ভূমিকা :

চিরসবুজ-সজীব যৌবনে উদ্দীপ্ত থাকতে চায় প্রতিটি মানুষ। কিন্তু মানুষের জন্য এটি অসাধ্য ও অসম্ভব। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবর্তন আসে তারুণ্যে-যৌবনে। প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য উঁকিঝুঁকি দেয় ক্রমে ক্রমে। ঘনকালো চুলের রং বদলাতে থাকে ধীরে ধীরে। একটি-দু’টি করে সাদা হ’তে থাকে মাথার কেশগুচ্ছ। বার্ধক্য মুমিনকে পরকাল সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়। মুমিন তখন পরকালীন প্রস্ত্ততি গ্রহণে আরো বেশী অগ্রগামী হয়। এছাড়া বার্ধক্যের কারণে চুল সাদা হ’লে প্রভূত নেকী অর্জিত হয়, গুনাহ মাফ হয় এবং পরকালে নূর প্রাপ্তির মাধ্যম হয়।

ইসলামী শরী‘আতে সাদা চুলে মেহেদী বা কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে, যা চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَحْسَنَ مَا غَيَّرْتُمْ بِهِ هَذَا الشَّيْبَ الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ،তোমরা যে সকল বস্ত্ত দ্বারা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করে থাক, তন্মধ্যে মেহেদী এবং কাতাম সর্বোত্তম’।[1] তবে সাদা চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এ ব্যাপারে শরী‘আতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

কালো খেযাব ব্যবহারের শারঈ বিধান :

শরী‘আতে কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম থেকে অনেক নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

(১) আবুবকর (রাঃ)-এর পিতা আবু কুহাফার চুল ও দাড়ি কাশফুলের মত সাদা হয়ে গিয়েছিল। মক্বা বিজয়ের দিন তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আনা হ’লে তিনি তাকে মেহেদী ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তবে সতর্ক করে বলেন, غَيِّرُوْا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ، ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও, তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে’।[2] (২) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, غَيِّرُوْا الشَّيْبَ وَلاَ تُقَرِّبُوهُ السَّوَادَ، ‘তোমরা শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর। তবে কালো খেযাবের ধারে কাছে যাবে না’।[3]

(৩) আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,كُنَّا يَوْمًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلَتْ عَلَيْهِ الْيَهُودُ، فَرَآهُمْ بِيضَ اللِّحَى، فَقَالَ: مَا لَكُمْ لَا تُغَيِّرُونَ؟ فَقِيلَ: إِنَّهُمْ يَكْرَهُونَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَكِنَّكُمْ غَيِّرُوا، وَإِيَّايَ وَالسَّوَادَ ‘আমরা একদা রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে বসা ছিলাম। এমন সময় একদল ইহুদী তাঁর নিকট প্রবেশ করল। তিনি তাদের সাদা দাড়ি দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন একে পরিবর্তন করো না? বলা হ’ল, তারা এটা অপসন্দ করে। নবী করীম (ছাঃ) তখন বললেন, তোমরা শুভ্রতাকে পরিবর্তন করবে। তবে অবশ্যই কালো খেযাব ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকবে’।[4]

কালো খেযাব ব্যবহারের শাস্তি :

কালো খেযাব ব্যবহার করা সাধারণ কোন নিষেধ নয়। বরং এটা এমন পাপ যার জন্য ব্যবহারকারী জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُوْنَ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ، كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُوْنَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ، ‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কবুতরের বক্ষের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে। ফলে তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না’।[5]

কালো খেযাব ব্যবহারকারীদের দিকে আল্লাহ দৃষ্টি দিবেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يُسَوِّدُوْنَ أَشْعَارَهُمْ لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَيْهِمْ- ‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা তাদের চুলসমূহে কালো খেযাব ব্যবহার করবে। আল্লাহ তাদের প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না’।[6]

তাবেঈ সাঈদ ইবনু জুবায়েরকে কালো খেযাব ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি তা অপসন্দ করেন। তিনি বলেন, يَكْسُو اللَّهُ الْعَبْدَ فِي وَجْهِهِ النُّورَ، ثُمَّ يُطْفِئُهُ بِالسَّوَادِ! ‘আল্লাহ তা‘আলা বান্দার চেহারায় নূর পরিধান করাবেন। অতঃপর কালো খেযাব ব্যবহার করার কারণে তা নির্বাপিত করে দেওয়া হবে!’[7]

