মানুষকে আল্লাহ রাববুল আলামীন সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। তাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আসমানী কিতাবসহ অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। সৃষ্টির সেরা হিসাবে মানুষ তাঁরই ইবাদত করবে এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম আল্লাহ মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। তাই ইসলামী বিধান ব্যতীত অন্য কোন মতাদর্শ গ্রহণের পরিণতি হবে ভয়াবহ। আল্লাহ প্রেরিত বিধান আপনা-আপনিই বাস্তবায়িত হয় না। প্রয়োজন হয় প্রচার ও আন্দোলনের। আর আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন হয় সংঘবদ্ধ জনসমষ্টির এবং সংগঠিত জনগণকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় সংগঠনের। সংগঠনের গতিশীলতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হ’লে সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। একটি সংগঠনকে গতিশীল করতে যে সমস্ত কারণ বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং তা হতে উত্তরণের উপায় কি নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হ’ল।-

অযোগ্য ও অদক্ষ নেতৃত্ব : প্রকৃত অর্থে আদর্শহীন সংগঠন কোন সংগঠন নয়। আল্লাহ প্রদত্ত অহি-র বিধান ও রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী যে সংগঠন পরিচালিত হয়, সেটাকেই আদর্শ সংগঠন বলা যায়। এ ধরনের সংগঠনের অগ্রগতির সবচেয়ে বড় বাধা হ’ল অযোগ্য নেতৃত্ব। অযোগ্য ও অদক্ষ ড্রাইভার যেমন একটা মোটর গাড়িকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়, তেমনি একজন অযোগ্য ও অদক্ষ নেতা সংগঠনের গতিশীলতায় কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। সেজন্য প্রয়োজন একজন যোগ্য ও দক্ষ নেতার। অযোগ্য নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন,إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ، قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ، فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ-  ‘যখন আমানত বিনষ্ট হবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমানত বিনষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যখন কোন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করা হবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে’।[1]

পদলোভী হওয়া : একজন ব্যক্তি নিজেকে যতই যোগ্য মনে করেন না কেন, তিনি নিজেই নিজেকে নেতা ঘোষণা দিতে পারেন না। ইসলামী শরী‘আতে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّى عَلَى هَذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلاَ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ ‘আল্লাহর শপথ! আমরা এই দায়িত্বপূর্ণ কাজে এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করব না, যে তা পাওয়ার জন্য প্রার্থী হবে। অথবা এমন কাউকেও নয়, যে তা পাওয়ার জন্য লালায়িত হবে’।[2] উপরন্তু নেতৃত্ব চেয়ে নিলে তাতে কোন কল্যাণ থাকে না। বরং না চাইতেই যদি অর্পিত হয়, তাহ’লে তাতে আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ বিদ্যমান থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا- ‘তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার কারণে তা প্রাপ্ত হ’লে তোমার উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হবে। আর নেতৃত্ব না চেয়ে প্রাপ্ত হ’লে তুমি তাতে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।[3]

আনুগত্যহীনতা : নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আনুগত্যহীনতা সংগঠনের গতিশীলতা ও অগ্রগতিতে চরম অন্তরায় সৃষ্টি করে। যে সংগঠনের কর্মীরা নেতার প্রতি যত আনুগত্যশীল সে সংগঠন তত বেশী মযবুত ও গতিশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আললাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর’... (নিসা ৪/৫৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيْرَ فَقَدْ أَطَاعَنِى، وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِى-  ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমীরের (নেতা) আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’।[4] নেতা যদি নাফরমানির নির্দেশ ব্যতীত কোন নির্দেশ দেন এবং সে নির্দেশ যদি কারো অপসন্দ হয়, তথাপিও সে নির্দেশ মানতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ، فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ ‘প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে নেতার নির্দেশ শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করা চাই সে নির্দেশ তার পসন্দ হোক বা অপসন্দ হোক; যতক্ষণ না আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেয়া হয়। যখন আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়া হবে, তখন আমীরের কথা শোনা যাবে না ও তাঁর আনুগত্য করা যাবে না’।[5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,لاَ طَاعَةَ فِى مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ- ‘গোনাহের কাজে আনুগত্য করা যাবে না; বরং আনুগত্য শুধুমাত্র ন্যায়সংগত কাজে’।[6] তিনি অন্যত্র বলেন, لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِى مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই’।[7]

