পার্থিব
জীবনে আমরা যেকোন কাজই করি, তা জেনে বুঝে, যাচাই-বাছাই করে সম্পাদন করি।
একজন পাগল মানুষকেও যদি জ্বলন্ত আগুনে ঝাপ দিতে বলা হয়, তাহ’লে সেও আগুনে
ঝাপিয়ে পড়বে না। কারণ আগুনে পড়লে পুড়ে যাবে, মরে যাবে, এ জ্ঞান তার আছে।
সুতরাং দুনিয়াবী জীবনে মানুষ যেহেতু যাচাই-বাছাই করে কাজ করে, সেহেতু
পরকালীন জীবনে, অনন্তকাল যেখানে থাকতে হবে, যে জীবনের কোন শেষ নেই, সে
জীবনের পাথেয় তথা নেকী অর্জন করতে হ’লে, যাচাই-বাছাই করে আমল করা অতীব
যরূরী।
মহান আল্লাহ বলেন, يَا
أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ
فَتَبَيَّنُوْا أَنْ تُصِيْبُوْا قَوْماً بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلَى
مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ- ‘হে
মুমিনগণ! যদি ফাসেক বা পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন খবর আনয়ন করে, তোমরা তা
পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না
কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (হুজুরাত ৬)।
আল্লাহ
তা‘আলা সাধারণ খবরের ব্যাপারে যেহেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে
বলেছেন, যাতে অজ্ঞতাবশত: কোন কাজ করে অবশেষে লজ্জিত হ’তে না হয়। সুতরাং যে
আমলের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, আল্লাহ্র রহমত, সন্তুষ্টি ও
জান্নাত লাভ করবে সেই আমল অবশ্যই যাচাই সাপেক্ষে হওয়া আবশ্যক। অন্যথা
রাসূলের সুন্নাত পরিপন্থী আমলের কারণে মুক্তির পরিবর্তে বন্দীত্ব এবং
জান্নাতের বদলে জাহান্নামই জুটবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা সুন্নাত
বিরোধী আমল ইবাদত বলে গণ্য হয় না, সেটা হয় বিদ‘আত। আর বিদ‘আতের পরিণতি
জাহান্নাম।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘মূসা (আঃ)-এর উম্মত ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩
দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস
করলেন, সে জান্নাতী দল কোন্টি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি ও আমার
ছাহাবীগণ যে মত ও পথের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, সেই মত ও পথের উপর যারা
প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারাই জান্নাতী দল’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭১)।
উপরোক্ত
হাদীছ মতে দল যেহেতু অনেক হবে, যেহেতু সবদলের আহবান, ঈমান, আমল, আক্বীদা
কখনই এক হ’তে পারে না। বরং তা হবে ভিন্ন ভিন্ন। অতএব খাঁটি ইসলাম মানতে
চাইলে সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।
আমাদের
দেশে একদল মুসলিম আছেন, যাদের দাবী হ’ল সূদ-ঘুষ, মদ, জুয়াতে দেশ ভরে গেছে,
তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই, আর ওরা এসেছে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ডালা
নিয়ে। ঐসব ছহীহ হাদীছ রেখে শুধু কুরআন মান। দেশে কুরআনের রাজ কায়েম হ’লে সব
ঠিক হয়ে যাবে। তাই তারা তাদের কর্মসূচীর নাম দিয়েছে ‘ইক্বামতে দ্বীন’। আর
দ্বীন প্রচারের অনুষ্ঠানের নামকরণ করে থাকেন ‘তাফসীর মাহফীল’। অথচ ঐ তাফসীর
মাহফীলে শতকরা ৮০ ভাগ মিথ্যা-বানোয়াট, মনগড়া কথা বলা হয়।
দেশে
আর একটি দাওয়াতী দল আছে, তাদের নিকট কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কথা বলাই
মুশকিল। কারণ মুরুববীদের সাথে নাকি আদবের সাথে কথা বলতে হয়। তাদের দাওয়াত
যাচাই-বাছাই না করে গ্রহণ করলে কোন কথা নেই। কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিয়ে সঠিকটা
পেশ করলেই আদবের প্রশ্ন উঠে। তখন তারা রেগে গিয়ে বলেন, রাখুন আপনার
