নওদাপাড়া, রাজশাহী ৪ঠা নভেম্বর শুক্রবার : অদ্য সকাল সাড়ে ৮-টায় রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী কমপেলক্স-এর পূর্ব পার্শ্বস্থ মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মাসিক আত-তাহরীক-এর নবীন ও প্রবীণ লেখকদের সমন্বয়ে এক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আত-তাহরীক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মন্ডলীর মাননীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যশোর সরকারী এম.এম. কলেজের  প্রফেসর (অবঃ) মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজাশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর (অবঃ) শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রূপতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. একিউএম বযলুর রশীদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অবঃ) ড. মুহাম্মাদ ইসমাঈল হোসাইন (গাযীপুর), অবসরপ্রাপ্ত বিসিএস (সমবায়) কর্মকর্তা ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধান (গাইবান্ধা), রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (অবঃ) মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ ও মেহেরপুরের গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মাওলানা নূরুল ইসলাম প্রমুখ। 

সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন, মাসিক আত-তাহরীক-এর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। অতঃপর লেখকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন খুলনার পাইকগাছা কলেজের প্রভাষক শেখ মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাসিক আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম (রাজশাহী), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া রাজশাহীর শিক্ষক শামসুল আলম (যশোর), বেলটিয়া কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিছ ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর), হরিণাকুন্ডু সরকারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ) প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), ‘সোনামণি’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় পরিচালক আব্দুল হালীম (রাজশাহী)। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. মুহাম্মাদ আবু তাহের (গাইবান্ধা), প্রবীণ লেখক জনাব রফীক আহমাদ (দিনাজপুর), আমীরুল ইসলাম মাষ্টার (রাজশাহী) ও যহূর বিন ওছমান (দিনাজপুর)।

অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া রাজশাহীর ছানাবিয়া ২য় বর্ষের ছাত্র হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির এবং ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করে মারকাযের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র হাফেয আব্দুল হাসীব। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন হাদীছ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম।

উল্লেখ্য যে, আত-তাহরীকের দীর্ঘ বিশ বছরের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম ‘লেখক সম্মেলন’। ইতিপূর্বে ২০০৫ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার লেখক সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সার্বিক প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তার দু’দিন পূর্বে তৎকালীন জোট সরকার কর্তৃক অন্যায়ভাবে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতসহ ‘আন্দোলন’-এর নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের কারণে সেবারের সকল প্রস্ত্ততি পন্ড হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাংখিত এই সম্মেলনটি বাস্তবায়িত হ’ল। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। সম্মেলনটি যেমন ছিল প্রাণবন্ত, তেমনি ছিল আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। এতে লেখকগণ দারুণভাবে উজ্জীবিত হন এবং পরস্পরে পরিচিত হ’তে পেরে আনন্দিত হন। উল্লেখ্য, সম্মেলনে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যাদের অন্তত তিনটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে তাদেরকেই কেবল আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত লেখক ও মাননীয় অতিথিবৃন্দকে একটি করে ব্যাগ ও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।

সভাপতির ভাষণ :

সম্মেলনে সভাপতির লিখিত ভাষণে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, মানুষ প্রথমে তার মায়ের ভাষায় কথা বলা শেখে। এটি তার স্বভাবগত ক্ষমতা, যা আল্লাহ তাকে দান করেন। আর এটাই হ’ল মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টজীবের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য। আল্লাহ বলেন,الرَّحْمَنُ- عَلَّمَ الْقُرْآنَ- خَلَقَ الْإِنْسَانَ- عَلَّمَهُ الْبَيَانَ- ‘রহমান! যিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন’ (রহমান ৫৫/১-৪)। মানুষের স্থান-কাল পাত্রের পার্থক্যের কারণে তার ভাষার পার্থক্য হয়। তার মনের ভাব তার ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ফলে পৃথিবীর এক এক প্রান্তে এক এক ভাষার মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভাষার বৈচিত্র্য আল্লাহর এক অনন্য সৃষ্টি। যেমন তিনি বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلاَفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ- ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম হ’ল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করা এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য (আল্লাহর একক পালনকর্তা হওয়ার) নিদর্শন সমূহ নিহিত রয়েছে’ (রূম ৩০/২২)। 

বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ছয়শো কোটি মানুষ পাঁচ হাযারের অধিক ভাষায় কথা বলে। তন্মধ্যে বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এই ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি। আর হৃদয়ে উত্থিত ভাষার পরিশীলিত রূপই হ’ল সাহিত্য। অতঃপর মানুষের ভিতরকার অনুশীলিত কৃষ্টির বাহ্যিক পরিশীলিত রূপকে বলা হয় সংস্কৃতি। সাহিত্য ও সংস্কৃতি তাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সাহিত্যের বিকাশে সংস্কৃতির ভূমিকা অনন্য। বরং সংস্কৃতির বাহন হ’ল সাহিত্য। সাহিত্য হ’ল বিশ্বাসের লৈখিক ও মৌখিক প্রকাশ। কিন্তু সংস্কৃতি হ’ল মানুষের সার্বিক জীবনাচারের বাহ্যিক রূপ। সংস্কৃতি চেনা যায় মানুষের ব্যবহারে, পোষাকে ও তার সার্বিক জীবনাচারে। আর সাহিত্য মানুষের ভিতরের চিত্রটা ফুটিয়ে তোলে তার ভাষায় ও লেখায়। সংস্কৃতি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত সাথে থাকে। কিন্তু সাহিত্য তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ যুগ ধরে। এমনকি ক্বিয়ামত অবধি।

সেকারণ সাহিত্য হ’ল স্ব স্ব যুগের ও সমাজের আয়না স্বরূপ। হাযার বছর পরেও ঐ সাহিত্য পাঠ করে মানুষ সে সময়কার সমাজ ও তাদের বিশ্বাস এবং জীবনাচার সম্পর্কে জানতে পারে। সেকারণ কুরআন নাযিলের শুরুতেই পড়া ও লেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আয়াত নাযিল করা হয়। অতঃপর আল্লাহর অদৃশ্য ব্যবস্থাপনায় কুরআন ও হাদীছের সংকলন কার্য সম্পাদিত হয়। কারণ এদু’টি বস্ত্তই হ’ল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ হ’তে সৃষ্টিজগতের জন্য অনন্য উপহার। যা সরল পথের দিক নির্দেশিকা। সকল প্রকার কল্যাণের উৎস। সর্বোচ্চ সাহিত্য ও অলংকার সমৃদ্ধ অতুলনীয় ধর্মগ্রন্থ। ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা অক্ষুণ্ণ থাকবে আল্লাহর অপার অনুগ্রহে।

বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বললেও তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস ও জীবনাচার যাতে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে উদ্ভাসিত হয় এবং বিশুদ্ধ ইসলামের সরল পথে পরিচালিত হয়, সেজন্য মুসলিম উম্মাহকে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকারের চিরন্তন নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে (আলে ইমরান ৩/১১০)। আর এর মাধ্যমেই সে তার শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর সেরা ও স্থায়ী মাধ্যম হ’ল লিখিত সাহিত্য। চাই সেটা কাগজে হৌক বা বৈদ্যুতিক বাহনে হৌক। কিন্তু বৈদ্যুতিক বাহন যেমন দ্রুত সহজলভ্য, তেমনি যেকোন সময় চোখের পলকে হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় ত্রস্ত। বর্তমানের ইন্টারনেট যুগে বৈদ্যুতিক মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দ্রুত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া সহজ হয়েছে। সেই সাথে কর্মসংস্থানের বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন ভাষার মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাস জীবন যাপন করছে। কেবল বাংলাদেশেরই প্রায় এক কোটি মানুষ মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস করছে। সেখানকার কর্মস্থলে তারা বিভিন্ন আক্বীদা-বিশ্বাসের মানুষের সাথে ভাব বিনিময়ের সুযোগ পায়। এতে বিশুদ্ধ ইসলামের প্রচার ও প্রসার সহজ হয়েছে।

