পর্ব ১ শেষ পর্ব

ভূমিকা :

মানুষ কোন না কোন কাজে এক স্থান হ’তে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে থাকে। আধুনিক এই যান্ত্রিক যুগে সফর বা ভ্রমণ মানুষের নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ প্রয়োজনে নানাবিধ এবং আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রতিনিয়তই ভ্রমণ করে থাকে। বিভিন্ন স্থান দর্শনে অনেক জ্ঞানার্জন করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টিজীব, প্রকৃতি, নদী-নালা দেখার মাধ্যমে মুমিন বান্দাগণ আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার সূযোগ পায়। বিশেষ করে আল্লাহর দয়া, ক্ষমতা সর্ম্পকে জানতে পারে। এতে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় (আনকাবূত ২৯/২৩; রূম ৩০/৯; গাশিয়া ৮৮/১৭)। এছাড়াও বিভিন্ন জাতির ধ্বংসাবশেষ ও মিথ্যাবাদীদের অবস্থা দেখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।[1] ইসলামে অন্যান্য বিধানের ন্যায় ভ্রমণেরও সুন্দর নিয়ম-কানূন রয়েছে। কিন্তু ইসলামে ভ্রমণ সম্পর্কে যে নির্দেশ ও নিয়ম রয়েছে তা হয়ত অনেকে জানে না। মুসলমানের সকল কাজ যেহেতু ইবাদত সে কারণে ভ্রমণ তার বাইরে নয়। তাই ইসলাম ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা ও নিয়ম-কানূন নির্ধারণ করে দিয়েছে। রাসূল (ছাঃ) মাদানী জীবনের ১০ বছরের মধ্যে ৭৮১ দিনের অধিক অর্থাৎ দু’বছরের বেশী সময় যুদ্ধের ময়দানে (সফরে) অতিবাহিত করেছেন। এই অবস্থায় ইসলামের বহু বিধি-বিধান জারী হয়েছে।[2] আলোচ্য প্রবন্ধে সফর সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিধি-বিধান উপস্থাপন করা হ’ল।-

সফরের পরিচয় :

سفر আরবী এক বচনের শব্দ। বহুবচনে أسفار। আভিধানিক অর্থ হ’ল- ভ্রমণ, যাত্রা, প্রস্থান, রওয়ানা ইত্যাদি।[3] আর যিনি সফর করেন তাকে বলা হয় ‘মুসাফির’। সফর শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-

১.  قطع المسافة البعيدة‘অধিক দূরত্ব অতিক্রম করা’। এটা এজন্য বলা হয়- যখন মানুষ সফরে বের হয় তখন অনেক দূর পথ অতিক্রম করে’।[4]

২.  مفارقة محل الإقامة‘অবস্থানস্থল ছেড়ে যাওয়া’।[5] মানুষ সফর করলে তার অবস্থান স্থল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

৩.  الكشف‘উদ্ভাসিত হওয়া, প্রতিভাত হওয়া, সুম্পষ্ট হওয়া’। কেননা সফরকালে মানুষের আসল চরিত্র উদ্ভাসিত হয়। আল্লাহ বলেন, والصبح إذا أسفر ‘শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়’ (মুদ্দাচ্ছির ৭৪/৩৪)।

পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা হয়-السفر هو الخروج على قصد قطع مسافة القصر الشرعية فما فوقها ‘শারঈ ক্বছরের দূরত্ব পরিমাণ বা তার চেয়ে অধিক পথ অতিক্রম করার জন্য বের হওয়াকে সফর বলে’।[6]

সফর বা ভ্রমণের প্রকারভেদ :

সফর বা ভ্রমণকে কুরআন-হাদীছের আলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।

১. হারাম বা নিষিদ্ধ সফর। ২. মাকরূহ বা অপসন্দনীয় সফর। ৩. মুবাহ বা জায়েয সফর। ৪. মুস্তাহাব বা পসন্দনীয় সফর। ৫. ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় সফর।[7]

(১) হারাম বা নিষিদ্ধ সফর : এটা হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধিতা বা নিষিদ্ধ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সফর করা। যেমন- কুরআন-হাদীছে নিষিদ্ধ এমন কাজ সম্পন্ন করার জন্য সফর করা এবং যেখানে মহামারী আরম্ভ হয়েছে এমন স্থান থেকে সফর করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ ‘যদি তোমরা শুনতে পাও (কোন স্থানে মহামারী আক্রান্ত হয়েছে) তাহ’লে সেখানে যেয়ো না। আর তোমরা যেখানে আছ সেখানে আক্রান্ত হ’লে সেখান থেকে বের হয়ো না’।[8]

এছাড়া কোন মহিলার মাহরাম ছাড়া সফর করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِيْ مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ- ‘মহিলারা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন মহিলার নিকট কোন পুরুষ গমন করতে পারবে না’।[9]

(২) মাকরূহ বা অপসন্দনীয় সফর : এটা হ’ল ইসলামী পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে সফর করা। যেমন- একাকী রাতে সফর করা, তিন জনের অধিক হ’লে কাউকে আমীর নিযুক্ত না করে সফর করা। ইবনে ওমর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ مَا سَارَ رَاكِبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ، ‘যদি লোকেরা একা সফরে কি ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী সফর করত না’।[10]

(৩) মুবাহ বা বৈধ সফর : দুনিয়ার হালাল কোন কাজের প্রয়োজনে সফর করা। যেমন বিনোদনের জন্য, ব্যবসায়িক কাজে বা কোন দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য সফর করা ইত্যাদি।

(৪) মুস্তাহাব বা পসন্দনীয় সফর : এটা হ’ল মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আক্বছার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা। রাসূল ছোঃ) বলেন,لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم وَمَسْجِدِ الأَقْصَى، ‘মসজিদুল হারাম, মসজিদুর রাসূল (ছাঃ) এবং মসজিদুল আক্বছা (বাইতুল মাক্বদিস) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না।[11]