নেতার উত্তম ব্যবহারের অনুপস্থিতি : কর্মীদের প্রতি নেতার ব্যবহার যদি ভাল না হয়, তাহ’লে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। নেতা ও কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। নেতার রূঢ় আচরণে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। সেজন্য নেতাকে উত্তম আদর্শ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হ’তে হয়। এ বিষয়ের প্রতি নেতার সর্বদা দৃষ্টি রাখা দরকার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)

সংগঠনে নেতার আচার-ব্যবহারে কর্মীরা যেন কোন অবস্থাতেই দুঃখ-কষ্ট না পায়, সেদিকে নেতাকে সর্বদা খেয়াল রাখা অতীব প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, اَللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সামষ্টিক কাজের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি তাদেরকে কষ্টে ফেলে তবে তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর সে যদি তাদের প্রতি নম্রতা অবলম্বন করে তাহ’লে তুমিও তার প্রতি নম্রতা অবলম্বন করো’।[8]

পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ না করা : সংগঠন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সাথে সংগঠনের নেতা যদি পরামর্শ ছাড়াই কাজ করেন তাহ’লে সংগঠনে গতিশীলতা আসবে না। মজলিসে শূরার সদস্যগণ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে সামনে রেখে খোলা মনে সংগঠনের অগ্রগতির স্বার্থে তাদের সুচিন্তিত যুক্তিপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করবেন। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে নয় বা কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য নয় বা কেউ অসন্তুষ্ট হবেন এ চিন্তায় বা কারো ভয়ে মত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার অর্থ হ’ল সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। যা প্রত্যেক শূরা সদস্যকে পরিহার করা একান্ত দরকার। অপরদিকে নিজ মতামত অপেক্ষা অধিকতর যুক্তিসংগত মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রত্যেক শূরা সদস্যকে প্রস্ত্তত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার যিদ করা যাবে না। পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করায় নেতার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরামর্শভিত্তিক কাজ করার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ ‘তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُ رَجُلاً أَكْثَرَ اسْتِشَارَةً لِلرِّجَالِ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমি এমন কোন ব্যক্তিকে দেখিনি, যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অপেক্ষা বেশী পরামর্শ করতেন’।[9]

নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর অভাব : নির্ভেজাল তাওহীদী আক্বীদা-বিশ্বাসের অধিকারী কর্মী বাহিনীর অভাবে সংগঠনের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হ’ল- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর উপর পূর্ণ বিশ্বাসী হক গ্রহণে যাদের অন্তরে থাকবে না কোন প্রকার দ্বিধা-সংকোচ, তেমনি ধরনের একদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী। যারা পালন করবে শরী‘আত অনুমোদিত সৎকর্মসমূহ। সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণে থাকবে অবিচল। তারা হবে না ক্ষতিগ্রস্ত। পরিনামে পাওয়া যাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও সাহায্য। আল্লাহ বলেন, ‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/১-৩)

সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা : সকল পর্যায়ের কর্মী ও দায়িত্বশীলদের সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে সংগঠনের অগ্রগতি আদৌও সম্ভব নয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাবে যে কোন সময় যে কোন কর্মী ও দায়িত্বশীল সংগঠন থেকে নিমিষেই ছিটকে পড়তে পারে। তাই বিশেষ করে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও কর্মসূচী সম্পর্কে প্রত্যেকেরই স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সংগঠনের  কর্মী ও দায়িত্বশীলদের মনে সংশয় থাকলে সংগঠনের অগ্রগতি হবে বাধাগ্রস্ত এবং ফাটল ধরবে সংগঠনিক মযবুতিতে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)