উক্ত লক্ষ্যে ১৯৭৯ সাল থেকেই আমরা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন?’ বই প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্য অঙ্গনে পদচারণা শুরু করি। যা আগে থেকেই চলে আসা দাওয়াতী ও সাংগঠনিক প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত হয়। পরে ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা থেকে ‘তাওহীদের ডাক’ প্রকাশের মাধ্যমে আমরা পত্রিকা জগতে পা রাখি। যা ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র মুখপত্র হিসাবে অদ্যাবধি চালু আছে। অতঃপর ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মাসিক আত-তাহরীক প্রকাশিত হয় রাজশাহী থেকে। যা তার নিয়মিত প্রকাশনার ২০ বছরে পদার্পণ করেছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ

তিনি বলেন, ‘আত-তাহরীক’ একটি বিশেষ আন্দোলনের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। যা হ’ল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জীবন গড়ার আন্দোলন। আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহীর আলোকে সমাজ সংস্কারের আন্দোলন। আর নিঃসন্দেহে এটিই হ’ল বিশ্ব মানবতার প্রকৃত মুক্তির আন্দোলন। আত-তাহরীক মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সার্বিক সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে আত-তাহরীক শুরু থেকে এ যাবৎ তার আপোষহীন ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।

এ সময় তিনি লেখার বাইরে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, আত-তাহরীক কেবল ছালাত পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, বরং জীবন পরিবর্তনের আন্দোলন। তিনি তাঁর উত্তরসূরীদের উদ্দেশ্যে অছিয়ত করে বলেন, কোন অবস্থাতেই যেন আত-তাহরীক তার যাত্রা পথে বাতিলের সঙ্গে আপোষ না করে। আত-তাহরীক সমাজ পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উত্তাল তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সাগরে তার নৌকা পরিচালনা করছে। সে তার লক্ষ্যে তীরে পৌঁছবে অথবা সাগরে ডুববে, কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হবে না। যারা ঐক্যের কথা বলেন, তারা লক্ষ্যহীন তরীর মত। তাই তাদের সঙ্গে ঐক্যের প্রশ্নই ওঠে না।

অতঃপর তিনি লিখিত ভাষেণে বলেন, আত-তাহরীক-এর এই আপোষহীন সত্য প্রকাশের সুফল দেশে ও বিদেশে সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। গতানুগতিকতা ছেড়ে জাতি এখন পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জামা‘আতবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছে। জাতীয় জীবনে সংস্কারের ঢেউ পরিলক্ষিত হচ্ছে; শহর থেকে গ্রামে, দেশে ও প্রবাসে সর্বত্র। শোনা যাচ্ছে অন্যদের মুখে, আত-তাহরীক এদেশে এক নীরব বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে’। নিঃসন্দেহে সেটি সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে, সামাজিক ও বৈষয়িক জীবনের  প্রায় সকল ক্ষেত্রে। আর সবকিছু সম্ভব হয়েছে আপনাদের মত এক ঝাঁক উদ্যমী লেখকের মাধ্যমে।

