পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ 

. পশুত্বের বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্তি মেলে :

মানুষ ও পশুর মাঝে মূল পার্থক্য হ’ল চিন্তাশক্তি। চিন্তা করার ক্ষমতা থাকার কারণে মানুষের মর্যাদা অন্যান্য সকল প্রাণীর উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বান্দা যখন চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে স্বীয় জীবনের লক্ষ্য অর্জনে এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গাফলতি করে, তখন তারা জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়ে যায়। যাদের চোখ, কান ও হৃদয় থাকা সত্ত্বেও এসব অঙ্গ দিয়ে আল্লাহ্র পরিচয় ও তাঁর বিধি-বিধান অনুধাবনের চেষ্টা করে না, চিন্তার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে না। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ ‘ওরা হ’ল চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তার চাইতেও পথভ্রষ্ট। ওরাই হ’ল উদাসীন’ (রাফ ৭/১৭৯)। রাগেব ইছ্ফাহানী (রহঃ) বলেন,بالفكرة يميز الإنسان عن البهائم،... النفس بترك النظر والتفكر تتبلد وتتبله¡ وترجع إلى رتبة البهائم، ‘চিন্তার (সক্ষমতার) কারণেই পশুদের থেকে মানুষের স্বতন্ত্র পার্থক্য নির্ণীত হয়। পর্যবেক্ষণ ও চিন্তা-ফিকিরের গুণ না থাকলে মানুষ নির্বোধে পরিণত হয় এবং পশুদের কাতারে নেমে আসে’।[1]

পশুরা নিজেদের ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারে না। হালাল-হারাম বোঝে না। এদের জীবনের সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই। জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন নেই। খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে বেড়ানো এবং মলত্যাগ করা এদের নিত্যদিনের কাজ। অনুরূপভাবে কোন মানুষ যখন আল্লাýহ্র নিদর্শনাবলী ও নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, তখন সে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে আল্লাহ্র সাথে কুফরী করে বসে। আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ، ‘যারা অবিশ্বাসী, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মত ভক্ষণ করে। আর জাহান্নাম হ’ল তাদের ঠিকানা’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১২)

ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম- এই দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষের বেঁচে থাকা ও মরে যাওয়া সমান। জীবিত থাকার পরেও তারা যেন মরে গেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আল্লাহ্র একত্বের দলীল-প্রমাণগুলো তারা পর্যবেক্ষণ করে না। আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের প্রতি এদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং এদের অভ্যাস হ’ল চতুষ্পদ জন্তুর মত শুধু ঘুরে বেড়ানো। শরী‘আত যদি তাদের চাহিদা মত হয়, তবে সেটা পালন করে; নয়তো তারা তাদের ইচ্ছা-আকাঙক্ষা অনুযায়ী চলাফেরা করে। এরা হালাল-হারামের কোন তোয়াক্কা করে না। পরিবেশ ও পরিস্থিতির অনুকূলে হ’লে ছালাত আদায় করে, অন্যথা ছালাত পরিত্যাগ করে। এদের হয়তো শারঈ জ্ঞান আছে; কিন্তু এর সাথে পাল্লা দিয়ে রয়েছে গুনাহের ব্যাপকতা’।[2] মানুষের পশুদের কাতারে নেমে যাওয়ার প্রধান কারণ হ’ল চিন্তা-ভাবনার বন্ধ্যাত্ব। তাই যখন কোন ব্যক্তি চিন্তার ইবাদতে মনোনিবেশ করবে, তখন তার বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব দূরীভূত হবে। তার ভিতরে অপরিমেয় বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি সঞ্চার হবে। ভালো-মন্দ, হালাল-হারামের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করতে শিখবে। পশুবৃত্তির নিগড় থেকে মুক্তি পেয়ে মানবিক উন্মেষ ঘটবে। জগদ্বাসীর কাছে আশরাফুল মাখলূকাত হিসাবে সে সম্মানিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ্র নিকটেও সে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।

. আত্মিক পরিশুদ্ধি ও নিজেকে সংশোধনের সুযোগ :

