সুনামগঞ্জের নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মাদ যাকির হোসাইন ৬৫ শিশু-কিশোরসহ শতাধিক আসামীকে গত ২০শে জুলাই দুপুরে ভালো কাজের শর্তে মুক্তি দানের বিরল এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগেও একই বিচারক ১৪৫ মামলায় ২০০ শিশু-কিশোরকে কারাগারের বদলে পরিবারে ফেরত পাঠান বলে আদালতের পিপি নান্টু রায় জানান।
প্রবেশন ব্যবস্থায় বিচার শেষে কেউ যখন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার উপক্রম হয় তখন বিশেষ সুযোগ দিতে পারে আদালত। এখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেনে চলার জন্য কতকগুলো শর্ত দেওয়া হয়। আসামী শর্ত মানছেন কি-না তা দেখার জন্য দেশের প্রতিটি যেলায় আছেন প্রবেশন কর্মকর্তা। পিপি বলেন, বিচারক যাদের প্রবেশন দিয়েছেন তারা বিভিন্ন ছোটখাটো মামলার আসামী ছিলেন। পারিবারিক, সামাজিক ও গ্রাম্য কোন্দলের পর পরিবারের বড়দের সঙ্গে আসামী হয় অনেকে।
আদালত যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন দু’টি ভালো কাজ করে ডায়েরীতে লিপিবিদ্ধ করা, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা, নিয়মিত ধর্ম পালন, পিতা-মাতার আদেশ মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ ইত্যাদি।
তাদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য যেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে আদালত। যিনি তিন মাস পরপর ১ বছর পর্যন্ত আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন।
একই দিনে বিচারক ২৫ দম্পতিকেও সংসারে ফিরে যাওয়ার রায় ঘোষণা করেছেন। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা এমনই একজন নারী হাসনা। যার সংসার ভাঙে ১১ বছর আগে। তার অনুভূতি- ‘মামলা করার পর ১১ বছর ধরে খুব কষ্ট করেছি। সমাজ ভাল চোখে দেখেনি। পরিবারেও ছিলাম উপেক্ষিত। সবকিছু ছিল এলোমেলো। আদালত আজ আমাদের আবার এক করে দিয়েছে। সংসারের সুখ -দুঃখ মোকাবেলা করে পরস্পরকে ধরে বাকী জীবন কাটাতে চাই।
অন্যদিকে গত ২রা আগস্ট নিয়মিত ছালাত আদায় এবং মাদক সেবন না করার শর্তে মুক্তি দিয়েছেন মৌলভীবাজারের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মাদ আলী আহসান। মুক্তি পাওয়া নূর মিঞা শ্রীমঙ্গল উপযেলার সিরাজনগরের বাসিন্দা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, একটি মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এদিন তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। কিন্তু আসামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আদালত। প্রবেশন আইনে নিয়মিত ছালাত আদায়, ১০০টি গাছ রোপণ, নতুন করে কোনও অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রবেশনকালে এসব শর্তের কোনটি ভঙ্গ করা হ’লে তাকে আদালতের দেওয়া তিন বছরের কারাদন্ড কারাগারে থেকে ভোগ করতে হবে। মৌলভীবাজার যেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএসএম আযাদুর রহমান বলেন, ‘এমন ব্যতিক্রমী রায় অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
[গতানুগতিক বিচারের বাইরে গিয়ে এরূপ সংশোধনমূলক ও মানবিক প্রয়াসের জন্য বিচারকদ্বয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ! আমরা তাঁদের জন্য প্রাণভরে দো‘আ করছি, যেন তাঁরা এই নীতির উপর আমৃত্যু দৃঢ় থাকতে পারেন। উল্লেখ্য, বিচারক মুহাম্মাদ যাকির হোসাইন গত ১৫ই মার্চ ৫০ এবং ৮ই জুন ৪৫ দম্পতিকে স্ব স্ব সংসার জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছেন (স.স.)]