হাদীছের গল্প

 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্ন সফরে ও বাড়ীতে থাকাবস্থায় ছাহাবায়ে কেরামের মাঝে খাদ্য-পানীয় বণ্টন করতেন। সেসময় তিনি সবার পরেই খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করতেন। এখান থেকে উম্মতের জন্য শিক্ষা যে, বণ্টনকারী পরেই গ্রহণ করবে। এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছ।

আবূ কাতাদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ভাষণে আমাদেরকে বললেন, তোমরা চলতে থাক অপরাহ্নে ও রাত্রিতে, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে পানির নিকট পৌঁছে যাবে। তারপর লোকেরা এমনভাবে পথ চলতে লাগল যে, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিল না। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও এভাবে চলছিলেন। এমনকি অর্ধরাত হয়ে গেল, আমি তাঁর পাশেই ছিলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তন্দ্রা পেল। তিনি সাওয়ারীর উপর থেকে চলতে লাগলেন। আমি তাঁর কাছে এসে তাকে না জাগিয়ে তাঁকে ঠেস দিলাম। ফলে তিনি সাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। তিনি বলেন, তারপর চলতে থাকলেন। অবশেষে রাতের অধিকাংশ অতিক্রান্ত হ’লে তিনি সাওয়ারীর উপর আবার একদিকে ঢুলতে লাগলেন। আমি তাঁকে না জাগিয়ে আবার ঠেস দিলাম। ফলে তিনি সাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। তারপর আবার চলতে লাগলেন। যখন সাহরীর শেষ সময় এলো তখন তিনি পূর্বের দু’বারের চাইতে এত অধিক ঢুলে পড়লেন যে, প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হ’লেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাকে আবার ঠেস দিলাম। তিনি মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলেন, এই কে? আমি বললাম, আবূ কাতাদা। তিনি বললেন, তুমি কখন থেকে এভাবে আমার সাথে চলেছ? আমি বললাম, সারা রাত ধরে। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করুন, যেহেতু তুমি আল্লাহর নবীকে হেফাযত করেছ। অতঃপর বললেন, তুমি কি বুঝতে পারছ যে, আমরা লোকদের থেকে আড়ালে পড়ে গেছি? আবার বললেন, কাউকে কি দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, এই একজন আরোহী। আবার বললাম, এই আরেকজন আরোহী। এরূপ আমরা সাতজন আরোহী একত্রিত হ’লাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাস্তা থেকে একটু সরে গেলেন এবং (বিশ্রামের জন্য) মাথা রাখলেন। তারপর বললেন, তোমরা আমাদের ছালাতের সময়ের লক্ষ্য রাখবে। যারা জাগলেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন। রোদ তার পিঠ স্পর্শ করছিল।

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা সন্ত্রস্ত অবস্থায় উঠলাম। তারপর তিনি বললেন, তোমরা আরোহন কর। আমরা আরোহন করলাম এবং চলতে লাগলাম। এমনকি সূর্য যখন উপরে উঠল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং ওযূর পানির পাত্র চাইলেন। তা আমার কাছে ছিল এবং তাতে অল্প পানি ছিল। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই পানি থেকে ভালভাবে ওযূ করলেন। তিনি বলেন, তাতে কিছু পানি অবশিষ্ট রইল। তারপর আবূ কাতাদা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি আমাদের জন্য তোমার এ ওযূর  পাত্রটি হেফাযতে রাখ। শীগ্রই তা থেকে বিরাট ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। তারপর বিলাল (রাঃ) ছালাতের আযান দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর ফজরের দু’রাক‘আত (ফরয) আদায় করলেন। অন্যান্য দিনে যেভাবে আদায় করেন, আজকেও সেভাবেই আদায় করলেন।

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আমরা সওয়ার হয়ে চললাম। তিনি বলেন, আমরা একে অপরকে চুপে চুপে বলতে লাগলাম, আমরা ছালাতের ব্যাপারে যে ত্রুটি করেছি, তার কাফফারা কি হবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার মধ্যে কি তোমাদের জন্য আদর্শ নেই? তারপর বললেন, ঘুমের ভিতর কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তার, যে ছালাত আদায় করে না, এমনকি অন্য ছালাতের সময় এসে পড়ে। কারো যদি এরূপ হয়, তবে তার উচিত জাগ্রত হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেয়া। তারপর যখন দ্বিতীয় দিন আসবে, তখন যেন ঠিক সময় মত সেই ছালাত আদায় করে। তারপর বললেন, লোকেরা কি করছে বলে তোমরা মনে কর? অতঃপর নিজেই বললেন, ‘ভোর হ’লে লোকেরা তাদের নবীকে দেখতে পেল না। আবূবকর ও ওমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পিছনেই রয়েছেন। তিনি তোমাদের পিছনে ফেলে যেতে পারেন না। আর লোকেরা বলল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিশ্চয়ই তোমাদের সামনে রয়েছেন। তারা আবূবকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এর কথা মেনে নিলেই ঠিক করত’।

আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা দুপুরের দিকে তাদের কাছে পৌঁছলাম। তখন সবকিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। লোকেরা বলতে লাগল, হে আল্লাহর রাসূল! পিপাসায় আমরা মরে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-বললেন, তোমরা ধ্বংস হবে না। তারপর বললেন, আমার পেয়ালাটি আন। তিনি বলেন, তারপর সেই ওযূর পানির পাত্রটি তলব করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা থেকে পানি ঢাললেন। আর আবূ কাতাদা (রাঃ) লোকদের পান করাতে লাগলেন। লোকেরা পাত্রের পানি দেখে এতই ভিড় করল যে, সকলেই একে ঘিরে বসল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা তোমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখ। তোমরা সকলেই তৃপ্তি লাভ করবে। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারা তাই করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পানি ঢালতে লাগলেন। আর আমি তাদের পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ছাড়া আর কেউ বাদ রইল না। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পানি ঢেলে আমাকে বললেন, তুমি পান কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পান করার আগে আমি পান করব না। তিনি বললেন, যে লোকদের পানি পান করায় সে সকলের শেষেই পান করে। তিনি বলেন, আমি পানি পান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পান করলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, লোকেরা পানি পান করল আনন্দ ও তৃপ্তি সহকারে’ (মুসলিম হা/৬৮১; মিশকাত হা/৫৯১১)







মুমিনদের শাফা‘আত - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
জান্নাত-জাহান্নামের সৃষ্টি ও জাহান্নামের কতিপয় শাস্তি - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হিংসা-বিদ্বেষ না করার ফল জান্নাত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ভালোর বিনিময়ে ভালো দেওয়া উচিত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ইয়াহ্য়াহ বিন যাকারিয়া (আঃ) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পাঁচ উপদেশ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
দাজ্জাল ও ইয়াজূজ-মাজূজের নৃশংসতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
হোদায়বিয়ায় রাসূল (ছাঃ)-এর মু‘জেযা এবং ছাহাবীগণের অতুলনীয় বীরত্ব - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক স্বপ্নে দেখা একদল মানুষের বিবরণ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মুসলমানদের নাহাওয়ান্দ বিজয় - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
যুলুম হ’ল অন্ধকার - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
শয়তান ও জিনদের বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
মূসা (আঃ)-এর লজ্জাশীলতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আরও
আরও
.