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ‘উপদেশ গ্রহণের জন্য, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ধ্বংসাবশেষ ও তাদের স্মৃতিসমূহ দেখার জন্য সফর করা মুস্তাহাব’।[12]

(৫) ওয়াজিব বা অবশ্যিক সফর : এটা হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর কোন আদেশকে বাস্তবায়নের জন্য সফর করা। যেমন- হজ্জের জন্য মক্কা সফর করা এবং মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক যুদ্ধের আদেশ দিলে যুদ্ধের জন্য সফর করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেন,وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوْكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَّأْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ- ‘আর তুমি জনগণের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রান্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে’ (হজ্জ ২২/২৭)।

ফরয ইলম অর্জন করার জন্য যে কোন স্থানে ভ্রমণ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ، ‘কোন ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করলে, আল্লাহ এই অসীলায় তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সুগম করে দেন’।[13]

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সফরসমূহ চার ধরনের ছিল। হিজরতের জন্য সফর[14], জিহাদের জন্য সফর, আর এটাই বেশী ছিল[15], ওমরাহ-এর জন্য[16] এবং হজ্জের জন্য সফর।[17]

সফরের আদব সমূহ :

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। জীবনের অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ইসলাম সফরের কিছু ইসলামী নিয়ম-কানূন প্রবর্তন করেছে। যা পালন করলে সফরের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। সফরের আদবগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে- ১. সফরে বের হওয়ার পূর্বের আদব। ২. সফর অবস্থায় আদব। ৩. সফর থেকে ফেরার পথে আদব। এখানে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলিকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

সফরে বের হওয়ার পূর্বের আদব :

সফরে বের হওয়ার পূর্বে ইসলামে কিছু নিয়ম রয়েছে, যা পালনের মাধ্যমে একজন মুসাফির তার সফরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে পারে।

  1. বিশুদ্ধ নিয়ত করা :

প্রত্যেক আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।[18]  মুসলিমের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হ’তে হবে (যুমার ৩৯/২; আল-বাইয়নাহ ৯৮/৫; গাফির ৪০/৬৫)। সুতরাং সফরের পূর্বে বিশুদ্ধ নিয়ত করা যরূরী। বিশেষ করে হজ্জ, ওমরাহসহ অন্যান্য উত্তম সফরে। ভাল নিয়তের মাধ্যমে প্রার্থিব সফরও ইবাদতে পরিণত হ’তে পারে। যেমন- কেউ ব্যবসায়িক সফরের পূর্বে যদি নিয়ত করে যে, হালালভাবে ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত লাভের কিছু অংশ গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে, তাহ’লে সফরটি ইবাদত হবে। আবার নিয়তের কারণে ইসলামী সফরও শিরকী কাজে পরিণত হ’তে পারে এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণও হ’তে পারে। লোক দেখানো হজ্জ ও ওমরাহ করা। নাম-যশের উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হওয়া (হূদ/১৫-১৬)।

  1. ইস্তেখারার মাধ্যমে সফর শুরু করা :

ইস্তেখারা হ’ল কল্যাণ প্রার্থনা। মানুষ যেহেতু তার ভবিষ্যৎ জানে না, তাই নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহর উপরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অথবা কোন ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য ছালাতুল ইস্তেখারা আদায় করতে হয়। দিনে বা রাতে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে এবং ছালাতের সিজদায়, শেষ বৈঠকে অথবা সালাম ফিরানোর পরে নিমেণর দো‘আটি পড়বে।[19]

اللَّهُمَّ إنِّيْ أسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأْسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أعْلَمُ، وَأنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوْبِ. الَّلْهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أمْرِي فَاقْدِرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيْهِ. وَإنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ، وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَاقْدِرْ لِيَ الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أرْضِنِيْ بِهِ-

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার জ্ঞানের সাহায্যে কল্যাণের প্রার্থনা করছি এবং তোমার শক্তির মাধ্যমে শক্তি প্রার্থনা করছি। আমি তোমার মহান অনুগ্রহ ভিক্ষা চাইছি। কেননা তুমিই ক্ষমতা রাখ, আমি ক্ষমতা রাখি না। তুমিই জান, আমি জানি না। তুমিই অদৃশ্য বিষয় সমূহের মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! যদি তুমি জান যে, এ কাজটি (এখানে যে কাজের জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে উল্লেখ করবে) আমার জন্য উত্তম হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে ওটা আমার জন্য নির্ধারিত করে দাও এবং সহজ করে দাও। অতঃপর ওতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি জান যে, এ কাজটি আমার জন্য মন্দ হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে এটা আমার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকেও ওটা থেকে ফিরিয়ে রাখ। অতঃপর আমার জন্য মঙ্গল নির্ধারণ কর, যেখানে তা আছে এবং আমাকে তা দ্বারা সন্তুষ্ট কর’।[20]

  1. আল্লাহর নিকট সমস্ত পাপ থেকে তওবা করা :

প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষ জানে না কখন কোথায় তার মরণ হবে; বরং আল্লাহই জানেন (লোক্বমান ৩১/৩৪)। তাই সফরের পূর্বে আল্লাহর কাছে সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করা উচিত। সাথে সাথে কারো উপর যুলুম করে থাকলে মাফ চেয়ে নেওয়া এবং ঋণ থাকলে পরিশোধ করা বা জানিয়ে যাওয়া উচিত।

  1. হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা :

সফরে যাওয়ার আগে পরিবারের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সফরের জন্য হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা। হালাল রূযী ছাড়া কোন ভাল কাজই আল্লাহ কবুল করেন না। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ وَلاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ ‏:‏ ‏(‏يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا)‏ وَقَالَ (يأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ثم َذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَهُ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ. يَا رَبِّ. وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِه لِذَلِكَ؟

‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কবুল করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদেরকে সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ রাসূলগণকে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্ত্ত আহার কর এবং নেক আমল কর’ (মুমিন ৪০/৫১)। তিনি আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলামেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোমলিন। অতঃপর সে তার দু’হাত আকাশের দিকে তুলে বলে, হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবূল হ’তে পারে’?[21]  