কাষ্ঠ কঠিন হৃদয়ে যদি আত্মশুদ্ধি, আল্লাহভীতি ও নেক আমলের ফুল ফোটাতে হয়, তবে হৃদয়কে নরম করতে হবে। আর হৃদয়কে নরম করার সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হ’ল চিন্তা-ভাবনা করা। চিন্তার মাধ্যমে দেহ-মন প্রশান্ত হয়। মন থেকে দূর হয়ে যায় পাপ-পঙ্কিলতার ক্লেদ। মানব হৃদয়ে অনুভূত হয় নিজেকে শুধরে নেওয়ার এক অপার্থিব দ্যোতনা। ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,الفكر هُوَ الَّذِي ينْقل من موت الفطنة الى حَيَاة الْيَقَظَة وَمن المكاره الى المحاب وَمن الرَّغْبَة والحرص الى الزّهْد والقناعة وَمن سجن الدُّنْيَا الى فضاء الآخرة، ‘চিন্তা-ভাবনা (মানুষের) বুদ্ধিমত্তার মৃত্যু থেকে জাগ্রত জীবনের দিকে নিয়ে যায়। (আল্লাহ্র) অপসন্দনীয় কাজ থেকে পসন্দনীয় কাজের দিকে বের করে আনে। তাকে কামনা ও লোভের নিগড় থেকে দুনিয়া বিমুখতা ও অল্পে তুষ্টির পথে ফিরিয়ে আনে এবং দুনিয়ার জেলখানা থেকে আখেরাতের মুক্ত প্রান্তরে স্থানান্তরিত করে’।[3]

চিন্তার ইবাদত একটি স্বচ্ছ দর্পনের মতো। যেখানে বান্দা নিজেই নিজের ভুলগুলো দেখতে পায়। ফলে অন্যের দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই সে নিজেকে শুধরে নিতে পারে। হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,الفكرة مرآة المؤمن ينظر فيها إلى حسناته وسيئاته، ‘চিন্তা-ভাবনা মুমিনের আয়না স্বরূপ। এখানে সে তার নেকী ও পাপগুলো দেখতে পায়’।[4] সুতরাং বান্দা যত বেশী চিন্তার ইবাদত করবে, তত বেশী তার হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে। তার জীবন তত দ্রুত হেদায়াতের পথে পরিচালিত হবে।

. আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও হতাশা থেকে মুক্তি লাভ :

জীবনে মানুষ কখনো কখনো হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়। অর্থিক টানাপোড়েন, শারীরিক অসুস্থতা, পারিবারিক ও সামাজিক সংকট প্রভৃতি মানুষকে নিরাশার চাদরে মুড়িয়ে ফেলে। মূলতঃ চিন্তার দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ্র নে‘মতরাজিকে অবলোকন না করার দরুন মানুষ এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আল্লাহ্র নে‘মতরাজি নিয়ে যদি বান্দা চিন্তা-ভাবনা করত, তাহ’লে আল্লাহ্র প্রতি তাদের ভালোবাসা দ্বিগুণ বেড়ে যেত। কারণ মানবাত্মাকে এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে, যে তার প্রতি দয়া করে তার প্রতি সে ভালোবাসা পোষণ করে। যখন মানুষ আল্লাহ্র অগণিত নে‘মতরাজি নিয়ে চিন্তা করবে, তখন এ চিন্তা-ভাবনা তাকে আল্লাহ্র ভালোবাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিবে, আল্লাহ্র প্রতি সে সন্তুষ্ট হবে। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, ‘এক ব্যক্তি ইউনুস ইবনে উবায়েদ (মৃ. ১৩৯ হি.)-এর কাছে এসে তার অভাব-অনটনের অভিযোগ করল। তখন ইবনু উবায়েদ (রহঃ) তাকে বললেন, তুমি যে চোখ দিয়ে দেখতে পাও, এমন একটি চোখের বিনিময়ে যদি তোমাকে এক লক্ষ দিরহাম দেওয়া হয়, তুমি কি তাতে আনন্দিত হবে? সে বলল, না। তিনি বললেন, তোমার এক হাতের বিনিময়ে যদি তোমাকে এক লক্ষ দিরহাম দেওয়া হয়, তাতে কি খুশি হবে? সে বলল, না। তিনি বললেন, যদি তোমার দুই পায়ের বিনিময়ে এটা দেওয়া হয়? সে বলল, না। তখন ইউনুস (রহঃ) তার প্রতি আল্লাহ্র এই নে‘মতগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, আমি তো দেখতে পাচ্ছি তোমার কাছে লক্ষ লক্ষ দিরহামের সম্পদ আছে, অথচ তুমি দারিদ্রে্যর অভিযোগ করছ।[5] মানুষ যদি এভাবে চিন্তা-ভাবনা করত, তাহ’লে দেখতে পেত সে অগণিত নে‘মতের অথৈ দরিয়ায় ডুবে আছে। ফলে আল্লাহ্র প্রতি তাঁর ভালোবাসা বৃদ্ধি পেত এবং এই চিন্তার ইবাদতই তাকে হতাশা থেকে বের করে আনত।

. জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়া :

চিন্তা-ভাবনা এমন এক অদ্ভুদ ধরনের ইবাদত, যে যত বেশী এই ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ তত বেশী তাকে ইলম, ব্যুৎপত্তি ও প্রজ্ঞা দান করেন। আবূদ্দারদা (রাঃ) লোক্বমান হাকীমের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, ‘তিনি না ছিলেন সম্পদশালী, না ছিলেন বংশগত মর্যাদাবান, না ছিলেন ঐশ্বর্যের অধিকারী; বরং তিনি ছিলেন মৌন স্বভাবের। দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনা ও গভীর দৃষ্টি ছিল তার বৈশিষ্ট্য। তিনি সুলতানের কাছে আসতেন, বিচারকের নিকটে আসতেন তাদের দেখার জন্য, চিন্তা-ভাবনা করার জন্য, শিক্ষা লাভ করার জন্য। আর এভাবেই তিনি আল্লাহ্র কাছ থেকে যা লাভ করার লাভ করেছেন’।[6] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,إِنَّ أَهْلَ الْعَقْلِ لَمْ يَزَالُوْا يَعُوْدُوْنَ بِالذِّكْرِ عَلَى الْفِكْرِ وَبِالْفِكْرِ عَلَى الذِّكْرِ حَتَّى اسْتَيْقَظَتْ قُلُوبُهُمْ فَنَطَقَتْ بِالْحِكْمَةِ، ‘বুদ্ধিমান লোকেরা যিকিরের মাধ্যমে চিন্তা-ভাবনার চিকিৎসা করেন এবং চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে যিকির-আযকার করেন। এভাবে একসময় তাদের অন্তরগুলো জেগে ওঠে এবং তারা প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা বলেন’।[7] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,اسْتَعِينُوا على الْكَلَام بِالصَّمْتِ وعَلى الاستنباط بالفكرة، ‘তোমরা ভালো কথা বলার ক্ষেত্রে চুপ থাকার সাহায্য নাও, আর (শরী‘আতের দলীল উদ্ভাবন বা) গবেষণার ক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনার সাহায্য নাও’।[8]

আমরা অনেক সময় ভাবি, আলেমগণ কিভাবে এত অধিক বই-পুস্তক রচনা করলেন! তাফসীর, ফিক্বহ ও হাদীছ শাস্ত্রে কিভাবে তারা এত খেদমত আঞ্জাম দিলেন! কিভাবে তারা এত অল্প সময়ে এত এত গবেষণা করলেন, এত কাজ সম্পাদন করলেন? নিঃসন্দেহে আলেমদের খেদমতগুলোর অধিকাংশই আল্লাহ্র আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার ফলাফল। তারা বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ও অবস্থা নিয়ে চিন্তা করেছেন, হৃদয়ের দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেগুলোকে অহি-র জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করেছেন। চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করার পরেই তারা অভিমত দিয়েছেন, বই-পুস্তক রচনা করেছেন। চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমেই আলেমগণ বিবিধ দুর্বোধ্য বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন। তাই তো মুসলিম উম্মাতের কল্যাণে ইজতিহাদ বা শরী‘আত গবেষণার দুয়ার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

চিন্তা-ভাবনা শুধু শারঈ ব্যাপারে নয়; পার্থিব বিষয়েও মানুষের জ্ঞানের দিগন্ত খুলে দেয়। অধুনিক বিশ্বে জ্ঞানী-গুণীরা যেসব বই-পুস্তক রচনা করেছেন ও করছেন, বিজ্ঞানীরা নানা বস্ত্ত আবিষ্কার করছেন, তা এমনিতেই হয়নি; বরং এগুলো তাদের নিরলস চিন্তা-গবেষণারই অমুল্য ফলাফল।

. অন্তরের রোগ-ব্যাধি দূরীভূত হয় :

