শারঈ মানদন্ডে ঈদে মীলাদুন্নবী

ভূমিকা : আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই, যারা ঈমানদার। আর প্রকৃত ঈমানদার তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অন্য সবকিছু থেকে বেশী ভালবাসে। ধন-সম্পদ, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি, এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও রাসূল (ছাঃ)-কে অধিক ভালবাসে। তবে তাঁকে ভালবাসার অর্থ তাঁর জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা নয়। তাঁর উপর দরূদ পড়ার নামে মানুষের বানানো দরূদ পড়া নয়। কুরআনের একাধিক আয়াতকে উপেক্ষা করে তাঁকে জীবিত (হায়াতুন্নবী) বলা নয়। তিনি মীলাদের মাহফিলে উপস্থিত হন এবং দুনিয়ার মানুষের উপকার করেন বলে বিশ্বাস পোষণ করা নয়। মাটির তৈরী রাসূলকে নূরের তৈরী বলা এবং প্রমাণ স্বরূপ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীতে জাল বা বানোয়াট হাদীছ পেশ করার নাম তাঁকে ভালবাসা নয়। বরং তাঁকে ভালবাসার অর্থ তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ করা। তাঁর আক্বীদা ও আমল নিজের সার্বিক জীবনে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হ’ল, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদযাপনের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি অধিক ভালবাসার মিথ্যা প্রদর্শনী করে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে- ইসলামী শরী‘আতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’-এর আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে কি? আসুন! নিম্নের আলোচনা থেকে তা জানার চেষ্টা করি।

ঈদে মীলাদুন্নবী পরিচিতি

জন্মের সময়কালকে আরবীতে ‘মীলাদ’ বা ‘মাওলিদ’ বলা হয়ে থাকে। সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধান ‘লিসানুল আরাব’ প্রণেতা ইবনুল মানযূর (রহঃ) ‘মীলাদ’ শব্দের অর্থ সম্পর্কে বলেন, اِسْمُ الوَقْتِ الذِيْ وُلِدَ فِيْهِ ‘মীলাদ হ’ল জন্মগ্রহণের সময়কাল’।[1] সুতরাং ‘মীলাদুন্নবী’ অর্থ দাঁড়ায় ‘নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্মমুহূর্ত’। বর্তমানে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ বলতে নবী করীম (ছাঃ)-এর জন্মদিনকে বিশেষ ফযীলতের আশায় বিশেষ পদ্ধতিতে উদ্যাপন করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। ‘ঈদ’ শব্দটি সংযোজনের মাধ্যমে ইসলাম স্বীকৃত মুসলমানদের দু’টি ধর্মীয় ‘ঈদ’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে তৃতীয় আরেকটি ‘ঈদ’ সংযোজিত হয়েছে। ফলে অন্য দুই ঈদের ন্যায় এদিনেও সরকারী ছুটি ঘোষিত হয়। মিল, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। যেহেতু রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর জন্মসময়কে কেন্দ্র করেই ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদ্যাপিত হয়, সেহেতু নিম্নে তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।

রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মসাল : রাসূল (ছাঃ) কোন্ বছরে জন্মগ্রহণ করেছেন সে সম্পর্কে কায়েস ইবনু মাখরামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,وُلِدْتُ أَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْفِيلِ- ‘আমি ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হস্তীর বছরে জন্মগ্রহণ করেছি’।[2] উল্লে­খিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) হস্তীর বছর তথা আবরাহা যে বছর হস্তীবাহিনী নিয়ে পবিত্র কা‘বা গৃহ ধ্বংস করতে এসেছিল, সে বছরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর সেটা ছিল ৫৭১ খৃষ্টাব্দ।

রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মবার : রাসূল (ছাঃ)-কে সপ্তাহের প্রতি সোমবারে ছিয়াম পালনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ، ‘এই দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুঅত প্রাপ্ত হয়েছি বা এই দিনেই আমার প্রতি অহী অবতীর্ণ করা হয়েছে’।[3] আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবুবকর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হ’লে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, فِيْ أَىِّ يَوْمٍ تُوُفِّىَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم؟ রাসূল (ছাঃ) কোন দিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ ‘সোমবার’।[4]

উপরোক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে, রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম-মৃত্যু উভয় দিন সোমবার। এতে কারো দ্বিমত নেই।

রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মতারিখ : উল্লে­খিত ছহীহ হাদীছ সমূহের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মের দিন ও বছর স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হ’লেও তাঁর জন্মের মাস ও তারিখ উল্লেখ করতঃ ছহীহ, যঈফ, জাল কোন হাদীছই বর্ণিত হয়নি। আর এই কারণেই রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মতারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। কারো মতে, তিনি মুহাররম মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার কারো মতে সফর মাসে, কারো মতে রামাযান মাসে। আবার কারো মতে রবীউল আওয়াল মাসে। এ মাসের মধ্যেই আবার ৭টি মত। আর তা হ’ল, রবীউল আওয়ালের ২, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৭ ও ২২ তারিখ।