  1. দেনা-পাওনা ও অছিয়ত লিখে রাখা :

সফরের পূর্বে কর্তব্য হ’ল দেনা-পাওনা অথবা অছিয়ত থাকলে লিখে রাখা। কেননা মানুষ জানে না সে কোথায়, কখন মারা যাবে (লোক্বমান ৩১/৩৪)। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَىْءٌ، يُوْصِيْ فِيْهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ، إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ، ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার কাছে অছিয়তযোগ্য কিছু (সম্পদ) থাকাবস্থায় সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার নিকট অছিয়ত লিখিত থাকবে না’।[22]

  1. পিতা-মাতার অনুমতি নিয়ে সফরে বের হওয়া :

পিতা-মাতা জীবিত থাকলে তাদের অনুমতি নিয়ে সফরে যাওয়া উত্তম। আর মহিলা হ’লে তার অভিভাবকের অনুমিত এবং স্বামী বা মাহরাম (যার সাথে বিবাহ হারাম, যেমন-পিতা, ভাই, চাচা, ছেলে ইত্যাদি) সহ সফরে বের হওয়া। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِيْ مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ.‏ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أَخْرُجَ فِيْ جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِيْ تُرِيْدُ الْحَجَّ‏.‏ فَقَالَ‏ اخْرُجْ مَعَهَا-

‘মহিলারা মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না। মহিলার মাহরাম ব্যতীত কোন পুরুষ তার নিকট গমন করবে না। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক অমুক সেনাদলের সাথে আমি জিহাদ করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও’।[23] মহিলাদের জন্য হজ্জের সফরেও মাহরাম থাকা যরূরী।

  1. ব্যবস্থা থাকলে স্ত্রী সাথে নেওয়া :

দীর্ঘ দিনের উদ্দেশ্যে সফরকালে সম্ভব হ’লে ও ব্যবস্থা থাকলে স্ত্রীকে সাথে নেওয়া। আর কারো একাধিক স্ত্রী থাকলে  এবং সে একজনকে সাথে নিতে চাইলে অথবা একজনের যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে লটারীর মাধ্যমে একজনকে নির্ধারণ করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ، فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ ‘রাসূল (ছাঃ) সফরের মনস্থ করলে স্ত্রীগণের মধ্যে লটারী করতেন। যার নাম আসত তিনি তাঁকে নিয়েই সফরে বের হ’তেন’।[24] তবে হজ্জের সফরে তিনি সকল স্ত্রীকে সাথে নিয়েছিলেন।[25]

  1. সৎ কর্মশীল ব্যক্তির নিকট থেকে উপদেশ নেওয়া :

সফরে বের হওয়ার পূর্বে সফর স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ অথবা সৎ ও পুণ্যবান লোকেদের নিকট থেকে উপদেশ নেওয়া যেতে পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছি, অতএব আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন,عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ وَالتَّكْبِيْرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ‏.‏ فَلَمَّا أَنْ وَلَّى الرَّجُلُ قَالَ اللَّهُمَّ اطْوِ لَهُ الأَرْضَ وَهَوِّنْ عَلَيْهِ السَّفَرَ- ‘অবশ্যই তুমি আল্লাহভীতি (তাক্বওয়া) অবলম্বন করবে এবং প্রতিটি উঁচু স্থানে ওঠার সময় তাকবীর ধ্বনি দিবে (আল্লাহ আকবার বলবে)। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল সে সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! তার পথের ব্যবধান কমিয়ে দাও এবং তার জন্য সফর সহজতর করে দাও’।[26]

  1. সম্ভব হ’লে বৃহস্পতিবার বের হওয়া :

বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া উত্তম। কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,خَرَجَ فِي غَزْوَةِ تَبُوْكَ يَوْمَ الخَمِيْسِ، وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَّخْرُجَ يَوْمَ الْخَميسِ- ‘নবী করীম (ছাঃ) তাবূক অভিযানে বৃহস্পতিবারে বের হ’লেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পসন্দ করতেন’।[27] অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (ছাঃ) বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিনে কমই সফরে বের হ’তেন।[28]

  1. দিনের প্রথম অংশে সফর আরম্ভ করা :

অন্যান্য কাজের ন্যায় সকাল সকাল সফরে বের হওয়াও সফরের অন্যতম আদব। ছাখার ইবনে আদা‘আহ গামেদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,

اَللهم بَارِكْ ِلأُمَّتِي فِيْ بُكُوْرِهَا. وَكَانَ إِذَا بَعَثَ سَرِيَّةً أَوْ جَيْشَاً بَعَثَهُمْ مِنْ أوَّلِ النَّهَارِ. وَكَانَ صَخْرٌ تَاجِراً، وَكَانَ يَبْعَثُ تِجَارَتَهُ أوَّلَ النَّهَار، فَأَثْرَى وَكَثُرَ مَالُهُ،

‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও। আর তিনি যখন ছোট-বড় কোন অভিযানে সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদেরকে সকালে পাঠাতেন। আর ছাখার ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরণ করতেন। ফলে তিনি (এর বরকতে) ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর প্রচুর সম্পদ হয়েছিল’।[29]

  1. রাত্রিতে সফর করা :

প্রয়োজনে রাতের বেলায়ও সফর করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, عَلَيْكُمْ بِالدُّلْجَةِ فَإِنَّ الأَرْضَ تُطْوَى بِاللَّيْلِ ‘তোমাদের ফজরের পূর্বে অন্ধকার অবস্থায় সফর করা উচিত। কেননা রাতের বেলা যমীন সংকুচিত হয়’।[30] গ্রীষ্মকালে রাতের বেলা মরুভূমির পরিবেশ ঠান্ডা থাকে এবং দিনের বেলা থাকে উত্তপ্ত। যখন চলাচল কষ্টসাধ্য। ফলে রাত্রে ভ্রমণ সহজতর হয় এবং বাহনও স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে।[31]

