বৃদ্ধাশ্রম থেকে পিতা-মাতার হৃদয় বিদারক চিঠি :
১. পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের নিকট :
খোকা তুই কেমন আছিস? নিশ্চয়ই ভাল আছিস। আমি জানি এ চিঠি পড়ার মতো সময় তোর হবে না। তবুও বাবার মন, না লিখে পারলাম না। কারণ তুই এখন অনেক বড় পদে চাকরী করছিস। ৫ বছর হয়ে গেছে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছিস। কিন্তু একটিবারও আমাকে দেখতে আসলি না। জানি, ব্যস্ততার কারণে হয়তো সময় পাচ্ছিস না। আমি অনেক চিঠি লিখে তোর কাছে পাঠিয়েছি। এই ডিজিটাল যুগে হয়তো সেগুলো তোর কাছে পৌঁছলেও পড়ার মতো মানসিকতা ও সময় তোর হয়নি। কারণ আমি স্বল্পশিক্ষিত, গরীব এক সাধারণ মানুষ। তুই যেদিন বিয়ে করে বড় লোকের মেয়ে ঘরে নিয়ে আসলি, সেদিন তোর বউ আমাকে গরীব বলে সম্মান জানায়নি। অথচ আমি গরীব হ’লেও আমার একটি পরিচয় আছে, আমি তোর বাবা। শুধুই তোর বাবা। আমারতো আর কোন ছেলে নেই। জানিস খোকা, তোর মা যখন মারা যায় তখন তোর বয়স ছিল ৫ বছর। আর আমার বয়স তখন ৩৫ বছর। আমি তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম, তোর মা যদি আগে মরে যায়, তাহ’লে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করব না। কারণ দ্বিতীয় বিয়ে করলে তোর কষ্ট হবে। সেটা আমি যেমন উপলব্ধি করতাম, তেমনি তোর মাও উপলব্ধি করত। তাইতো আমি তোকে বুকে আগলিয়ে ধরে তোর মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। তোর দাদা অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে বিয়ে করাতে কিন্তু আমি রাজি হইনি শুধু তোর মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি যদি বিয়ে করি তাহ’লে তুই কষ্ট পাবি। সৎমা তোকে ঠিকমত আদর-যত্ন করবে না। আবার অন্য সন্তান আসলে তোর প্রতি আমার মায়া কমে যাবে। অভাবের সংসারে হাযারো বাঁধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে তোকে মানুষ করেছি। তোর লেখা-পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে আমি অনেকবার না খেয়ে থেকেছি। একবারও তোকে বুঝতে দেইনি। তুই যখন উচ্চশিক্ষার জন্যে আমাকে ছেড়ে শহরে গিয়েছিলি, সেদিন থেকে তুই বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত ভালো কোন খাবারের স্বাদ নিতাম না। তোকে ছাড়া আমার শূন্যতার শেষ ছিল না। কিছুতেই সময় কাটতো না। কখন তুই ফিরে আসবি সেই অপেক্ষায় থাকতাম। খোকা! তোর কি মনে আছে তুই খুব শুটকির ভর্তা পসন্দ করতি। এটা তোর প্রিয় ছিল। এখন মনে হয়, ওটা আর তোর প্রিয় নয়। কারণ তোর বউতো শুটকির ভর্তা পসন্দ করে না! এ ধরনের আরো বহু মধুর ও কষ্টের স্মৃতি আমাকে এখন শুধু কাঁদায়। এগুলো তোর হয়তো মনে নেই। আর মনে থাকার কথাও নয়। কারণ তুই এখন মস্ত বড় অফিসার! খোকা, আমাকে তোর বাড়িতে রাখলে তোদের কি খুবই কষ্ট হতো? আমি তোর বাড়ির চাকরের ঘরে থাকতে চেয়েছিলাম। তোরা চাকরের পিছনেতো অনেক খরচ করে থাকিস। তোর বউয়ের সেবা-যত্ন করার জন্যে চাকরানী আছে। তার পিছনেও খরচ করে থাকিস। তোর বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্যে একটি কুকুর আছে। সেটার পিছনেওতো খরচ করিস। তারা খেয়ে যেটুকু বেঁচে যেত সেটুকু না হয় আমাকে খাওয়াতি। তবুওতো আমি শুধু তোর বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলাম। এই বৃদ্ধ বয়সে ছেলে, বউমা ও নাতি-নাতনীদেরকে নিয়ে সুখে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোরা আমাকে বাড়িতে থাকতে দিলি না। আমি বাড়িতে থাকলে তোদের ইয্যত যাবে। তোর বউয়ের কথামতো আমাকে বাড়ি থেকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলি! তারপরও আমার মনে কোন দুঃখ থাকত না যদি একবার আমাকে দেখতে আসতি। আমি বিশ্বাস করি, মা-বাবার দো‘আ সন্তানের প্রতি থাকলে কেউ তার অনিষ্ট