১৪ই ডিসেম্বর ২০২১। দীর্ঘ কয়েক মাস রোগভোগের পর অবশেষে অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম শেষ বিদায়ের অন্তে পৌঁছে গেলেন। ২০১৫ সালে ঠিক একদিন আগে-পিছে গত হয়েছিলেন আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান শফীকুল ইসলাম। কর্মমুখর জীবনের ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎ যবনিকাপাত। মনে হয়, এই তো সাথেই রয়েছেন। ফোন করলেই বুঝি ওদিক থেকে ভেসে আসবে চিরচেনা কন্ঠ- ‘ভালো আছ?’ তিনি আর নেই, আর কখনও তাঁর চেহারা মারকাযে দেখা যাবে না- এ কথা ভাবতে বড়ই অস্বাভাবিক লাগে। ‘যুবসংঘে’র ছেলেদের প্রতি ভালোবাসার টানটা বোধ হয় একটু বেশীই বোধ করতেন। ২০০৯ সালে কেন্দ্রে প্রথমবার যখন আসি, মনে পড়ে সবাইকে পাঞ্জাবী দিয়েছিলেন নিজের পক্ষ থেকে। মাঝে-মধ্যে ছোটখাটো হাদিয়া-তোহফাও দিতেন। আন্দোলন-এর যুববিষয়ক সম্পাদক হিসাবে তো বটেই, এমনিতেই স্বীয় আন্তরিকতার জায়গা থেকে ‘যুবসংঘে’র প্রায় সব ধরনের কর্মতৎপরতার সাথেই তিনি নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রেখেছিলেন। ‘যুবসংঘে’র অভিভাবক হিসাবে আমরা দায়িত্বশীলরা তাঁকে দ্বিধাহীনচিত্তে পূর্ণ আস্থার সাথে ধারণ করে রেখেছিলাম। সাংগঠনিক বিষয়ে যেকোন পরামর্শ চাইতে গেলে সবার আগে আসত তাঁর নাম। সাংগঠনিক প্রশিক্ষণগুলোতে তিনি ছিলেন অপরিহার্য। সূক্ষ্ম   চিন্তা, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, সুদূরপ্রসারী ধ্যান-ধারণা, কাজে লেগে থাকার ধৈর্য এবং সর্বোপরি ন্যায়নিষ্ঠতার আবরণে তিনি ছিলেন একজন পূর্ণ অভিভাবক। স্বার্থপরতার এই দুনিয়ায় এমন একজন নির্ভরযোগ্য মানুষের অভাব কি সহজে পূরণ হওয়ার মত?      

ইস্তিকামাত যে কত কঠিন জিনিস, তা সময়ে সময়ে টের পাই। এই কঠিন কাজে সফল মানুষগুলোকে তাই আলাদা চোখেই দেখতে হয়। বার বার প্রয়োজনের মুহূর্তে, বিপদের ঘনঘটায়, যে কোন সমস্যার সমাধানে এই মানুষগুলো থাকেন ইস্পাতকঠিন ভূমিকায়...অনড়, অবিচল আস্থার প্রতীক হয়ে। ঠুনকো দুনিয়াবী স্বার্থের বলি হয়ে তারা কখনও আত্মবিসর্জন দেন না। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসান না। নিজেকে কখনও মূল্যহীন হ’তে দেন না। ক্ষতি স্বীকার করে হ’লেও সবকিছুর ঊর্ধ্বে তারা নৈতিকতাকে স্থান দেন। ফলে তারা সামান্যের মধ্যেও হয়ে ওঠেন অসামান্য। সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ। অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম ছিলেন তেমনই এক প্রগাঢ় দায়িত্বশীলতা ও আদর্শিকতার মূর্ত প্রতীক।

তিনি চলে গেলেন অনন্তের পথে। চাপিয়ে গেলেন উত্তরসূরীদের উপর দায়িত্বের বোঝা। নিভৃতচারী ছিলেন, মঞ্চের আড়ালে অনুঘটক হয়ে। ঢাল হয়ে অবিরাম ভরসার যোগান দিয়ে গেছেন। সবাই পেছনের মানুষ হয় না, হ’তে পারে না। তাঁর অভাব আমরা অনুভব করব অনুক্ষণ, যখন পেছনের মানুষটার ডাক পড়বে।

মৃত্যুটা সুন্দর ছিল। ক’দিন আগে মাসিক মিটিং ও ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণের দিন সবার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সবাইকে নিজ নিজ কর্তব্য-করণীয় জানিয়ে দিয়েছেন। রাত্রির শেষ প্রহরে মৃত্যুক্ষণে পরিবার-পরিজনের সাথে সজ্ঞানে কালেমা পড়েছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর কর্মময় জীবনকে ছাদাক্বায়ে জারিয়া হিসাবে কবুল করুন। তাঁর ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নছীব করুন। আমীন!






জেল-যুলুমের ইতিহাস - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
তাবলীগী ইজতেমার সেই রজনী! - শামসুল আলম
শফীকুল ভাইয়ের বিদায় : শেষ মুহূর্তের কিছু স্মৃতি - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
খতীবে আযম : টুকরো স্মৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমীনুলের কিছু স্মৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রফেসর ড. মুঈনুদ্দীন আহমাদ খান : কিছু স্মৃতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামী জাগরণীর প্রাণভোমরা শফীকুল ইসলামের ইন্তেকালে স্মৃতি রোমন্থন - মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম প্রধান
জেল-যুলুমের ইতিহাস (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
স্মৃতির আয়নায় তাবলীগী ইজতেমা
স্মৃতির দর্পণে আমীনুল ভাই - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
তাবলীগী ইজতেমা ২০১৮ : টুকরো স্মৃতি - মুহাম্মাদ বেলাল বিন ক্বাসেম
জেল-যুলুমের ইতিহাস (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আরও
আরও
.