নানা পাপের কারণে মানব হৃদয় অসুস্থ হয়ে যায়। মানুষ যত ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়, তন্মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ হ’ল এই অন্তরের রোগ। আর সবচেয়ে ছোট রোগ হ’ল শারীরিক রোগ। শারীরিক রোগের কারণে মানুষ খুব জোর মারা যেতে পারে। এর বেশী কিছু হয় না। উপরন্তু শরীরিক ব্যাধির কারণে মুমিন বান্দা আখেরাতে অপরিমেয় পুরস্কারে ভূষিত হন। কিন্তু হৃদয়ের ব্যাধি বান্দাকে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত করে, আখেরাতেও কঠিন আযাবের সম্মুখীন করে। কারণ ঈমান হৃদয়ে বসবাস করে। অন্তর অসুস্থ হ’লে ঈমান সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই ঈমানকে সুস্থ ও মযবূত রাখার জন্য প্রয়োজন হ’ল তাক্বওয়ার বলে বলীয়ান একটি সুস্থ হৃদয়। অন্তরের যাবতীয় রোগ-ব্যাধির যত ঔষধ আছে, তন্মধ্যে অন্যতম মহৌষধ হ’ল চিন্তার ইবাদত। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,إِنَّكَ إِذَا تَفَكَّرْتَ فِي نَفْسِكَ كَفَى، وَإِذَا نَظَرْتَ فِي خَلْقِكَ شَفَى، أَلَيْسَ قَدْ فَعَلَ فِي قَطْرَةٍ مِنْ مَاءٍ مَا لَوِ انْقَضَتِ الأَعْمَارُ فِي شَرْحِ حِكْمَتِهِ مَا وَفَتْ! ‘তুমি যখন নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, এটা (তোমার আত্মশুদ্ধির জন্য) যথেষ্ট হবে। আর যখন তুমি নিজের সৃষ্টির দিকে নযর দিবে, (তোমার হৃদয় যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে) আরোগ্য লাভ করবে। আল্লাহ কি এক ফোঁটা পানি থেকে (তোমার দেহটাকে) সৃষ্টি করেননি? তার হেকমতের বিশ্লেষণে যদি সারাটা জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়, তবুও (পরিপূর্ণভাবে তাঁর সৃষ্টির নিগূঢ় তত্ত্ব উদঘাটন করা) শেষ হবে না’।[9]

চিন্তার ইবাদতের একটি বড় ক্ষেত্র হ’ল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। নানা ধরনের পাপের উপর্যুপরি আঘাতে মানব হৃদয় যখন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, তখন কুরআন সেই ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলতে পারে। গুনাহের কালিমায় হৃদয়টা যখন কালো কয়লার মত হয়ে যায়, কুরআনের অমিয় বাণী সেই হৃদয়টাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে। অসুস্থ ও ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে পারে জান্নাতের প্রেরণায়। প্রশান্তির সুবাস ছড়িয়ে দেয় দেহ-মনে। চিন্তা শক্তি ও ইন্দ্রিয়ের অনুভূতির চিহ্ন ক্ষয় করে যে যত বেশী কুরআনকে উপলব্ধি করতে পারবে, সে তত বেশী উপকৃত হ’তে পারবে। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,لَو علم النَّاس مَا فِي قِرَاءَة الْقُرْآن بالتدبر لاشتغلوا بهَا عَن كل مَا سواهَا فَإِذا قَرَأَهُ بتفكر حَتَّى مر بِآيَة وَهُوَ مُحْتَاجا إِلَيْهَا فِي شِفَاء قلبه كررها وَلَو مائَة مرّة وَلَو لَيْلَة فقراءة آيَة بتفكر وتفهم خير من قِرَاءَة ختمة بِغَيْر تدبر وتفهم وأنفع للقلب وأدعى الى حُصُول الايمان وذوق حلاوة الْقُرْآن، ‘মানুষ যদি জানতো অনুধাবন করে কুরআন তেলাওয়াতের মাঝে কত কল্যাণ নিহিত আছে, তাহ’লে তারা সব কাজ ফেলে রেখে কুরআন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। যখন সে চিন্তা-ভাবনা করে তেলাওয়াত করবে, তখন একটা আয়াত অতিক্রম না করতেই সে তার অন্তরের রোগমুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। একই আয়াত বারবার তেলাওয়াত করবে। হয়ত আয়াতটি একশ’ বার পড়বে। সারা রাত ধরে পড়বে। সুতরাং অনুধাবন না করে ও না বুঝে কুরআন খতম করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনা করে বুঝে বুঝে একটি আয়াত তেলাওয়াত করা অধিকতর উত্তম। এটাই হবে তার হৃদয়ের জন্য অধিক উপকারী এবং ঈমান প্রাপ্তি ও কুরআনের স্বাদ আস্বাদনে অধিকতর উপযোগী’।[10]

১০. পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায় এবং তওবার অনুভূতি জাগ্রত হয় :

পাপ করার পরে অন্তরে অনুশোচনার অনুভূতি জাগ্রত হওয়া আল্লাহ্র বিশাল বড় একটি নে‘মত। মানুষের মধ্যে পাপ করার প্রবণতা আছে। তবে অস্বাভাবিক হ’ল অনুতপ্ত না হওয়া। আর বান্দা যখন চিন্তার ইবাদত করে না, তখন তার হৃদয়ের দৃষ্টি মুদিত থাকে। ফলে সে নিজের ভুলগুলো দেখতে পায় না। দেখতে পেলেও তওবার অনুভূতি জাগ্রত হয় না। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,التفكر في الخير يدعو إلى العمل به والندم على الشر يدعو إلى تركه؛ ‘ভালোর প্রতি চিন্তা ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। আর মন্দ কিছুর প্রতি অনুশোচনা মন্দ কাজ ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করে’।[11] সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) বলেন, التَّفَكُّرُ مِفْتَاحُ الرَّحْمَةِ، أَلَا تَرَى أَنَّهُ يَتَفَكَّرُ فَيَتُوبُ؟ ‘চিন্তা-ভাবনা হ’ল রহমতের চাবিকাঠি। তুমি কি দেখ না- যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা করে, সে (পাপ থেকে) তওবা করে’?[12]

বিশর ইবনুল হারেছ আল-হাফী (রহঃ) বলেন,لَو تفكر النَّاس فِي عَظمَة الله تعالى مَا عصوه، ‘মানুষ যদি আল্লাহ্র বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করত, তাহ’লে তাঁর অবাধ্য হ’ত না’।[13]

যদি আমারা নিজ জীবন সম্পর্কে চিন্তা করি, তাহ’লে সালাফদের এই কথামালার বাস্তবতা পাব। যখন আমরা কোন পাপ বা অন্যায় করার পর সেটা নিয়ে চিন্তা করি, রাসূলের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভাবি, আল্লাহ্র শাস্তির কথা স্মরণ করি, তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে অনুতাপের সৃষ্টি হয়। ফলে অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আসতাগ্ফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি

১১. সবকিছু থেকে উপদেশ হাছিল হয় :

চারপাশের ঘটনা প্রবাহ, পরিস্থিতি ও পরিবেশ থেকে উপদেশ হাছিল করার সৌভাগ্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নে‘মত। যাদের অন্তরদৃষ্টি বদ্ধ থাকে, তারা এই সৌভাগ্য লাভে ব্যর্থ হন। তবে হ্যাঁ! যারা চিন্তার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করেন, আল্লাহ তাদের হৃদয়দৃষ্টি খুলে দেন। আবূ সুলাইমান আদ্দারানী (রহঃ) বলতেন, إِنِّي لأخرجُ مِنْ مَنْزِلِي، فَمَا يَقَعُ بَصَرِي عَلَى شَيْءٍ إِلَّا رَأَيْتُ لِلَّهِ عَلَي فِيهِ نِعْمَة، أوْ لِي فِيهِ عِبْرَة، ‘বাড়ি থেকে বের হ’লে যখনই কোন বস্ত্তর উপরে আমার চোখ পড়ে, তখন সেখানে আমাকে দেওয়া আল্লাহ্র কোন না কোন নে‘মত দেখতে পাই অথবা সেখানে আমার জন্য রক্ষিত কোন উপদেশের খোরাক পেয়ে যাই’।[14] সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ) বলেন,إِذَا الْمَرْءُ كَانَتْ لَهُ فكْرَةٌ، فِفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ عبرَة، ‘যে ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা করার গুণ আছে, তার জন্য সবকিছুর মাঝে উপদেশের খোরাক আছে’।[15]