করতে পারে না। নিশ্চয় স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে সুখে আছিস। তুই সুখে থাকলে পৃথিবীর যে মানুষটা সবচেয়ে বেশী খুশি হতো সে তোর মৃত মা। অনেকদিন যাবত তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমিতো আর যেতে পারি না। বাড়ী থেকে আসার সময় তোর একটি পুরানো ছবি এনেছিলাম। সেই ছবি দেখতে দেখতে ঝাপসা হয়ে গেছে। তবে তোর বাবার হৃদয়ের সবটা জুড়ে শুধু তোর ছবি অঙ্কন করা। তারপরেও খুব ইচ্ছা করে, শেষ যাত্রার আগে তোকে একটি বার দেখতে, তোর মাথায় হাত রাখতে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, খোকা কেমন আছিস? আরো ইচ্ছে করে আমার দাদু ও দাদা ভাইকে দেখতে। তারা নিশ্চয়ই দাদার কথা স্মরণ করে কান্নাকাটি করে। তাদেরকে বলিস, আমি ভালো আছি। সন্তানের জন্য কোন বাবা-মাই বদদো‘আ করে না। আমিও করব না। তবে তোকে আমার কাছাকাছি রাখতে আল্লাহর কাছে দো‘আ করছি। আল্লাহ যেন আমাকে একশ’ বছর বাঁচিয়ে রাখেন। কারণ বর্তমানে তোর বয়স এখন ৩৫ বছর আর আমার বয়স ৬৫ বছর। তোর ছেলের বয়স ৫ বছর। পঁচিশ বছর পরে তোর হবে ষাট বছর। আমার বৃদ্ধাশ্রমের এই ঘরটায় জায়গা অনেক বেশী। তুই আর আমি থাকতে পারবো পাশাপাশি। দুঃখে জর্জরিত অশ্রুসিক্ত নয়নে জনৈক বৃদ্ধের আকুতি এমনিভাবে প্রকাশিত হয়েছে অত্র চিঠিতে।[1]
২. ছেলের কাছে মায়ের চিঠি :
আশি বছর বয়সী মদীনা খাতুন (ছদ্মনাম)। ছয় বছর আগে তার আশ্রয় জুটেছে বৃদ্ধাশ্রমে। আবেগ জড়িত কণ্ঠে চিঠি লিখেছেন ছেলের নিকট।
আমার
আদর ও ভালোবাসা নিও। অনেক দিন তোমাকে দেখি না। আমার খুব কষ্ট হয়। কান্নায়
আমার বুক ভেঙে যায়। আমার জন্য তোমার কী অনুভূতি আমি জানি না। তবে ছোটবেলায়
তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে না। আমি যদি কখনও তোমার চোখের আড়াল হ’তাম মা
মা বলে চিৎকার করতে। মাকে ছাড়া কারো কোলে তুমি যেতে না। সাত বছর বয়সে তুমি
আমগাছ থেকে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছিলে। তোমার বাবা হালের বলদ বিক্রি করে
তোমার চিকিৎসা করিয়েছেন। তখন তিন দিন, তিন রাত তোমার পাশে না ঘুমিয়ে, না
খেয়ে, গোসল না করে কাটিয়েছিলাম। এগুলো তোমার মনে থাকার কথা নয়। তুমি
একমুহূর্ত আমাকে না দেখে থাকতে পারতে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার
বিয়ের গয়না বিক্রি করে তোমার পড়ার খরচ জুগিয়েছি। হাঁটুর ব্যথাটা তোমার
মাঝে-মধ্যেই হতো। বাবা! এখনও কি তোমার সেই ব্যথাটা আছে? রাতের বেলায় তোমার
মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে তুমি ঘুমাতে না। এখন তোমার কেমন ঘুম হয়? আমার কথা
কি তোমার একবারও মনে হয় না? তুমি দুধ না খেয়ে ঘুমাতে না। তোমার প্রতি আমার
কোন অভিযোগ নেই। আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে হবে। আমার জন্য তুমি কোন চিন্তা
করো না। আমি খুব ভালো আছি। কেবল তোমার চাঁদ মুখখানি দেখতে আমার খুব মন চায়।
তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে। তোমার বোন... তার খবরাখবর নিও। আমার কথা
জিজ্ঞেস করলে বলো, আমি ভালো আছি। আমি দো‘আ করি, তোমাকে যেন আমার মতো
বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে না হয়। কোন এক জ্যোস্না ভরা রাতে আকাশ পানে তাকিয়ে
জীবনের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু ভেবে নিও। বিবেকের কাছে উত্তর
পেয়ে যাবে। তোমার কাছে আমার শেষ একটা ইচ্ছা আছে। আমি আশা করি তুমি আমার শেষ
ইচ্ছাটা রাখবে। আমি মারা গেলে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে আমাকে তোমার বাবার
কবরের পাশে কবর দিও। এজন্য তোমাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। তোমার বাবা
বিয়ের সময় যে নাকফুলটা দিয়েছিল, সেটা আমার কাপড়ের আঁচলে বেঁধে রেখেছি।
