নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশেগুলোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে এবং এ সংখ্যা এখন শতকরা ৮০ ভাগ। ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

হার্টের বিভিন্ন অসুখের কারণে এতো বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ আসলে কী? এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও গবেষকদের গবেষণার অন্ত নেই। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে রোগীর ধমনীগুলোও সমানভাবে প্রভাবিত হয়।

মুম্বাইয়ের ব্রেস ক্যান্ডি হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারুখ গোলওয়ালা উচ্চ রক্তচাপের কারণ অনুসন্ধান করেছেন। তার মতে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু এমন কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। নিম্নে উচ্চ রক্তচাপের ১০টি কারণ উল্লেখ করা হলো-

১. বয়স : উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। আপনি যদি বয়স্ক ব্যক্তি হন তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আপনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি। বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে হৃদ সংকোচন সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। এক্ষেত্রে রোগীর ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়।

২. বংশগত কারণ : আপনার পরিবারে আগে থেকে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এ উচ্চ রক্তচাপের কারণে কম বয়স থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

৩. লিঙ্গ : আপনি ছেলে? সাবধান! ডা. গোলওয়ালা বলেন, নারীদের চেয়ে পুরুষের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তবে এতে নারীদের নিশ্চিন্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন তবে আপনারও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সুতরাং আপনার জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

৪. অতিরিক্ত ওযন : উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওযন বা স্থূলতা অন্যতম প্রধান কারণ হ’তে পারে। তবে বিষয়টি বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। যাদের পেট, নিতম্ব ও উরুতে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে তারা সাবধান! কারণ এতে যেকোনো সময় আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হ’তে পারেন। সুতরাং আপনার ওযন নিয়ন্ত্রণ করুন।

৫. লবণের প্রতি সংবেদনশীলতা : কিছু মানুষ আছে যাদের অতিরিক্ত লবণ ও সোডিয়াম খাওয়াতে একটু দুর্বলতা আছে। যেটা উচ্চ রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে। আপনি যদি লবণের প্রতি সংবেদনশীল হন তবে উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হল লবণ খাওয়া কমিয়ে দেয়া। কোন খাদ্য তৈরির সময় লবণের ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হ’তে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার সময় লবণের পরিমাণ জেনে নিতে হবে। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা হয় এজন্য এ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হ’তে হবে।

৬. অ্যালকোহলের প্রতি দুর্বলতা : আপনি যদি অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে আসক্ত হন তবে এটি বন্ধ করা উচিত। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে আসক্ত হ’লে আপনার এবং আপনার সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হ’লে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।  

৭. অতিরিক্ত চাপ : অফিসের এবং অফিসের বাইরে বিভিন্ন কারণে আপনি যদি বেশি চাপ নিয়ে কাজ করেন, অতিরিক্ত চিন্তা করেন তবে এ চাপ আপনার রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই চিন্তামুক্ত থাকুন। নিজেকে শান্ত ও রিলাক্স রাখুন। চাকরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৮. গর্ভনিরোধক পিল সেবন : সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জন্ম নিরোধক পিল সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

৯. অলস জীবন : অলস জীবনযাপন শুধুমাত্র আপনার শরীরে মেদ বৃদ্ধি করবে না এতে আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। অলস জীবনযাপন থেকে বের হয়ে আসুন এবং পসন্দ করেন এমন যেকোন কাজে নিজেকে যুক্ত করুন। যদি সম্ভব হয় আপনার প্রিয় খেলা খেলতে পারেন অথবা কাজের জন্য হাঁটতে পারেন। আপনি অবাক হবেন যে, শারীরিক কসরত আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই দূরে রাখবে। তখন আপনিই উত্তর পাবেন যে, নিয়মিত শারীরিক কসরতে রক্তের সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ধমনী ও শিরাগুলোকে স্বাভাবিক কাজ সহায়ক হবে।

১০. ওষুধ : কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ঠান্ডা অথবা অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেবন করা হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জটিলতা এড়াতে আপনার চিকিৎসার অতীত সম্পর্কে চিকিৎসককে অবহিত করুন।






আরও
আরও
.