  1. বিদায়কালীন দো‘আ পাঠ করা :

আত্মীয়-স্বজনের অর্থাৎ যারা বাড়ীতে থাকবে তাদের থেকে বিদায় নেয়ার সময় নিমেণাক্ত দো‘আ পাঠ করে বিদায় নিবে-

أَسْتَوْدِعُكَ اللهَ الَّذِيْ لاَ تَضِيْعُ وَدَائِعُهُ،

উচ্চারণ: ‘আস্তাউদি‘উকাল্লাহাল্লাযী লা-তাযি‘উ ওয়াদা-ই‘য়াহু’। অর্থ- ‘আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর হেফাযতে রেখে যাচ্ছি যার হেফাযতে অবস্থানকারী কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না’।[32]  আর যারা মুসাফিরকে বিদায় দিবে তারা নিমেণাক্ত দো‘আটি পাঠ করে বিদায় দিবে।

أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ،

উচ্চারণ: আস্তাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খাওয়া-তীমা আ‘মা-লিকা’। অর্থ- ‘আপনার দ্বীন, আপনার আমানত সমূহ ও আপনার শেষ আমল সমূহকে আল্লাহর হেফাযতে ন্যস্ত করলাম’।[33] এছাড়া নিমেণর দো‘আটিও পাঠ করা যায়, যা রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীকে বলেছিলেন, যিনি রাসূল (ছাঃ)-কে সফরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন,

زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى‏‏ وَغَفَرَ ذَنْبَكَ ‏‏ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ

উচ্চারণ: যাওয়াদাকাল্লা-হুত তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যাম্বাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খায়রা হায়ছুমা কুনতা। অর্থ- ‘আল্লাহ তোমাকে তাক্বওয়ার পুঁজি দান করুন, তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং তুমি যেখানেই থাক তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দেন’।[34]

  1. বিদায়কালে পরিবার-পরিজনকে তাক্বওয়ার অছিয়ত করা :

সফরকারী পরিবার প্রধান হ’লে পরিবারের ভাল-মন্দ তার উপর নির্ভরশীল। আর আল্লাহর দরবারে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।[35] আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির সকলকে লক্ষ্য করে বলেন,

وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُواْ اللهَ وَإِن تَكْفُرُوْا فَإِنَّ لِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَكَانَ اللهُ غَنِيّاً حَمِيْداً-

‘আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরী কর তাহ’লে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে যমীনে সব আল্লাহরই। আর আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত’ (নিসা ৪/১৩১)।

  1. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দো‘আ পাঠ করা :

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলবে,بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি ওয়া লা হাওলা ওলা-লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। অর্থঃ ‘আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি), তাঁর উপরে ভরসা করছি। আল্লাহ ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই, কোন শক্তি নেই’। তাকে বলা হবে এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে, তোমাকে বাঁচানো হয়েছে, তোমাকে সুপথ দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন শয়তান তার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। এক শয়তান অপর শয়তানকে বলে, তুমি ঐ ব্যক্তির সাথে কি করতে পার? যাকে সুপথ দেখানো হয়েছে এবং সব রকমের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা হয়েছে’।[36]

উম্মু সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) যখন ঘর থেকে বের হ’তেন তখন বলতেন,

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ نَزِلَّ أَوْ نَضِلَّ أَوْ نَظْلِمَ أَوْ نُظْلَمَ أَوْ نَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيْنَا-

উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি আল্লা-হুম্মা ইন্না না‘উযুবিকা মিন আন নাযিল্লা আও নাযিল্লা আও নাযলিমা আও নুযলামা আও নাজহালা আও ইউজহালা ‘আলাইনা। অর্থ: ‘(বের হচ্ছি) আল্লাহর নামে, আল্লাহর উপর আমি ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পদস্খলন হ’তে কিংবা পথভ্রষ্টতা হ’তে কিংবা যুলুম করা হ’তে কিংবা অত্যাচারিত হওয়া থেকে কিংবা অজ্ঞতাবশত কারো প্রতি মন্দ আচরণ করা হ’তে বা আমাদের প্রতি কারো অজ্ঞতা প্রসূত আচরণ হ’তে’।[37]

সফর অবস্থায় কিছু আদব :

সফর অবস্থায় কিছু ইসলামী আদব রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিম সফরকারীকে পালন করা প্রয়োজন। যেমন-

১. সফরের শুরুতে সফরের দো‘আ পাঠ করা :

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) সফরে বের হওয়ার সময় উটের উপর ধীর-স্থিরতার সাথে বসার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। তারপর বলতেন,

﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ﴾ اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضى اَللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ لَنَا بُعْدَه اَللّٰهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِى الْأَهْلِ وَالْمَالِ، اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَابَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْأَهْلِ.

‘মহা পবিত্র সেই সত্তা, যিনি একে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব’ (যুখরুফ ৪৩/১৩-১৪)। হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকটে আমাদের এই সফরে কল্যাণ ও তাক্বওয়া এবং এমন কাজ প্রার্থনা করি, যা আপনি পসন্দ করেন। হে আল্লাহ! আমাদের উপরে এই সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এই  সফরে আমাদের একমাত্র সাথী এবং পরিবারে ও মাল-সম্পদে আপনি আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে পানাহ চাই সফরের কষ্ট, খারাপ দৃশ্য এবং মাল-সম্পদ ও পরিবারের নিকটে মন্দ প্রত্যাবর্তন হ’তে’।[38]

২. সৎ লোকের সঙ্গী হয়ে সফর করা :

সফরে ভাল সঙ্গী থাকা যরূরী। কারণ সঙ্গী-সাথীর কারণে মানুষ ভাল-মন্দের দিকে ধাবিত হয়। সৎ সঙ্গীর আদেশ দিয়ে আল্লাহ তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, ‘তুমি নিজেকে রাখবে তাদেরই সঙ্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না; যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, সে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে তুমি তার আনুগত্য করো না’ (কাহাফ ১৮/২৮)।