নাকফুলটা বিক্রি করে আমার কাফনের কাপড় কিনে নিও।[2]
সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে মদীনা বেগম বলেন, মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। একমাত্র ছেলে একজন সরকারী কর্মকর্তা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। সেই সুখের সংসারে মায়ের ঠাঁই হয়নি। ছেলে বাড়ীতে বিদেশী কুকুর রেখেছে। সেখানে কুকুরটির থাকার জন্য একটি সুন্দর ঘর রয়েছে। তিন বেলা কুকুরটিকে ভালো খাবার দেয়া হয়। মায়ের প্রতি সন্তানের এই অবহেলার কারণ জানা নেই এই হতভাগা মায়ের। শুধু এটুকুই বলেন, একমাত্র বুকের ধন কলিজার টুকরা ছেলেকে ছয় বছর ধরে দেখি না। ছেলেকে দেখতে মন খুব আনচান করে। নাতির বয়স প্রায় আট বছর। তার কথা খুব মনে পড়ে। বুকে জড়িয়ে আদর করতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু আমার ভাগ্যে লেখা রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। এখন এই বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধরাই আমার আপনজন।
৩. সন্তানের কাছে মায়ের চিঠি,
প্রিয় সোনামানিক! বিশ্বাস করি, মায়ের দো‘আ সর্বক্ষণ যার সাথে থাকে তার অনিষ্ট করার শক্তি শয়তানেরও নাই। নিশ্চয়ই স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে সুখে আছিস। তুই শান্তিতে থাকলে পৃথিবীর যে মানুষটা সবচেয়ে বেশী খুশি সেটা তোর এই বৃদ্ধা মা। আমিও খুব ভালো আছি। তবে শরীরের কমজোরী সাক্ষী দিচ্ছে, বোধহয় বেশীদিন থাকা হবে না তোদের শহরের কাছাকাছি। অনেকদিন তোকে না দেখতে দেখতে তোর ছবিখানা ঝাপসা হয়ে গেছে। অবশ্য এটা আমার দুর্বল দৃষ্টিশক্তির দোষ। তবে ভাবিস না, তোর মায়ের হৃদয়ের সবটা জুড়ে শুধু তোর ছবিখানাই অঙ্কন করা। তারপরেও খুব ইচ্ছা করে, শেষ যাত্রার আগে তোকে একটিবার দেখতে, তোর মাথায় হাত রাখতে। খোকা! কেমন আছিস? মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এটা জিজ্ঞেস করতে। এখানে আমার প্রতিবেশীরা যখন জিজ্ঞেস করে আপনার ছেলে তো বিশাল অফিসার, শহরের নামকরা ব্যক্তি, ধন-দৌলতের অভাব নেই, তারপরেও আপনি কেন বৃদ্ধাশ্রমে? জানিস খোকা! তোর দুর্নাম হয় এমন কিছুই তাদের কাছে বলি না। আমার মস্তিষ্ক আমার সাথে গোয়ার্তুমি করলেও এই একটি ব্যাপারে উত্তর দিতে সে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় থাকে। হেসে হেসে বলি, বৃদ্ধ বয়সে একটু নিভৃতে আল্লাহকে ডাকবো বলেই এই আড়ালে আসা। তাছাড়া আমার খোকা আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। তার ধ্যান-জ্ঞানের সবটুকু জুড়েই আমি। তোর ব্যস্ততার কারণে হয়ত ফোন করার সময় হয় না। তবে আমি ওদের সামনে গিয়ে ফোনটাকে কানের কাছে ধরে প্রতিদিন তোর সাথে কথা বলার অভিনয় করি। মিছা-মিছি জিজ্ঞেস করি, খোকা! আমাকে নিয়ে তুই এত ভাবিস কেন? আমি খুব ভাল আছি। তোর কণ্ঠস্বর শোনার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি। আমার শ্রবণশক্তির সৌভাগ্য হয় না বহুদিনের পরিচিত তোর কণ্ঠ ধ্বনির ছোঁয়া পাওয়া। একবার মা ডাকের সাক্ষী হওয়া। তারপরেও কাউকে বুঝতে দিই না, আমার খোকা আমার থেকে দূরে আছে।
বাপ আমার! তোর সেই ছোট বেলায় একবার আমার ভীষণ অসুখের সময় তোকে তোর দাদীর কোলে রেখে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। ডাক্তার আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে, তোর চিন্তায় আমি অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার দেহের ব্যথার চেয়েও তোকে রেখে সৃষ্ট শূন্যতার ব্যথায় মনটা পুড়ছিল বেশি। সুস্থতার ভান করে ডাক্তার না দেখিয়েই আমাকে বাসায় নিয়ে আসতে তোর বাবাকে বাধ্য করেছিলাম। তুই যখন স্কুলে থাকতি, কোথাও বেড়াতে যাইতি তখন মুহূর্তের জন্য তুই চোখের আড়াল হ’লেই