নেতৃত্বে এক মাইক্রো, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সেক্রেটারী মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীনের নেতৃত্বে এক মাইক্রো, চট্টগ্রাম যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি হাফেয শেখ সাদীর নেতৃত্বে এক মাইক্রো এবং কক্সবাজার যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি এডভোকেট শফীউল ইসলামের নেতৃত্বে এক মাইক্রোযোগে দায়িত্বশীলগণ জুম‘আয় যোগদান করেন।

অতঃপর দুপুরের আতিথেয়তা শেষে (৮) পার্শববর্তী ‘কোয়ার’ গ্রামে জনাব আবুল হাশেম কর্তৃক সাড়ে ৬ বিঘা জমির উপর নির্মাণাধীন দারুস সালাম সালাফিইয়াহ মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিদর্শন করেন। অতঃপর (৯) সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে মাগরিবের পর তিনি সম্মেলনস্থল বুড়িচংয়ে পৌঁছেন। সেখানে যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক দফতর সম্পাদক মাওলানা যাকারিয়া খানের বাসায় আমীরে জামা‘আত দায়িত্বশীলদের সাথে মত বিনিময় শেষে বিশ্রাম নেন।

আল-‘আওন : সম্মেলনে ‘আল-‘আওনে’র ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ১২ জনের ব্ল­াড গ্রুপিং ও ১১ জন ডোনর বা রক্তদাতা সদস্য তালিকাভুক্ত হন।

সম্মেলন শেষে আমীরে জামা‘আত যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাবেক উপদেষ্টা ও জগৎপুর ডিএইচ. ফাযিল মাদ্রাসার শিক্ষক মরহূম মাওলানা আব্দুল হান্নান-এর বাসায় রাত্রি যাপন করেন। পরদিন বেলা সাড়ে ৮-টায় তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে নরসিংদী যেলা সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

এখান থেকে সকাল ৮-টার দিকে আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গীদের মধ্যে সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, ড. সাখাওয়াত হোসাইন ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ডে’র চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, গাযীপুর-দক্ষিণ যেলা গঠনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। অতঃপর পৌনে ৯-টার দিকে আমীরে জামা‘আত নরসিংদী যাওয়ার পথে সঊদী আরবের আল-খাবজী প্রবাসী মুহাম্মদ তোফাযযল হোসাইনের আমন্ত্রণে মুরাদনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ সময় তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন, ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম ও ‘আল-‘আওনে’র সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির।

মুরাদনগর ইমাম বুখারী সালাফিইয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন : নরসিংদী যাওয়ার পথে তিনি যেলার মুরাদনগর থানাধীন নবীপুরে ইমাম বুখারী সালাফিইয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। এখানে মাদ্রাসার মুহতামিম আহসান হাবীব মাদানী ও মাদ্রাসার শুরু থেকে দায়িত্বশীল ও যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হান্নান সহ অন্যান্য দায়িত্বশীলগণ তাঁকে অভ্যার্থনা জানান। অতঃপর তাহিইয়াতুল মাসজিদ ছালাত আদায়ের পর তিনি মাদ্রাসার মসজিদে সমবেত শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি মাদ্রাসা কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন ও সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। সেখানে আধা ঘণ্টা অবস্থান শেষে সফরসঙ্গীদের নিয়ে তিনি বেলা ১২-টায় নরসিংদী রওয়ানা হন।

কান্দাইল মহিলা মাদ্রাসা উদ্বোধন : বেলা আড়াইটায় আমীরে জামা‘আত নরসিংদী যেলার কান্দাইল বাজারস্থ ‘তাওহীদ ট্রাষ্ট রেজিঃ’ প্রতিষ্ঠিত আহলেহাদীছ জামে মসজিদে পৌঁছেন। সেখানে যেলা সভাপতি মাওলানা আমীনুদ্দীন ও অন্যান্য দায়িত্বশীলগণ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর তিনি যোহর-আছর জমা-ক্বছর শেষে মসজিদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী ‘হাজী আব্দুল জাববার ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা’ উদ্বোধন করেন। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্জ আবূ ছিদ্দীক মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি শরীফুল ইসলাম, যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আমীনুদ্দীন, যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন প্রমুখ। সঞ্চালক ছিলেন, যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক দেলাওয়ার হোসাইন। অতঃপর আলহাজ্জ শফীকুল ইসলাম মিয়ার বাসায় আমীরে জামা‘আত বিশ্রাম নেন। অতঃপর সম্মেলনে আগত ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলামের গাড়ীতে তিনি বাদ মাগরিব নরসিংদী যেলা সম্মেলন স্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।







আরও
আরও
.