অনুরূপভাবে ঈমানদারদেরকে বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوا  اللهَ وَكُونُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক’ (তাওবা ৯/১১৯)। আর এ প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পাহেযগার লোক ব্যতীত অন্য কেউ না খায়’।[39]

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ، ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কি ধরনের বন্ধু গ্রহণ করেছে’।[40] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) সৎসঙ্গীকে সুগন্ধী বহনকারীর সাথে তুলনা করেছেন। যার সাথে থাকলে সুগন্ধী পাওয়া যায়। আর অসৎ সঙ্গীকে কামারের সাথে তুলনা করেছেন। যার সাথে থাকলে কাপড় জ্বালিয়ে দিবে অথবা দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে’।[41]

৩. একাকী সফর না করা :

সফরকালীন সময়ে একাকী না গিয়ে তিনজন বা তার বেশী লোক সাথে রাখা উত্তম। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ وَالثَّلاَثَةُ رَكْبٌ ‘একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দু’জন সফরকারী দু’টি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা’।[42] একাকী সফরে কোন সমস্যা হ’লে বা মারা গেলে তাকে গোসল দেয়া, দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা, তার সাথে থাকা জিনিসগুলো সংরক্ষণ করা এবং তার মৃত্যুসংবাদ তার পরিবারে কাছে পৌঁছানোর সুবিধার্থে একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে কাফেলার সাথে সফর করতে শরী‘আত উৎসাহ দিয়েছে।[43]

ইবনে ওমর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي الْوَحْدَةِ مَا أَعْلَمُ مَا سَارَ رَاكِبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ ‘যদি লোকেরা একা সফরে কি ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী সফর করত না’।[44] ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,خَيْرُ الصَّحَابَةِ أرْبَعَةٌ، وَخَيْرُ السَّرَايَا أرْبَعُمِئَةٍ، وَخَيْرُ الجُيُوْشِ أرْبَعَةُ آلاَفٍ، وَلَنْ يُغْلَبَ اثْنَا عَشَرَ ألْفاً مِنْ قِلةٍ- ‘সর্বোত্তম সঙ্গী হ’ল চারজন, সর্বোত্তম ছোট বাহিনী হ’ল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবাহিনী হ’ল চার হাযার জন। আর বারো হাযার সৈন্য স্বল্পতার কারণে কখনো পরাজিত হবে না’।[45]

৪. তিন বা তার অধিক হ’লে একজনকে আমীর বানানো :

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ فِيْ سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوْا أَحَدَهُمْ ‘তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন নিজেদের মধ্য হ’তে একজনকে আমীর বানায়’।[46]

৫. সফর অবস্থায় বিভক্ত না হয়ে একত্রিত থাকা :

আবু ছা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সেনাবাহিনীর লোকজন যখন কোন স্থানে (বিশ্রামের জন্য) নামতেন তখন তারা বিভিন্ন গিরিপথে ও উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তেন। সেজন্য রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ تَفَرُّقَكُمْ فِيْ هَذِهِ الشِّعَابِ وَالأَوْدِيَةِ إِنَّمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَانِ. فَلَمْ يَنْزِلْ بَعْدَ ذَلِكَ مَنْزِلاً إِلاَّ انْضَمَّ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ حَتَّى يُقَالُ لَوْ بُسِطَ عَلَيْهِمْ ثَوْبٌ لَعَمَّهُمْ-‏‏

‘এসব গিরিপথে ও পাহাড়ী উপত্যকায় তোমাদের বিভক্ত হয়ে পড়াটা শয়তানের ষড়যন্ত্র। (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর থেকে যেখানেই তিনি নামতেন দলের লোকজন একত্রে অবস্থান করত। এমনকি এরূপ বলা হ’ল যে, যদি একটি কাপড় তাদের উপর বিছিয়ে দেয়া হয় তাদের সবাইকে এর মধ্যে ঢেকে নেয়া সম্ভব’।[47] একত্রিত হয়ে সব কাজ করার গুরুত্ব বর্ণনা করে অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِيْ قَرْيَةٍ وَلاَ بَدْوٍ لاَ تُقَامُ فِيْهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ- ‘কোন তিন ব্যক্তি তারা (জনবহুল) গ্রামে থাকুক অথবা জনবিরল অঞ্চলে থাকুক, তাদের মধ্যে ছালাতের জামা‘আত কায়েম করা হয় না, নিশ্চয়ই তাদের উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং অবশ্যই তুমি জামা‘আত কায়েম করবে। কেননা নেকড়ে বাঘ সেই ছাগল-ভেড়াকেই খায় যে দল ছেড়ে একা থাকে’।[48]

৬. যালেমদের অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করার সময় করণীয় :

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) যখন হিজর (তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার সময় ছামূদ জাতির ধ্বংসস্তূপের) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন তখন বলেন,لاَ تَدْخُلُوْا مَسَاكِنَ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا إِلاَّ أَنْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ، أَنْ يُصِيْبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ.‏ ثُمَّ تَقَنَّعَ بِرِدَائِهِ، وَهْوَ عَلَى الرَّحْلِ، ‘তোমরা এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ করো না যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করেছে। প্রবেশ করবে ক্রন্দনরত অবস্থায়, যেন তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছিল তোমাদের প্রতি সে রকম বিপদ না আসে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বাহনের উপর আরোহী অবস্থায় নিজ চাদর দিয়ে চেহারা ঢেকে নিলেন’।[49]

৭. উপরে উঠতে ও নীচে নামতে দো‘আ পাঠ করা :

সফরে বা অন্য সময় উঁচু স্থানে উঠতে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ স্বরূপ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামতে ‘সুবাহানা-ল্লাহ’ বলা। জাবির (রাঃ) বলেন,كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا ‘আমরা যখন উপরের দিকে উঠতাম, ‘আল্লা-হু আকরাব’ ও যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুব্হা-নাল্লাহ’ বলতাম’।[50] আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী করীম (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّهُ مَعَكُمْ إِنَّهُ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ تَبَارَكَ اسْمُهُ وَتَعَالَى جَدُّهُ، ‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী’।[51]

৮. নির্দিষ্ট গন্তব্যে পেঁŠছার পর দো‘আ পড়া :

খাওলাহ্ বিনতু হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন জায়গায় অবতরণ করে নিমেণাক্ত দো‘আটি পাঠ করবে তাহ’লে তাকে কোন জিনিস অনিষ্ট করতে পারবে না, তার ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত।

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ،

‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি সকল কিছুর অনিষ্টতা হ’তে আশ্রয় চাই’।[52]

৯. সফর অবস্থায় বেশী বেশী দো‘আ করা :

সফর অবস্থায় আল্লাহ দো‘আ কবুল করেন। তাই সফর অবস্থায় বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ ‘তিন ব্যক্তির দো‘আ নিঃসন্দেহে কবুল হয়: পিতা-মাতার দো‘আ, মুসাফিরের দো‘আ, মাযলূমের দো‘আ’।[53]  হজ্জ বা ওমরার সফর হ’লে হজ্জের কাজের মধ্যে, ফাঁকে ফাঁকে অধিক দো‘আ করা। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,الْغَازِي فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوْهُ وَسَأَلُوْهُ فَأَعْطَاهُمْ، ‘আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জ ও ওমরা যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর নিকট দো‘আ করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদেরকে দান করেন’।[54]

১০. ঘুম বা বিশ্রামের প্রয়োজন হ’লে চলাচলের রাস্তা পরিত্যাগ করা :

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِذَا سَافَرْتُمْ فِي الْخِصْبِ فَأَعْطُوا الإِبِلَ حَظَّهَا مِنَ الأَرْضِ وَإِذَا سَافَرْتُمْ فِي السَّنَةِ فَبَادِرُوا بِهَا نِقَيَهَا وَإِذَا عَرَّسْتُمْ فَاجْتَنِبُوا الطَّرِيْقَ فَإِنَّهَا طُرُقُ الدَّوَابِّ وَمَأْوَى الْهَوَامِّ بِاللَّيْلِ،

‘তোমরা যখন উর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর, তখন উটকে ভূমি থেকে তার অংশ দাও (অর্থাৎ কিছুক্ষণের বিচরণের জন্য ছেড়ে দাও)। আর যখন দুর্ভিক্ষগ্রস্ত বা অনুর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন তাড়াতাড়ি (তাদের চলার শক্তি বাকী থাকতে) তা অতিক্রম করে যাও। আর যখন রাত্রি যাপনের জন্য কোথাও অবতরণ কর, তখন পথে (তাবু খাটানো) থেকে সরে থাকবে। কেননা তা হচ্ছে জীবজন্তু ও সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির রাত্রিবেলার আশ্রয়স্থল’।[55]

সফর অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর ঘুমানোর নিয়ম সম্পর্কে অন্য হাদীছে এসেছে,إِذَا كَانَ فِيْ سَفَرٍ فَعَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلَى يَمِيْنِهِ وَإِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهُ وَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى كَفِّهِ- ‘তিনি সফররত অবস্থায় রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। আর ভোরের কাছাকাছি সময়ে জাগ্রত হ’লে তাঁর বাহু দাঁড় করিয়ে হাতের তালুতে ভর করে শুয়ে থাকতেন’।[56]

১১. সকালে দো‘আ পাঠ করা : 

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ) সফরে থাকতেন ভোর হ’লে বলতেন,سَمِعَ سَامِعٌ بِحَمْدِ اللهِ وَنِعْمَتِهِ وَحُسْنِ بَلاَئِهِ عَلَيْنَا اللَّهُمَّ صَاحِبْنَا فَأَفْضِلْ عَلَيْنَا عَائِذًا بِاللهِ مِنَ النَّارِ، ‘সর্বশ্রোতা শ্রবণ করেছেন, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি, আমাদের প্রতি তাঁর নে‘মতের স্বীকৃতি প্রদান করছি। হে আমাদের রব! তুমি আমাদের সাথী হও ও আমাদের প্রতি দয়া করো। আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই’।[57]

১২. সফরে ব্যবহৃত পশু বা জিনিসের প্রতি সদয় হওয়া :

সফরের কাজে ব্যবহার হওয়া জিনিসের প্রতি সদয় হ’তে হবে। চাই তা পশু হোক বা আধুনিক যানবাহন হোক। পশু হ’লে তাকে সঠিক সময়ে খাদ্য-পানীয় দেওয়া বিশ্রামের ব্যবস্থা করা এবং তার প্রতি যুলুম না করা। আর আধুনিক যানবাহন হ’লে সেটা নষ্ট না করা অপ্রয়োজনীয় কিছু না লেখা ইত্যাদি।

১৩. সওয়ারী হোঁচট খেলে বলবে :

আবুল মালীহ (রহঃ) এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একটি সওয়ারীতে নবী করীম (ছাঃ)-এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার সওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, একথা বল না, যে শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মত বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতা হয়েছে। অতএব বল, বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর নামে। যখন তুমি বিসমিল্লাহ বলবে শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে’।[58]

১৪. সফরে কুকুর বা ঘণ্টা না রাখা : 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَصْحَبُ الْمَلاَئِكَةُ رُفْقَةً فِيْهَا كَلْبٌ وَلاَ جَرَسٌ، ‘ফেরেশতারা ঐ সফরকারী দলের সঙ্গে অবস্থান করেন না, যাতে কোন কুকুর বা ঘণ্টা থাকে’।[59] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঘণ্টাই হ’ল শয়তানের বাঁশি’।[60]

১৫. সফরে সঙ্গী-সাথীদের যথাসাধ্য সাহায্য করা :