কেঁদে বুক ভাসাতাম। উচ্চশিক্ষার জন্য যেদিন তুই আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলি সেদিন থেকে তুই বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত মাছ-গোশত কিংবা ভাল খাবারের স্বাদ কেমন হয় তা ভুলেই যেতাম। তোর বাবা অনেক বকাবকি করত কিন্তু সেটা নিষ্ফল ছিল। তোকে ছাড়া আমার শূন্যতার শেষ ছিল না, সময় কাটাতে পারতাম না। তুই যখন আলাদা বিছানায় শুইতে শিখলি, তারপর থেকে প্রতিদিন গভীর রাতে একবার তোকে দেখে আসতাম। শীতে শরীর থেকে কাঁথা পড়ে গেলে ঠিক করে দিতাম, গরমে বসে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতাম। তোর জন্মের পর দীর্ঘ বছরেও যখন আর মা হইনি, তখন তোর বড় চাচী টিটকারী করে বলত, আরেকটা সন্তান নিচ্ছ না কেন? তোমার আদরের খোকা যদি তোমার বৃদ্ধ বয়সে তোমার দেখভাল না করে, তখন কোথায় আশ্রয় নেবে? এসব শুনে কখনো মনে অন্য চিন্তা প্রবেশ করেনি। বরং সবটা জুড়েই সর্বক্ষণ কেবল তুই ছিলি। বিশ্বাস কর খোকা, তোর আদরের ভাগে কেউ অংশীদার হোক সেটা কোনভাবেই মানতে পারছিলাম না। আমার অসহায় সময় তুই আমার দেখা-শুনা করবি তার বিনিময়ে তো তোকে ভালবাসিনি। মনের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করেই তোকে আগলে রেখেছিলাম আমার সামর্থ্যের দিনগুলো পর্যন্ত। আজ আমার অসহায় দিনগুলোতেও আমার সবটা জুড়ে কেবল তোর বাস। বৃদ্ধ বয়সে কি না কি বলে ফেলছি।
বাবা! রাগ করিস না। কলিজার টুকরা
আমার! খুব তাড়াতাড়ি হয়ত আমার কায়িক অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। বিশ্বাস কর
প্রভুর কাছে আমার জন্য যতবার জান্নাত চেয়েছি, তার চেয়ে হাযার বার বেশী
কামনা করেছি, যাতে আমার সোনামানিক, কলিজার টুকরা সুখে-শান্তিতে, নিরাপদে
থাকে। বিশ্বাস রাখিস, কালের স্রোতে আমি হারিয়ে গেলেও আমার রব তোর শুভ-অশুভ
দেখার দায়িত্ব নিবেন। বৃদ্ধাশ্রমে আছি বলে একবারও ভাবিস না আমি তোর প্রতি
অসন্তুষ্ট। বরং পৃথিবীর অন্য মায়েরা তাদের সন্তানের প্রতি যতটা খুশি, আমি
তার চেয়ে তোর ওপর বহুগুণ বেশী সন্তুষ্ট। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোর
মায়ের পরিচয়ে বাঁচবার অধিকার তো আমি পেলাম! এটাই বা ক’জন পায়? মৃত্যুর পরে
তোর বাবার কবরের পাশে আমাকে দাফন করবি। আর কি চাইব? মা তো সন্তানের কাছে
চাইতে পারে না বরং দিতে পারে। আমি আমার ভালর সবটুকু তোকে দিয়ে গেলাম। ইতি,
তোর মা।[3]
প্রতিকার : দুনিয়া থেকে হয়ত বৃদ্ধাশ্রম মুছে ফেলা আর সম্ভব নয়। তবে পরিবারের কাছে বৃদ্ধদের ভরণ-পোষণে আগ্রহী করতে শিক্ষা প্রদানের কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রক্রিয়াগুলো হ’তে পারে নিমণরূপ:
ক) আবেগ দিয়ে বুঝানো : হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) আমাদের আদি পিতা-মাতা। সেই পিতা-মাতার মাধ্যমেই মানবসৃষ্টির ধারা শুরু হয়েছে। ক্রমে দুনিয়া আবাদ হয়েছে। বসতি গড়ে ওঠেছে। বিভিন্ন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছে।
এখন সবদিক থেকেই ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবমান পৃথিবী। পিতা-মাতা না হ’লে মানবসৃষ্টির ধারা সূচিত হ’ত না। দুনিয়া কোন উন্নতি-অগ্রগতি দেখত না। মানবসভ্যতা বিকাশ লাভ করত না। দুনিয়াটা আশরাফুল মাখলূকাত মানুষের দুনিয়া হিসাবে পরিচিতি লাভ করত না।
