নফল ইবাদতের মধ্যে নফল ছিয়াম অতি গুরুত্বপূর্ণ। বছরের বিভিন্ন সময়ে নফল ছিয়াম রাখা যায়। বিভিন্ন সময়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে একেকটির ফযীলতও একেক ধরনের। নিম্নে নফল ছিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।
ছিয়ামের ফযীলত :
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِىْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ
وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর
উদ্দেশ্যে একটি ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন
হ’তে ৭০ বছরের পথ দূরে রাখবেন’।[1] অন্য বর্ণনায় ১০০ বছরের পথ দূরে রাখবেন বলা হয়েছে।[2]
১. শা‘বান মাসের ছিয়াম :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের ফরয ছিয়ামের পর শা‘বান মাসেই একটানা নফল ছিয়াম পালন করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
فَمَا رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلاَّ رَمَضَانَ وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِىْ شَعْبَانَ-
‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান মাস
ব্যতীত অন্য কোন মাসে পুরো মাস ছিয়াম রাখতে দেখিনি। আর শা‘বান মাসের চেয়ে
অন্য কোন মাসে এত অধিক ছিয়াম রাখতে দেখিনি’।[3]
তিনি
আরো বলেন, لَمْ يَكُنِ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسَلم يَصُوْمُ شَهْرًا
أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ فَإِنَّهُ كَانَ يَصُوْمُ شَعْبَانَ كُلَّهُ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শা‘বান মাসের চেয়ে অধিক ছিয়াম কোন মাসে পালন করতেন না।
তিনি পুরো শা‘বান মাসই ছিয়াম পালন করতেন’।[4]
উম্মু
সালামা (রাঃ) বলেন,مَا رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَصُوْمُ
شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ إِلاَّ شَعْبَانَ وَرَمَضَانَ- ‘নবী করীম
(ছাঃ)-কে শা‘বান ও রামাযান ব্যতীত একাধারে দুই মাস ছিয়াম পালন করতে
দেখিনি’।[5]
আয়েশা (রাঃ) বলেন,مَا رَأَيْتُ
النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِىْ شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِىْ
شَعْبَانَ كَانَ يَصُوْمُهُ إِلاَّ قَلِيْلاً بَلْ كَانَ يَصُوْمُهُ
كُلَّهُ- ‘শা‘বান মাসের মত আর কোন মাসে এত অধিক নফল ছিয়াম রাখতে আমি রাসূল
(ছাঃ)-কে দেখিনি। এ মাসের কিছু ব্যতীত বরং পুরো মাসই তিনি ছিয়াম রাখতেন’।[6]
শা‘বান মাসের কয়েকদিন ব্যতীত ছিয়াম পালন করা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ ছিল। উম্মতের জন্য তিনি প্রথম অর্ধাংশ পসন্দ করেছেন। তিনি বলেন,إِذَا كَانَ النِّصْفُ مِنْ شَعْبَانَ فَلاَصَوْمَ حَتَّى يَجِئَ رَمَضَانُ. ‘শা‘বান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে রামাযান না আসা পর্যন্ত আর কোন ছিয়াম নেই’।[7] তবে কেউ ছিয়াম রাখতে অভ্যস্ত হ’লে সে রাখতে পারে।
২. শাওয়াল মাসের ছিয়াম :
শাওয়াল
মাসে ৬টি ছিয়াম রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ
رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ
الدَّهْرِ- ‘যে রামাযানের ছিয়াম রেখেছে এবং পরে শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম
রেখেছে, সে যেন সারা বছর ছিয়াম রাখল’।[8]
৩. যিলহজ্জ ও আরাফার ছিয়াম :
নফল ছিয়ামের মধ্যে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক ও আরাফার দিনের ছিয়ামের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। যিলহজ্জের প্রথম দশকের ছিয়ামের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ يَعْنِىْ الْعَشْرَ، قَالُوْا يَارَسُوْلَ اللهِ وَلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ، قالَ وَلاَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَالِكَ بِشَيْءٍ-