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা কোন সফরে নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি সওয়ারীতে আরোহণ করে আগমন করল। অতঃপর সে তার দৃষ্টি ডানে-বামে ফিরানো শুরু করল। তা দেখে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ ظَهْرَ لَهُ وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ مِنْ زَادٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ زَادَ لَهُ ‘যার নিকট অতিরিক্ত সওয়ারী আছে, যার নেই তার জন্য যেন নিয়ে আসে, আর যার নিকট নিজের পাথেয়র অতিরিক্ত রয়েছে, যার নেই তার জন্য যেন নিয়ে আসে’।[61]

১৬. সমস্ত পাপকাজ থেকে বিরত থাকা :

সফরে সকল প্রকার দৃশ্যমান ও অদৃশ্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যরূরী। বিশেষ করে হজ্জের সফরের ব্যপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيْهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوْقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ، ‘হজ্জের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের উপর হজ্জ আরোপ করে নিল, তার হজ্জে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।

১৭. কোন গ্রামে প্রবেশের সময় দো‘আ পাঠ করা :

সফর কালে কোন গ্রামে প্রবেশ করলে নিমেণাক্ত দো‘আ পাঠ করে প্রবেশ করবে,

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ وَرَبَّ الأَرَضِيْنَ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ وَرَبَّ الشَّيَاطِيْنِ وَمَا أَضْلَلْنَ وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا-

‘হে সপ্তাকাশ ও যা কিছু তার নীচে রয়েছে তার রব! হে সপ্ত যমীন ও তার উপরে যা কিছু রয়েছে তার রব, শয়তান ও যাদের তারা পথভ্রষ্ট করেছে তাদের রব এবং হে প্রবাহিত বাতাস ও বাতাসে যা কিছু উড়িয়ে নিয়ে যায় তার বর। নিশ্চয়ই আমরা তোমার নিকট এই গ্রাম ও এর অধিবাসীদের কল্যাণ কামনা করি এবং আমরা তোমার নিকট এই গ্রাম ও গ্রামবাসীদের ও এর মধ্যে যে অনিষ্ট ও অমঙ্গল আছে তা হ’তে আশ্রয় চাই’।[62]

১৮. কারো বাড়িতে/ঘরে প্রবেশের নিয়ম :

সফর অবস্থায় বা অন্য সময় কারো ঘরে বা বাড়ীতে প্রবেশের সময় বাড়ীওয়ালার অনুমতি নিবে এবং সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে’।[63] বাড়ীওয়ালা কোন কারণে অনুমতি না দিলে বা ফিরে যেতে বললে ফিরে যাবে’ (নূর ২৪/২৮)।

[চলবে]


[1]. আলে ইমরান ৩/১৩৭; আন‘আম ৬/১১; ইউসুফ ১২/১০৯; নাহল ১৬/৩৬; হাজ্জ ২২/৪৬; নামল ২৭/৬৯; আনকাবূত ২৯/২০; রূম ৩০/৯,৪২; ফাতির ৩৫/৪৪, গাফির ৪০/২১, ৮২; মুহাম্মাদ ৪৭/১০।

[2]. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪৩৭/২০১৬), পৃঃ ৬২৫।

[3]. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফী, (ঢাকা: রিয়াদ প্রকাশনী), পৃঃ ৪৬৬।

[4]. আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া, ২৫/২৬ পৃঃ।

[5]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে’ আলা যাদিল মুসতাকনি ৪/৩৪৭-৩৮৪।

[6]. আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৫/২৬ পৃঃ।

[7]. শারহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাকনি ৪/৩৪৮-৩৪৯ পৃঃ।

[8]. বুখারী হা/৫৭২৮-৩০, ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২২১৮-১৯;  মিশকাত হা/১৫৪৮।

[9]. বুখারী হা/১৮৬২; মুসলিম হা/১৩৪১ ‘হজ্জ অধ্যায়’ ।

[10]. বুখারী হা/২৯৯৮।

[11]. বুখারী হা/১১৮৯; মুসলিম হা/৮২৭ ‘হজ্জ অধ্যায়’ ।

[12]. তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আন‘আম-১১ নং আয়াতে তাফসীর দ্রঃ।

[13]. ইবনু মাজাহ হা/২২৩; তিরমিযী হা/২৬৪৬; মিশকাত হা/২১২; ছহীহুল জামি‘ হা/৬২৯৮, ৬৫৭৭।

[14]. মোট ১১ দিন (১৪ নববী বর্ষের ২৭শে ছফর মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর বৃহস্প্রতিবার দিবাগত রাতে আবু বকরের বাড়ী থেকে হিজরত শুরু হয়। তিন দিন ছাওর পর্বতের গুহায় অবস্থানের পর টানা আট দিন চলার পর ৮ রবীউল আউয়াল মোতাবেক ২৩শে সেপ্টেম্বর মদীনায় পেঁŠছেন। দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০১৫), পৃঃ ২২৬-২৩৮।

[15]. মাদানী জীবনের ১০ বছরের মধ্যে ২৯টি গাযওয়ায় ৭৮১ দিনের অধিক অর্থাৎ দু’বছরের বেশী সময় যুদ্ধের ময়দানে (সফরে) অতিবাহিত করেছেন। দ্রঃ সীরাতুল রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৬১৮-৬২৬।

[16]. ৬ষ্ঠ হিজরীর ১লা যুলক্বা‘দাহ সোমবার তিনি ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। হোদায়বিয়াতে তিনি ২০ দিন অবস্থান করেন। যাতায়াতসহ সর্বমোট দেড় মাস তিনি এ সফরে অতিবাহিত করেন। দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৪৪৫-৪৬৪।

[17]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ (বৈরূত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ ১৪১৬/১৯৯৬) ১/৪৪৪ পৃঃ। হজ্জের জন্য রাসূল (ছাঃ) ১০ম হিজরীর যুলক্ব‘দাহ মাসের ২৪ তারিখ রওয়ানা করেন এবং ৪ঠা যিলহজ্জ মক্কায় পেঁŠছেন। হজ্জের সকল বিধি-বিধান পালন শেষে ১৪ই যিলহজ্জ তিনি মদীনা অভিমুখে রওয়ানা করেন। অতঃপর সপ্তাহকাল সফর শেষে মদীনায় পেঁŠছেন। এ সফরে মোট ২৭ দিন অতিবাহিত হয়। দ্রঃ সীরাতুল রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৭২৭।