আমাদের সৃষ্টির মূলে আছেন পিতা-মাতা। তাদের বদৌলতেই আজ আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখছি। বেড়ে উঠেছি। বিশ্বের নে‘মতরাজি ভোগ করে উপকৃত হচ্ছি। আমাদের জীবনে পিতা-মাতার অবদান অতুলনীয়, অনস্বীকার্য। এজন্যই মহান স্রষ্টা পিতা-মাতার সর্বাধিক গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন। সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বলেছেন। পরম যত্ন সহকারে সেবা ও খেদমত করতে বলেছেন। যেখানেই মহান স্রষ্টা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন, সেখানেই পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায়ের তাকীদ করেছেন। যে সন্তান বাবা-মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারত না, পিতমাতাই ছিল যার সারা জীবনের আশ্রয়স্থল, সে কি-না আজ পিতামাতাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করছে না। তাদেরকে ঝামেলা মনে করছে। তাঁদেরকে রেখে আসছে বৃদ্ধাশ্রমে। অথবা অবহেলা ও দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছে যেন তারা নিজেরাই ভিন্ন কোন ঠাঁই খুঁজে নেন। অনেকের ভাব এমন, টাকা- পয়সার অভাব না থাকলেও পিতামাতাকে দেওয়ার মত সময়ের প্রচুর অভাব। তাদের সঙ্গে কথা বলার মত পর্যাপ্ত সময় তাদের নেই। তাই পিতামাতা একা নির্জনে থাকার চেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে অন্যদের সঙ্গে কাটানোই নাকি ভাল মনে হয়। এ ধরনের নানা অজুহাতে পিতামাতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ই বৃদ্ধাশ্রম থেকে সন্তানের কাছে লেখা বৃদ্ধ পিতা-মাতার চিঠি পত্রিকায় ছাপা হয়। যা পড়ে চোখের পানি সংবরণ করা যায় না। আমরা যারা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবহেলা করছি, তাদেরকে বোঝা মনে করছি, বৃদ্ধাশ্রমে তাদেরকে ফেলে রেখেছি, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছি- আজ তারা বৃদ্ধ। তারা তো বৃদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে আসেননি। তারা তো পরিবারের বোঝা ছিলেন না। বরং আমরা সন্তানরাই তো তাদের বোঝা ছিলাম। তারা তো কখনো আমাদেরকে বোঝা মনে করেননি। আমাদেরকে বড় করে তোলার জন্য তারা বিন্দু পরিমাণ কমতি করেননি। কত যত্ন করে বুকে আগলিয়ে আমাদের লালন-পালন করেছেন। মা আমাদের জন্য কতই না কষ্ট করেছেন। গর্ভধারণের কষ্ট, প্রসবের কষ্ট, স্তন্যদানের কষ্ট। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়ার কষ্ট। প্রস্রাব করে ডানে ভিজালে বামে আবার বামে ভিজালে ডানে শোয়ায়। আবার উভয় পাশে ভিজালে তুলে নেয় নিজের বুকের উপর। সেখানেও ভিজিয়ে দিলে সমস্ত কাপড় পারিবর্তন করে সম্পূর্ণ শুকনো জায়গায় রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। এসব তো প্রাথমিক কষ্ট। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মা আমাদের জন্য কত যে কষ্ট করেছেন, এর কোন হিসাব নেই।
পৃথিবীতে এমন মা নেই, যার এ কষ্টগুলো হয় না। মায়েরা এ কষ্টগুলো সহ্য করেই থাকেন। একা মা দুই হাতে তাঁর ১০-১২ জন সন্তান স্নেহ-ভালবাসায় লালন করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, শেষ বয়সে সেই ১০-১২ জনের ওপর বৃদ্ধ পিতা-মাতার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাহাড়ের চেয়েও ভারী বলে মনে হয়। এমনকি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট অভাবের কোন সংসারে যদি চারজনের খাবার থাকে তবে যে মানুষটি না খাওয়ার ভান করে বলে আমার ক্ষিধে নেই সে হ’ল আমাদের গর্ভারিনী মা। এজন্য ইসলাম পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ তারা সন্তানের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। সন্তানকে আদর-যত্নে মানুষ করেছেন। সমাজের একটি প্রচলিত প্রবাদবাক্য, ‘যদি কিছু শিখতে চাও, তিন মাথার কাছে যাও’। আর তা হচ্ছে আমাদের প্রবীণরা, আমাদের শিকড়। দুঃখজনক হ’লেও সত্য, সমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা সে শিকড়টি যেন উপড়ে ফেলছি। প্রবীণরা এখন আমাদের অনেকের কাছে স্রেফ বুড়া-বুড়ি। হায় আমরা যদি মর্ম উপলব্ধি করতে পারতাম! আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!