কালো খেযাব ব্যবহার বৈধ হওয়ার পক্ষে বর্ণিত দলীলগুলোর পর্যালোচনা :

একদল বিদ্বান কিছু যঈফ হাদীছ ও আছারের উপর ভিত্তি করে কালো খেযাব ব্যবহার করাকে জায়েয মনে করেন, যা সঠিক নয়। এক্ষণে কালো খেযাব ব্যবহারের পক্ষে উপস্থাপিত দলীলগুলোর পর্যালোচনা পেশ করা হ’ল-

1-عَنْ صُهَيْبِ الْخَيْرِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَحْسَنَ مَا اخْتَضَبْتُمْ بِهِ لَهَذَا السَّوَادُ، وَأَرْغَبُ لِنِسَائِكُمْ فِيكُمْ، وَأَرْهَبُ فِي صُدُورِ عَدُوِّكُمْ-

১. ‘ছুহায়ব আল-খায়ের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা যা দিয়ে চুল রঙ্গিন করো তার মধ্যে এই কালো খেযাব খুবই উত্তম। তাতে তোমাদের প্রতি নারীদের আকর্ষণ আছে এবং জিহাদে তা তোমাদের শত্রুদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে’।[8]

পর্যালোচনা : উক্ত হাদীছের সনদে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে। আব্দুল হামীদ বিন ছায়ফী ও দেফা‘ বিন দাগফাল সাদূসী। শায়খ আলবানী (রহঃ) এই হাদীছের সনদকে যঈফ ও মতনকে মুনকার বলেছেন। কারণ তা ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী।[9] উপরোক্ত যঈফ হাদীছের ভিত্তিতে কোন কোন বিদ্বান জিহাদের ময়দানে দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু হাদীছটিই যখন যঈফ তখন উক্ত বর্ণনা থেকে কোন প্রকারের দলীল গ্রহণের সুযোগ নেই।

২. আবুল বুখতারী (রহঃ) বলেন,أَن عمر بن الْخطاب كَانَ يَأْمر بالخضاب بِالسَّوَادِ، وَيَقُول : هُوَ أسكن للزَّوْجَة، وأهيب فِي الْعَدو، ‘ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলতেন, এটি স্ত্রীর জন্য প্রশান্তিময় এবং শত্রুদের ক্ষেত্রে ভীতি সঞ্চারকারী’।[10]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারের সনদে হারেছ বিন ওমর নামে একজন মাজহূল রাবী রয়েছে।[11] এছাড়া আবুল বুখতারীর জীবনী খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তিনি সম্ভবত আত-ত্বাঈ। তিনি ছিক্বাহ রাবী হ’লেও তিনি ওমর থেকে উক্ত বক্তব্য সরাসরি শুনেননি।[12]

৩. ইবনু আবিল মুলায়কা (রহঃ) বলেন,أَنَّ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّان كَانَ يخضب بِالسَّوَادِ، ‘নিশ্চয়ই ওছমান বিন আফফান (রাঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করতেন’।[13]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারের সনদ মুরসাল ও মুনকাতে‘। ইবনু আবিল মুলায়কাহ ওছমান (রাঃ)-কে দেখেননি বা তার কথা শুনেননি। কারণ তাদের মাঝে ৮২ বছরের ব্যবধান ছিল।[14] তাছাড়া তাতে বাশীর বিন শু‘বা নামে একজন মাজহূল রাবী রয়েছে।[15] উপরন্তু ওছমান বিন আফফান (রাঃ)-এর হলুদ মেহেদী ব্যবহারের ব্যাপারে ছহীহ সনদে আছার বর্ণিত হয়েছে।[16]

4- عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ أَنَّ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ كَانَ يَخْضِبُ بِالسَّوَادِ-

৪. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করতেন।[17]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারের সনদে সুলাইম বিন মুসলিম নামে একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে। এছাড়াও আছারটি অন্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেখানেও রুশদায়েন বিন সা‘দ নামে যঈফ রাবী রয়েছে।[18] সুতরাং বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।

5- عَنِ الشَّعْبِيِّ أَنَّ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ يَخْضِبُ بِالسَّوَادِ-

৫. শা‘বী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, হাসান বিন আলী (রাঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করতেন।[19]

