(মার্চ’১৬ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
নীলাম রোড ধরে গাড়ি এগিয়ে চলল আযাদ কাশ্মীরের উত্তরের ভূখন্ড নীলাম ভ্যালির পথে। ১৪৪ কি.মি. দৈর্ঘ্য ঘন সবুজ বনানী ঘেরা এই পাহাড়ী উপত্যকা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য পৃথিবীখ্যাত। এটি আযাদ কাশ্মীরের বৃহত্তম অংশও বটে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে মসৃণ পীচঢালা সর্পিল রাস্তা। যাত্রা শুরুর খানিক পর নীচে পাহাড়ের সঙ্গমস্থলে পানির রেখা দেখে টের পেলাম এটাই নীলাম নদী। এর সরু লিকলিকে অবয়বে তেমন আকর্ষণ নেই। স্রোত সামান্যই। পাহাড়ী নদী হিসেবে যেন ঠিক মানানসই নয়। তবুও তিরতির গতিতে খুব শান্তভাবে মহাকালের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে অজানার পানে।
নদী-পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। পাহাড়গাত্রে খানিক পর পর গ্রাম ও ফসলের ক্ষেত দেখা যায়। ছবির মত যেন থরে থরে সাজানো। কখনও বরফাবৃত পর্বতের প্রায় শীর্ষদেশেও দেখা যায় পাকা রঙিন বাড়ী। এত উঁচুতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবিচ্ছিন্ন মানুষগুলো কিভাবে যিন্দেগী অতিবাহিত করে তা ভেবে অবাক হই। পথিমধ্যে নির্মানাধীন ‘নীলাম-ঝিলাম হাইড্রো পাওয়ার প্লান্টে’র কাছাকাছি পৌঁছতেই হঠাৎ তল্লাশী চৌকির মুখোমুখি হ’লাম। কেননা আর কিছুদূর গেলেই ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ তথা আযাদ কাশ্মীর এবং ইন্ডিয়ান কাশ্মীরের মধ্যবর্তী সীমান্তরেখা (কার্যত তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসাবে স্বীকৃত নয়)। সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিতে রুটিনমাফিক যাত্রীদের আইডি কার্ড চেক করা হচ্ছে। মনে হ’ল এই দফায় বোধহয় আর ছাড়া পাব না। ড্রাইভার হেলাল ভাই বললেন, ‘ওরা না বললে আপনি আইডি কার্ড বের করবেন না’। আমাদের গাড়ির সামনে এসে এক সৈনিক আইডি কার্ড বের করতে বলল। সবাই বের করে দেখালো। আমি পকেটে হাত রাখলাম। তবে কার্ড বের করার আগেই ‘কো-ই ফরেনার তো নেহি?’-বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে গাড়ী ছাড়ার ইঙ্গিত দিল। হেলাল ভাই এই রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে সৈনিকদের কাছে পরিচিত। সে কারণেই বোধহয় এ যাত্রায়ও সহজে উৎরে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ।
পাওয়ার প্লান্টে নীলাম নদীর পানি আটকিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান। এটি নির্মিত হ’লে অত্র অঞ্চলের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান অনেকটাই সম্ভব হবে। সেখানে কিছু সময় ঘুরে দেখা হ’ল। তারপর আবার যাত্রা। পথ এগোনোর সাথে সাথে নীলাম নদীর আয়তন বাড়তে থাকে আর পানিও গাঢ় নীলবরণ ধারণ করে নামের স্বার্থকতা ফুটিয়ে তুলতে থাকে। উঁচু পাহাড়ী পথে যেতে অনেক নীচে নীলাম নদীর দুই পার্শ্বে নজরকাড়া প্রশস্ত উপত্যকা দৃষ্টিগোচর হয়। হেলাল ভাই সোৎসাহে অঙ্গুলী নির্দেশ করে দেখালেন ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’। চক্রাকারে পাহাড়ের পিছন থেকে বেরিয়ে এসে নীলাম নদীর তীর ঘেঁষে অগ্রসর হয়েছে এখান থেকে। গাড়ী থেমে যায়। নদীর দু’পাশেই গ্রাম আর স্কুল। একদিকে উড়ছে পাকিস্তানী পতাকা, অপরদিকে ভারতীয় পতাকা। নদীর ওপর পারাপারের জন্য একটা ছোট্ট ব্রীজ। উমায়ের ভাই জানালেন সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার উভয়দেশের সীমান্তরক্ষীদের উপস্থিতিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য পরস্পরের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে বিগত ৭০ বছর ধরে জীবন এখানে বিভক্ত হয়ে গেছে বিদ্যুতায়িত কাঁটাতার, থার্মাল ইমেজিং ডিভাইস, এলার্ম আর ল্যান্ডমাইনের কঠোর প্রহরায়। আজও পর্যন্ত সেই বিভক্তির দংশনে নীল কাশ্মীর। গণভোটের দাবী উপেক্ষা করে আজও পর্যন্ত তাদেরকে বন্দী রাখা হয়েছে পরাধীনতার শৃংখলে। তবে স্বাধীনতার আকাংখা তাদের কখনই স্তিমিত হয়নি। আভ্যন্তরীণ নানা থাকা সত্ত্বেও কাশ্মীরীরা স্বাধীনতার দাবীতে অটল। কিন্তু তাদের কেউ চায় পাকিস্তানের সাথে মিলে যেতে, যা ভারতের স্বার্থবিরুদ্ধ। আবার কেউ চায় পাকিস্তান বা ভারত কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভাষায় ‘খোদ মোখতার’ রাষ্ট্র বা স্বতন্ত্র বৃহত্তর কাশ্মীর রাষ্ট্র, যা পাকিস্তান ও ভারত উভয়েরই স্বার্থবিরুদ্ধ। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে, তা আশা করা অতীব দুরূহ।
এরই মাঝে একদিকে ভারত শাসিত কাশ্মীরে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে, অপরদিকে পাকিস্তান কাশ্মীরীদের পক্ষে ঘরে-বাইরে জোর প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিবছর ২৪ শে অক্টোবর ‘কাশ্মীর দিবস’ এবং ৫ই ফেব্রুয়ারী ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’ পাকিস্তানে খুব সাড়ম্বরে পালিত হয় সরকারীভাবে। ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডির রাস্তায় রাস্তায় দেখেছি ভারত সরকারের যুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে হাযারও ফেস্টুন ও প্লাকার্ড ছেয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক বিরোধের প্রধান ইস্যু হ’ল কাশ্মীর। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই উভয় দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নীতি নির্ধারিত হয়। তবে মাক্ববূযা (অধিকৃত) এবং আযাদ উভয় কাশ্মীরের মানুষের সাথে কথা বলে দেখেছি, স্বাধীনতার স্বপ্ন তাদের মাঝে সজীব থাকলেও ভিতরে ভিতরে তারা ভারতের মত পাকিস্তানের ব্যাপারেও ভীষণ হতাশ। তাদের বড় অংশের ধারণা পাকিস্তানও কেবল আপন স্বার্থই দেখছে। তাদের মতে, পাকিস্তানের উচিৎ কেবল আলোচনার টেবিলে পড়ে না থেকে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। এর অর্থ সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া এর কোন সমাধান দেখছেন না তারা। আযাদ কাশ্মীরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরদার আতীক আহমাদ খানের মুখেও একই কথা শুনেছি উন্মুক্ত সমাবেশে।
আমরা সীমান্তরেখা বরাবর সড়কপথ ধরে এগিয়ে যাই। আরও প্রায় ঘন্টাখানেক যাত্রার পর ‘আট মোকাম’ নামক স্থানে পৌঁছি। বেশ বড় বাজার। স্থানীয় এক হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম। তারপর নীচে নীলামের বরফনিঃসৃত হিমশীতল পানিতে নেমে এলাম। রবি ঠাকুর তাঁর ‘বলাকা’ কবিতায় নীলামের সহোদর ঝিলামের বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন বেশ গুরুগম্ভীর রহস্য করে। আজ তাঁর সাথে মিলিয়ে নীলামের রহস্য ভেদে বড় আগ্রহ জাগে। কবির ভাষায়- ‘সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা/ আঁধারে মলিন হল-- যেন খাপে-ঢাকা বাঁকা তলোয়ার/দিনের ভাটার শেষে রাত্রির জোয়ার/এল তার ভেসে-আসা তারাফুল নিয়ে কালো জলে/ অন্ধকার গিরিতটতলে/ দেওদার তরু সারে সারে/ মনে হল সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে/ বলিতে না পারে স্পষ্ট করি/অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছে গুমরি।
‘সন্ধ্যারাগে’র অস্তিত্ব তখনও দৃশ্যমান না হলেও দুপুর গড়ানো মেঘলা দিনে নীলামের গায়ে বাঁকা তলোয়ারের অস্তিত্ব যথার্থই আবিষ্কার করি। বরফঢাকা গিরিতটে তুষারভারে আনত পাইন আর ওক গাছের বনানীতে নেমে আসা ঘন আঁধারপুঞ্জে কোন এক অব্যক্ত ধ্বনি শোনার জন্য ঠিকই কান পেতে রাখি। প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার এই বিহবল তন্ময়তার সাথে পৃথিবীর আর কোন অনুভূতির তুলনা আমার জানা নেই। সেকারণেই বোধহয় হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে সেই অসীমের মাঝে আশ্রয় খুঁজে ফেরার অব্যাহত তাড়না ঘুরে ফেরে সবসময়, কারণে-অকারণে। সেই তাড়না উপেক্ষার কোন উপায় যেন নেই।
ঘন্টাখানেক সেখানে কাটিয়ে আবার ফিরতি পথ ধরি। আগে ‘আরাং কেল’ পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে জানা গেল বরফপাতের কারণে ওদিকে রাস্তা বন্ধ আছে। ফেরার পথে আবারও সীমান্তের দু’পারের মানুষের জীবনাচার দেখি। একই অঞ্চল, একই ধর্ম, একই প্রকৃতির মানুষ। অথচ কত অমিল, কত বিভক্তি। উভয়পার্শ্বে ছোট ছোট চৌকিতে সীমান্ত প্রহরীদের অস্ত্র তাক করা একে অপরের প্রতি। এভাবেই বুঝি এগিয়ে চলেছে মানব সভ্যতার ইতিহাস। পরস্পরে বিভক্তি, শত্রুতা, ঘৃণা, জিঘাংসা যেখানে কেবল ধ্বংসের বার্তা বহন করে না; মানুষকে বাঁচিয়েও রাখে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে, ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তায়।
সন্ধ্যার পর মুযাফফরাবাদ পৌঁছে আমরা সোজা মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ, আযাদ কাশ্মীরের আমীর শায়খ শিহাবুদ্দীন মাদানী (১৯৫৮-২০১৫)-এর বাড়িতে উপস্থিত হই।[2] উনি তখন বাসাতেই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ রক্তচাপ ওঠার কারণে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তখন আর সাক্ষাৎ হ’ল না। তাঁর বাসার বৈঠকখানাতে এশার ছালাত পর্যন্ত সময় কাটালাম। এ সময় শায়খের ছোটভাই হাফীযুর রহমান, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা এবং বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী জনাব বাশারাত নূরী সহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ভাই আমাদেরকে সময় দিলেন এবং কাশ্মীরের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলেন। শায়খের বাসার কাছেই স্থাপিত আহলেহাদীছ মসজিদ ‘জামে মসজিদে আহলেহাদীছ আয়েশা ছিদ্দীকা’য় এশার ছালাত আদায়ের পর আমরা উমায়ের ভাইয়ের বাসায় ফিরে এলাম।
পরদিন সকালে নাশতার পর আমরা পাঁচ তারকা হোটেল পার্ল কন্টিনেন্টালের নিকটে ‘আপার সাত্তার’ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত জামে‘আ মুহাম্মাদিয়া সালাফিইয়াহ মাদরাসায় উপস্থিত হ’লাম। আয়তনে বেশ বড় মাদরাসাটি। সুরম্য কাঠামোয় আভিজাত্যের ছাপ লক্ষ্যণীয়। আযাদ কাশ্মীরে এটিই সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত কোন আহলেহাদীছ মাদরাসা।
শায়খ শিহাবুদ্দীন কামরায় ঢুকতেই সহাস্যে সালাম দিলেন। দু’চার কথা বলতেই বুঝে ফেললাম খুব বন্ধুপরায়ণ দিলদরায মানুষ তিনি। কোন অাঁড় রেখে কথা বলেন না। প্রয়োজনীয় গাম্ভীর্য বজায় রাখারও কোন চেষ্টা নেই। একদম সহজ-সরল সবকিছু। এক নিমিষেই আলাপ জমিয়ে তোলার মত মানুষ। বাংলাদেশ থেকে একবার প্রফেসর শামসুল আলম স্যার এসেছিলেন তাঁর অফিসে, সে কথা স্মরণ করে বেশকিছু কথা বললেন। তবে জমঈয়তের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বেশ হতাশার চিহ্ন ফুটে উঠল তাঁর চেহারায়। যেন নিজের ব্যর্থতাই স্বীকার করতে চাইলেন। সরকারী ওলামা কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব এবং সরকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজে প্রফেসর হিসাবে পাঠদানের ব্যস্ততার কারণে সার্বিকভাবে সংগঠন পরিচালনায় তেমন সময় দিতে পারেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাঁর পিতা মাওলানা ইউনুস আছারী (মৃ. ২০০৪ইং)। তিনি ছিলেন মাওলানা দাঊদ গযনভীর একান্ত শাগরেদ। তাঁর পূর্বপুরুষগণ সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভীর সাথী ছিলেন এবং বালাকোটসহ জিহাদ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মাওলানা আছারী পূর্বসূরীদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আযাদ কাশ্মীরে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রসারে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং আযাদ কাশ্মীরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরদার আব্দুল কাইয়ূম খান (১৯২৪-২০১৫ইং)-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেই সূত্রে তিনি দীর্ঘদিন সরকারী ওলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। একই ধারাবাহিকতায় তাঁর সন্তান সরদার আতীক আহমাদ খান যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখন শিহাবুদ্দীন মাদানীকে ওলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনোনীত করেন। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মাওলানা ইউনুস আছারী একাধারে মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ কাশ্মীরের আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারও পূর্বে ১৯৫২ সালে তিনি সর্বপ্রথম এই মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করেন শহরের মদীনা মার্কেটে। পরে ১৯৯৫ সালে এটি আপার সাত্তারে বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ছাত্রসংখ্যা ১৫০ জন এবং শিক্ষক ১৭ জন। হিফয থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ক্লাস ‘আলামিয়াহ’ স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়।
তিনি জানালেন, বর্তমানে মুযাফফরাবাদ শহরে প্রায় ২০টি আহলেহাদীছ মসজিদ রয়েছে এবং পুরো আযাদ কাশ্মীরে অনধিক ১৫০টি। মাদরাসা রয়েছে অনুরূপভাবে ১৫/২০টি।
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তাপ ভাবে জবাব দিলেন যে, সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া আর কোন সমাধান তাঁর জানা নেই। তবে যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবী থেকে কখনই পিছু হটা যাবে না।
প্রায় দু’ঘন্টা সেখানে কাটানোর পর শায়খের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম। পথিমধ্যে শহরের মাঝে ঝিলাম ও নীলাম নদীর মিলনস্থল দেখার জন্য থামলাম। শহর জুড়ে এই দুই নদীর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে আছে। ঝিলামের কিনারা ধরে পূর্বমুখী যে রাস্তাটি চলে গেছে তার সম্মুখে সাইনপোস্টে লেখা শ্রীনগর (ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী) ১৭০ কি.মি.। বেশ অবাক হলাম এই ভেবে যে, এমন যুদ্ধংদেহী অবস্থানে থেকেও উভয় কাশ্মীরের মাঝে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে! পরে জানলাম ২০০৫ সাল থেকে এই যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে একটি করে যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে উভয় রাজধানীর মধ্যে।
বাসস্ট্যান্ড থেকে উমায়ের ভাই আমাদেরকে ইসলামাবাদগামী গাড়ীতে উঠিয়ে দিলেন। একরাশ মুগ্ধতা আর অপ্রত্যাশিত কাশ্মীর ভ্রমণ নিরাপদে সমাপ্তির তৃপ্তি নিয়ে আমরা ইসলামাবাদ ফিরে এলাম। ফালিল্লাহিল হামদ।
[2]০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি ৫৭ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : মাসিক আত-তাহরীক (১৯ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ২০১৬)।