খ) কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে বুঝানো : ইসলাম বনু আদমকে বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে, করেছে সম্মানিত। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً، ‘আমরা আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং তাদেরকে স্থলে ও সাগরে চলাচলের বাহন দিয়েছি। আর আমরা তাদেরকে পবিত্র রূযী দান করেছি এবং যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর আমরা তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৭০)।
এমন মর্যাদা দেওয়ার পরও আমাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সমপর্যায়ের শুভ্র কেশ বিশিষ্ট মুসলিমের বিশেষ মর্যাদার কথা রাসূল (ছাঃ) বর্ণনা করেছেন। আমর বিন শু‘আইব তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন,
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نَتْفِ الشَّيْبِ، وَقَالَ : هُوَ نُوْرُ الْمُؤْمِنِ، وَقَالَ : مَا شَابَ رَجُلٌ فِي الْإِسْلاَمِ شَيْبَةً، إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَمُحِيَتْ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةٌ، وَكُتِبَتْ لَهُ بِهَا حَسَنَةٌ-
‘রাসূল (ছাঃ) সাদা চুল
উঠাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা মুমিনের নূর। তিনি আরো বলেন, ইসলামে
যদি কেউ সাদা চুল বিশিষ্ট হয় আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন, একটি
পাপ মোচন করে দেন এবং একটি নেকী লিখে দেন’।[4]
রাসূল
(ছাঃ) বলেন,مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلاَمِ كَانَتْ لَهُ نُوْرًا
يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে মুসলিম সাদা চুল বিশিষ্ট হবে, ক্বিয়ামতের দিন এটা
তার জন্য জ্যোতি বা আলো হবে’।[5]
এধরনের
বিশেষ মর্যাদা কেবল সাদা চুলবিশিষ্ট আমাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য। আমাদের
ভাগ্যে এই মর্যাদা নাও মিলতে পারে। আর এমন বৃদ্ধ মানুষ পৃথিবীতে আছে বিধায় এ
ধরা কল্যাণ ও বরকতময়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,اَلْبَرَكَةُ مَعَ أَكَابِرِكُمِ،
‘প্রবীণদের সাথেই তোমাদের কল্যাণ, বরকত রয়েছে’।[6] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)
বলেন,ابْغُوْنِي الضَّعِيْفَ فَإِنَّكُمْ إِنَّمَا تُرْزَقُوْنَ
وَتُنْصَرُوْنَ بِضُعَفَائِكُمْ، ‘তোমরা আমাকে দুর্বলদের মাঝে খোঁজ কর।
কেননা তোমাদের মধ্যে যারা দুর্বল তাদের অসীলায় তোমরা রিযিক ও সাহায্য
প্রাপ্ত হয়ে থাক’।[7]
তিনি আরো বলেন,إِنَّمَا
يَنْصُرُ اللهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيْفِهَا بِدَعْوَتِهِمْ
وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতকে তাদের
দুর্বল লোকদের দো‘আ, ছালাত ও ইখলাছের মাধ্যমে সাহায্য করে থাকেন’।[8]
কারণ দুর্বলদের ইবাদতে ও দো‘আয় একনিষ্ঠতা থাকে, থাকে দুনিয়ার সৌন্দর্য থেকে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা। তাদের আগ্রহ, মনোযোগ ও অভিপ্রায় একই দিকে হয়ে থাকে। সেকারণ তাদের দো‘আ কবুল হয়ে থাকে। তাই বৃদ্ধ যেই হোক না কেন তাকে সর্বাবস্থায় সম্মানের চোখে দেখতে হবে। উপযুক্ত পানাহার, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, যথাযোগ্য পোষাক ও মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করে তাদের কাছ থেকে দো‘আ নেওয়া প্রয়োজন।
অধিক বয়সীদের বিশেষ মর্যাদার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِكُمْ؟ قَالُوْا : نَعَمْ
يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : خِيَارُكُمْ أَطْوَلُكُمْ أَعْمَارًا،
وَأَحْسَنُكُمْ أَعْمَالاً، ‘আমি কি তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তির সংবাদ
দিব না? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, তোমাদের
মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যে দীর্ঘ আয়ু লাভ করে এবং সুন্দর আমল করে’।[9]
অন্য
হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল,يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ
خَيْرٌ؟ قَالَ : مَنْ طَالَ عُمْرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ، قَالَ : فَأَيُّ
النَّاسِ شَرٌّ؟ قَالَ : مَنْ طَالَ عُمْرُهُ وَسَاءَ عَمَلُهُ، ‘হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে
এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট কে?
তিনি বললেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে’।[10]
রাসূল
(ছাঃ) আরো বলেন,إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ
الْمُسْلِمِ، ‘নিশ্চয়ই শুভ্র চুল বিশিষ্ট মুসলিমকে সম্মান করাই আল্লাহকে
সম্মান করার শামিল’।[11]
যারবী (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস বিন মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, جَاءَ شَيْخٌ
يُرِيْدُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَبْطَأَ
الْقَوْمُ عَنْهُ أَنْ يُوَسِّعُوْا لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا
وَيُوَقِّرْ كَبِيْرَنَا، ‘একজন বয়স্ক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে দেখা করতে
আসল। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করল। তা দেখে রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে
ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান
প্রদর্শন করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[12]