প্রিয় পাঠক! রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মতারিখ সম্পর্কিত উল্লে­খিত মতবিরোধের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয় যে, রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় কখনোই ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদ্যাপিত হয়নি। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরে ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে ইযামের যামানাতেও তা পালিত হয়নি। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশা থেকেই যদি ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদ্যাপিত হয়ে আসত এবং ছাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক তা পালনের সিলসিলা জারী থাকত, তাহ’লে তাঁর জন্মতারিখ নিয়ে কোন মতভেদ হ’ত না। বরং সকল যুগের সকল মানুষের নিকট এটি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যেত। অতএব ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ ইবাদতের নামে ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট নবাবিষ্কৃত একটি কাজ; যা স্পষ্টতই বিদ‘আত।

ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তক

রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযামের যামানায় ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ পালনের কোনই প্রচলন ছিল না। যুগে যুগে শাসকগোষ্ঠী জনসমর্থন লাভের জন্য হেন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ প্রবর্তন তেমনই একটি কাজ। ক্রুসেড বিজেতা মিসরের সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী (৫৩২-৫৮৯ হিঃ) কর্তৃক নিয়োজিত ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফ্ফরুদ্দীন কুকুবুরী (৫৮৬-৬৩০ হিঃ) সর্বপ্রথম ৬০৪ মতান্তরে ৬২৫ হিজরীতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ প্রবর্তনের মাধ্যমে মিথ্যা নবী প্রেমের মহড়া দেখিয়ে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করেছিলেন।[5]

প্রিয় পাঠক! প্রত্যেক যুগেই কতিপয় পেটপূজারী আলেমকে দেখা গেছে, যারা নিজেদের উদরপূর্তি ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলামকে বিকৃত করেছে এবং সেটাকেই প্রকৃত দ্বীন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে। তদানীন্তন- কালে আবু সাঈদ মুযাফ্ফরুদ্দীন কুকুবুরী কর্তৃক প্রবর্তিত ঈদে মীলাদুন্নবীকেও তথাকথিত কতিপয় নামধারী আলেম নিজেদের উদরপূর্তির জন্য গ্রহণ করেছিল। আজও ঠিক একই কারণে ইসলামের লেবাসধারী কিছু আলেম তা কায়েম রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজই যদি ঘোষণা দেওয়া হয় যে, মীলাদুন্নবী উদযাপন করা হবে, তবে কোন খাবারের আয়োজন করা হবে না। মীলাদ মাহফিল করা হবে, কিন্তু মীলাদ পড়ুয়া মৌলভীকে কোন উপঢৌকন দেওয়া হবে না, তাহ’লে ঐ সমস্ত মৌলভীরাই মীলাদ মাহফিলকে অবলীলায় বিদ‘আত বলে ঘোষণা দিবে। কেননা তারাও জানে যে, আদতেই এ সমস্ত আমলের কোন ভিত্তি ইসলামে নেই।

মীলাদুন্নবীর অপকারিতা

(ক) মীলাদুন্নবীর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলে দাবী করা হয় : মীলাদুন্নবী উদযাপনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নিয়ে অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি করা হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত সাধারণ জনগণকে বোকা বানিয়ে কৌশলে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। মীলাদ অনুষ্ঠানে মৌলভী ছাহেব আরবী, ফার্সী, উর্দূ, বাংলাতে নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রশংসায় এমন সব কবিতা আবৃত্তি করে থাকেন; যার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-ই আল্লাহ (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন মীলাদ মাহফিলে পঠিতব্য উর্দূ কবিতার একটি অংশ-

وہ جو مستوی عرش تہا خدا ہو کر

اترپڑا ہے مدینہ میں مصطفی ہو کر ‏

ওহ্ জো মুস্তাবী আরশ থা খোদা হো কার্

উতার পাড়া হ্যায় মদীনা মেঁ মোছতফা হো কার্।

অর্থ: ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ ছিলেন যিনি, মুছতফা রূপে মদীনায় অবতীর্ণ হ’লেন তিনি’ (নাঊযুবিল্লাহ)

প্রিয় পাঠক! কেউ যদি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলে স্বীকৃতি দেয়, তবে কি সে মুসলিম থাকতে পারে? কখনো না। আপনি নিজে অন্তর থেকে তা স্বীকার না করলেও ঐ সমস্ত মীলাদ পড়ুয়া মৌলভী ছাহেবরা নিজে এ সমস্ত কবিতা পড়ছে এবং আপনাদেরকেও পড়াচ্ছে।

