মারকাযের পূর্ব পার্শ্বস্থ শিক্ষক মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব। প্রধান অতিথি ছিলেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম ও যুব বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার। সম্মেলনের শেষ দিকে মাননীয় প্রধান অতিথি কাউন্সিল সদস্যদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত হেদায়াতী ভাষণ দেন।
জুম‘আর খুৎবা : খুৎবায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা শূরার ১৩ আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, মক্কার নেতারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করত। তারা আখেরাত ও ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল। তাহ’লে কোন্ সে কারণ ছিল যেজন্য তারা ‘মুশরিক’ বলে অভিহিত হ’ল? তাদের রক্ত হালাল বলে সাব্যস্ত হ’ল? এর একটাই মাত্র জওয়াব এই যে, তারা আল্লাহকে ‘খালেক্ব’ ও ‘রব’ হিসাবে মেনে নিলেও তাঁর নাযিলকৃত হালাল-হারাম ও অন্যান্য বৈষয়িক বিধি-বিধান সমূহ মানেনি। এমনকি রাসূল (ছাঃ)-কে ‘হক’ জেনেও অহংকার বশে তারা তাঁকে অস্বীকার করে। বরং সহিংস বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘ইক্বামতে দ্বীন’ অর্থ ‘ইক্বামতে তাওহীদ’ তথা তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। যা নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবীর দাওয়াত ছিল। ছাহাবায়ে কেরামের যুগ হ’তে আধুনিক যুগের সেরা মুফাসসিরগণের তাফসীর সেটাই। আমরাও সেই ব্যাখ্যা পেশ করেছি। কিন্তু বর্তমান যুগের কোন কোন রাজনৈতিক মুফাসসির এই আয়াতটির ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ইক্বামতে দ্বীন’ অর্থ ‘ইক্বামতে হুকূমত’ তথা ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ বলেছেন। তাদের মতে, ইক্বামতে দ্বীনের অর্থই হ’ল ইসলামী হুকূমত কায়েম করা ও এজন্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া এবং এর বাইরে সবকিছুই হ’ল ‘খিদমতে দ্বীন’। তাঁরা বলেন, ‘দ্বীন আসলে হুকূমতের নাম। শরী‘আত হ’ল ঐ হুকূমতের কানূন। আর ইবাদত হ’ল ঐ আইন ও বিধানের আনুগত্য করার নাম’। অর্থাৎ নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবী প্রেরিত হয়েছিলেন ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর তাঁদের দৃষ্টিতে হুকূমত প্রতিষ্ঠাই হ’ল সবচেয়ে ‘বড় ইবাদত’। যেমন তাঁরা বলেন,‘উক্ত ইবাদতের তাৎপর্য যার সম্বন্ধে লোকেরা বুঝে রেখেছে যে, ওটা স্রেফ নামায-রোযা ও তাসবীহ-তাহলীলের নাম, দুনিয়াবী বিষয়ের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। অথচ প্রকৃত কথা এই যে, ছওম ও ছালাত, হজ্জ ও যাকাত, যিকর ও তাসবীহ মানুষকে উক্ত ‘বড় ইবাদত’ অর্থাৎ (‘ইসলামী হুকূমত’) প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্ত্ততকারী ‘ট্রেনিং কোর্স’ মাত্র’।
মূলতঃ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুসলমানদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দেওয়ার
জন্য তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঐসময় তিনটি আন্দোলন গতি লাভ করে। সেগুলি হ’ল ১৯০৮
সালে পাঞ্জাবের ভন্ডনবী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর আন্দোলন, ১৯২১ সালে তাবলীগ
জামাত ও ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী। এগুলো থেকে আমাদের কর্মীদের সাবধান
থাকা আবশ্যক। তিনি বলেন, দ্বীনের প্রসারের জন্য দাওয়াত অপরিহার্য। সেইসাথে
দ্বীন কায়েমের জন্য সংগঠন অপরিহার্য। কিন্তু দ্বীনের বিজয় সাধন আল্লাহর
ইচ্ছাধীন। অতএব দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার জন্য আমাদের জাগ্রত জ্ঞান সহকারে
আল্লাহর পথে দাওয়াত দান ও জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা অবশ্য কর্তব্য।