বৃদ্ধদের এমন বিশেষ মর্যাদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) দেওয়ার পরও যারা তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা না দিয়ে অবহেলা করবে তারা মূলতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কেই অবহেলা করে। অথচ যত কল্যাণ, বরকত, রিযিক সবই আসে এরূপ দুর্বল, অসহায় বৃদ্ধদের অসীলায়। এই দুর্বল বৃদ্ধদের অবহেলাকারীরা টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ যতই উপার্জন করুক না কেন সবই বরকতহীন অকল্যাণে পরিণত হবে।
গ) বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি করণীয় : মহান আল্লাহ পিতা-মাতার প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দানের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا, وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيْرًا-
‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ কর। তাদের একজন অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি ‘উহ’ শব্দটিও উচ্চারণ কর না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে ম্মানজনক কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বনু ইসরাঈল ১৭/২৩-২৪)।
অনেক সন্তান বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। এমনকি মারধর পর্যন্ত করে। স্ত্রীকে খুশী করার জন্য বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অচেনা জায়গায় ফেলে আসা, দূরপাল্লার গাড়ীতে তুলে দিয়ে পালিয়ে আসা, ডাক্তার দেখানোর কথা বলে জমি দলীল করে নিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দেয়া, হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে বন্দী করে রাখার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা মাঝে-মধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। অথচ মহান আল্লাহ তাদের সাথে এমন আচরণ তো দূরের কথা ‘উহ’ শব্দও করতে নিষেধ করেছেন। বরং শ্রদ্ধাভরে নম্রভাবে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। সর্বক্ষণ তাদের জন্য আল্লাহর শেখানো দো‘আ করতে হবে; যেন তাদের উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ রহম করেন।
পিতা-মাতার হক বুঝাতে
নিম্নোক্ত হাদীছটির প্রতিও লক্ষ্য করা যেতে পারে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ
بِحُسْنِ صَحَابَتِيْ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ
قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ
أَبُوْكَ، ‘এক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার? তিনি বললেন, তোমার
মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি
বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা’।[13]
এ
পর্যন্তই শেষ নয়; পিতা-মাতা অমুসলিম হ’লেও তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায়
রাখার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। যেমন আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, قَدِمَتْ
عَلَيَّ أُمِّيْ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ وَهِيَ رَاغِبَةٌ أَفَأَصِلُ أُمِّيْ قَالَ
نَعَمْ صِلِيْ أُمَّكِ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায়
আমার নিকট আসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ফৎওয়া চেয়ে বললাম, তিনি
আমার প্রতি খুবই আসক্ত, আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ,
তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচরণ কর’।[14]
আমর বিন শু‘আইব তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন, أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ وَالِدِيْ يَحْتَاجُ مَالِيْ قَالَ أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوْا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ، ‘একজন লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার সম্পদ ও সন্তান আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বললেন, তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানের উপার্জন থেকে খাও’।[15] অত্র হাদীছ থেকে বুঝা যায়, যারা উপার্জন শিখে পিতা-মাতাকে গালি দেয় বা খোঁটা দেয়, ভরণপোষণ করতে চায় না তাদের জানা উচিৎ সে ও তার মাল সবই তার পিতা-মাতার। এখানে অহংকার করার কিছুই নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ، ‘আর আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই’ (লোকমান ৩১/১৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,رِضَى الرَّبِّ فِي رِضَى
الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ، ‘পিতার সন্তুষ্টির
মধ্যেই আল্লাহ তা‘আলার সস্ত্তষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহ তা‘আলার
অসন্তুষ্টি রয়েছে’।[16]
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)
আরো বলেন,رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ قِيلَ
مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ
أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ، ‘সে ব্যক্তির
নাক ধূলিমলিন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক
ধূলিমলিন হোক! বলা হ’ল ইয়া রাসুলাল্লাহ! কার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার
পিতামাতা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যে পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার
সুযোগ লাভ করল না’।[17]
প্রবীণদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা মুসলমানদের দায়িত্ব। তাদের প্রয়োজন পূরণ করা সকলের কর্তব্য। বিশেষ করে নিকটাত্মীয়দের এটা মানবিক দায়িত্বও বটে। এমনকি কেউ যদি মনে করে যে, আমার উপার্জিত সম্পদ আমারই, পিতা-মাতাকে কেন দিব? এর জবাব রাসূল (ছাঃ) আগেই দিয়ে রেখেছেন, ‘তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার’।
