ফিনল্যান্ড একটি উদার সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। বিশ্বে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার এবং পরিপূর্ণ আইনের শাসনের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিনল্যান্ড। ২০২৪ সালে ৭ম বারের মত বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসাবে বহুদিন যাবৎ ২য় স্থান দখল করে রয়েছে এ দেশটি।
ফিনল্যান্ডকে উদার সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের পেছনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছে তাদের সামাজিক সমতাবাদী দর্শন। দেশটির সরকার জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়, পূরণ করে বেকার ও অভাবী জনগণের জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা। দেশটিতে একজন বেকার ব্যক্তি প্রতি মাসে বাসাভাড়া সহ অতিরিক্ত আরও ৬০০ ইউরোর মতো ভাতা পায়। সাথে আছে বিনামূল্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা। এজন্যেই ফিনল্যান্ডে চরম দরিদ্রতা নেই। সমাজে যারা অন্যদের চেয়ে আপেক্ষিকভাবে দরিদ্র তারা সাধারণত সরকারী সহযোগিতায় জীবন ধারণ করে। এভাবে উদার সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম ফিনিশদের দিয়েছে ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা।
স্বাভাবিকভাবে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার এত টাকা পায় কোথায়? উত্তরটা খুবই স্বাভাবিক। বিভিন্ন উৎস থেকে আহরিত করের ন্যায়সংগত বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফিনল্যান্ডে অর্থনৈতিকভাবে কাউকে কখনও খুব ওপরে উঠতে দেওয়া হয় না। আবার কাউকে খুব নীচেও নামতে দেওয়া হয় না। সুষম প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র তৈরিতে ফিনিশ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সর্বদা ক্রিয়াশীল ও সফল এবং এর মূলে রয়েছে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম। সমাজের খুব ওপরে উঠা কিংবা খুব নীচে নামার মধ্যে ভারসাম্য করা হয় মূলত প্রগতিশীল আয়করের মাধ্যমে। যিনি যত বেশী আয় করবেন, তাকে তত বেশী কর প্রদান করতে হবে। সেটা চাকরি থেকে আয় বা বিনিয়োগ থেকে লাভ যাই হোক না কেন। উচ্চ আয়করের পর আবার দিতে হবে মূল্য সংযোজন কর। এ দু’টো ছাড়াও উত্তরাধিকার কর তো আছেই।
ফিনল্যান্ডে যে কোন চাকরি বা ব্যবসা শুরু করতে হ’লে প্রথমেই যা লাগবে তা হ’ল ট্যাপ কার্ড। বছর শেষে যেতে হবে ট্যাপ অফিসে রিটার্ন জমা দিতে। তাদের কর আহরণ এবং তদারকি ব্যবস্থাটা এমন যে, কর ফাঁকি দেওয়া বেশ কষ্টকর। ফাঁকি দিয়ে ধরা পড়লে শাস্তিও বেশ কঠিন। ফিনিশরা ভীষণভাবে দেশপ্রেমিক। দেশের প্রতিটি জিনিসকে তারা নিজের জিনিস মনে করে। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে, প্রতিটি ফিনিশ নাগরিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর দেওয়ার মাধ্যমে দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করে। কর দেওয়াকে ফিনিশরা দেশের প্রতি ভালোবাসার অংশ হিসাবে দেখে।
বিভিন্ন উৎস থেকে অর্জিত কর দিয়ে সরকার হরেক রকম ভাতা, ভর্তুকি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে থাকে। যেমন- শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নভাতা, জন্ম থেকে শুরু করে সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে শিশুভাতা, নিজ সন্তানকে লালন-পালনের জন্য মাতৃত্ব ভাতা, কাজ না থাকলে বেকার ভাতা, আবাসন ভর্তুকি, ওষুধ কেনায় ভর্তুকি, বেসরকারী চিকিৎসক দেখানোয় ভর্তুকি, বিনা পয়সায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং সবার জন্য টিউশন ফী মুক্ত শিক্ষা। এতো সুন্দর সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে ফিনিশদের যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছে, তা হ’ল তাদের সততা। দুর্নীতিমুক্ত ফিনিশ রাষ্ট্রের মূলেই রয়েছে তাদের সততা। এজন্যই ফিনল্যান্ড সব সময় দুর্নীতিমুক্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে।