সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বয়ংক্রিয় নানা যন্ত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি। আর এসব স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের শক্তি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অন্যতম উপাদান হচ্ছে লিথিয়াম। এই লিথিয়ামকে ভবিষ্যতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রমে আন্তর্জাতিক বিশ্বে এটি কৌশলগত পণ্য হয়ে উঠছে।
কাঁচামাল হিসেবে লিথিয়াম প্রক্রিয়াকরণে প্রধান দেশ হ’ল চীন। মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে লিথিয়াম-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আর এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। লিথিয়াম দেশটির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা সেখানে এর ব্যাপক মজুত আবিস্কৃত রয়েছে। আফগানিস্তানকে এখন ‘লিথিয়ামের দ্বিতীয় সঊদী আরব’ অভিহিত করা হচ্ছে। ইউএস ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে অব্যবহৃত লিথিয়াম খনিগুলোর মূল্য আনুমানিক এক লাখ কোটি ডলার।
লিথিয়াম খনি আফগানিস্তানের হেরাত থেকে নুরিস্তান প্রদেশ পর্যন্ত আছে বলে জানা গেছে, যার দৈর্ঘ্য ৮৫০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত খনির বিশেষজ্ঞরা প্রথম আফগানিস্তানে লিথিয়াম আছে বলে আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আর এ কারণেই লিথিয়ামে সমৃদ্ধ আফগানিস্তানে চীনের আগ্রহ বেড়েই চলেছে এবং এ লক্ষ্যে তারা জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বর্তমানে ২০টির বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তানে কাজ করছে এবং শতাধিক চীনা কোম্পানি দেশটির খনিতে কাজ করার জন্য আফগানিস্তানের খনি মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম নিবন্ধন করেছে। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আনুমানিক ৫০০ চীনা ব্যবসায়ী আফগানিস্তান সফর করেছেন। এছাড়া চীনের গোচিন কোম্পানি প্রাথমিক পর্যায়ে আফগানিস্তানের লিথিয়াম খনিতে এক হাযার কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তালেবান তাদের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে চীনা প্রকল্পগুলোকে কার্যকর একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা চীনকে আফগানিস্তানে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। ফলে উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্কের পেছনে লিথিয়াম হয়ে উঠছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।