চীনারা বিশ্বকে শিখিয়েছিল
চা পান করতে, আর মধ্যপ্রাচ্যের বদৌলতে এসেছে কফি। পানি ছাড়া বিশ্বজুড়ে
সবচেয়ে বেশী পান করা হয় যে দু’টি পানীয় তা হচ্ছে কফি আর চা। কফি উৎপন্ন হয়
বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে। ইদানীং বাংলাদেশেও কফি উৎপন্ন হচ্ছে। বিশ্বে ২২৫
কোটি কাপ কফি খাওয়া হয় প্রতিদিন। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ কমপক্ষে ৬২টি দেশ চা
উৎপাদন করে থাকে। ২৭৩ বিলিয়ন লিটার চা প্রতিদিন পান করা হয় বিশ্বের
দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী দেশে।
চা ও কফি গরম এবং ঠান্ডা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। আবার পান করা হয় দুধ মিশিয়ে কিংবা দুধ ছাড়া। কফি হয় বিন থেকে আর চা পাতা থেকে। কফির যেমন কয়েকটি ধরন আছে, তেমনি চায়েরও আছে রকমফের। উভয়েরই পানে রয়েছে বিশিষ্টতা। অন্যদিকে উভয় পানীয়তেই রয়েছে বিশেষ কিছু গুণ, যা মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।
মানুষের শরীরে রয়েছে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালস। যা দূর করতে সিদ্ধহস্ত চা আর কফি। উভয়ের মধ্যকার রাসায়নিক পদার্থ, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নামে পরিচিত, ফ্রি র্যাডিক্যালসকে দূর করে থাকে অনায়াসে।
চা ও কফির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কিংবা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।
বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে চা আর কফির। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন সক্রিয়, তেমনি ক্যাফেইনও। ফলে বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
এ দু’টি পানীয় অনেক ধরনের জটিল রোগের আক্রমণ থেকেও শরীরকে রক্ষা করে থাকে। এর মধ্যে একটি হ’ল পারকিনসন্স রোগ। এই রোগ মূলতঃ অকেজো করে ফেলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে। এ কারণে শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষণা বলছে, পারকিনসন্সের প্রাথমিক উপসর্গ দূর করতে বিশেষ কার্যকর ক্যাফেইন। অন্যদিকে, কফি কিংবা চা মস্তিষ্ককে এই রোগের আক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আলঝেইমার :
মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ বা নিউরোনকে আক্রমণ করে আলঝেইমার রোগ। এ কারণে স্মৃতিভ্রংশ হয়। এমনকি ভাবনার ধরন ও আচরণও বদলে যেতে থাকে। কফির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বর্ম হিসাবে কাজ করে। এমনকি যেসব প্রোটিনের কারণে এই রোগ হয়, সেগুলো বিনষ্ট করে গ্রিন টি।
স্ট্রোক :
মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলে মূলতঃ স্ট্রোক হয়ে থাকে। ফলে দিনে অন্তত এক কাপ কফি বা চা পান এই আশঙ্কা কমায়। কফি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আর কালো চা বা দুধ বিহীন চা রক্তচাপ হ্রাস করে, যা পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের আশঙ্কা দূর করে।
যকৃৎ :
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ হ’ল যকৃৎ। এর সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে কফি। প্রতিদিন অন্তত তিন কাপ কফি যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, সিরোসিস বা ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। এমনকি এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিকল্প ওষুধ হ’তে পারে কফি। কফিতে রয়েছে নানা ধরনের অন্তত শতাধিক রাসায়নিক যৌগ। বিজ্ঞানীরা এসব যৌগের বৈশিষ্ট্য আর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে যকৃতের চিকিৎসায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যান্সার :
স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কফি ও গ্রিন টি সহায়ক ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে সব ধরনের চা ডিম্বাশয় ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। পলিফেনলসহ চায়ের সব ধরণের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে অনুঘটক হয়ে থাকে বলেই গবেষকদের ধারণা।
গলস্টোন :
গলব্লাডার বা পিত্তথলি মূলতঃ হজমপ্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এখান থেকেই নিঃসৃত হয় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। ছোট্ট এই থলিতে যে পাথর হয়, তা বস্ত্তত জমাট বাঁধা কোলেস্টেরল স্ফটিক ও গলব্লাডারের অন্যান্য বস্ত্ত। পাথর হ’লে ব্যথা হ’তে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। কফি পিত্তথলিতে কোলেস্টেরলকে জমাট বেঁধে স্ফটিক হ’তে দেয় না। এতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
হৃৎপিন্ড :
একসময় ধারণা করা হ’ত হৃৎপিন্ডের সঙ্গে বৈরিতা আছে চা ও কফির। এই দুই পানীয়ে থাকা ক্যাফেইন হার্টের ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, ক্যাফেইন বরং হৃৎপিন্ডের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে। গবেষণায় প্রকাশ, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পান করলে রক্তনালিতে ক্যালসিয়াম তৈরিতে বাধা সৃষ্টির ফলে হৃৎপিন্ডের কোষে রক্তের প্রবাহ সচল রাখে। এতে হৃৎপিন্ডের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
অতিরিক্ত পানে ক্ষতি :
কফি ও চায়ের ক্যাফেইন অবশ্যই শরীরের পক্ষে ভাল। নানা রোগের আক্রমণ প্রতিহত করে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অধিক চা ও কফি পান বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন অস্থিরতা বাড়ায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ে ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে হাড় দুর্বল আর ভঙগুর হয়ে পড়ে।
[সংকলিত]