শুরুতে আত-তাহরীকের লেখক ছিল না বললেই চলে। সম্পাদককেই নামে-বেনামে বহু লেখা লিখতে হয়েছে। সেই সাথে উৎসাহ দিয়ে নবীন লেখকদের কাছে টানতে হয়েছে। তাদের লেখা আগাগোড়া সংশোধন করে তাদের নামেই লেখা ছেপে দিয়েছি। তাতে তারা উৎসাহিত হয়েছে। সত্য বলতে কি, এ ধারা কমবেশী আজও অব্যাহত রয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, এই উদার মেহনতের কারণে অনেক লেখক তৈরী হয়েছেন। যদিও মেধা ও মননের তারতম্যের কারণে সাহিত্যের মান ও অলংকারের পার্থক্য থাকবেই। কেননা এটি স্রেফ আল্লাহ প্রদত্ত। যা মানুষের অর্জিত জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। তবে যে আদর্শের অনুশীলন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আত-তাহরীক তার কলমী জিহাদ শুরু করেছিল, সে লক্ষ্য অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে এটাই সান্ত্বনা। আলহামদুলিল্লাহ। এখন ‘আত-তাহরীক’-এর পাশাপাশি চলছে ‘তাওহীদের ডাক’ ও ‘সোনামণি প্রতিভা’। যেখানে তরুণ ও কিশোর লেখক-লেখিকাদের স্থান করে দেওয়া হয়েছে। ক্রমেই তাদের লেখা সমৃদ্ধ হচ্ছে। আল্লাহ কবুল করলে এইসব লেখকরাই আগামী দিনের সমাজ বিপ্লবের নায়ক হবে ইনশাআল্লাহআত-তাহরীক তাই কেবল একটি পত্রিকা নয়। এটি অসংখ্য লেখকের সূতিকাগার। এদের মধ্যে আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে কেবল তাদেরই লেখা, যাদের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় খুলূছিয়াত থাকবে। স্রেফ নেকীর আকাংখা থাকবে। রিয়া ও শ্রুতি থাকবে না। কেননা সবকিছুর শুভ পরিণাম নির্ভর করে স্রেফ তাক্বওয়ার উপরে। লেখক- লেখিকাগণ আত-তাহরীক পরিবারের অংশ। সকলের মধ্যে আল্লাহভীরুতা বিজয়ী হৌক- এটাই কামনা করি।