পৃথিবীর পরতে পরতে আল্লাহ মানুষের উপদেশ লাভের জন্য অফুরন্ত উপাদান প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। কেউ যদি কোন বৃদ্ধ মানুষের দিকে চিন্তার দৃষ্টি বুলায়, ঐ বৃদ্ধের ভাজ পড়া চামড়া তাকে ভাবাবে যে, এই চামড়া এক সময় মসৃণ ও সটান ছিল, তার চুলগুলো কালো ছিল, তার ছিল শক্তিমত্তা ও উদ্যমতা। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় সবকিছুতে ভাটা পড়েছে। তার মন অবাধ্য হ’লেও, শরীরটা ঠিকই তার রবের আনুগত্য করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তেল, সাবান, লোশন, সেণা আর পাউডার দিয়ে যে দেহাটার এত যত্ন নেওয়া হয়েছে, মৃত্যুর পরে তা পোকা-মাকড়ের খাদ্যে পরিণত হবে। এভাবে মানুষ নিজেদের নিয়ে ভাবলেই অনেক শিক্ষা লাভ করতে পারবে।

আল্লাহ পশু থেকেও উপদেশ লাভ করতে বলেছেন। তিনি বলেন,وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُسْقِيكُمْ مِمَّا فِي بُطُونِهِ مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِلشَّارِبِينَ- ‘নিশ্চয়ই গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য উপদেশ রয়েছে। আমরা তোমাদেরকে তাদের থেকে বিশুদ্ধ দুধ পান করাই, যা পানকারীদের জন্য অতীব উপাদেয়। যা নিঃসৃত হয় উক্ত পশুর উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য দিয়ে’ (নাহল ১৬/৬৬)। অত্র আয়াতে ‘ইবরত’-এর অর্থ হ’ল,دلالة على قدرة الله ووحدانيته وعظمته، ‘আল্লাহ্র কুদরত, তাঁর একত্ব ও বড়ত্বের প্রমাণ’।[16]

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা প্রভৃতি পশুর দুধ আমরা খাই। এই দুধ আমাদের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি, কিভাবে আল্লাহ আমাদের জন্য এই দুধের ব্যবস্থা করলেন? কিভাবে তিনি গোবর ও রক্তের সারনির্যায দিয়ে এই উপাদেয় পানীয় তৈরী করলেন? শুধু দুধ কেন, এসব পশুর গোশত, চামড়া, পশম, গোবর, হাড্ডি সবকিছুর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার রিযকের ব্যবস্থা করেছেন। আবার কত বিশাল প্রাণীকে আল্লাহ মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। একজন কৃষক গরু দিয়ে লাঙল টানে। অথচ সেই কৃষকের চেয়ে বিশগুণ শক্তিশালী এই গরু কোন নিয়ম ভঙ্গ না করে কৃষকের আনুগত্য করে। একজন হালকা-পাতলা গড়নের মাহুত বিশাল আকারের হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। হাতিকে যে দিকে চলতে বলে সেদিকেই চলে। আবার একজন রাখালের নেতৃত্বে একপাল পশু সুনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করে। কোন্ সেই সত্তা যিনি এই শক্তিশালী পশুগুলোকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন? এছাড়াও আরো কত প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে, এদের কেউ চার পা বিশিষ্ট, কেউ দুই পা বিশিষ্ট। কারো হাত আছে তো কারো নেই। কেউ উড়তে পারে, কেউ পারে না। কারো বাস পানিতে, করো বাস মাটিতে। আবার সমুদ্রের গভীরে কত প্রজাতির প্রাণী আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। কোন্ সেই সত্তা যিনি এসকল প্রাণীসহ গোটা দুনিয়াকে মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন? তিনি আল্লাহ! আমাদের রব! আমাদের সৃষ্টিকর্তা। মানুষ যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করত, তাহ’লে ঈমানের পথে চলা তার জন্য কতই না সহজ হ’ত! তবে এই উপদেশ লাভে কেবল তারাই সক্ষম হন, যারা চিন্তার ইবাদতে নিবিষ্ট থাকেন।

১২. মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতি :

অধুনা বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানের ঈমানী সার্বভৌমত্ত আজ ভূলুণ্ঠিত। বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে অনেক সোনালী জনপদ। মাযলূমের হৃদয়ভাঙ্গা আর্তচিৎকারে স্তব্ধ হয়ে আছে আকাশ-বাতাস। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দূন আজ বিজাতীয়দের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। মুসলিমের আক্বীদা-আমল শিরক-বিদ‘আতের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। এই যে মুসলিমদের এত এত সমস্যা। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম এগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। সমস্যার প্রভাব ও কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমান মুসলিম জাতির অবস্থাকে খোলাফায়ে রাশেদা ও সালাফদের যুগের সাথে তুলনা করে দেখতে হবে। যদি আমরা সেইভাবে চিন্তার ইবাদত করতে পারি, তাহ’লে আমরা খুব সহজেই জানতে পারব কোন শক্তির কারণে সালাফগণ সারা দুনিয়ার উপর কর্তৃত্ব করেছেন, আর আমরা পদে পদে মার খাচ্ছি। কোন বিশেষণের কারণে গোটা দুনিয়া তাদের পদচুম্বন করেছে, আর কোন দোষের কারণে আমরা কাফেরদের লেজুড়বৃত্তি করছি। ফলে এই চিন্তার সোপান বেয়েই আমরা মুক্তির পথ পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

যুগে যুগে যত মুজাদ্দিদ ও মুছলিহ এই পৃথিবীতে এসেছেন, মুসলিম জাতির জন্য অফুরন্ত খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে গেছেন, কুফরী শক্তির জগদ্দল পাথরে চাপা পড়ে ইসলামী সমাজকে মুক্তির কিনারায় নিয়ে এসেছেন, ইসলামের বিজয় পতাকা বিশ্বের দরবারে উঁচু করে আগলে রেখেছেন- তাদের সবাই ছিলেন চিন্তার শক্তিতে বলীয়ান। সমাজকে নিয়ে তারা ভাবতেন। দুঃখ, দুর্দশা ও দুর্গতি থেকে মুসলিমদের মুক্তির পথ তালাশ করতেন। ফলে আল্লাহ সেই নিবেদিতপ্রাণ চিন্তাশীল মুজাদ্দিদের মাধ্যমেই মুসলিম জাতিকে সাহায্য করেছেন।

বর্তমান যুগে আলেম-ওলামা ও শীর্ষস্থানীয় মুসলিম নেতাদের এ বিষয়ে ভাবতে হবে। মুসলিমদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কাফের-মুশরিকদের ঈমান বিধ্বংসী মরণ ফাঁদগুলো খুঁজে বের করতে হবে। মুসলিমদের আক্বীদা-আমলের সমস্যা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পদস্খলনের কারণ চিহ্নিত করে সেগুলোর সামাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবেই তো মুসলিম জাতি ফিরে পাবে নিজেদের হারানো গৌবর। খুঁজে পাবে মুক্তি ও সফলতার আশ্রয়। সুতরাং একথা অকপটে বলা যায় যে, চিন্তার ইবাদত ছাড়া মুসলিম জাতির অগ্রগতি অদৌ সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে যেন চিন্তার ইবাদত করার শক্তি দান করেন এবং এর মাধ্যমে উল্লেখিত উপকারগুলো হাছিল করার তাওফীক্ব দান করেন- আমীন!

[ক্রমশঃ]

-আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ*

* এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. রাগেব ইছ্ফাহানী, আয-যারীআহ ইলা মাকারিমিশ শারীআহ, পৃ. ২০২, ২৭০

[2]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃ. ২৯

[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাত (বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ, তাবি) /১৮৩

[4]. তাফসীরে কুরতুবী, /৩১৪

[5]. যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/২৯২

[6]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, /৫৮৫

[7]. আবূ নুআইম, হিলয়াতুল আওলিয়া, ১০/১৯

[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাত, /১৮০

[9]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ, /৬৭

[10]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাত, /১৮৭

[11]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, /৪২৫

[12]. আবূ নুআইম ইছ্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া, /৩০৬; ফাছলুল খিত্বাব ফিয যুহ্দ, /১২৯

[13]. ইবনু কুদামা, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছেদীন, পৃ. ৩৭৮

[14]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/১৮৪

[15]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সাআদাত, /১৮০

[16]. তাফসীরে কুরতুবী, ১০/১২৩






বিষয়সমূহ: আমল
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দুই প্রধান কারণ (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
সুন্নাত আঁকড়ে ধরার ফযীলত (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
হজ্জ সফর (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আযান ও ইক্বামত : বিভ্রান্তি নিরসন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
বিদ‘আত ও তার পরিণতি (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মুসলিম চেতনা - মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, যশোর
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
তাক্বলীদের বিরুদ্ধে ৮১টি দলীল (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.