(খ) মীলাদের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আল্লাহর অপার অনুগ্রহকে অস্বীকার করা হয় : মীলাদ মাহফিলে পঠিতব্য দরূদের প্রথমেই বলা হয়ে থাকে, بلغ العلى بكماله (বালাগাল ‘উলা বিকামালিহি) ‘রাসূল (ছাঃ) তাঁর নিজ যোগ্যতায় উচ্চ মর্যাদায় উপনীত হয়েছেন’ (নাঊযুবিল্লাহ)। এই বাক্যের মাধ্যমে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আল্লাহর রহমতকে অস্বীকার করা হয়েছে। কেননা আল্লাহর রহমতেই তিনি নবী ও রাসূল হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যদি তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তাহ’লে তাদের একটি দল তোমাকে পথচ্যুৎ করার সংকল্প করেই ফেলেছিল। এর দ্বারা তারা নিজেদেরকেই কেবল পথভ্রষ্ট করেছে এবং তোমার কোন ক্ষতি তারা করতে পারেনি। আর আল্লাহ তোমার উপর কিতাব ও সুন্নাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। বস্ত্ততঃ তোমার উপর আল্লাহর করুণা অসীম’ (নিসা ৪/১১৩)। অতএব রাসূল (ছাঃ) নিজের যোগ্যতায় নয়; বরং আল্লাহর অপার অনুগ্রহে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন।

(গ) মীলাদুন্নবীর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে হাযির-নাযির বিশ্বাস করা হয় : মৃত্যুর পরেও রাসূল (ছাঃ) মীলাদ প্রেমীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন। এজন্য সকলেই দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলাইকা’ বলে সালাম দিয়ে থাকে। ভাবখানা এমন যেন তারা রাসূল (ছাঃ)-এর উপস্থিতি সরাসরি অবলোকন করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন।

সম্মানিত পাঠক! ধারণা যদি এরূপই হয় তাহ’লে সাধারণভাবেই দু’টি বিষয় সামনে এসে যায়। ১- রাসূল (ছাঃ)-কে আগে থেকেই জানতে হবে যে, অমুক বাড়িতে মীলাদ অনুষ্ঠিত হবে। ২- বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি মিনিটে অসংখ্য মীলাদের মাহফিলে তাঁকে প্রায় একই সময়ে উপস্থিত হ’তে হবে।

প্রথমটি গায়েব জানার বিষয়, যা আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ وَمَا يَشْعُرُوْنَ أَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ-‘তুমি বল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্যের খবর কেউ রাখেনা আল্লাহ ব্যতীত। আর তারা বুঝতেই পারবে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে’ (নামল ২৭/৬৫)

আর দ্বিতীয়টি তথা একই সময়ে অসংখ্য স্থানে উপস্থিত হওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যেখানে রাসূল (ছাঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই কখনো একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত হ’তে পারেননি, সেখানে মৃত্যুর পরে তা কিভাবে সম্ভব হ’তে পারে? অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ- ‘বরং তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/১০০)

অতএব মৃত্যুর পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষ দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে কখনো দুনিয়াতে ফিরে আসতে পারে না, কোন মানুষের উপকার করতে পারে না এবং মানুষের কোন কথাও শুনতে পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَا يَسْتَوِيْ الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِيْ الْقُبُوْرِ- ‘আর সমান নয় জীবিত ও মৃতগণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান তাকে শ্রবণ করান। বস্ত্তত তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে’ (ফাতির ৩৫/২২)

শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘মীলাদ সমর্থক লোকদের মধ্যে কিছু লোক এমন ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং মীলাদের মাহফিলে হাযির হন। আর সেজন্য তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সম্মানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উঠে দাঁড়ায় (ক্বিয়াম করে)। তাঁকে সালাম জানায় (যেমন, ইয়া নাবী সালামু আলায়কা)। এটাই হ’ল চরম মূর্খতা ও ভিত্তিহীন কর্ম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ক্বিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বাইরে আসতে পারবেন না। পারবেন না কোন মানুষের সাথে মিলিত হ’তে কিংবা তাদের কোন মজলিসে যোগদান করতে। তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত কবরেই থাকবেন এবং তাঁর পবিত্র রূহ তাঁর প্রতিপালকের নিকট মহা সম্মানিত ‘ইল্লীঈনে’ থাকবে। যেমন সূরা মুমিনূনে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে,ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُوْنَ، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُوْنَ- ‘এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর তোমরা ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনূন ২৩/১৫-১৬)[6]

সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন কিভাবে মীলাদ মাহফিলের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়। অথচ তিনি নিজেই তাঁকে নিয়ে অতিরঞ্জন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِيْ الدِّيْنِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِيْ الدِّيْنِ- ‘হে মানব জাতি! তোমরা দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান থাকবে। তোমাদের পূর্ববর্তীগণ দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে’।[7] তিনি অন্যত্র বলেন,لاَ تُطْرُوْنِيْ كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ، فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ- ‘তোমরা (আমার প্রশংসা করতে গিয়ে) বাড়াবাড়ি কর না, যেমন ঈসা ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর (আল্লাহর) বান্দা। তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’।[8]

মীলাদুন্নবীর পক্ষে পেশকৃত দলীলের জবাব

প্রচলিত প্রত্যেকটি বিদ‘আতের পিছনেই কিছু না কিছু দলীল লক্ষ্য করা যায়। অথচ যাচাই করলে সেগুলো যঈফ, জাল অথবা ছহীহ দলীলের অপব্যাখ্যা বলে প্রমাণিত হয়। একশ্রেণীর আলেম এ সমস্ত দলীল অথবা যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে থাকে। উদ্দেশ্য হ’ল তাদের দল ভারী করা এবং মানুষের পকেট ছাফ করে তাদের ব্যবসাকে মযবূত করা। ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ জায়েয করার জন্য অনুরূপই কিছু দলীল অথবা যুক্তি পেশ করা হয়ে থাকে। নিম্নে সেগুলি উল্লেখ করতঃ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মানদন্ডে তার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হ’ল।

প্রথম দলীল : সারা দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলমানের নিকট ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উত্তম বলে বিবেচিত। আর আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,مَا رَأَى الْمُسْلِمُوْنَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ حَسَنٌ، وَمَا رَآهُ الْمُسْلِمُوْنَ سَيِّئًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ سَيِّءٌ- ‘মুসলমানদের দৃষ্টিতে যা উত্তম আল্লাহর দৃষ্টিতেও তা উত্তম। আর মুসলমানদের দৃষ্টিতে যা নিকৃষ্ট আল্লাহর দৃষ্টিতেও তা নিকৃষ্ট’।[9]

জবাব : ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,تَفَرَّدَ بِهِ النَّخْعِيُّ، قَالَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلْ : كَانَ يَضَعُ الحَدِيْثَ، وَهَذَا الحَدِيْثُ إَنَّمَا يُعْرَفُ مِنْ كَلاَمِ بْنِ مَسْعُوْدٍ- ‘এই হাদীছটি নাখঈ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, তিনি (নাখঈ) হাদীছ জালকারী। আর এই হাদীছটি ইবনু মাসউদের বক্তব্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে’।[10]

ইবনুল কবাইয়িম (রহঃ) বলেন,إِنَّ هَذَا لَيْسَ مِنْ كَلاَمِ رَسُوْلِ اللهِ وَإِنَّمَا يُضِيْفُهُ إِلَى كَلاَمِهِ مَنْ لاَ عِلْمَ لَهُ بِالحَدِيْثِ وَإِنَّمَا هُوَ ثَابِتٌ عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ مِنْ قَوْلِهِ- ‘এটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা নয়। হাদীছ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরাই এটাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সম্পৃক্ত করেছে। বরং এটা ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর বাণী হিসাবে প্রমাণিত’।[11]

আল-আলাঈ (রহঃ) বলেন, আমি আমার দীর্ঘ গবেষণার পরেও হাদীছ গ্রন্থ সমূহে মারফূ সূত্রে এর কিছুই খুঁজে পাইনি। এমনকি যঈফ সনদেও পাইনি। বরং এটা ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে ‘মাওকূফ’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[12] আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,لاَ أَصْلَ لَهُ مَرْفُوْعًا، وَإِنَّمَا وَرَدَ مَوْقُوْفًا عَلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ- ‘মারফূ‘ সূত্রে এর কোন ভিত্তি নেই। বরং এটা ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে ‘মাওকূফ’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে’।[13] 

অতএব হাদীছটি মারফূ‘ সূত্রে ছহীহ না হওয়ায় তা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও তা রাসূল (ছাঃ)-এর অকাট্য বাণী- فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ ‘নিশ্চয়ই সকল প্রকার বিদ‘আত ভ্রষ্টতা’[14] এর স্পষ্ট বিরোধী।

পক্ষান্তরে যদি হাদীছটিকে মাওকূফ সূত্রে ছহীহ ধরা হয়, তাহ’লে তাতে বর্ণিত المسلمون এর ال ইস্তিগরাকের জন্য এসেছে। অর্থাৎ সকল মুসলমান যার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছে। আর মীলাদুন্নবীর বৈধতার ব্যাপারে সকল মুসলমান ঐক্যমত পোষণ করেনি।