সুতরাং তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে সন্তান বাধ্য।
ঘ) সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন : বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করে এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার মনে করছি। আর তা হ’ল, প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুমুখী পাঠ দানের পাশাপাশি পরিবারের সকলের সাথে সমন্বয় করে বসবাস করার মত কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষিতরা চাকুরীর সুবাদে সংসার ত্যাগ করে শহরমুখী হয়। অথবা উচ্চ বংশীয় নারীকে বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর অনুগামী হয়। ভুলে যায় পরিবারের আদর-সোহাগমাখা লালন-পালনের কথা। তাই সন্তানদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এসব বিষয় শিক্ষা দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। উদাহরণ তুলে ধরে বুঝাতে হবে যে, বৃদ্ধদের প্রতি অশুভ আচরণের কুপ্রভাব একদিন নিজ সন্তান দ্বারা তার নিজের উপরেই ফিরে আসবে। তাই এক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা সকলের জন্য অত্যন্ত যরূরী। মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি কখনো তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারে না।
ঙ) পরিবারের লোকদের বুঝানো : সরকারীভাবে অথবা বৃদ্ধাশ্রমের পক্ষ থেকে ‘প্রবীণ নির্যাতনে’র বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা, সেমিনারের আয়োজন করে বৃদ্ধ অবহেলিত পরিবারের লোকদের বুঝানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে যারা মাতা-পিতাকে অবহেলা করেন তাদের মানবিক চেতনা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা। বৃদ্ধাশ্রমের একটি কার্যক্রম এরকমও হ’তে পারে যে, যারা তাদের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে আসবে তাদেরকে পিতা-মাতার সেবা করার ছওয়াব ও সময় দেওয়ার ফযীলত বুঝিয়ে তাদের মানবতাবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলা, যেন তারা তাদের পিতা-মাতাকে নিজেদের কাছে রাখার প্রতি উৎসাহী হয়। কুরআন-সুন্নাহর বাণী তার নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। আশা করি এর মাধ্যমে প্রবীণ নির্যাতন কিছুটা হ’লেও হ্রাস পাবে ইনশাআল্লাহ।
[চলবে]
[1]. www.rkhdtv.com ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৭।
[2]. বাংলা নিউজ ম্যাগ ৩০.০৬.১৫ইং।
[3]. www.rkhdtv.com ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৭।
[4]. আহমাদ হা/৬৯৩৭; আবূদাউদ হা/৪২০২; ইবনু মাজাহ হা/৩৭২১, সনদ ছহীহ।
[5]. তিরমিযী হা/১৬৩৪; ইবনে হিববান হা/২৯৮৩।
[6]. ইবনু হিববান হা/৫৫৯; হাকেম হা/২১০ সনদ ছহীহ ।
[7]. নাসাঈ হা/৩১৭৯; আবূদাউদ হা/২৫৯৪; আহমাদ হা/২১৭৩১, সনদ ছহীহ।
[8]. নাসাঈ হা/৩১৭৮, সনদ ছহীহ।
[9]. আহমাদ হা/৭২১২, ইবনু হিববান হা/৩০৪৩, সনদ ছহীহ।
[10]. তিরমিযী হা/২৩৩০, সনদ ছহীহ।
[11]. আবূদাউদ হা/৪৮৪৩, সনদ হাসান।
[12]. তিরমিযী হা/১৯১৯, সনদ ছহীহ।
[13]. বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮।
[14]. বুখারী হা/২৬২০; মুসলিম হা/১০০৩।
[15]. আবূদাউদ হা/৩৫৩০; ইবনু মাজাহ হা/২২৯২, সনদ ছহীহ।
[16]. তিরমিযী হা/১৮৯৯, ছহীহ।
[17]. মুসলিম হা/৪৬২৭, আহমাদ হা/৮৫৫৭, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫০০।
[1]. আবূদাঊদ হা/৩৪৬২; ছহীহাহ হা/১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২৩। (আরবী ‘যুল্লুন’ ও ‘যিল্লাতুন’-এর বাংলা ‘লাঞ্ছনা’। অপমানজনক দুরবস্থা ও দুর্গতিকে লাঞ্ছনা বলে। আবদুল ওয়াদুদ, ব্যবহারিক শব্দকোষ)।-অনুবাদক।
[2]. তুর্কী মুদ্রাকে লিরা বলা হয়।
[3]. আলোচ্য আয়াত ও অনুরূপ অন্যান্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইসলামের সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা প্রদান এবং ব্যবহারিক বা প্রায়োগিকভাবে তা দেখিয়ে দেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। ঈমান-আক্বীদা, ইবাদত, মু‘আমালাত বা পারস্পরিক কারবার, আইন-বিচার, রাজ্য শাসন, মু‘আশারাত বা সমাজ পরিচালনা, চরিত্র বা আদব-আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যা কিছু বলেছেন, যা হাদীছ বা সুন্নাহ নামে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে তা দ্বারাই তিনি আল্লাহর বিধানকে সুস্পষ্ট করেছেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন,صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّى، ‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (বুখারী হা/৬৩১)। তিনি ওযূ থেকে নিয়ে সালাম ফেরানো পর্যন্ত ছালাতের যাবতীয় নিয়ম-কানুন হাদীছে বলে গেছেন। ছাহাবাদের তিনি হাতে কলমে ছালাত শিখিয়েছেন। কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি তাকে প্রথমেই ছালাত শিখাতেন। তাঁর তরীকাই কুরআনের তরীকা। আল্লাহ বলেন,مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، ‘যে রাসূলকে মানল সে আল্লাহকে মানল’ (নিসা ৪/৮০)। তাঁর তরীকা অমান্য করা কুফর এবং নিজেদের ইচ্ছামত তাতে নতুন কিছু সংযোজন বিদ‘আত।-অনুবাদক।
[4]. মুহাম্মাদ আমীন ইবনু আবেদীন দামেশক্বী (১১৯৮-১২৫২ হি.), রাদ্দুল মুহতার (বৈরূত : দারুল ফিক্র ১৩৯৯/১৯৭৯) ১/৬৭ পৃ.; আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রানী, মীযানুল কুবরা (দিল্লী : ১২৮৬ হি.) ১/৩০ পৃ.।
[5]. হিদায়া, কিতাবুল আশরিবা বা পানীয় অধ্যায় দেখুন।
[6]. আবূদাঊদ হা/৩৬৮১; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯৩; ইরওয়া হা/২৩৭৫।
[7]. মুসলিম হা/২০০৩; আবূদাঊদ হা/৩৬৭৯; ইরওয়া হা/২৩৭৩।