কুরআন-হাদীছ! অত যাচাই-বাছাই করতে গেলে শেষে কম্বলের খোঁজই থাকবে না।
অর্থাৎ কম্বলের পশম বাছাই করতে গেলে শেষে কম্বল থাকবে না। ইসলামের প্রথম ও
প্রধান ইবাদত ছালাত, সেটা যাচাই-বাছাই করে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত পেশ করলে
তারা বলেন, কত মানুষ যে ছালাতই পড়ে না? তার খোঁজ-খবর নেই, আপনি আসছেন
রাসূলের ছালাত শিখাতে? যে যেমনভাবে পারে পড়ুক না, এতে কিছু আসে যায় না।
শুধু কুরআন-হাদীছ মানলেই চলবে না।
আর
একদল আছেন, যাদের দাবী হ’ল, কাগজে লেখা কুরআন-হাদীছ নাকি সরাসরি মানা যাবে
না। কারণ এগুলো মানুষের হাতে লেখা; এতে নাকি যথেষ্ট ভুল-ভ্রান্তির অবকাশ
রয়েছে। এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে নাকি এ রকম সংকলিত কুরআন-হাদীছের কিতাব
ছিল না। মোটকথা তারা তাদের অনুসারীদের বুঝিয়ে থাকেন যে, কুরআনের আয়াতগুলো
সরাসরি আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কলবে নাযিল হয়েছে। তিনি তাঁর
কলব থেকে ছাহাবীদের ফয়েয দিয়েছেন আর সেজন্য ছাহাবীরা সোনার মানুষে পরিণত
হয়েছিলেন। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকায় তারা তাদের ভক্ত মুরীদদের রূহানী
ফয়েয দ্বারা আলোকিত করে চলেছেন। ফলে তাদের মুরীদদের ছালাত না পড়লেও চলে।
তাদের রূহানী শিক্ষা নাকি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মক্তব-মাদরাসায়
পাওয়া যাবে না। তাই তারা তাদের খানকা, মাযার ও দরগা সমূহকে রূহানী শিক্ষা
কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে। মূলতঃ ঐসব জায়গায় আর কিছু না হ’লেও গাজা-কলকে টানা,
মিথ্যা বলা, অশ্লীলতা ও পীরের পায়ে সিজদা করা ইত্যাদি কবীরা গোনাহ ও শিরকী
কাজ পুরো মাত্রায় শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ ঐসব মতের লোকেরা কেউই সঠিক বিষয়টি
যাচাই-বাছাইয়ের ধার ধারে না।
দুনিয়ার
জীবনে বসবাসের প্রয়োজনে এক শতক জমি ক্রয় করতে গিয়ে আগে আমরা ভালভাবে যাচাই
করি, জমির দলীলপত্র ঠিক আছে কি-না? জমির দাগ নম্বর, খাজনা- খতিয়ান সব
ঠিকঠাক আছে কি-না। মোটকথা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে জমি খরিদ করা হয়। কিন্তু
সামান্য মূল্যের জমির চাইতে লক্ষ-কোটি, এমনকি যে আমলের মূল্য নির্ধারণ করা
মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, সে মহামূল্যবান আমলের বেলায় আমাদের গুরুত্ব থাকবে
না কেন? বাপ-দাদা, ইমাম, আলেম, মুরুববী যে যেভাবে করেছে আমরা তারই অনুসরণ
করছি। প্রশ্ন করলে জবাব আসে, আগের লোকেরা কি সবাই ভুলের উপর ছিল?
বন্ধুগণ!
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাদীছবিদ ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ছহীহ
মুসলিমে রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছগুলোকে লিপিবদ্ধ করার পূর্বে কিতাবের
মুকাদ্দমায় পবিত্র কুরআনের সূরা হুজুরাতের ৬নং আয়াত পেশ করেছেন সত্য-মিথ্যা
নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসাবে। শুধু তাই নয়, ইমাম মুসলিম মহান আল্লাহ্র নির্দেশ
মোতাবেক এবং তাঁর ওস্তায ইমাম বুখারীর নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র রাসূল
(ছাঃ)-এর কথাগুলোকে যাচাই-বাছাই করে তারপর ছহীহ মুসলিম গ্রন্থে সন্নিবেশিত
করেছেন। এ মহৎ কাজের জন্য আল্লাহ তাঁকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। কিন্তু
আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, আমরা সত্যপন্থীগণের অনুসরণ না করে নিজেদের মুসলিম
দাবী করছি। ধিক আমাদের মুসলমানিত্বে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীতে যত