পর্যালোচনা : উক্ত হাদীছের সনদে ইয়াকূব আল-কুম্মী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে।[20] তাছাড়া বর্ণনাটি তার আমল বিরোধী। কারণ হাসান বিন আলী (রাঃ) লাল ও হলুদ রঙের খেযাব ব্যবহার করতেন।[21]

6-عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ قَالَ: رَأَيْتُ الْحُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ يَخْضِبُ بِالسَّوَادِ-

৬. সাঈদ আল-মাক্ববুরী বলেন, আমি হোসাইন বিন আলী (রাঃ)-কে কালো খেযাব ব্যবহার করতে দেখেছি।[22]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারের সনদে আবুল আহওয়াছ নামে একজন রাবী রয়েছে, যাকে ইমাম নাসাঈ মাজহূল বলেছেন। ইবনু মাঈন বলেন, তিনি কিছুই না।[23] আছারটি আরেকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে আবু মা‘শার নামে একজন অত্যন্ত যঈফ রাবী রয়েছে।[24] তাছাড়া হোসাইন (রাঃ) নিজে হলুদ ও লাল রঙের মেহেদী ব্যবহার করতেন।[25]

7- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً وَقَدْ خَضَبَ بِالسَّوَادِ فَلْيُعْلِمْهَا وَلَا يَغُرَّنَّهَا-

৭. আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি কেউ কালো খেযাব দেওয়া অবস্থায় কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় তাহ’লে সে যেন বিষয়টি তাকে জানিয়ে দেয় এবং সে যেন অবশ্যই তার সাথে প্রতারণা করা থেকে বিরত থাকে’।[26]

পর্যালোচনা : উক্ত হাদীছের সনদে ঈসা বিন মায়মূন নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। যাকে সকল মুহাদ্দিছ যঈফ বলেছেন।[27]

8- عن أَبي عُشَانَةَ الْمَعَافِرِيّ قَالَ: رَأَيْتُ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ يَخْضِبُ بِالسَّوَادِ وَيَقُولُ: نُسَوِّدُ أَعْلَاهَا وَتَأْبَى أُصُولُهَا-

৮. আবূ উশানাহ মা‘আফেরী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উক্ববা বিন আমের (রাঃ)-কে কালো খেযাব ব্যবহার করতে দেখেছি। তিনি বলতেন, আমরা চুলের উপরিভাগে কালো খেযাব ব্যবহার করেছি। কিন্তু চুলের মূলে তা পৌঁছত না’।[28]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারের সনদে কোন দুর্বল রাবী বা বর্ণনাকারী না থাকলেও ইবনু আবী দাঊদ বলেন, সা‘দ বিন লায়ছ আবূ উশানাহ থেকে এই হাদীছ ব্যতীত অন্য কোন হাদীছ শুনেননি। যা বর্ণনাটির দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে।[29]

তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীছের বিপরীতে ছাহাবী বা তাবেঈর ব্যক্তিগত আমল গ্রহণযোগ্য নয়।[30]

9- عَن بن شِهَابٍ قَالَ كُنَّا نُخَضِّبُ بِالسَّوَادِ إِذْ كَانَ الْوَجْهُ جَدِيدًا فَلَمَّا نَغَضُّ الْوَجْهَ وَالْأَسْنَانَ تَرَكْنَاهُ-

৯. ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যৌবনকালে কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। যখন আমাদের চেহারা ও দাঁতে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে গেল তখন কালো খেযাব ব্যবহার ছেড়ে দিলাম’।[31]

পর্যালোচনা : শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটি যঈফ এবং উক্ত আছারে কালো খেযাব ব্যবহারের কোন বৈধতা নেই।[32] তিনি অন্যত্র বলেন, যদিও এর সনদ ইমাম যুহরী পর্যন্ত ছহীহ ধরা হয় তাতেও কালো খেযাব ব্যবহারের কোন দলীল নেই। কারণ এটি মাকতূ‘ ও মাওকূফ। যদি এটি মারফূও ধরা হয় তবেও তাতে দলীল নেই। কারণ তা মুরসাল। বড় আশ্চর্যের বিষয় হ’ল ইউসুফ কারযাভী কী করে এই আছার দ্বারা জাবের (রাঃ) বর্ণিত, বিশুদ্ধ হাদীছের বিপরীতে দলীল গ্রহণ করলেন?[33]

10- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لاَ يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ فِى حَدِيثِهِ قَالَ الزُّهْرِىُّ وَأَمَرَ بِالأَصْبَاغِ فَأَحْلَكُهَا أَحَبُّ إِلَيْنَا قَالَ مَعْمَرٌ وَكَانَ الزُّهْرِىُّ يَخْضِبُ بِالسَّوَادِ-

১০. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইহুদী ও নাছারারা খেযাব লাগায় না। অতএব তোমরা তাদের বিপরীত করবে। আব্দুর রাযযাক তার বর্ণিত হাদীছে বলেন, ইমাম যুহরী বলেন, রাসূল (ছাঃ) শুভ্রতাকে পরিবর্তন করার আদেশ করেছেন। আর কালো খেযাব দ্বারা পরিবর্তন করা আমাদের নিকট প্রিয় ছিল। মা‘মার বলেন, ইমাম যুহরী (রহঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করতেন।[34]

পর্যালোচনা : উক্ত আছারে বর্ণিত ইমাম যুহরীর আমল ছহীহ সনদে প্রমাণিত।[35] তবে তার আমলটি ছহীহ হাদীছের পরিপন্থী হওয়ায় তা পরিত্যাজ্য। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর একটি আমল রাসূল (ছাঃ)-এর আমলের বিপরীত হ’লে করণীয় সম্পর্কে ইবনু ওমরকে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি উত্তরে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ أَبِي نَهَى عَنْهَا وَصَنَعَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَأَمْرَ أَبِي نَتَّبِعُ؟ أَمْ أَمْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟، فَقَالَ الرَّجُلُ: بَلْ أَمْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘তুমি কি মনে কর? কোন বিষয় যদি আমার পিতা নিষেধ করেন আর রাসূল (ছাঃ) তা করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে কি আমার পিতার অনুসরণ করা হবে, না কি রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা হবে? লোকটি বলল, রাসূল (ছাঃ)-এর আমলেরই (অনুসরণ করা হবে)।[36] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনু ওমর এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন,أَفَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَقُّ أَنْ تَتَّبِعُوا سُنَّتَهُ أَمْ سُنَّةَ عُمَرَ، ‘তোমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য, না ওমরের সুন্নাত’।[37]

ইবনু আববাস (রাঃ)-কে মতভেদপূর্ণ মাসআলায় করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, أقول لكم: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، وتقولون: قال أبو بكر وعمر، يوشك أن تنزل عليكم حجارة من السماء، ‘আমি তোমাদের বলি, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আর তোমরা বল, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) বলেছেন? এমনটা মনে করলে খুব শীঘ্রই তোমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে’।[38]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,لاَ يُتْرَكُ الحَدِيثُ الصَّحِيحُ المَعْصُومُ لِمُخَالَفَةِ رَاوِيهِ لَهُ، فَإنَّ مُخَالَفَتَهُ لَيْسَتْ مَعْصُومَةٌ، ‘বর্ণনাকারীর বিরোধী আমল বা উক্তির কারণে ত্রুটিমুক্ত ছহীহ হাদীছ বর্জন করা যাবে না। কারণ তার বিরোধিতা করাটা ত্রুটিমুক্ত নয়’।[39]

ইসমাঈল আনছারী (রহঃ) বলেন, وَلاَ شَكَّ أنَّ قَوْلَ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِعْلَهُ أحَقُّ وَأوْلَى بِالاتِّبَاعِ مِن قَوْلِ غَيْرِهِ كَائِناً مَن كَانَ، ‘নিঃসন্দেহে রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও কর্মের আনুগত্য করা অধিক উপযুক্ত ও যৌক্তিক অন্য যে কারো আনুগত্য অপেক্ষা’।[40]