[18]. বুখারী হা/১।

[19]. বুখারী হা/৮৩৫; মুসলিম হা/৪০২, ৪৮২। 

[20]. বুখারী হা/১১৬২, ৬৩৮২, ৭৩৯০; তিরমিযী হা/৪৮০; আবুদাউদ হা/ ১৫৩৮; ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৩।

[21]. মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০।

[22]. বুখারী হা/২৭৩৮ ‘অছিয়ত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৬২৭; মিশকাত হা/৩০৭০।

[23]. বুখারী হা/১৮৬২,৩০০৬; মুসলিম হা/১৩৪১; তিরমিযী হা/১১৬৯।

[24]. বুখারী হা/২৫৯৩।

[25]. যাদুল মা‘আদ ১/৪৪৫ পৃঃ।

[26]. তিরমিযী/৩৪৪৫; ইবনু মাজাহ/২৭৭১।

[27]. বুখারী হা/২৯৪৯; মুসলিম হা/২৭৬৯; তিরমিযী হা/৩১০২; নাসাঈ হা/৩৮২৪; আবুদাউদ হা/২২০২।

[28]. বুখারী হা/২৯৪৯; সুনান দারেমী হা/২৪৮০।

[29]. আবুদাউদ হা/২৬০৬; তিরমিযী হা/১২১২; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৬।

[30]. আবুদাউদ হা/২৫৭১; আহমাদ/১৫১৫৭।

[31]. আব্দুল মুহাসিন আল-আববাদ, শরহু সুনানে আবী দাউদ, ১৪/২২ পৃঃ।

[32]. ইবনে মাজাহ হা/২৮২৫।

[33]. আবুদাউদ হা/২৬০০; তিরমিজি হা/৩৪৪৩।

[34]. তিরমিযী হা/৩৪৪৪; ইবনে খুযায়মাহ হা/২৫৩২; মুসতাদরাক লিল হাকিম হা/২৪৭৭; ছহীহুল জামি‘ হা/৩৫৭৯; মিশকাত হা/২৪৩৭।

[35]. বুখারী হা/৮৯৩, ২৪০৯; আবুদাউদ হা/২৯২৮; তিরমিযি হা/১৭০৫।

[36]. আবুদাউদ হা/৫০৯৫; তিরমিযী হা/৩৪২৬; মিশকাত হা/২৪৪৩।

[37]. তিরমিযী হা/৩৪২৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৮৪।

[38]. মুসলিম হা/১৩৪২; আবুদাউদ হা/২৫৯৯; আহমাদ হা/৬৩৭৪; ইবনু হিববান হা/২৬৯৬; মিশকাত হা/২৪২০।

[39]. আবুদাউদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫।

[40]. আবুদাউদ হা/৪৮৩৩; তিরমিযী হা/২৩৭৯।

[41]. বুখারী হা/৫৫৩৪; মুসলিম হা/২৬২৮।

[42]. আবুদাউদ হা/২৬০৭; তিরমিযী হা/১৬৭৪, হাদীছ হাসান।

[43]. আওনুল মা’বুদ হা/২৬০৮ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।

[44]. বুখারী হা/২৯৯৮ ‘নিঃসঙ্গ ভ্রমণ’ অধ্যায়, ।

[45]. আবুদাউদ হা/২৬১১; তিরমিযী হা/১৫৫৫।

[46]. আবুদাউদ হা/২৬০৮; সিলসিলা ছহীহাহা হা/১৩২২।

[47]. আবুদাউদ হা/২৬২৮।

[48]. আবুদাউদ হা/৫৪৭; নাসাঈ হা/৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ হা/২১৭১০, হাদীছ হাসান।

[49]. বুখারী হা/৩৩৮০; মুসলিম হা/২৯৮০।

[50]. বুখারী হা/২৯৯৩; দারেমী হা/২৭১৬; ইবনু খুযায়মাহ হা/২৫৬২।

[51]. বুখারী হা/২৯৯২।

[52]. মুসলিম হা/২৭০৮; তিরমিযী হা/৩৪৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৭।

[53]. আবুদাউদ হা/১৫৩৬; তিরমিযী হা/১৯০৫; ইবনে মাজাহ হা/৩৮৬২।

[54]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮২০।

[55]. মুসলিম হা/৪৮৫৪; আবুদাউদ হা/২৫৬৯; তিরমিযী হা/২৮৫৮।

[56]. মুসলিম হা/১৪৫১ ‘মসজিদ ও ছালাত সমূহের স্থানসমূহ’ অধ্যায় ‘যে ছালাত আদায় করা সম্ভব হয়নি এবং তা সম্পাদনের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ।

[57]. মুসলিম হা/২৭১৮; আবুদাউদ হা/৫০৮৬।

[58]. আবুদাউদ হা/৪৯৮২; আহমাদ হা/২০৮৬৭।

[59]. মুসলিম হা/৫৪৩৯ ‘পোশাক’ অধ্যায়।

[60]. মুসলিম হা/৫৪৪১ ‘পোশাক’ অধ্যায়।

[61]. মুসলিম হা/১৭২৮।

[62]. ইবনু হিববান হা/২৩৭৭; হাকেম ২/১০০; যাদুল মা‘আদ ১/৪৪৭ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৫৯।

[63]. সূরা নূর ২৪/২৭; বুখারী হা/৬২৪৫; মুসলিম হা/২১৫৩; আবুদাউদ হা/৫১৮৪; মিশকাত হা/৫১৮৪।





আল্লাহর হক - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
পিতা-মাতার সাথে আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হেদায়াত - যহূর বিন ওছমান, দিনাজপুর
ছাহাবী ও তাবেঈগণের যুগে মহামারী ও তা থেকে শিক্ষা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণ সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
কুরবানীর মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৭ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
যাকাত সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আরও
আরও
.