ইয ইবনু আব্দুস সালাম (রহঃ) বলেন, যদি হাদীছটিকে ছহীহ ধরা হয়, তাহ’লে তাতে বর্ণিত المسلمون দ্বারা أهل الإجماع বুঝানো হয়েছে।[15] অথচ আহলুল ইজমা মীলাদুন্নবীর বৈধতার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেননি; বরং তার বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত আছারে বর্ণিত, المسلمون এর ال দ্বারা للعهد বুঝানো হয়েছে। অতএব المسلمون দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল ইজমায়ে ছাহাবা তথা যার উপর ছাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর ছাহাবায়ে কেরামের যামানায় ঈদে মীলাদুন্নবীর কোন অস্তিত্বই ছিল না।

উল্লিখিত আছারের প্রকৃত উদ্দেশ্য তার শেষাংশে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতের ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের ইজমার দলীল পেশ করেছেন।

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, উল্লিখিত আছারটি দ্বারা খেলাফতের ক্ষেত্রে আবুবকর (রাঃ)-কে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের ইজমার কথা বুঝানো হয়েছে।[16]

এছাড়াও উল্লিখিত দলীলের উপর ভিত্তি করে যেকোন ভাল কাজকে বৈধ মনে করলে তা হবে ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٍ وَإِنْ رَآهَا النَّاسُ حَسَنَةً، ‘সকল প্রকার বিদ‘আত ভ্রষ্টতা, যদিও মানুষ তাকে উত্তম মনে করে’।[17]

প্রিয় পাঠক! মুসলমানদের নিকট যে কাজ উত্তম বলে বিবেচিত হবে, আল্লাহর নিকটেও সে কাজ উত্তম বলে বিবেচিত হ’লে রাসূল (ছাঃ) ঐ তিন ব্যক্তিকে হুঁশিয়ার করতেন না; যারা রাসূল (ছাঃ)-এর আমলকে কম মনে করেছিল এবং সারারাত্রি জেগে জেগে ছালাত আদায়, প্রতিদিন ছিয়াম পালন এবং বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উক্ত তিন ব্যক্তির উদ্দেশ্য এতো ভাল হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ছালাত ও ছিয়ামের মত ভাল আমলের প্রতি উৎসাহিত না করে বরং দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হ’তে বিমুখ হবে (সুন্নাত পরিপন্থী আমল করবে), সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[18] অতএব ভাল কাজটি অবশ্যই কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হ’তে হবে।

দ্বিতীয় দলীল : ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় আগমন করে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশূরার দিন ছিয়াম পালন করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের ছিয়াম? তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন। এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনু ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর (ফেরাউনের) কবল হ’তে মুক্তি দান করেন। ফলে এদিনে মূসা (আঃ) ছিয়াম পালন করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসা (আঃ)-এর অধিক হক্বদার। অতঃপর তিনি এদিনে ছিয়াম পালন করেন এবং ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন।[19]

উল্লিখিত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। বিধায় এদিনে রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য নিজে ছিয়াম পালন করেছেন এবং ছাহাবায়ে কেরামকে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যদি মূসা (আঃ)-এর মুক্তির শুকরিয়া স্বরূপ ছিয়াম পালন করা বৈধ হয়, তাহ’লে মুহাম্মাদ (ছাঃ); যিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন, তাঁর দুনিয়ায় আগমনের শুকরিয়া স্বরূপ ছালাত, ছিয়াম, কুরআন তেলাওয়াতের মত ভাল আমলের মাধ্যমে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদযাপন করাও শরী‘আত সম্মত।

জবাব : প্রথমতঃ যেকোন ইবাদত করার জন্য প্রথমে দু’টি মৌলিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। (ক) এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। (খ) এমন ইবাদত করতে হবে, যা রাসূল (ছাঃ)-এর কথা, কর্ম ও মৌনসম্মতি দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيْعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ- إِنَّهُمْ لَنْ يُغْنُوْا عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا وَإِنَّ الظَّالِمِيْنَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِيْنَ- ‘অতঃপর আমরা তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উপর। অতএব তুমি তার অনুসরণ কর এবং অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই তারা তোমাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে আদৌ বাঁচাতে পারবে না। আর নিশ্চয়ই যালেমরা পরস্পরের বন্ধু। অথচ আল্লাহ হ’লেন মুত্তাক্বীদের বন্ধু’ (জাছিয়া ৪৫/১৮-১৯)

সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর আনীত বিধানের বাইরে কোন বিধানকে ওয়াজিব বা মুস্তাহাব মনে করা কোন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য নয়; বরং কুরআন ও ছহীহ হাদীছের যথাযথ অনুসরণ করাই মুসলমানের বৈশিষ্ট্য ও কর্তব্য।