‘আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ
মাসের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক পসন্দনীয় নেক আমল আর নেই। ছাহাবীগণ
বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? তিনি বললেন, না,
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান, মাল নিয়ে বের হয়ে
ফিরে আসেনি (তার সৎকাজ এর চেয়েও বেশী মর্যাদাপূর্ণ)’।[9] আরাফার দিনের
ছিয়াম প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّىْ
اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَهُ
وَالسَّنَةَ اللَّتِىْ بَعْدَهُ. ‘আরাফার দিনের ছিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর
নিকট আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের
গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন’।[10]
উল্লেখ্য, আরাফার দিনে আরাফায় অবস্থানকারী হাজীগণ ছিয়াম পালন করবেন না। এছাড়া অন্যান্য সকল মুসলমান নফল ছিয়ামের মধ্যে সর্বাধিক নেকী সম্পন্ন এই ছিয়াম পালন করে অশেষ নেকী অর্জনে সচেষ্ট হবেন।
৪. আশূরার ছিয়াম :
আশূরার
ছিয়াম তথা মুহাররমের ১০ তারিখের ছিয়ামও অধিক ফযীলতপূর্ণ। ইহুদীরাও এইদিন
ছিয়াম পালন করত। ফেরাঊনের কবল থেকে মূসা (আঃ)-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ এ
ছিয়াম রাখা হয়। কারবালার প্রান্তরে হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে এ
ছিয়াম পালন করলে শুধু কষ্ট করাই সার হবে। কারণ তার অর্ধ শতাব্দী পূর্বেই
ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় এসে ইহুদীদেরকে আশূরার ছিয়াম পালন করতে দেখে এর
কারণ জানতে চাইলে তারা বলল,هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللهُ
بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوْسَى- ‘এই দিন উত্তম
দিন। এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুদের কবল থেকে মুক্তি
দান করেছিলেন, ফলে মূসা (আঃ) এই দিনে ছিয়াম পালন করেছেন’। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বললেন,فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوْسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ
بِصِيَامِهِ ‘আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আঃ)-এর (আদর্শের) অধিক হক্বদার। অতঃপর
তিনি এ দিনে ছিয়াম পালন করেন এবং ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন’।[11]
ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন,مَا رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلاَّ
هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِىَ شَهْرَ
رَمَضَانَ- ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আশূরার ছিয়ামের ন্যায় অন্য কোন
ছিয়ামকে এবং এই মাস অর্থাৎ রামাযান মাসের ন্যায় অন্য কোন মাসকে প্রাধান্য
দিতে দেখিনি’।[12]
২য় হিজরী সনে রামাযান
মাসের ছিয়াম ফরয করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) এই নির্দেশ শিথিল করে দেন। আয়েশা
(রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) প্রথমে আশূরার ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন।
পরে যখন রামাযান মাসের ছিয়াম ফরয করা হয় তখন আশূরার ছিয়াম ছেড়ে দেয়া হ’ল।
যার ইচ্ছা সে পালন করত, যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিত।[13]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, صُوْمُوْا يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَخَالِفُوا الْيَهُوْدَ
وَصُوْمُوْا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا- ‘তোমরা আশূরার ছিয়াম
রাখ এবং ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশূরার সাথে তার পূর্বে একদিন অথবা পরে
একদিন ছিয়াম পালন কর’।[14] সুতরাং আশূরার ছিয়াম মুহাররমের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখে রাখা যায়। তবে ৯, ১০ তারিখে রাখাই সর্বোত্তম।[15]
