ভারতীয় ‘গুন্ডে’ ছবি নিয়ে বাংলাদেশের একশ্রেণীর পত্রপত্রিকায় ঘোর প্রতিবাদ চলছিল। আরেক শ্রেণীর পত্রপত্রিকা এই ব্যাপারে মোটামুটি খামোশ মেরে ছিল। ওরা হয়তো সরকারের খয়ের খাঁ। তখনই কথা উঠেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসলে কোন বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে? ভারতের তরফ থেকে প্রথম থেকে বলা হচ্ছিল যে, পাকবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ বলছিল যে, ভারতীয় বাহিনী নয়, যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান বাহিনী। আসলে কোনটি সত্য? গুন্ডে ছবিতেও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান বাহিনী। সেজন্যই এত প্রতিবাদ।

প্রকৃত সত্য জানার জন্য সারেন্ডার ডকুমেন্টটি দেখতে হবে। তাই ইন্টারনেটে ওই ডকুমেন্টটি দেখলাম। সেখানে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা ডকুমেন্টের নিচে সই করেছেন। তার পদবী দেয়া হয়েছে নিম্নরূপ : `General Officer Commanding in Chief/India and BANGLADESH Forces in the Eastern Theater/16th December 1971. অর্থাৎ জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ(অধিনায়ক) /পূর্বাঞ্চলস্থ’ ভারত ও বাংলাদেশের যৌথবাহিনী। বাংলাদেশের তরফ থেকে যুদ্ধ করেছে মুক্তিবাহিনী। এই বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন, জে. এমএজি ওসমানী। তিনি ছিলেন যৌথ বাহিনীর উপপ্রধান।

ইন্টারনেটে গিয়ে গুগলে ‘Instrument Of Surrender’ শিরোনামে Log On করবেন। শুধু এই তথ্য নয়, এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আরো অনেক তথ্য পাবেন। প্রিয় পাঠক, আমার সাথে আপনারাও নিশ্চয়ই একমত যে, যে ডকুমেন্ট ওপরে দেয়া হ’ল এরপর এর ব্যাপারে বিভ্রান্তির আর কোন অবকাশ থাকবে না।

সেই সারেন্ডার অনুষ্ঠানে ভারতের তরফ থেকে জে. আরোরা উপস্থিত থাকলেন, বাংলাদেশের তরফ থেকে যৌথ বাহিনীর উপ প্রধান জেনারেল ওসমানী কেন উপস্থিত থাকলেন না?

এই নিয়ে অনেক জ্বলন্ত প্রশ্ন মানুষের মনকে সেইদিন থেকেই আলোড়িত করছে এবং আজো আলোড়িত করেই চলেছে। আমরা এ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। সেসব কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আজো ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে সেসব কথা লেখা যায় না। হয়তো এ সম্পর্কে তথ্য আছে। কিন্তু সব তথ্য কি জোগাড় করা সম্ভব? এ ব্যাপারে একটি তথ্য আমার হাতে এসেছে। সেটি আপনাদের খেদমতে পেশ করছি।

গত ৬ মার্চ ‘দৈনিক যুগান্তরে’ ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম, ‘গুন্ডে ছবির রাজনীতি’। লেখার এক স্থানে একটি সাব হেডিং রয়েছে। সেটি হ’ল, ‘পাকবাহিনী কার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে?’।

এরপর লেখা হয়েছে, ‘ওসমানী তখন কোথায় ছিলেন?’ অতঃপর বলা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে আলাপচারিতার একটি দিনের কথা মনে পড়ে। ১৯৭৮ সালের একদিন তার সঙ্গে সিলেট থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। একটা জিপের সামনের আসনে দু’জন পাশাপাশি বসা। জেনারেল খুব আলাপী মানুষ ছিলেন। সারা পথ তার জীবনের নানা ঘটনা সরস ভাষায় বলে যাচ্ছেন। আমি নিবিষ্ট মনে শুনছি।

জিপটা যখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে বলে উঠলাম : ‘স্যার, একটা বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করে, একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকবাহিনী রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে তখন আপনি সেখানে উপস্থিত থাকেননি কেন?’