দ্বিতীয়তঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যাচারী পাপিষ্ঠ ফেরাউনের কবল থেকে মূসা (আঃ)-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ নিজে ছিয়াম পালন করেছেন এবং ছাহাবায়ে কেরামকে ছিয়াম পালন করতে বলেছেন। কিন্তু তিনি কি কখনো ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ হিসাবে বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরিত হওয়ার শুকরিয়া স্বরূপ নিজের জন্মদিবস পালন করেছেন? কিংবা ছাহাবায়ে কেরামকে করতে বলেছেন? যদি ইসলামী শরী‘আতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’-এর সামান্যতম ফযীলত থাকত, তাহ’লে অবশ্যই তিনি উম্মতের সামনে তা সুস্পষ্টভাবে বলে যেতেন। খোলাফায়ে রাশেদীন, যারা দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, দীর্ঘ ৩০টি বছর খেলাফতে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কখনো রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের শুকরিয়া স্বরূপ জন্মদিবস পালন করেননি। তাহ’লে কি তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝেননি? কিংবা জন্মদিবস পালন না করে তারা তাঁর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছেন? নাঊযুবিল্লাহ! আললাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন-আমীন!

তৃতীয় দলীল : রাসূল (ছাঃ)-কে সপ্তাহের প্রতি সোমবারে ছিয়াম পালনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ ‘এই দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুঅত প্রাপ্ত হয়েছি। অথবা আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করা হয়েছে’।[20] বুঝা গেল, রাসূল (ছাঃ) নিজেই তাঁর দুনিয়ায় আগমনের শুকরিয়া স্বরূপ প্রত্যেক সোমবার ছিয়াম পালন করতেন। অতএব আমরাও বিভিন্ন প্রকার ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর জন্ম দিবস পালন করতে পারি।

জবাব : উল্লিখিত দলীলের জবাব কয়েকভাবে দেওয়া যেতে পারে। (১) মীলাদপন্থীদের উদ্দেশ্য যদি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম গ্রহণের শুকরিয়া আদায় করাই হয়, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর ন্যায় প্রত্যেক সোমবার ছিয়াম পালন করতে হবে। কিন্তু তারা কি তা করে? কখনোই নয়। বরং তারা রাসূল (ছাঃ)-এর এই সুন্নাতকে উপেক্ষা করে বছরের একটি দিন ১২ই রবীউল আউয়ালকে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট করেছে, চাই তা সোমবার অথবা অন্য কোন দিন হোক। অথচ রাসূল (ছাঃ) ১২ই রবীউল আউয়ালে জন্মগ্রহণ করেছেন মর্মে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম সোমবার দিন ছিয়াম পালন করেছেন। কিন্তু ১২ রবীউল আউয়ালে কোন কিছুই করেননি। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে উপেক্ষা করার নাম তাঁকে ভালবাসা নয়; বরং তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের নাম তাঁকে ভালবাসা।

(২) রাসূল (ছাঃ) শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই সোমবারে ছিয়াম পালন করেননি। বরং এতে অন্য একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হ’ল, সপ্তাহের দু’টি দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার সাপ্তাহিক রিপোর্ট পেশ করা হয়। আর রিপোর্ট পেশ করার দিনে রাসূল (ছাঃ) ছিয়াম অবস্থায় থাকাকে অধিক ভালবাসতেন। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ- ‘আল্লাহর নিকট সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল সমূহ পেশ করা হয়। অতএব আমার আমল (আল্লাহর নিকট) পেশ করার সময় ছিয়াম অবস্থায় থাকাকে আমি অধিক ভালবাসি’।[21]

(৩) রাসূল (ছাঃ) সোমবারে ছিয়াম পালন করেছেন। কিন্তু তিনি কি তাঁর জন্মদিবস উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন? তিনি কি ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কোন জালসা মাহফিল এবং ভাল খাবারের আয়োজন করেছেন? তিনি কি কোন আনন্দ মিছিল করেছেন? কখনোই নয়। তাহ’লে কি জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ছাহাবায়ে কেরাম, উম্মাহাতুল মুমিনীন, রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যা ফাতেমা (রাঃ), হাসান-হুসাইন (রাঃ) তাঁরা কি রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসতেন না? অথবা তাঁর আগমনে তাঁরা কি আনন্দিত ছিলেন না? মীলাদপন্থীরা কি তাঁদের চেয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে বেশী ভালবাসেন? তাহ’লে মীলাদপন্থীদের এ কেমন ভালবাসা যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে উপেক্ষা করা হয়? অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর প্রকৃত ভালবাসা অর্জিত হবে তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- قُلْ أَطِيعُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ-

‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তুমি বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফেরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩১-৩২)