এ
ছিয়ামের ফযীলত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَصِيَامُ يَوْمِ
عَاشُوْرَاءَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ
قَبْلََهُ- ‘আশূরার ছিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর নিকটে আশা রাখি যে, উহা
বিগত এক বছরের পাপ মোচন করে দিবে’।[16]
৫. প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম :
প্রতি মাসে তিনদিন ছিয়াম রাখা রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত ও পসন্দনীয় আমল। তিনদিন ছিয়াম রাখার বিনিময়ে পুরো মাস ছিয়াম রাখার সমান নেকী পাওয়া যায়। আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ صَامَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَذَالِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَصْدِيْقَ ذَالِكَ فِىْ كِتَابِهِ: مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا اَلْيَوْمُ بِعَشْرَةِ أيَّامٍ-
‘যে
ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখে তা যেন সারা বছর ছিয়াম রাখার সমান।
এর সমর্থনে আল্লাহ তাঁর কিতাবে নাযিল করেন, ‘যদি কেউ একটি ভাল কাজ করে তার
প্রতিদান হ’ল এর দশগুণ’ (আন‘আম ৬/১৬০)। সুতরাং এক দিন দশদিনের সমান।[17]
চাঁদের
১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে এই ছিয়াম রাখা সুন্নাত। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবূ
যার (রাঃ)-কে বলেন, হে আবূ যার! তুমি প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখতে চাইলে
তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে রাখ’।[18]
৬. সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ছিয়াম :
সোমবার
ও বৃহস্পতিবারের ছিয়ামের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখতেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা
হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ
والْخَمِيْسِ فأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِىْ وَأَنَا صَائِمٌ- ‘প্রতি
সোম ও বৃহস্পতিবার আমলনামা সমূহ আল্লাহর নিকটে পেশ করা হয়। আমি পসন্দ করি
যে, ছিয়াম অবস্থায় আমার আমলনামা আল্লাহর নিকটে পেশ করা হোক’।[19]
৭. দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়াম :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়ামকে সর্বোত্তম বলেছেন। তিনি বলেন, لاَ صَوْمَ فَوْقَ صَوْمِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ شَطْرَ الدَّهْرِ صُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا- ‘দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়াম সর্বোত্তম। তা হচ্ছে অর্ধেক বছর। (সুতরাং) একদিন ছিয়াম পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও’ (বুখারী হা/১৯৮০)।
নিষিদ্ধ ছিয়াম :
কিছু কিছু দিনে ছিয়াম পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হ’ল-
(১) ছওমে বিছাল (বিরতিহীন ছিয়াম) : ছাওমে বিছাল হচ্ছে ইফতার ও সাহারী গ্রহণ ব্যতীত দিনের পর দিন ছিয়াম পালন করা। এটি নিষিদ্ধ (বুখারী হা/১৯৬৫)।
(২) সারা বছরের ছিয়াম :
সারা বছর ছিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সারা বছর
ছিয়াম পালন করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাঊদ (আঃ)-এর ছিয়ামের কথা উল্লেখ
করে বলেন, ‘এর চেয়ে উত্তম ছিয়াম আর নেই’।[20] অন্যত্র এসেছে, مَنْ صَامَ الْأَبَدِ فَلاَصَامَ ‘যে ব্যক্তি সারা বছর ছিয়াম রাখে, সে মূলতঃ ছিয়ামই রাখে না’।[21]
(৩) শনিবারের ছিয়াম :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের উপর ফরযকৃত ছিয়াম ব্যতীত কেউ যেন শনিবারে
ছিয়াম না রাখে। আঙ্গুরের লতার বাকল বা গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছু যদি না