তিনি বলেন, আত-তাহরীকের সংস্কার কেবল সামাজিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং সাহিত্য ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান সংস্কার সাধন করেছে। কারণ ইতিহাস সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, বাংলা ভাষার উন্নয়নে বঙ্গের প্রাচীন মুসলিম সুলতান ও সাহিত্যিকগণের অবদানই ছিল সর্বাধিক। আর যেকোন ভাষা তার জাতির চিন্তা-চেতনার প্রতিবিম্ব হিসাবে কাজ করে। তাই সঙ্গত কারণেই মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল-আখলাক সমৃদ্ধ আরবী-ফার্সী-উর্দূ শব্দাবলী এ ভাষার বুকে স্থান করে নিয়েছে এবং বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। আর এভাবে তার বানানরীতিও তৈরী হয়েছে। যেমন আরবী ‘জীম’ বুঝানোর জন্য বাংলায় ‘জ’; যাল, যা, যোয়াদ বুঝানোর জন্য ‘য’; ‘ত্বোয়া’ বুঝানোর জন্য ‘ত্ব’; বড় ক্বাফ বুঝানোর জন্য ‘ক্ব’; ‘যের’ বুঝানোর জন্য হরস্ব ইকার, ‘ইয়া’ বুঝানোর জন্য দীর্ঘ ঈকার। ফারসী ‘ড়া’ বুঝানোর জন্য বাংলায় ড় ও ঢ়; যুক্ত কা হা বুঝানোর জন্য বাংলায় ‘ক্ষ’ ইত্যাদি। কিন্তু কোলকাতা কেন্দ্রীক সাহিত্যিকরা এটা ভালভাবে নেননি। তারা সমৃদ্ধ বাংলাকে শুদ্ধ বাংলায় পরিণত করার নামে মুসলিম শব্দাবলীকে হটানোর অপচেষ্টায় মেতে ওঠেন। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হ’লে বৃটিশের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু লেখকরা বাংলা ভাষার দেহ থেকে আরবী-ফারসী শব্দাবলী ছাটাই শুরু করেন। এর প্রতিবাদে মুসলিম পুঁথিকাররা অপ্রচলিত আরবী-ফারসী শব্দাবলী আমদানী করতে থাকেন। ফলে হিন্দু-বাংলা ও মুসলিম-বাংলা পৃথক হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন ইংরেজদের একচোখা নীতির কারণে রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা অধিকার বঞ্চিত হ’তে থাকে। সেকারণ অতি দ্রুত সম্পর্কের অবনতি হ’ল। অবশেষে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হ’ল। পূর্ব পাকিস্তানের কবি-সাহিত্যিকগণ কোলকাতার দাদাদের করুণা থেকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু এদেশের একদল নামধারী মুসলিম সাহিত্যিক ভাবলেন যে, দেশ বিভক্ত হ’লেও সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভক্ত হয়নি। তারা শুদ্ধ বাংলার নামে কোলকাতা কেন্দ্রীক হিন্দু বাংলা চালু করার ব্রত গ্রহণ করলেন। ফলে অতি বাংলাপ্রীতি দেখিয়ে তারা ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবসকে পূজার দিবসে পরিণত করে ফেললেন। তাদের প্রচেষ্টায় মঙ্গল প্রদীপ, মঙ্গলঘট, প্রভাতফেরী, নগ্নপদযাত্রা বাসন্তী শাড়ী, শহীদ মিনারের নামে বেদীতে ফুল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন, রফিক-বরকতদের মূর্তি স্থাপন ও তাতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন- এসবই এখন মাতৃভাষা দিবসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী ও মুক্তধারা প্রভৃতির আড়ালে মুখ লুকিয়ে তারা সক্রিয় রয়েছেন। ফলে এইসব প্রতিষ্ঠান ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমনকি ২১শে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী গেলেও সেখানে শ্রোতা পাওয়া যায় না। কারণ এদেশের মুসলমানরা কখনোই মূর্তিপূজারী নন।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি ঢাকায় বসে যারা এপার বাংলা ওপার বাংলার সাহিত্য এক বলে চিৎকার করেন, তারা মূলতঃ এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে বিলীন করে দিতে চান। কেননা সাহিত্য একটি দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিতে পারে। যার প্রমাণ ভারত বিভক্তি। অতঃপর পাকিস্তান বিভক্তি। সেকারণ আত-তাহরীক শুরু থেকেই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে এবং যাবতীয় পৌত্তলিক শব্দাবলী পরিহার করে সাধ্যমত ইসলামী শব্দাবলী ব্যবহার করতে থাকে। যেমন জলবায়ু-র বদলে আবহাওয়া, আদাজল-এর বদলে আদাপানি, জল কামানের বদলে পানি কামান ইত্যাদি। একইভাবে ইসলামের নামে শিরক ও বিদ‘আতযুক্ত সাহিত্যের বদলে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সাহিত্য রচনা করাও আত-তাহরীকের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ফলে আত-তাহরীকে নামায-রোযার বদলে ছালাত-ছিয়াম, শোক সংবাদ-এর বদলে মৃত্যু সংবাদ লেখা হয়। বানানের ক্ষেত্রে আরবী-ফারসী বানানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হয়। ফলে আরবী বানান ‘বী’ দিয়ে লেখা হয়। ‘বি’ দিয়ে নয়। যেমনটি ‘ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন লিখছে। জানিনা তারাও কোলকাতার অনুসারীদের খপ্পরে পড়ে গেছেন কি-না। যারা আরবী হরস্ব ইকার ও দীর্ঘ ঈকারের পার্থক্য ঘুঁচিয়ে দিতে চায়।