জেনারেল সাহেব প্রশ্নটি শুনে একটু যেন চমকে উঠলেন। কথা থামিয়ে চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যখন বলতে শুরু করলেন তখন তার গলার স্বর পাল্টে গেছে। একটু ধীরে তার স্বভাবগত ভাবগম্ভীর স্বরে ঠোঁট চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে শুরু করলেন (প্রায় দু’বছর প্রায় সর্বক্ষণ তার কাছাকাছি থাকার সুবাদে ততদিন বুঝে নিয়েছি রেগে গেলে তিনি এভাবে কথা বলেন)। বললেন, ‘ইট ওয়াজ এ ডার্টি কনসপিরেসি। আই ওয়াজ গোয়িং টু অ্যাটেন্ড দ্যাট সারেন্ডার সেরিমনি। ইট ওয়াজ ইন দ্যা প্রোগ্রাম। মাইসেলফ অ্যান্ড জেনারেল রব। উই স্টারটেড ফ্রম দিস ভেরি প্লেস কুমিল্লা। বাট ইউ নো অন দ্য ওয়ে উই আয়ার সাডেনলি আস্কড নট টু প্রসিড। ব্যাটারা অয়্যারলেসে বলেছে, পথে নাকি অসুবিধা আছে। আমরা যেন সিলেটের দিকে চলে যাই। পাইলট হেলিকপ্টার ঘুরিয়ে দিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমরা পড়ে গেলাম গান ফায়ারে। আমার পাশে জেনারেল রব গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেলেন। আল্লাহর রহমতে শাহ জালালের দো‘আয় আমার গায়ে একটা গুলিও লাগেনি...।’ বলেই আবার চুপ হয়ে গেলেন (স্মৃতি থেকে যথা সম্ভব তার কথাগুলো তার বাচন ভঙ্গিতে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিছু ডট ডট আছে। সব কথা বলা যায় না)। লক্ষ্য করলাম, রাগে তিনি গর গর করছেন। আমি চুপ করে থেকে মনে মনে সেই হেলিকপ্টারের দৃশ্যটা কল্পনা করতে থাকলাম।

ফেরদৌস কোরেশী, জেনারেল ওসমানীর উদ্ধৃতিতে, তার (জেনারেলের) সারেন্ডার অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ বর্ণনা করেছেন। জেনারেলকে বহনকারী হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করা হয়। ওই হেলিকপ্টারের আরেকজন আরোহী জেনারেল আব্দুর রব আহত হন এবং রক্তাক্ত হন। সৌভাগ্যক্রমে ওসমানীর গায়ে কোন গুলি লাগেনি। এখানে কিছু ফাঁক রয়েছে। সেই ফাঁকগুলো ফেরদৌস কোরেশী পূরণ করেননি। যে হেলিকপ্টারটি ঢাকার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে উড্ডয়ন করেছিল সেটিকে সিলেটে যাওয়ার জন্য কে বা কারা নির্দেশ দেয়? নির্দেশ অনুযায়ী গতিপথ পরিবর্তন করে হেলিকপ্টারটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। তাহলে মাঝপথে কে বা কারা ওই হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করে? এই ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার আজ পর্যন্ত চেপে রেখেছে কেন? এই সব আমাদের কোন প্রশ্ন নয়। যারা পঞ্চাশোর্ধ্ব, তাদের সকলের মনকে এই প্রশ্নটি দারুণভাবে আলোড়িত করে এবং আগামী দিনগুলোতেও আলোড়িত করতেই থাকবে।                                                     

[সংকলিত]






ধবংসলীলা - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
মুসলিম শিশুর জন্ম পরবর্তী করণীয় - মুহাম্মাদ আব্দুল হামীদ
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৭ম কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
মুনাফিকী (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়ার উপায় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
পলাশীর ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
ইয়াতীম প্রতিপালন - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
কুরআন-হাদীছের আলোকে ক্ষমা - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আরও
আরও
.