যুগোপযোগী পরিকল্পনার অভাব : দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য যুগোপযোগী কর্মপন্থা প্রদান না করলে সংগঠনের প্রতি কর্মীদের আকৃষ্ট করা, আস্থাশীল রাখা ও সর্বদা সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। এজন্য ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের অধঃস্তন কর্মীদের সর্বদা খোঁজ-খবর রাখা একান্ত প্রয়োজন। কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হ’লে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা দরকার। দায়িত্বশীলদের সাংগঠনিক সফর, সর্বদা যোগাযোগ রাখা এবং সকলের মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মকান্ড অব্যাহত না রাখলে সংগঠনের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। একে অপরের সাথে সুদৃঢ় বন্ধন নষ্ট হবে। ফলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দায়িত্বশীলদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা : সংগঠনের মধ্যে দায়িত্বশীলদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা হ’লে সংগঠনের অগ্রগতি সম্ভব হয় না। দায়িত্বশীলদের মধ্যে সকলের সমান যোগ্যতা ও মেধা থাকে না। তাদের যোগ্যতা ও মেধানুযায়ী সংগঠনের প্রতি আন্তরিক হয়ে দায়িত্ব পালন করলে তার যথাযোগ্য মূল্যায়ন করা দরকার। তাতে কর্মীদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। ফলে সংগঠনের অগ্রগতি সাধিত হয়। সাথে সাথে দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।

যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব প্রদান না করা : কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব প্রদান না করলে সংগঠনের অগ্রগতি সম্ভব নয়। যোগ্য কর্মীকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কর্মীকে দায়িত্ব দিলে মানুষ হিসাবে যোগ্য কর্মীর মন ভেঙ্গে যায়। ফলে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আনুগত্য ও শ্রদ্ধা লোপ পায়। যোগ্য কর্মীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয় এবং অযোগ্য কর্মীদের মধ্যে অহংকারবোধ দেখা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আমানত সমূহ তার হক্বদারের উপর অর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন...’ (নিসা ৪/৫৮)

ধৈর্য ধারণে অভ্যস্ত না হওয়া : ছবর বা ধৈর্য হ’ল সফলতার চাবিকাঠি। তাই সংগঠনের সকল পর্যায়ের কর্মী ও দায়িত্বশীলদের ধৈর্য ধারণের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সুখ-শান্তি, দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদে এক কথায় সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের লক্ষণ। ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত হতে না পারলে কোন কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সংগঠনের অগ্রগতিতে অর্পিত দায়িত্ব ধৈর্য সহকারে সম্পাদন করা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ ‘(মুমিন হল তারা) যারা অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ছবরকারী। তারাই হ’ল সত্যাশ্রয়ী আর তারাই মুত্তাকী’ (বাক্বারাহ ২/১৭৭)

নিরাশ হওয়া ও তড়িৎ ফলাফলের আশা করা : সাংগঠনিক অগ্রগতির একটা বড় অন্তরায় হ’ল কর্মীদের মাঝে নিরাশ হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া। আর হতাশার সৃষ্টি হয় তখন, যখন কেউ আন্দোলন-সংগ্রামের তড়িৎ ফলাফল আশা করে। অন্যদের দুনিয়াবী জৌলুসে প্রতারিত হয় এবং পরস্পরের আমানতে সন্দেহ পোষণ করে। সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অপর্যাপ্ততা এবং সংগঠন কি চায়, কেন চায়, কিভাবে চায়? এসব বিষয়ে জ্ঞানের অভাবে দিনে দিনে কর্মীরা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা পরিহার করা একান্ত আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তান্বিত হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও’ (আলে ইমরান ৩/১৩৯)। আল্লাহ আরও বলেন, أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِيْنَ ‘তোমরা কি ভেবেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ এখনো জেনে নেননি কারা তোমাদের মধ্যে জিহাদ করেছে এবং কারা তোমাদের মধ্যে ধৈর্যশীল? (আলে ইমরান ৩/১৪২)

অহংকার ও প্রশংসার আকাংখী হওয়া : অহংকার ধ্বংসের মূল। সকল অসৎগুণের মধ্যে সবচেয়ে বড় অসৎগুণ হচ্ছে অহংকার ও অন্যের প্রশংসার প্রত্যাশী হওয়া। যা শয়তানের কাজ ছাড়া অন্য কিছু নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَحَدٌ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ كِبْرِيَاءَ ‘যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[10]