এছাড়াও বেশ কিছু ছাহাবী ও তাবেঈ থেকে কালো খেযাব ব্যবহার করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।[41] তবে কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ছাহাবীদের থেকে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো যঈফ। আর কতিপয় তাবেঈ থেকে ছহীহ সনদে বিষয়টি বর্ণিত হ’লেও তা সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা বিরোধী হওয়ায় পরিত্যাজ্য। সেজন্য আত্বা বিন রাবাহ (রহঃ) কালো খেযাব সম্পর্কে বলেন, هُوَ مِمَّا أَحْدَثَ النَّاسُ: قَدْ رَأَيْتُ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْهُمْ يَخْتَضِبُ بِالْوَسْمَةِ، مَا كَانُوا يَخْضِبُونَ إِلَّا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ، وَهَذِهِ الصُّفْرَةِ، ‘ কালো খেযাব মানুষের আবিষ্কৃত। আমি একদল ছাহাবীকে দেখেছি তাদের কেউ কালো খেযাব ব্যবহার করেননি। তারা কেবল মেহেদী, কাতাম ঘাস ও হলুদ রঙের খেযাব ব্যবহার করতেন’।[42] উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর বুকে প্রথম কালো খেযাব ব্যবহার করে ফেরাঊন এবং মক্কায় প্রথম কালো খেযাব ব্যবহার করেন আব্দুল মুত্তালিব।[43]

কালো খেযাব অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের অভিমত :

কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়েয বা নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের মতপার্থক্য রয়েছে। একদল বিদ্বান মনে করেন কালো খিযাব ব্যবহার করা মাকরূহ বা অপসন্দনীয় বলেছেন। এক্ষেত্রে তারা ছাহাবী বা তাবেঈগণের ব্যাপারে বর্ণিত আছারগুলো থেকে দলীল নিয়েছেন, যেগুলো যঈফ। আরেকদল বিদ্বান রাসূল (ছাঃ) থেকে কালো খিযাব ব্যবহার নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরাসরি মারফূ হাদীছ বর্ণিত হওয়ায় এটিকে হারাম বলেছেন। যেমন-

ইমাম নববী (রাঃ) বলেন,وَمَذْهَبُنَا اسْتِحْبَابُ خِضَابِ الشَّيْبِ لِلرَّجُلِ وَالْمَرْأَةِ بِصُفْرَةٍ أَوْ حُمْرَةٍ وَيَحْرُمُ خِضَابُهُ بِالسَّوَادِ عَلَى الْأَصَحِّ، ‘আমাদের মাযহাব হ’ল সাদা চুল-দাড়িতে লাল বা হলুদ খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব এবং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম’।[44]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,وَأَمَّا الْخِضَاب بِالسَّوَادِ : فَكَرِهَهُ جَمَاعَة مِنْ أَهْل الْعِلْم، وَهُوَ الصَّوَاب بِلَا رَيْب لِمَا تَقَدَّمَ، ‘কালো খেযাব ব্যবহার করার বিষয়টি একদল বিদ্বান অপসন্দ করেছেন। নিঃসন্দেহে এটিই সঠিক যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে’।[45] পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ ‘কারাহাত’কে হারাম অর্থে ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ তারা হারাম ও মাকরূহের মধ্যে পার্থক্য করতেন না। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ‘ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন’ গ্রন্থে لَفْظُ الْكَرَاهَةِ يُطْلَقُ عَلَى الْمُحَرَّمِ ‘কারাহাত শব্দ হারাম অ©র্থ ব্যবহার’ শীর্ষক অধ্যায় রচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ ‘কারাহাত’ (অপসনদনীয়) দ্বারা যা উদ্দেশ্য নিয়েছেন তা ছিল হারাম। কিন্তু পরবর্তীতে শৈথিল্যবাদীরা একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন, যা চরম ভুল।

আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,أما الصبغ بغير السواد فهو ثابت عنهم وهو الموافق لفعله صلى الله عليه وسلم وقوله وأما قوله: وخضب جماعة منهم بالسواد قلت : إن ثبت هذا عنهم فلا حجة في ذلك لأنه خلاف السنة الثابتة عنه صلى الله عليه وسلم فعلا وقولا وقد قال تعالى : {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ}..الآية. ومن الثابت عن كبار الصحابة كأبي بكر وعمر، ‘কালো ব্যতীত অন্য রঙের খেযাব ব্যবহার করা ছাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত। আর এটি রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও কর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর তার (ইউসুফ কারযাভীর) উক্তি ‘তাদের একদল কালো খেযাব ব্যবহার করতেন’ যদি প্রমাণিত হয়েও থাকে, তবে এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। কারণ তা রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও কর্ম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতের বিরোধী। আর আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও’ (নিসা ৪/৫৯)। আর অন্য রঙের খেযাব ব্যবহারের বিষয়টি বড় বড় ছাহাবী যেমন আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত’।[46]

