তাবলীগী ইজতেমা’৯৮ সবেমাত্র শেষ হ’ল (২৬ ও ২৭শে ফেব্রুয়ারী)। নওদাপাড়ার মাটি ধন্য হ’ল লক্ষ মুমিনের পদস্পর্শে। রাজশাহী মহানগরী প্রকম্পিত হ’ল গগনভেদী তাকবীর ধ্বনিতে। উচ্চকিত হ’ল অযুত কণ্ঠের প্রাণোৎসারিত দাবী ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। অহি-র বিধান অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার আকুল আবেদন জানালেন নেতৃবৃন্দ। সেমতে প্রস্তাব পাস করলেন সকলে। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ঢেলে সাজানোর উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে পূর্ব নির্ধারিত বিষয়াবলীর উপরে সারগর্ভ ভাষণ সমূহ পেশ করলেন দেশ ও বিদেশের খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম ও বিদ্বানমন্ডলী। নিজেদের রচিত বিভিন্ন মাযহাব, তরীকা, ইজম ও মতবাদ ভুলে সকলকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী মহাজাতিতে পরিণত হওয়ার উদাত্ত আহবান জানালেন নেতৃবৃন্দ। ধর্মহীন বৈষয়িকতা ও বৈষয়িকতাহীন ধর্ম কোনটাই যে মানবজীবনে প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, সেটা বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। ইসলাম আল্লাহ প্রেরিত ‘দ্বীনে কামেল’, যাতে মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগের অভ্রান্ত হেদায়াত মওজূদ রয়েছে। ইসলামের অনুসারীগণ তাদের সার্বিক জীবন সে অনুযায়ী গড়ে তুলবেন এটাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর একান্ত দাবী। রাসূল (ছাঃ) কেবলমাত্র ‘অহি’-র অনুসরণ করতেন ও তারই প্রচার করতেন। দীর্ঘ ২৩ বছরের নবুঅতী জীবনে তিনি অহি-র বিধানের বাস্তব রূপ দান করে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পরে তাঁর উম্মতের ওলামা এবং সমাজ ও রাষ্ট্র নেতাদের উপরে অহি-র প্রচার ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। কিন্তু পেরেছি কি আমরা তা করতে? যদি না পারি, তবে সেটা হবে আমাদের ও আমাদের নেতৃবৃন্দের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, বড় পরাজয়, বড় গ্লানি। কেননা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে বড় ব্যর্থতা মুমিনের জীবনে আর নেই।

‘তাবলীগ’ অর্থ পৌঁছে দেওয়া, প্রচার করা। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে জাতির সম্মুখে পেশ করাই হ’ল তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য। তাকে খন্ডিত রূপে পৌঁছে দেওয়ার অর্থ প্রকৃত তাবলীগ নয়। অজানা অচেনা মুরববী ও বুযর্গদের নামে ভিত্তিহীন অলৌকিক কেরামতির গাল-গল্প, মাসায়েল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ফাযায়েল-এর লোভ দেখানো, রাসূল (ছাঃ)-এর নামে মিথ্যা জাল ও যঈফ হাদীছের প্রচার, দ্বীনের নামে মুসলমানকে দুনিয়াবী জীবনের আলোচনা থেকে দূরে রাখা, অসংখ্য ফযীলতের জাল ফেলে বুদ্ধিমান লোকগুলিকে হতবুদ্ধি করে দেওয়া, ‘চেল্লা’র নাম করে মাসের পর মাস মানুষকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা দেশের একটি সক্রিয় কর্মশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে জাতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করার হীন চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা, জাল হাদীছ ও অপব্যাখ্যায় পূর্ণ একটি বিশেষ ‘নেছাব’-এর জীবনভর পঠন-পাঠন ও সুকৌশলে কুরআন ও হাদীছের বিশুদ্ধ জ্ঞান ভান্ডার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র, ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত বৈষয়িক জীবনের দিক-নির্দেশনাহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধহীন জিহাদ বিমুখ ধর্ম হিসাবে পেশ করার কুশলী প্রচারণা এবং তার পক্ষে ইসলাম বিরোধী দেশী ও বিদেশী শক্তিপুঞ্জের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, সবশেষে ‘আখেরী মোনাজাতের’ করুণ দৃশ্যের অবতারণা করে লাখো মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানোর সূক্ষ্ম কৌশল কখনই প্রকৃত ইসলামের তাবলীগ নয়। বিদায় হজ্জে উপস্থিত লাখো মুসলিমকে নিয়ে যে রাসূল (ছাঃ) ‘আখেরী মোনাজাত’ করলেন না, যে কাজ তাঁর জীবন সাথী খলীফাগণ করলেন না, সেই কাজ আমরা করছি বাংলাদেশের একটি বিশেষ স্থানে হজ্জের পরের মর্যাদা দিয়ে। যে কাজ রাসূল (ছাঃ) করেননি, খুলাফায়ে রাশেদীন করেননি, তা কখনোই ‘দ্বীন’ নয়। অতএব জান্নাত পেতে গেলে হুজুগ ছেড়ে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জীবন পথের সন্ধান করতে হবে। সে পথেই দাওয়াত দিতে হবে। সেটাই হবে প্রকৃত তাবলীগ বা তাবলীগী ইজতেমা। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন! আমীন!






বিষয়সমূহ: সংগঠন
পতিতাবৃত্তি বন্ধ করুন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাহে রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাল আছি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চেতনার সংঘাত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানুষ না মনুষ্যত্ব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আর কেন? এবার জনগণের কাছে আসুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ক্রমবর্ধমান তালাক : প্রতিকারের উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিজয়ের মাস ও পার্বত্য চুক্তি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল্লাহর সামনে ঝগড়া - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবাধিকার সবার জন্য সমান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নারী শিক্ষা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.