মানুষের যত প্রকার ত্রুটি আছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ত্রুটি হ’ল নিজেকে বড় মনে করা। আর এটা যখন কারো মধ্যে জাগ্রত হয়, তখন সে নিজকে খুব বড় জ্ঞানী ও গুণসম্পন্ন মনে করে ও অন্যরা তাকে সর্বাপেক্ষা বড় জ্ঞানী ও যোগ্য মনে করুক এটা প্রত্যাশা করে এবং এর থেকে মুক্ত হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। সকলে তার প্রশংসা করুক এটা সে কামনা করে এবং সংশোধনের জন্য কেউ তার দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে কিছু বললে সে তা মোটেই সহ্য করতে পারে না। উপরন্তু যারা তার দোষ-ত্রুটির কথা বলে তাদের প্রতি সে খারাপ ধারণা পোষণ করে ও রাগান্বিত হয়। সংগঠনের অগ্রগতির জন্য নেতা ও কর্মীদের নিকট থেকে এটা গ্রহণীয় নয়।

নেতা ও কমীদের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক না থাকা : যে সমস্ত কাজ নেতা ও কর্মীদের মধ্যকার সুদৃঢ় বন্ধন নষ্ট করে দেয় সে সকল কাজ পরিহার করা সংগঠনের অগ্রগতির জন্য খুবই প্রয়োজন। নেতা সর্বদা নিজ দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন এবং কথা ও কাজের মধ্যে মিল রাখার জন্য সচেষ্ট হবেন। সাথে সাথে কর্মীদেরকেও নেতার আস্থাশীল হওয়ার জন্য অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তাহ’লে উভয়ের মাঝে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে ও সংগঠনের অগ্রগতি সাধিত হবে। কোন অবস্থাতেই তৃতীয় পক্ষ চক্রান্ত করে উভয়ের মধ্যে যেন ফাটল সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সাংগঠনিক শৃংখলা বজায় না রাখা : বিশৃংখলভাবে কাজ করার মধ্যে সংগঠনের ক্ষতি অনিবার্য। ঊর্ধ্বতন থেকে অধঃস্তন অনুরূপ অধঃস্তন থেকে ঊর্ধ্বতন সকল ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃংখলা (Chain of Command) মেনে কাজ না করলে সংগঠনের অগ্রগতি কোনভাবে সম্ভব নয়। তাই সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও কর্মীদের সর্বাবস্থায় সাংগঠনিক শৃংখলা মেনে চলা একান্ত কর্তব্য।

আত্মবিশ্বাসের অভাব ও আপোষহীন মনোভাব : সংগঠনের সকল স্তরের কর্মী ও দায়িত্বশীলদের আপোষকামী মনোভাব ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আত্মবিশ্বাসের অভাবে নিজকে যোগ্য করে গড়ে তোলা এবং নেতৃত্ব দানের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করা যায় না। দায়িত্ব সচেতনতা বা দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও যত্নবান হওয়া এবং নিজেকে বিশ্বস্ত ও আমানতদার হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। বেশী বেশী সৎ কাজ ও সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিহার করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রেখে ধৈর্যসহ হকের উপর অবিচল থেকে বাতিলের সাথে আপোষকামী মনোভাব পরিহার করে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হ’লে সংগঠনের অগ্রগতি সাধিত হবে।

দ্বিমুখী স্বভাব ও প্রতিশোধ পরায়ণতা : ‘দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় কখনো ভুলো না’- কথাটি প্রবাদ হিসাবে ব্যবহৃত হ’লেও বাস্তবতা সত্য। যারা হক ও বাতিল উভয়ের পক্ষপাতী তারা সংগঠনের অগ্রগতির পথে চরম অন্তরায়। দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী মানুষ স্বভাবতই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে থাকে। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এরা যেকোন ধরনের কাজ করতে পিছপা হয় না। সংগঠনের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে সর্বদা বড় করে দেখে। যে কারণে তারা সংগঠনের সাথে বা নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্ক রাখলেও তাদের একটা গোপন চেহারা থাকে, যা তাড়াতাড়ি প্রকাশ পায় না। তবে কোন না কোন সময় এদের দ্বিমুখী নীতি ধরা পড়ে যায়। তখন সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এদের থেকে দূরে থাকা একান্ত প্রয়োজন।

সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকা : সংগঠনপ্রিয় প্রত্যেকে সর্বদা সংগঠনের স্বার্থ তথা সংগঠনের অগ্রগতির স্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ না হ’লে সংগঠন গতিশীল হয় না। সংগঠনের মধ্যে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা সংগঠন বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকে। তারা সংগঠনকে ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রমাণাদিসহ কিছু বললে তারা তা মানতে চায় না। ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকারও করে বসে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে সংগঠনের স্বার্থ বিরোধী কাজ দেখিয়ে দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা চালায়। এরা সুবিধাবাদী। এদের থেকে সাবধান হওয়া দরকার। সংগঠনের কল্যাণকামী কর্মী যে যেকোন অবস্থাতেই সংগঠনের কোন ক্ষতি হোক এমন ধরনের কাজ করবে না।

পারস্পরিক মতবিরোধে লিপ্ত থেকে সাংগঠনিক ঐক্য বিনষ্ট করা :

পরস্পরে মতবিরোধে লিপ্ত থাকার অর্থ হ’ল নিজেদের ধ্বংস করা। সংগঠনের কাজ করার ক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার মধ্যে যেমন কল্যাণ নিহিত আছে, তেমনি পরস্পরের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলে ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। ফলে সাংগঠনিক ঐক্য বিনষ্ট হবে। সেই সাথে সুবিধাবাদীরা স্বার্থ হাছিলের সুযোগ পেয়ে যাবে। সেজন্য সাংগঠনিক অগ্রগতি ও ঐক্যের স্বার্থে প্রত্যেকের যেকোন ধরনের মতপার্থক্য থেকে দূরে থাকা উচিৎ।

ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করা : ব্যর্থতার দায় কেউ স্বীকার করতে চায় না। এটা মানুষের স্বভাব। সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সর্বদা সফলতা আশা করা ঠিক নয়। কখনো কখনো ব্যর্থতাও থাকে। একজন কর্মীর বড় সফলতা হ’ল ব্যর্থতার দায় স্বীকার করা ও এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। আর কুরআন-হাদীছ মোতাবেক পরিচালিত সংগঠনের প্রত্যেক স্তরের নেতা-কর্মীর উচিৎ সংগঠনের অগ্রগতির স্বার্থে খালেছ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করা। আর সফলতার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত করা। তাতে মনে কোন গ্লানি থাকে না বরং প্রশান্তি আসে।

সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত না মেনে হঠকারী আচরণ প্রকাশ করা : সেই প্রকৃতপক্ষে সফল কর্মী যে সংগঠনের স্বার্থে সাংগঠনিক সকল প্রকার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নেয়। এর পরিণতি এমনও হ’তে পারে যে, সে সিদ্ধান্ত না মেনে হঠকারী আচরণ করায় সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হ’লে বিনয়ের সাথে নিজ মতামত ব্যক্ত করা ভাল। মনের মধ্যে কোন কালিমা গোপন রেখে সংগঠনের ক্ষতির উদ্দেশ্যে কোন প্রকার গোপন তৎপরতা চালানো একজন নিষ্ঠাবান কর্মীর কাজ নয়। তাতে সম্মান বৃদ্ধি পায় না। উপরন্তু নিজের যিদ বা হঠকারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটালে সকলের কাছে হাস্যোস্পদ হ’তে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে চরম অপমানিত হ’তে হয়। যদিও তা সে নিজে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না।