তিনি আরো বলেন, والصواب أن الأحاديث في هذا الباب لا اختلاف بينها بوجه فإن الذي نهى عنه الرسول صلى الله عليه وسلم من تغيير الشيب أمران: أحدهما: نتفه. والثاني: خضابه بالسواد كما تقدم. والذي أذن فيه هو صبغه وتغييره بغير السواد كالحناء والصفرة وهو الذي عمله الصحابة رضي الله عنهم ‘সঠিক হ’ল এই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। রাসূল (ছাঃ) শুভ্রতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় নিষেধ করেছেন। ১. সাদা চুল তুলে ফেলা। ২. কালো খেযাব ব্যবহার করা। যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে। আর যে বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন তা হ’ল কালো খেযাব ব্যতীত অন্য রং দ্বারা রঞ্জিত করা এবং শুভ্রতা পরিবর্তন করা। যেমন মেহেদী ও হলুদ রং দ্বারা। আর এটাই ছিল ছাহাবায়ে কেরামের আমল’।[47]

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন,لا يجوز صبغ اللحية ولا غيرها بالسواد ... فلا يجوز تغيير الشيب بالسواد لا من المرأة ولا من الرجل، ‘দাড়িতে ও অন্যান্য চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়েয নয়...। সুতরাং নারী-পুরুষ কারো জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করে শুভ্রতাকে পরিবর্তন করা বৈধ নয়’।[48]

শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,وإذا كان هذا حكم الصبغ الأسود، فإن في الحلال غنى عنه، ‘আর যদি কালো খেযাবের বিধানের বিষয়ে বলা হয়, তাহ’লে তা হালাল হওয়ার ব্যাপারে শরী‘আত মুক্ত’।[49] অর্থাৎ কালো খেযাব ব্যবহার করা হালাল নয়। তিনি আরো বলেন,صبغ الشعر إذا كان بالسواد فإن النبي صلى الله عليه وسلم، نهى عنه حيث أمر بتغيير الشيب وتجنيبه السواد قال: غيروا هذا الشيب وجنبوه السواد. وورد في ذلك أيضًا وعيد على من فعل هذا، وهو يدل على تحريم تغيير الشعر بالسواد، ‘যখন কালো রং দ্বারা চুল রঞ্জিত করা হবে সে ব্যাপারে রাসূল নিষেধ করে কালো ব্যতীত অন্য রং দ্বারা শুভ্রতাকে পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এই শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর এবং কালো থেকে বেঁচে থেকো। যারা এই কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে চরম সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, কালো খিযাব দ্বারা শুভ্রতা পরিবর্তন করা হারাম’।[50]

শায়খ ছালেহ ফাওযান (রহঃ) বলেন,لا يجوز صبغ اللحية وشعر الرأس بالسواد وإنما يصبغ الشيب بغير السواد لقوله صلى الله عليه وسلم : غيروا هذا الشيب وجنبوه السواد ‘দাড়ি ও মাথার চুলে কালো খিযাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। শুভ্রতাকে পরিবর্তন করতে হবে কেবল কালো ব্যতীত অন্য যে কোন রং দ্বারা। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা এই শুভ্রতাকে পরিবর্তন কর এবং কালো থেকে বেঁচে থেকো।[51]

এ ব্যাপারে ফৎওয়া লাজনা দায়েমায় বলা হয়েছে,أما التغيير بالسواد الخالص: فلا يجوز، للرجال والنساء لقول النبي صلى الله عليه وسلم غيروا هذا الشيب واجتنبوا السواد، ‘প্রকৃত কালো খেযাব ব্যবহার করে চুল পরিবর্তন করা নারী-পুরুষ কারো জন্য জায়েয নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও, তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে’।[52] অতএব কালো খেযাব ব্যবহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

খেযাব ব্যবহার করলেও সাদা চুল-দাড়ির মর্যাদা পাওয়া যাবে :