তিনি বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে একই সাথে পৌত্তলিকতা মুক্ত এবং শিরক ও বিদ‘আত মুক্ত নির্ভেজাল ইসলামী সাহিত্যে পরিণত করাই আত-তাহরীকের প্রধান সাহিত্যিক লক্ষ্য। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এবং সাথে সাথে সর্বাধিক আহলেহাদীছ অধ্যুষিত দেশ। তাই ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে না পারলে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং আহলেহাদীছের স্বচ্ছ ইসলামী ধারা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নিঃসন্দেহে আমরা তা কখনোই চাই না। আত-তাহরীক তাই কেবল একটি পত্রিকার নাম নয়, এটি ভবিষ্যৎ সমাজবিপ্লবের প্রোজ্জ্বল ধ্রুবতারা। যা জাতিকে ঘোর অমানিশায় সর্বদা মুক্তি ও কল্যাণের পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ তিনি সমবেত লেখক-লেখিকা ও সুধীবৃন্দকে আত-তাহরীক পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানান। সেই সাথে লেখক-লেখিকা ভাই-বোনদের উপরোক্ত দিক-নির্দেশনাগুলি মেনে চলার আহবান জানান। সবশেষে তিনি হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা ভিাগ ও দারুল ইফতার সদস্যবৃন্দ এবং আত-তাহরীকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান এবং সমাজ পরিবর্তনের অভিন্ন লক্ষ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সবাইকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহবান জানান।

ইতিপূর্বে স্বাগত ভাষণে আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত লেখক সম্মেলন শুরু করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের বাংলাভাষী মুসলমানদের বিশুদ্ধ দ্বীন জানার অনন্য মুখপত্র মাসিক আত-তাহরীক দীর্ঘ ২০ বছর যাবত তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। চলতি নভেম্বর’১৬ সংখ্যা ২০তম বর্ষের ২য় সংখ্যা হিসাবে প্রকাশিত হ’ল। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমার সকল সহযাত্রীদের আমরা  আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আজকের এই সম্মেলন তথা নবীন ও প্রবীণ লেখকদের এই মিলন মেলা আত-তাহরীক-এর ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

তিনি অনুষ্ঠানের মান্যবর সভাপতি, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি বৃন্দের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন, যারা জীবনের পড়ন্ত বেলায় অনেক কষ্ট করে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করে অনুষ্ঠানের রওনক বৃদ্ধি করেছেন। অতঃপর সমবেত কলম সৈনিকদের স্বাগত জানান, যাদের আপোষহীন ক্ষুরধার লেখনী সমাজ সংস্কারে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। তিনি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এবং এর অঙ্গ সংগঠন সমূহের সকল স্তরের নেতা ও কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন, আত-তাহরীক -এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি ‘আত-তাহরীক’-এর বিভিন্ন দাতা ভাই-বোন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতিও শুকরিয়া জানান।

তিনি বলেন, ‘তাহরীক’ অর্থ আন্দোলন (Movement)। আর ‘আত-তাহরীক’ অর্থ একটি বিশেষ আন্দোলন (The Movement, That very movement)। এই আন্দোলন হচ্ছে সমাজ সংস্কারের আন্দোলন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জীবন গড়ার আন্দোলন। রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া নিষ্কলুষ ইসলামের যে আদি রূপ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে সংরক্ষিত আছে, তা মানুষের আক্বীদায় ও আমলে সুপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন। এই পথ কখনো মসৃন নয় বরং পিচিছল, কুসুমাস্তীর্ণ নয় বরং কণ্টকাকীর্ণ। এই পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে যারা দৃঢ়তার সাথে স্রেফ আখেরাতে মুক্তির আশায় এগিয়ে যাবে, তারাই সফলকাম হবে। তাদের উদ্দেশ্যেই রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী, ‘ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল অল্প কিছু মানুষের মাধ্যমে এবং অচিরেই ইসলাম তার শুরুর অবস্থায় ফিরে যাবে। অতএব সুসংবাদ সেই অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য। জিজ্ঞেস করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, লোকেরা ইসলামের যা কিছু নষ্ট করে ফেলেছে, তা যারা সংশোধন করবে’ (ছহীহাহ হা/১২৭৩)

লেখকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদেরকে কখনো ছোট মনে করবেন না। মনে রাখবেন আত-তাহরীকে প্রকাশিত একটি লেখাই হ’তে পারে আপনার আখেরাতে নাজাতের অসীলা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমার দ্বারা একজন লোককেও যদি আল্লাহ হেদায়াত দান করুন, তাহ’লে তা লাল উট কুরবানী করার চেয়েও শ্রেষ্ঠতর হবে’ (বুখারী হা/৩৭১০, ৪২১০)। অতএব লেখাকে সর্বদা ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ মনে করবেন, কখনো দুনিয়া অর্জনের মাধ্যম বানাবেন না। মনে রাখবেন আপনার লেখার যোগ্যতা মহান আল্লাহর বিশেষ দান। অতএব এর বিনিময়ে আখেরাতে মহা পুরস্কারের প্রতীক্ষায় থাকুন। তিনি লেখকদের প্রতি লেখার মান আরও সমৃদ্ধ করার এবং বছরে অন্তত তিনটি লেখা প্রদানের আহবান জানান।

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রফেসর নযরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা) বলেন, উপস্থিত সম্মানিত লেখকবৃন্দ! ব্যতিক্রমী ভালবাসার আলিঙ্গনে যারা আত-তাহরীককে ধারণ করে রেখেছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার অভিনন্দন। তিনি বলেন, একজন লেখকের লেখনী হয়ে উঠে সময়ের সাথে সাথে জীবন্ত বা মৃত। যেভাবে কোন সুবক্তার বক্তব্যে শ্রোতা আন্দোলিত হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়, লেখনীর ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটে। এক্ষেত্রে লেখকের মান কি ও কেমন হওয়া উচিত? নিষ্প্রাণ একটি লেখায় কিভাবে প্রাণের অনুভূতি নিয়ে আসা যায়? সেদিকে লেখকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, লেখাকে সাহিত্যের মানে উন্নীত করতে হবে। যে লেখা পাঠককে আবেগতাড়িত করে, বাক্যের মায়াজালে আবদ্ধ রাখে, পড়া শেষে হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে এরূপ লেখনীর প্রত্যাশা অবশ্যম্ভাবী। কবিতার ক্ষেত্রেও তাল ও ছন্দের মিলকে সমৃদ্ধ করতে হবে। তিনি লেখকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের প্রিয় স্যারের (আমীরে জামা‘আত) লেখাগুলো বিশ্লেষণ করে নিজেদের মেধা ও মননকে জাগ্রত করে লিখুন। তিনি লেখনীকে বাস্তব সম্মত, সুশৃংখল ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার আহবান জানান। পরিশেষে তিনি সকল ধরনের জাতীয় ও বিজাতীয় আগ্রাসন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মাধ্যমে মোকাবেলা করে আত-তাহরীক সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিশেষ অতিথিদের মধ্যে প্রফেসর শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, মাসিক আত-তাহরীক সামাজিক আন্দোলনের বলিষ্ঠ হাতিয়ার। যা সবসময় আপোষহীন। প্রসঙ্গতঃ আমীরে জামা‘আত যখন কারান্তরীণ ছিলেন সেই বিভীষিকাময় সময়গুলোতেও আত-তাহরীক-এর লেখনীর মান অটুট ছিল। তিনি বলেন, আত-তাহরীকে সামাজিক সচেতনতায় প্রকাশিত বহুবিধ বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় ছিল ‘মাল্টিলেভেল মার্কেটিং’। যা প্রথমদিকে ‘জিজিএন’ নামে পুরো দেশে বিস্তার লাভ করেছিল। এ বিষয়ে লেখার জন্য আমীরে জামা‘আত ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে আমার নিকট বাহক পাঠিয়েছিলেন। সেই লেখা আত-তাহরীকে প্রকাশিত হওয়ার পর সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সাধারণ জনগণ ধারণা লাভ করে যে, এমএলএম ব্যবসা মূলতঃ চাতুরীপূর্ণ একটি সর্বনাশা জুয়া। পরবর্তীতে অন্য পত্রিকাগুলোও লেখাটি প্রকাশ করে। ফলাফল হিসাবে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেয়। এমনিভাবে ‘কোয়ান্টাম মেথড’ সম্পর্কে লেখার মাধ্যমে শিরকের সূক্ষ্ম রূপদানকারীদের মুখোশ উন্মোচিত করে হাযার হাযার মুসলমানের ঈমানকে দৃঢ় করতে সচেষ্ট হয়েছে আত-তাহরীক। এভাবেই আত-তাহরীক তার পদচারণায় সিক্ত করছে প্রতিটি ক্ষেত্র। আগামী দিনগুলোয় আত-তাহরীকে আরও প্রাসঙ্গিক ও তথ্যবহুল লেখা আসা উচিত বলে আমি মনে করি। যেমন শিশুশ্রম, এসিড সন্ত্রাস, যৌতুক, পারিবারিক হত্যাকান্ডের কারণ ও প্রতিকার, ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফী, ফেসবুকের ভয়ংকর ক্ষতিসমূহ, ভাষার অপব্যবহার, সংস্কৃতির ভয়ংকর আগ্রাসন, ইসলামের নামে বিরূপ তথ্য সন্ত্রাস, ইসলামের ইতিহাস তৈরীতে পাশ্চাত্য লেখকদের ভ্রান্তিবিলাস, ইসলামী মোড়কে বিভ্রান্তিমূলক বইয়ের প্রচার, ইসলামী সংস্কৃতির শত্রু-মিত্র, ভারতবর্ষের ইসলামী মনীষীদের জীবনচরিত ইত্যাদি। তিনি আত-তাহরীক -এর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কলেবর বৃদ্ধি এবং সোনামাণি ও যুবসংঘের পৃথক পত্রিকা আছে বিধায় আত-তাহরীক হ’তে সংশ্লিষ্ট বিভাগের লেখাগুলো স্ব স্ব পত্রিকায় স্থানান্তরেরও  পরামর্শ দেন।

