মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে সম্পদ দিয়েছেন। আর সেই সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহর রেযামন্দী ও নৈকট্য লাভ করা যায়, হাছিল করা যায় অশেষ ছওয়াব। ছাদাকার অধিক হকদার কারা, এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছ।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) মিম্বরে বসলেন, আমরাও তাঁর আশপাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তাহ’ল দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হবে। জনৈক ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নবী করীম (ছাঃ) নীরব থাকলেন। প্রশ্নকারীকে বলা হ’ল, তোমার কী হয়েছে? তুমি নবী  করীম (ছাঃ)-এর সাথে কথা বলছ, কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর অহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাঁর ঘাম মুছলেন এবং বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত (ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে এবং পুনরায় চলে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হ’ল আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নবী করীম (ছাঃ) যেরূপ বলেছেন। আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। ক্বিয়ামত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে’ (বুখারী হা/১৪৬৫)।

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, মদীনার আনছারগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সর্বাধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হ’ল ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে’ (আলে ইমরান ৩/৯২)। তখন আবূ তালহা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে’ (আলে ইমরান ৩/৯২)। আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে ছাদাক্বাহ করা হ’ল, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চয়রূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমাকে ধন্যবাদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপনজনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাই করব। অতঃপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন’ (বুখারী হা/১৪৬১, ২৩১৮, ২৭৫২, ২৭৫৮, ২৭৬৯, ৪৫৫৪, ৪৫৫৫, ৫৬১১; মুসলিম হা/৯৯৮; আহমাদ হা/১২৪৪১)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিৎরের দিনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ঈদগাহে গেলেন এবং ছালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের ছাদাক্বাহ করার নির্দেশ দিলেন। আর বললেন, লোক সকল! তোমরা ছাদাক্বাহ করবে। অতঃপর মহিলাগণের নিকটে গিয়ে বললেন, মহিলাগণ! তোমরা ছাদাক্বাহ কর। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এর কারণ কী? তিনি বললেন, তোমরা বেশি অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে আমি দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন যায়নাব? বলা হ’ল, ইবনু মাসঊদের স্ত্রী। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেয়া হ’ল। তিনি বললেন, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! আজ আপনি ছাদাক্বাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা ছাদাক্বাহ করার ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) মনে করেন, আমার এ ছাদাক্বায় তাঁর ও তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ ছাদাক্বার অধিক হাকদার’ (বুখারী হা/১৪৬২, ৩০৪; মুসলিম হা/৯৮২; আহমাদ ৭২৯৯)

পরিশেষে বলব, সম্পদশালীদেরকে বেশী বেশী দান-ছাদাক্বাহ করা উচিত। আর এক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়দের প্রাধান্য দিতে হবে। তাহ’লে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও দান এতদুভয়ের ছওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে উপরোক্ত হাদীছের উপরে যথাযথ আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন!






তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হাদীছের উপরে আবূ বকর (রাঃ)-এর দৃঢ়তা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আলী (রাঃ) ও খারেজীদের মধ্যকার ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (রাঃ)-এর উটের ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হোদায়বিয়ায় রাসূল (ছাঃ)-এর মু‘জেযা এবং ছাহাবীগণের অতুলনীয় বীরত্ব - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
সৎ লোকের দো‘আ - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
ইয়াহ্য়াহ বিন যাকারিয়া (আঃ) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পাঁচ উপদেশ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
সৌন্দর্যই মর্যাদার মাপকাঠি নয় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
অন্যের সাথে মন্দ আচরণের প্রতিবিধান
হিংসা-বিদ্বেষ না করার ফল জান্নাত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
লি‘আনের বিধান প্রবর্তনের ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আসমা বিনতু আবী বকর (রাঃ)-এর সীমাহীন দৃঢ়তা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আরও
আরও
.