সাদা চুল বা দাড়িতে খেযাব ব্যবহার করলে হাদীছে বর্ণিত মর্যাদা প্রাপ্তিতে কোন ঘাটতি হবে না। কারণ শরী‘আতে সাদা চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলাকে দোষণীয় বলা হয়েছে। একইভাবে খেযাব ব্যবহার করাকে প্রশংসনীয় বলা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي سَبِيلِ اللهِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ القِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি ইসলামের উপর থাকা অবস্থায় কিছু পরিমাণ চুলও সাদা হবে, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য তা বিশেষ প্রকারের নূর হবে।[53] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِى سَبِيلِ اللهِ كَانَتْ نُوراً يَوْمَ الْقِيَامَةِ. فَقَالَ رَجُلٌ عِنْدَ ذَلِكَ فَإِنَّ رِجَالاً يَنْتِفُونَ الشَّيْبَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ شَاءَ فَلْيَنْتِفْ نُورَهُ، ‘যে ব্যক্তির মুসলিম অবস্থায় কিছু পরিমাণ চুল সাদা হবে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য বিশেষ প্রকারের নূর হবে। তখন জনৈক ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোকেরাতো সাদা চুল তুলে ফেলে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি পসন্দ করে সে তার নূরকে উপড়ে ফেলুক’।[54] তিনি আরো বলেন, لَا تَنْتِفُوا الشَّيْبَ فَإِنَّهُ نُورٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلَامِ كُتِبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ وَرُفِعَ له بها درجة ‘তোমরা শুভ্র কেশ তুলে ফেলো না। কেননা তা ক্বিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি) হবে। ইসলামে যে ব্যক্তির একটি কেশ শুভ্র হবে, সে ব্যক্তির প্রত্যেক শুভ্র কেশের পরিবর্তে আল্লাহ তার জন্য একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করবেন, একটি করে গোনাহ মুছে দিবেন এবং একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন’।[55] সুতরাং হাদীছে দু’টি বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমটি হ’ল সাদা চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলা। আর দ্বিতীয়টি হ’ল কালো খেযাব ব্যবহার করা। অতএব চুল ও দাড়ি যেমন উপড়ে ফেলা যাবে না, তেমনি সাদা চুল ও দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহার করা যাবে না।[56]

উপসংহার :

উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হ’ল যে, সাদা চুল ও দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম। কোন কোন বিদ্বান একে মাকরূহ বা অপসন্দনীয় সাব্যস্ত করেছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তারা যেসব দলীল দ্বারা এটা প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তার কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ

কালো খেযাব ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার হাদীছগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে এবং যঈফ হাদীছের উপর নির্ভর করে কালো খেযাব ব্যবহার জায়েয বলতে চেয়েছেন. যা ইসলামী শরী‘আতের উদ্দেশ্য বিরোধী। কারণ যে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) থেকে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সে বিষয়ে বিপরীত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। বরং মুমিনের বৈশিষ্ট্য হ’ল যখন কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্দেশনা পাবে, তখন সেটা বিনা বাক্য ব্যয়ে অবনত মস্তকে মেনে নিবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)

অতএব কালো খেযাব ব্যবহারের বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদেরকে আমল করতে হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের সকলকে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

 নিয়ামতপুর, নওগাঁ।

[1]. আবূদাউদ হা/৪২০৫; আহমাদ হা/২১৩৪৫; ছহীহাহ হা/১৫০৯

[2]. মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; ছহীহাহ হা/৪৯৬

[3]. আহমাদ হা/১৩৬১৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১৬৯

[4]. ত্ববারাণী আওসাত্ব হা/১৪২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৮৯; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ পৃ. ৮৬; জিলবাব পৃ. ১৯১, হাদীছ ছহীহ

[5]. আবূদাঊদ হা/৪২১২; মিশকাত হা/৪৪৫২; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯৭

[6]. ত্ববারাণী আওসাত্ব হা/৩৮০৩; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৯৩, সনদ জাইয়েদ; তামামুল মিন্নাহ পৃ. ৮৬

[7]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩২, সনদ ছহীহ, তাহক্বীক্ব আবূ মুহাম্মাদ উসামা বিন ইবরাহীম

[8]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৫; যঈফাহ হা/২৯৭২; তামামুল মিন্নাহ ৮৭পৃ.

