চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাযার ছাড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সতর্কতা জারী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাসটি কতটা ভয়ংকর এবং কিভাবে ছড়ায়, তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

করোনা ভাইরাস কি?

‘করোনা’ (কোভিড ১৯) ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হ’তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভিতরে ইতিমধ্যে ‘মিউটেট করছে’। অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশী বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস?

এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। তবে এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে।

এক দশক আগে ‘সার্স’ নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাযারের অধিক মানুষ। আর ২০১২ সালে ‘মার্স’ নামের আরেকটি ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছিল ৮৫৮ জনের।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সমূহ :

ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হ’ল, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হ’তে হয়।

যেভাবে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস :

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর’১৯ এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। ঠিক কিভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত কোন প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোন মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এর আগে ‘সার্স’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকার নযীর রয়েছে। আর ‘মার্স’ ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে। ‘করোনা’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা বলা হচ্ছে। শহরটির একটি বাযারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঐ বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হ’ত।

তবে ইসরাঈলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ড্যানি শোহাম বলেছেন, ভিন্ন কথা। তার মতে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস চীনের একটি গোপনীয় জীবাণু অস্ত্র পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণাগারটি উহান শহরে অবস্থিত বলে দাবী করেন তিনি। তিনি নিজেও সেখানে গবেষণা করেছেন। করোনা ভাইরাস নিয়েও ঐ প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা করছে বলে ধারণা করছেন তিনি। সার্সের মতো ভাইরাস নিয়ে গবেষণাও চীনের জৈব রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত বলে জানান ড্যানি।

প্রতিরোধে উপায় :

ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোন টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোন চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।

আপাতত প্রতিরোধের উপায় হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। যথা (১) নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া (২) হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা (৩) ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকা (৪) অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা (৫) ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা (৬) এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। (৭) ডিম ও গোশত খুব ভালো করে রান্না করা (৮) ময়লা কাপড় দ্রুত ধৌত করা। 

এছাড়া উপদ্রুত এলাকা যাওয়া-আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে এবং তোমরা সেখানে থাক, তাহ’লে পলায়ন করে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না’ (বুখারী হা/৫৭২৯-৩০; মুসলিম হা/২২১৯)

একইসাথে এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ দু’টি পাঠ করতে হবে। (১)اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ، (আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুযা-মি ওয়াল জুনূনি ওয়া মিন সাইয়িইল আসক্বা-ম)  অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হ’তে’ (আবূদাঊদ হা/১৫৫৪; নাসাঈ হা/৫৫০৮ ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অধ্যায়; মিশকাত হা/২৪৭০, সনদ ছহীহ)

(২)اللَّهُمَّ إنِّيْ أعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأخْلاَقِ، وَالأعْمَالِ، والأهْوَاءِ وَالاَدْوَاءِ (আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন মুনকারা-তিল আখলা-ক্বি ওয়াল আ‘মা-লি ওয়াল আহওয়া-ই ওয়াল আদওয়া) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ-বালাই থেকে আশ্রয় চাই’ (তিরমিযী হা/৩৫৯১; মিশকাত হা/২৪৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৯৮)। 







আরও
আরও
.