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী বা
শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই-বাছাইয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। ভাল-মন্দ নির্ণয়ের
জন্যই এই পরীক্ষার ব্যবস্থা। অথচ আখেরাতের ভাল ফসল সৎ আমল পরীক্ষা-নিরীক্ষা
না করেই তা সম্পাদন করতে হবে, এটাও কি হয়? পৃথিবীর অন্য দেশের মুসলিমদের
বেলায় না হ’লেও আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের বেলায় তাই হয়।
তিন
বন্ধু বাজারের গেছেন বাজার করতে। একজনের নিকট টাকা নেই, হয়তো বাকীতে ক্রয়
করবে। আর একজন নগদ টাকা পকেটে নিয়ে গেছেন। অন্য জন জাল টাকা নিয়ে গেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নগদ টাকাওয়ালা টাটকা জিনিস অবশ্যই ক্রয় করবে। যার টাকা
নেই সে বাকীতে পেলে প্রয়োজনীয় দ্রব্য খরিদ করবে, না পেলে খালি হাতে বাড়ি
ফিরে যাবে। কিন্তু যার নিকট জাল টাকা রয়েছে, তিনি ক্রয় করতে গিয়ে যদি ধরা
পড়েন, তাহ’লে ক্রয় করা তো দূরের কথা জেলখানার ভাত জুটবে, এতে সন্দেহ নেই।
এখন তিন বন্ধুর বাজার কি একই রকম হবে? কখনই না। আখেরাতের বাজারে এমন অবস্থা
কি আমাদের হ’তে পারে না? অবশ্যই পারে। তাহ’লে আসুন না, সবাই আমাদের
আমলগুলো কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে যাচাই-বাছাই করে নেই।
ছোট
বেলায় মুরুববীদের নিকট থেকে বিভিন্ন রকম গল্প শুনতাম, যা আজও মনে আছে। এক
গৃহস্থ কয়েক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছে। আগের দিনে আউস ধানের ক্ষেত নিড়ানী
দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। যাহোক গৃহস্থের চোখে ঘুম নেই, কিভাবে
এতগুলো জমি নিড়ানী দিবে? ভোর হ’লেই বেরিয়ে যায় ক্ষেত দেখতে। প্রতিদিন নিজে
এবং দু’একজন কৃষাণ নিয়ে কিছু জমি ইতিমধ্যে নিড়ানী দিয়েছে। কিন্তু বাড়ির
পাশে এক বিঘা জমিতে যে ঘাস জন্মেছে, বিশ-পঁচিশটা কৃষাণ দিয়েও তা নিড়ানী
দেওয়া সম্ভব নয়? এ নিয়ে তার ভীষণ চিন্তা। ফলে সকাল-বিকাল তিনি ঐ জমিতে যান,
আর দেখেন ঘাসের পরিমাণ এত বেশী যে জমিতে ধান প্রায় দেখাই যায় না। ইতিমধ্যে
সারস পাখি ঐ জমিতে বাসা বেঁধেছে। পাখির ধারণা যে, এই ক্ষেতের মালিক হয়তো
আর ক্ষেতে কাজ করতে আসবে না। একদিন যায়, দুইদিন যায়, এক সময় পাখি তার বাসায়
ডিম পাড়ে। একদিন ভোর বেলা গৃহস্থ গিয়ে ঘাস ও ফসল দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েই
ফেলল যে, আগামী কাল থেকে এ জমিতে সে নিড়ানীর কাজ করবে। এদিকে পাখি গৃহস্থের
মনোভাব বুঝতে পেরে ভাবল হায়! আমার ডিমগুলোর কি উপায় হবে? তাই মনে মনে
বুদ্ধি আটলো। পাখিটি উড়তে উড়তে গৃহস্থের মাথার উপরে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি
করছে আর বলছে, ‘নিড়ানী দিলেও ক্ষেত, নিড়ানী না দিলেও ক্ষেত’। গৃহস্থ পাখির
মুখে বারবার এ বুলি শুনে বোকার মত ভাবল, পাখি যখন বলছে তখন এ জমিটা আপাতত
থাক। অন্য জমিগুলো নিড়ানী শেষে সময় পেলে পরে দেখা যাবে।
এভাবে
প্রায় পঁচিশ-ছাবিবশ দিন কেটে গেল। ওদিকে চালাক পাখি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা
ফুটিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় কেটে পড়েছে। তারপর গৃহস্থ অন্য জমির কাজ শেষে ঐ
জমি নিড়ানী দিতে এলো। কিন্তু জমিতে যে ঘাস হয়েছে তা আর নিড়ানী দেয়া সম্ভব
হ’ল না। কারণ ঘাসের মাঝে ধান হারিয়ে গেছে। যে একটু আধটু আছে তাতে ফসল হওয়ার
আশা নেই। গৃহস্থ মনে মনে চিন্তা করছিল, পাখির বুলি শুনে কি ভুলই না হয়ে
গেল। সময় থাকতে যদি ক্ষেতে নিড়ানী দিতাম তাহ’লে কিছু ফসল পাওয়া যেত। আফসোস!
