গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে দুর্নীতির খবরই প্রাধান্য পাচ্ছে। একের পর এক সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে পিয়ন, ড্রাইভার সবার অবাক করা দুর্নীতির খবর জানা যাচ্ছে। দুর্নীতি এখন দেশে এক নম্বর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হচ্ছে তা দুর্নীতির কালো আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও কোনক্রমেই থামছে না নীতিহীন কর্মকান্ড। একের পর এক তদন্ত কমিটি হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই আরেকটি দুর্নীতি আগের ঘটনাকে মলান করে দিচ্ছে। আজিজ, বেনজীর, আসাদুজ্জামান, মতিউর, ফয়সাল ও শামসুযযোহা-এভাবে একের পর এক নাম আসছে সামনে। আলোচনায় আছে পিএসসি ও বিসিএস সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা আয় করা ১৭জন গ্রেফতারের খবর। খোদ প্রধানমন্ত্রী নিঃসংকোচে নিজ পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার খবর প্রকাশ করেছেন!

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে তা দেশে বিশাল দুর্নীতির হিমশৈলের সামান্য অংশ মাত্র। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২৩ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় এক হাযারের অধিক কর্মকর্তার নামে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১০ জন সহকারী সচিব, ৮ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, ৭ জন উপ-সচিব, একজন যুগ্ম সচিব ও একজন অতিরিক্ত সচিবের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় প্রজ্ঞাপন জারী করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন যেলার অনেক ডিসি-এসপিরাও রয়েছে তদন্তের তালিকায়।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, যে হারে লাগামহীনভাবে বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন, আমরা কি করব? আমরা অসহায়। অনেক সরকারী কর্মকর্তা আছেন, তারা অসহায়। কারণ এখানে ৯০ শতাংশ লোকই দুর্নীতিগ্রস্ত। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোক ভালো থেকে কি করবেন? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দুর্নীতি সরকারের সব অর্জন মলান করে দিচ্ছে। তাই সরকারী কর্মচারীরা যাতে দুর্নীতিতে না জড়ান, সেজন্য আইন আরও কঠোর করতে পরামর্শ দেন তিনি।

বার্লিনভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-২০২৩ সালে দুর্নীতির যে ধারণাসূচক প্রকাশ করেছে, সেখানে আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ নীচে নেমে গেছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে দুর্নীতি বেড়েছে বলে জানাচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গবেষণা মতে, দেশের সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হ’ল- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। তাদের কাছে সেবা নিতে গিয়ে দেশের ৭৪ শতাংশেরও অধিক সংখ্যক পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি পাওয়া গেছে পাসপোর্ট অধিদফতর এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। সেবা নিতে গিয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরে ৭০.৫ শতাংশ এবং বিআরটিএ কার্যালয়ে ৬৮.৩ শতাংশ পরিবারকে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া বিচারিক সেবাখাতে ৫৬.৮ শতাংশ, সরকারী স্বাস্থ্য সেবায় ৪৮.৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ৪৬.৬ শতাংশ এবং ভূমি সেবায় ৪৬.৩ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমূদ বলেছেন, ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাই দুর্নীতি বৃদ্ধির বড় কারণ। দুর্নীতি কমাতে ‘শুদ্ধাচার কৌশল’ বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারূন।

তিনি বলেন, আসলে সরকারের এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে এখন শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি নেই। আর এই দুর্নীতিগ্রস্তরা পদের কারণে যেমন ক্ষমতাবান, তেমনি তাদের রাজনৈতিকভাবে সহায়তা দেয়া হয়। সংসদে বেনজীর, মতিউরদের দুর্নীতির প্রতিবাদের চেয়ে তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে বেশী। আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এই দুর্নীতিকে সহায়তা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তুমি দুর্নীতি করো সমস্যা নেই। পরে ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করে নিয়ো।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে সেগুলো এখন সরকারের পুলিশ, প্রশাসন, এনবিআরসহ বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি। আমাদের পর্যবেক্ষণে এর বিস্তৃতি অনেক বেশী। যা প্রকাশ পাচ্ছে তা ঘটে যাওয়া শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির সামান্য অংশ। তিনি বলেন, এনবিআরের মতিউর রহমান যে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন এই একটি মামলার সঠিক তদন্ত করলেই দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার বুঝা যাবে। সাধারণভাবেই বোঝা যায় যে তিনি কর ফাঁকির অবৈধ সুযোগ দিয়ে দুর্নীতি করেছেন। এটা তার একার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তার সঙ্গে আরো অনেকে আছেন। তারপর তিনি কত টাকার বিনিময়ে কত কর ছাড়ের অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। সেটা তার দুর্নীতির অর্থের চেয়ে বহুগুণ বেশী হবে। তাহ’লে রাষ্ট্র কত টাকার কর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবার কারা এই কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই সব মিলিয়ে যদি চেইনটি চিন্তা করেন তাহ’লে এটা যে কতদূর বিস্তৃত তা বুঝা সম্ভব হবে’।







করোনা সন্দেহে স্বামীকে বাড়িছাড়া করল স্ত্রী, আশ্রয় দিল পুলিশ
করোনায় এ পর্যন্ত চিকিৎসক আক্রান্ত ১০১১, মৃত ৫২
এক বছরের মধ্যে ‘নাতি-নাতনী’ চেয়ে ছেলেকে আদালতে তুলছেন ভারতীয় দম্পতি!
আমলারা জনপ্রতিনিধিদের গলায় রশি বেঁধে ঘোরান এবং ৯ সেকেন্ডের কাজে ৯০ দিন লাগান
‘লিভিং ঈগল’ সাইফুল আজমের বিদায়
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে না সরকার
বাংলাদেশে গণপরিবহনে চলাচলের সময় ৮৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার
উগান্ডায় নতুন স্বর্ণখনি আবিষ্কার : মওজূদ প্রায় ১২ লাখ কোটি ডলারের স্বর্ণ!
আমেরিকায় বিনা দোষে ৩৯ বছর কারাভোগ; ক্ষতিপূরণ ২ কোটি ১০ লাখ ডলার
ফ্রান্স থেকে ৯ হাযার কি.মি. হেঁটে ওমরাহ পালন
কারও দান, কারও শ্রমে সবার জন্য হাসপাতাল
সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর
আরও
আরও
.