পায় তবে সে যেন (ভঙ্গ করার জন্য) তাই চিবিয়ে নেয়।[22]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,ومعنى كَرَاهَتِهِ فِىْ هَذَا أَنْ يَّخُصَّ الرَّجُلُ يَوْمَ السَّبْتِ بِصِيَامٍ، لِأَنَّ اليَهُوْدَ تُعَظِّمُ يَوْمَ السَّبْتِ- ‘এই ছিয়াম মাকরূহ হওয়ার কারণ হচ্ছে, কেবল শনিবারকে (নফল) ছিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করা। কারণ ইহুদীরা
শনিবারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকে’ (ঐ, পৃঃ ১৮৪)।
(৪) শুক্রবারের ছিয়াম : জুয়াইরিয়া (রাঃ) বলেন, তিনি ছিয়ামরত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি গতকাল ছিয়াম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। আবার জিজ্ঞেস করলেন, আগামী দিন কি ছিয়াম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে ছিয়াম ভেঙ্গে ফেল’।[23] বৃহস্পতিবার অথবা শনিবার ছিয়াম রাখার নিয়ত না থাকলে শুধু শুক্রবার ছিয়াম রাখতে রাসূল (ছাঃ) অত্র হাদীছে নিষেধ করেছেন।
(৫) দুই ঈদের দিনের ছিয়াম : ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) এই দুই দিন ছিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন) যেদিন তোমরা ছিয়াম ছাড়। আরেকদিন, যেদিন তোমরা কুরবানীর গোশত খাও। অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিন (বুখারী, হা/১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩, ১৯৯৫)।
(৬) আইয়ামে তাশরীক-এর ছিয়াম : যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়। ঈদুল আযহার দিনের পরের এই দিনগুলোতে আরবরা গোশত
শুকাত বলে এই দিনগুলোকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আইয়ামে তাশরীক হ’ল পানাহার ও আল্লাহর যিকরের দিন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫২)।
নফল ছিয়ামের নিয়ত, নফল ছিয়াম ভাঙ্গা ও তার ক্বাযা :
‘নিয়ত’ অর্থ সংকল্প। যা মুখে উচ্চারণ করতে হয় না। মনে মনে সংকল্প করাই যথেষ্ট। নফল ছিয়ামের নিয়ত সাহারীর পূর্বে করা শর্ত নয়। পরেও নিয়ত করা যায়। কোন ওযর ব্যতীত নফল ছিয়াম ভাঙ্গা যায়। পরে তার কোন কাযা করারও আবশ্যকতা নেই (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৭৬)।
পরিশেষে নফল ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। তাই বেশী বেশী নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা আমাদের জন্য যরূরী। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে নফল ইবাদত করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
[1]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৯৫৫, ৪/২৫৩।
[2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭, ২৫৬৫।
[3]. বুখারী, হা/১৯৬৯; নাসাঈ হা/২৩৫১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৯৩৮।
[4]. বুখারী, হা/১৯৭০।
[5]. তিরমিযী হা/৬৩৬, সনদ ছহীহ।
[6]. তিরমিযী হা/৬৩৭, সনদ হাসান ছহীহ।
[7]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬৫১, সনদ ছহীহ; তিরমিযী হা/৭৩৮।
[8]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৪৯; তিরমিযী হা/৭৫৯, ইবনু মাজাহ হা/১৭১৫।
[9]. ইবনু মাজাহ, হা/১৭২৭; তিরমিযী হা/৭৫৭, সনদ ছহীহ।
[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৪৬; তিরমিযী হা/৭৪৯, সনদ ছহীহ; ইবনু মাজাহ হা/১৭৩০।
[11]. বুখারী হা/২০০৪।
[12]. বুখারী হা/২০০৬।
[13]. বুখারী হা/২০০২, ২/৩৭৬ পৃঃ।
[14]. বায়হাক্বী ৪/২৮৭ পৃঃ।
[15]. আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় (হা.ফা.বা.), পৃঃ ৩, টীকা-৮ দ্রঃ।
[16]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৪৬, ৪/২৫১।
[17]. তিরমিযী হা/৭৬২, ইবনু মাজাহ, হা/১৭০৮, সনদ ছহীহ।
[18]. তিরমিযী হা/৭৬১, সনদ হাসান ছহীহ।
[19]. তিরমিযী হা/৭৪৭, সনদ ছহীহ।
[20]. বুখারী হা/১৯৭৬।
[21]. নাসাঈ হা/২৩৭৩।
[22]. তিরমিযী হা/৭৪৪, সনদ ছহীহ।
[23]. বুখারী, হা/১৯৮৬।