ওদিকে চালাক পাখি গৃহস্থকে দেখে দূর থেকে এসে তার মাথার উপর উড়ে উড়ে বলছে,
‘নিড়ানী দিলে ক্ষেত, না দিলে ঘাস’, ‘নিড়ানী দিলে ক্ষেত, না দিলে ঘাস।
সম্মানিত
পাঠকগণ! গল্পটিতে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যারা বলেন যে, অতসব
যাচাই-বাছাই করতে গেলে ইসলাম চলবে না, বেশী বাছাই করতে গেলে শেষে কম্বলের
পশমও থাকবে না, এরকম আক্বীদা সম্পন্ন ভাইদের বলতে চাই! ক্বিয়ামতের মাঠের
ফসল, অথচ বিনা যাচাই-বাছাইয়ে আমল করবেন? আবার যারা ঠাট্টা-বিদ্রুপের সুরে
বলেন, কিসের আবার ছহীহ হাদীছ? হাদীছ আবার যঈফ হয় নাকি? হাদীছ তো হাদীছই,
তাদেরকে আমরা বলব, ছহীহ হাদীছের দুশমনদের তৈরী করা লক্ষ লক্ষ জাল হাদীছগুলো
সবই কি হাদীছ? আর ঐ জাল হাদীছগুলো মেনে নিয়ে যদি আমল করা হয়, তবে কি
আমাদের অবস্থা ঐ বোকা গৃহস্থের মত হবে না? অতএব কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক
‘আমলে ছালেহ’ না করলে ভেজাল আমলে জাহান্নামে যেতে হবে।
মানব
সমাজে আর একটি স্বভাব হচ্ছে জন্মগত দিক থেকে মানুষ বাপ-দাদার অনুকরণ
প্রিয়। তারা দলীল-প্রমাণের পরিবর্তে বাপ-দাদা ও পূর্বসূরিদের অনুসরণে দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ। যদিও ঐসব পূর্বসূরিরা ভুল করে গিয়ে থাকেন। কারণ বাপ-দাদার প্রতি
বিশ্বাস তাদের অগাধ। তাই বলতে হয় ‘বিশ্বাস যেখানে অন্ধ, দলীল সেখানে অচল’।
হাদীছ
যঈফ হয়েছে তো কি হয়েছে? ওটা কি হাদীছ নয়? বড় বড় ফিক্বাহবিদ আলেমগণ রায়
দিয়েছে দশটি যঈফ হাদীছ কোন বিষয়ের প্রতি রায় দিলে বিষয়টি ছহীহ হয়। যঈফ
হাদীছ যদি গ্রহণযোগ্য না হবে তাহ’লে ওগুলো হাদীছের কিতাবে লেখা হ’ল কেন?
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সন্দেহ থেকে বেঁচে থাক’ (হুজুরাত ১২)।
যঈফ হাদীছ অর্থ সন্দেহ যুক্ত হাদীছ, যঈফ অর্থ দুর্বল। যঈফ হাদীছ
যাচাই-বাছাইয়ের পর অনেক সময় তা মিথ্যা বা জাল হিসাবেও প্রমাণিত হয়। যারা
দাবী করেন যে, দশটি যঈফ হাদীছ কোন বিষয়ের প্রতি রায় দিলে তা ছহীহ হয়ে যায়,
তাদের নিকট আমার প্রশ্ন- দশটি কানা চোখ একত্রিত করলে কি একটি ভাল চোখ হয়ে
যাবে?
ইসলাম
কি এতই জোড়াতালি দেওয়া ধর্ম যে, ভাঙ্গা-মচকা, খোড়া-ভঙ্গুর জোড়াতালি দিয়ে
ফৎওয়া দান করতে হবে? কুরআন ও ছহীহ হাদীছের রায় কি এতই অপ্রতুল? মূলতঃ ওদের
অন্তরে মরিচা পড়েছে, ওরা সত্য গ্রহণ করতে রাযী নয়। তাই ওরা নানা অযুহাত পেশ
করে সত্য এড়িয়ে যেতে চায়। এটাও ঠিক, ওটাও ঠিক, অর্থাৎ কুরআন ও ছহীহ হাদীছ
যারা মানে তারাও হক পথে আছে, আর যারা যঈফ ও জাল হাদীছের উপর আমল করেন তারাও
ঠিক। এ নিয়ে ফেৎনা-ফাসাদ করা ঠিক নয়। যেখানে যা চলছে, সেখানে তাই চলতে
দাও। বেশী বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। এ যে কত বড় গোমরাহী তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে
না। মহান আল্লাহ এই অন্ধ অনুসারীদের অন্ধ বিশ্বাস কিভাবে পরিবর্তন করবেন
তিনিই ভাল জানেন। অতএব আসুন! আমরা আমাদের আখেরাতের সম্বল, পাথেয়গুলো কুরআন ও
ছহীহ হাদীছের আলোকে যাচাই-বাছাই করে সম্মুখপানে এগিয়ে যাই, নইলে ক্ষতি
আমাদের অনিবার্য। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন- আমীন!