[9]. যঈফাহ হা/২৯৭২; যঈফুল জামে‘ হা/১৩৭৫

[10]. ত্ববারাণী, তাহযীবুল আছার হা/৮৩৩

[11]. লিসানুল মীযান ২/১৫৫; আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ৩/৮২

[12]. লিসানুল মীযান ৭/৪৫২

[13]. তাহযীবুল আছার হা/৮৫৩

[14]. ইবনু আবী হাতেম রাযী, আল-মারাসীল পৃ. ২২

[15]. আছ-ছিকাত ৬/৯৭

[16]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০৩৪

[17]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৯৫

[18]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮০৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[19]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৫৩৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮০৮, আল্লামা হায়ছামী এর রাবীকে ছিক্বাহ বলেছেন

[20]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩০০, রাবী নং ৭৯

[21]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৭৮১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৩, সনদ ছহীহ

[22]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৭৮৬

[23]. তাহযীবুত তাহযীব ১২/০৬ রাবী নং ৮২৫২; লিসানুল মীযান, রাবী নং ১২২৯; মীযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ৩৩৪৪

[24]. তাহযীবুল কামাল ২৯/৩২৫; মীযানুল ই‘তিদাল ৪/২৪৬

[25]. ত্ববারাণী কাবীর হা/২৭৮১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮১৩, সনদ ছহীহ

[26]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৪৬৯৯

[27]. আলবানী, যঈফাহ হা/৯৭৮; ইরওয়া হা/১৯৯৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[28]. ত্ববারাণী কাবীর হা/৭৩৬; ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০২৫; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৮০৫

[29]. শারহু মুশকিলুল আছার হা/৩৬৯৯

[30]. সাইয়েদ সালেম, ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৫

[31]. ইবনু আবী আছেম, কিতাবুল খেযাব, ফাৎহুল বারী ১০/৩৫৫; তোহফা ৫/৩৫৫

[32]. গায়াতুল মারাম হা/১০৬

[33]. তামামুল মিন্নাহ, ৮৪ পৃ.

[34]. বুখারী হা/৫৮৯৯; মুসলিম হা/২১০৩; আহমাদ হা/৮০৬৯; জামে‘ মা‘মার বিন রাশেদ হা/২০১৭৬।

[35]. আহমাদ হা/৮০৬৯, ১৬৭২৯, শু‘আইব আরনাউত (রহঃ)-এর সনদকে ছহীহ বলেছেন

[36]. মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ

[37]. আহমাদ হা/৫৭০০; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা হা/৫৫৬৩; আবু ‘আওয়ানা হা/ ৩৩৬৬, সনদ ছহীহ

[38]. ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৫, ২/১৮৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/৭৮

[39]. ই‘লামুল মুয়াক্কিঈন ৩/৩৬

[40]. হুকমুদ্দীন আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ১৩ পৃ.

[41]. আহমাদ হা/১৬৬৭৮

[42]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০২৭, ২৫৫১৬, সনদ ছহীহ

[43]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫০২৮

[44]. শরহে মুসলিম ১৪/৮০

[45]. তাহযীবুস সুনান, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৩৭

[46]. তামামুল মিন্নাহ, ৮৩ পৃ.

[47]. তামামুল মিন্নাহ, ৭৭ পৃ.

[48]. বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৫৩।

[49]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৩

[50]. মাজমূ’ ফাতাওয়া ১১/১২০

[51]. মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; আল-মুনতাক্বা ২/৭৫ প্রশ্ন নং- ২৪৫

[52]. মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৬৮ পৃ.

[53]. তিরমিযী হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/৩৮৭৩; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯৪

[54]. আহমাদ হা/২৩৯৯৮; ছহীহাহ হা/৩৩৭১; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯২

[55]. ইবনু হিববান হা/২৯৮৫; ছহীহুত তারগীব হা/২০৯৬

[56]. ইবনুল ক্বাইয়িম, তাহযীবু সুনানি আবীদাঊদ ২/২৮৪; আউনুল মা‘বুদ ১১/১৭২ পৃ.






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
মানুষের সাথে আচার-ব্যবহারের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
হজ্জের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফযীলত - ইহসান ইলাহী যহীর
রবার্ট ক্লাইভ : ইতিহাসের এক ঘৃণ্য খলনায়ক - ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান
পলাশীর মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি ও আমাদের শিক্ষা - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
শারঈ জ্ঞানার্জনের বাধ্যবাধকতা ও বর্তমান সমাজ বাস্তবতা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
সুন্নাত আঁকড়ে ধরার ফযীলত (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
দাফনোত্তর দলবদ্ধ মুনাজাতের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের গুরুত্ব ও উপায় - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৫ম কিস্তি ফেব্রুয়ারী সংখ্যার পর) - মুযাফফর বিন মুহসিন
আরও
আরও
.