চতুর্থ দলীল : উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মের সুখবর দিলে আবু লাহাব তার দাসী ছুয়াইবাকে মুক্ত করে দিয়েছিল। অতঃপর তিনিই (ছুয়াইবা) রাসূল (ছাঃ)-কে দুধপান করিয়েছিলেন। অতঃপর যখন আবু লাহাব কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, তখন আববাস (রাঃ) তাঁর ইসলাম গ্রহণের পরে স্বপ্নে আবু লাহাবকে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দেখলেন। আববাস (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি দেখছ? সে বলল, তোমাদের পরে আমাকে কল্যাণকর কিছুই প্রদান করা হয়নি। তবে ছুয়াইবাকে মুক্ত করার জন্য আমি প্রত্যেক সোমবার রাত্রে পানি পান করছি। আবু ঈসা বলেন, ছুয়াইবা রাসূল (ছাঃ)-এর লালনকারিণী ছিলেন।[22]

কুফরীর চরম সীমায় উপনীত আবু লাহাব; যার বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা ‘সূরা লাহাব’ নামক একটি সূরা নাযিল করেছেন। এমন কাফেরকে শুধুমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মের খবরে খুশি হয়ে তার দাসী মুক্ত করার কারণে যদি আল্লাহ জাহান্নামে পানি পান করিয়ে থাকেন, তাহ’লে একজন মুসলিম রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনে খুশি হয়ে তাঁর জন্ম দিবস উপলক্ষে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ উদযাপন করলে আল্লাহ তার উপর খুশি হবেন না কেন।

জবাব : উল্লিখিত দলীলের জবাব কয়েকভাবে দেওয়া যেতে পারে। (১) উল্লিখিত খবরটি মুরসাল; যা উরওয়াহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কার নিকট থেকে শুনেছেন তা বলেননি। তাছাড়াও এটি সাধারণ মানুষের দেখা একটি স্বপ্নের ঘটনা, যা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।[23]

(২) রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মের খবরে খুশি হয়ে আবু লাহাব তার দাসী ছুয়াইবাকে মুক্ত করেছিল মর্মে বর্ণনাটি সঠিক নয়। বরং আবু লাহাবের দাসত্বে থাকা অবস্থাতেই ছুয়াইবা রাসূল (ছাঃ)-কে লালন করেছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাকে বিক্রি করার জন্য আবু লাহাবকে অনুরোধ করলে তাতে সে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিল। পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ)-এর হিজরতের পরে আবু লাহাব ছুয়াইবাকে মুক্ত করে দিয়েছিল।[24]

(৩) আবু লাহাব একজন প্রসিদ্ধ কাফের। আর কাফেরের কোন ভাল আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوْرًا- ‘আর আমরা সেদিন তাদের কৃতকর্ম সমূহের দিকে মনোনিবেশ করব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلَى شَيْءٍ ذَلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ- ‘যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করে, তাদের সৎকর্ম সমূহ ভস্মস্তূপের ন্যায়। ঝড়ের দিন প্রচন্ড বায়ু যাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা যা উপার্জন করে তা থেকে কিছু্ই তারা কাজে লাগাতে সক্ষম হয় না। আর এটাই হ’ল তাদের ভ্রষ্টতা’ (ইব্রাহীম ১৪/১৮)। অতএব আবু লাহাব উল্লিখিত আয়াত সমূহের অন্তর্ভুক্ত। পার্থিব জীবনের ভাল কাজ পরকালে তার কোনই কাজে আসবে না।

(৪) আল্লাহ তা‘আলার স্পষ্ট ঘোষণা হ’ল, কাফেরদের থেকে কখনোই আযাব হালকা করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لاَ يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا وَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا- ‘আর যারা অবিশ্বাসী, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের উপর মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে তারা মরে যাবে (ও শান্তি পাবে)। আর তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না’ (ফাতির ৩৫/৩৬)। তিনি অন্যত্র বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ- خَالِدِيْنَ فِيْهَا لاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنْظَرُوْنَ- ‘নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের উপর রয়েছে আল্লাহর লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সমগ্র মানবজাতির লা‘নত। তারা চিরকাল তার মধ্যেই থাকবে। তাদের থেকে শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তাদের কোনরূপ অবকাশ দেওয়া হবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৬১-১৬২)

পঞ্চম দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ স্বীয় নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তার ফেরেশতারা নবীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি যথাযথভাবে দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর’ (আহযাব ৩৩/৫৬)

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা ও তাঁর প্রতি সালাম জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই উদ্দেশ্যেই ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপিত হয়।