স্রেফ সংশোধনের উদ্দেশ্য ব্যতীত সমালোচনা করা : সংশোধনের উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে ভুল-ত্রুটির সমালোচনা করায় কোন দোষ নেই। তবে তা করতে হবে সংগঠনের নিয়মানুযায়ী। না বুঝে অন্ধের মত সরল মনে যতই সঠিকভাবে কাজ করা হোক  না কেন তা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পারস্পরিক পর্যালোচনা না থাকলে ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় না। যেখানে দুর্বলতার প্রতি নযর দেয়ার কেউ থাকে না সেখানে নীরবতার কারণে গাফিলতি বা অক্ষমতা সব ধরনের দুর্বলতার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পারস্পরিক পর্যালোচনার মাধ্যমে যথাসময়ে দোষ-ত্রুটি উৎঘাটন করা সম্ভব হয় এবং সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে সমালোচনার উদ্দেশ্য দোষ বের করা নয়; বরং আন্তরিকভাবে সংশোধন চাওয়া। এক্ষেত্রে পর্যালোচনাকারীকে যথার্থ সমালোচনার পদ্ধতি মেনে আলোচনা করা। কারণ একজন দোষ অন্বেষণকারীর খারাপ নিয়তে অসময়োচিত ও বাজে সমালোচনা সংগঠনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়। প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে এ ধরনের কর্মকান্ড পরিহার করা একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য।

আমানতদার না হওয়া : আমানতের খেয়ানত করা মুনাফিকের লক্ষণ। চাই তা অর্থের হোক বা কথা ও কাজের হোক। সকল প্রকার আমানত যথাযথভাবে রক্ষা করা প্রত্যেক নেতা-কর্মীর পবিত্র দায়িত্ব। আমানত রক্ষার ব্যাপারে রাসূল বলেন, لاَ إِيْمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ ‘যার আমানাত নেই তার ঈমান নেই’।[11] তিনি আরো বলেন,أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنْ ائْتَمَنَكَ  وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ.‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তাকে সময় মত আমানত বুঝিয়ে দাও। আর যে তোমার খিয়ানত করে তার খিয়ানত করো না’।[12]

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কোন মহৎ লক্ষ্য অর্জনে সংগঠন প্রতিষ্ঠার চেয়ে সংগঠনকে লক্ষ্য অর্জনে গতিশীল করাই মূল কাজ। যেমন স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা লাভ করা হয় তা টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন। ঠিক তেমনি একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা সহজসাধ্য হ’লেও সংগঠনকে স্বীয় লক্ষ্যে চলমান রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হ’তে হ’লে সংগঠনের সকল পর্যায়ের কর্মী ও দায়িত্বশীলকে খালেছ অন্তরে কঠিনভাবে শপথ করতে হবে এবং দো‘আ করতে হবে যে, হে আল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকটি কাজ যেন স্রেফ তোমার সন্তুষ্টির জন্য হয় এবং আমাদের কোন কাজ যেন সংগঠনের ক্ষতির কারণ না হয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন-আমীন!



[1]. বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯

[2]. বুখারী হা/৭১৪৯; মুসলিম হা/১৭৩৩; মিশকাত হা/৩৬৮৩

[3]. বুখারী হা/৬৬২২; মুসলিম হা/১৬৫২; মিশকাত হা/৩৬৮০

[4]. বুখারী হা/২৯৫৭; মুসলিম হা/১৮৩৫; মিশকাত হা/৩৬৬১

[5]. বুখারী হা/৭১৪৪; মুসলিম হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/৩৬৬৪

[6]. বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৬৫

[7]. শারহুস সুন্নাহ; মিশকাত হা/৩৬৯৬

[8]. মুসলিম হা/১৮২৮; মিশকাত হা/৩৬৮৯

[9]. শারহুস সুন্নাহ ১/৮৪৯ পৃঃ

[10]. মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৭

[11]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় সনদ হাসান।

[12]. তিরমিযী, আবূদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৯৩৪, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায় হাদীছ ছহীহ।





বিষয়সমূহ: ছিয়াম-রামাযান
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (৭ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামের কতিপয় সামাজিক বিধান - মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ
পুলছিরাত : আখেরাতের এক ভীতিকর মনযিল (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
শারঈ ঝাড়-ফুঁক : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
কুরআন নিয়ে চিন্তা করব কিভাবে? - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আলেমের গুরুত্ব ও মর্যাদা - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-এর সাথে একটি শিক্ষণীয় বিতর্ক - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.