জবাব : রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠের ফযীলত অনেক বেশী। যেমন তিনি বলেন,مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, এর প্রতিদানে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন’।[25] তাই মানুষ বেশী বেশী রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ছাঃ)-কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন। তাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক গুণে বেশী দরূদ পাঠ করতেন। কিন্তু তাঁরা কি কখনো কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে আনুষ্ঠানিকভাবে দরূদ পাঠ করেছেন? করেছেন কি কোন দরূদ পাঠের মিছিল? তাহ’লে আমাদের এ কেমন নবী প্রেম যে, প্রতিনিয়ত দরূদ পাঠের পরিবর্তে বছরের একটি দিনকে বেছে নিলাম দরূদ পাঠের জন্য? আনুষ্ঠানিকতার নাম নবী প্রেম নয়; বরং একান্ত আন্তরিকতার সাথে তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের নাম নবী প্রেম। তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার নাম নবী প্রেম নয়; বরং তাঁর মর্যাদার স্থানে তাঁকে রাখাই নবী প্রেম। নিজের মন মত দ্বীন পালনের নাম নবী প্রেম নয়; বরং তাঁর আনীত দ্বীনকে সামান্যতম পরিবর্তন না করে যথাযথভাবে পালনের নাম নবী প্রেম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝার ও মানার তওফীক দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম

লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব। মুহাদ্দিছ,
আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. ইবনু মানযূর, লিসানুল আরাব (বৈরুত: দারুছ ছাদের), ৩/৩৬৭ পৃঃ।

[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৯২২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১৫২।

[3]. মুসলিম হা/১১৬২, ‘প্রত্যেক মাসে তিনটি ছিয়াম পালন করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ।

[4]. বুখারী হা/১৩৮৭, ‘সোমবারে মৃত্যুবরণ’ অনুচ্ছেদ।

[5]. ফাহাদ আব্দুল্লাহ, মাওলুদিন নবী, পৃঃ ২; মুহাম্মাদ আবাদুল্লাহ আল-গালিব, মীলাদ প্রসঙ্গ, পৃ. ৯।

[6]. রিসালাহ ফী হুকমিল ইহতিফাল বিল মাওলিদিন নববী ১/৬৩।

[7]. মুসনাদে আহমাদ হা/৩২৪৮; ইবনু মাজাহ হা/৩০২৯; আলবানী, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহা হা/১২৮৩।

[8]. বুখারী হা/৩৪৪৫; মিশকাত হা/৪৮৯৭।

[9]. মুসনাদে আহমাদ হা/৩৬০০; সিলসিলা যঈফা হা/৫৩৩।

[10]. আবু উসামাহ্ সালীম ইবনু আব্দিল হিলালী আস-সালাফী, আল-বিদ‘আত ওয়া আছারুহুস সায়্যি ফিল উম্মাহ্, ৬০ পৃঃ।

[11]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফুরুসিয়্যাহ, পৃঃ ৬১।

[12]. সুয়ূতী, আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের, পৃঃ ৮৯।

[13]. সিলসিলা যঈফা হা/৫৩৩-এর আলোচনা দ্রঃ।

[14]. ইবনু মাজাহ, ‘খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ, হা/৪২।

[15]. ফাতাওয়া ইয ইবনু আব্দিস সালাম, পৃঃ ৪২।

[16]. ইবনু কাছীর (রহঃ), আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/৩২৮ পৃঃ।

[17]. সিলসিলাতুল আছারিছ ছহীহাহ্ হা/১২১; আলবানী, সনদ ছহীহ, তালখীছু আহকামিল জানায়েয ১/৮৩ পৃঃ।

[18]. বুখারী হা/৫০৬৩; মিশকাত হা/১৪৫, ‘কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।

[19]. বুখারী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/১৭৩৪।

[20]. মুসলিম হা/১১৬২, ‘প্রত্যেক মাসে তিনটি ছিয়াম পালন করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ।

[21]. তিরমিযী হা/৭৪৭; নাসাঈ হা/২৩৫৮; মিশকাত হা/২০৫৬।

[22]. ইবনুল আছীর, জামেউল উছূল ফী আহাদীছির রাসূল হা/৯০৩৬।

[23]. ফাৎহুল বারী ৯/১৪৫।

[24]. ইবনুল আছীর, আল-কামেল ফিত তারিখ ১/১৫৭; ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ২/৪৪৫; ত্ববারী, যাখায়েরুল উকবা ১/২৫৯; ফাৎহুল বারী ৯/১৪৫।

[25]. মুসলিম হা/৪০৮; মিশকাত হা/৯২১।






সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ঈদায়ন সম্পর্কিত কতিপয় ত্রুটি-বিচ্যুতি - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
শয়তানের চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষার উপায় (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
শবেবরাত - আত-তাহরীক ডেস্ক
নফসের উপর যুলুম - ইহসান ইলাহী যহীর
আদালত পাড়ার সেই দিনগুলো (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - শামসুল আলম
তাক্বদীরে বিশ্বাস - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ফৎওয়া : গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও বিকাশ (৫ম কিস্তি) - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (শেষ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আকাঙ্ক্ষা : গুরুত্ব ও ফযীলত - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আরও
আরও
.