প্রফেসর ড. একিউএম বযলুর রশীদ (ময়মনসিংহ) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আত-তাহরীক হাটি হাটি পা পা করে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। আত-তাহরীক-এর মাধ্যমে আমি ও আমার পরিবারের সকল সদস্যগণ উপকৃত হচ্ছি। বিশেষ করে বাড়ির কর্ত্রী আত-তাহরীক সামষ্টিক পাঠ করেন। ফলে প্রতিবেশী বোনেরা তাদের বিবিধ প্রশ্নগুলো নিয়ে আমাদের বাড়িতে আগমন করেন এবং ফিরে যান সঠিক উত্তরগুলো ধারণ করে। যার কৃতিত্ব পুরোটাই প্রাপ্য আত-তাহরীকের। সম্পাদকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আত-তাহরীকে লেখিকাদের পদচারণা বিস্তৃত করার জন্য। তাদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংগঠনিকভাবে মহিলাদেরকে আরো বেশী উৎসাহিত করতে হবে, যাতে মহিলারা নিজ গৃহে এবং প্রতিবেশী অন্য বোনদেরও আত-তাহরীকের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেন। আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করব বর্তমানে মাসিক আত-তাহরীক যে হারে সার্কুলেশন হচ্ছে তার পরিমাণ ২০১৭ সালের মধ্যে আরো কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়। সেই সাথে পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশ করার বিষয়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ সালের দিকে দৈনিক পত্রিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশের চিন্তা-ভাবনা করারও তিনি পরামর্শ প্রদান করেন।

ড. মুহাম্মাদ ইসমাঈল হোসাইন (গাযীপুর) বলেন, আক্বীদা যদি ঠিক না থাকে ঈমান ঠিক থাকে না। ঈমান ঠিক না হ’লে মুসলমান হিসাবে দাবী করা যায় না। এজন্য ছহীহ আক্বীদায় জীবনকে গড়ে তুলতে নিত্যদিনের ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ আত-তাহরীকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার অনুরোধ করছি। যাতে করে নতুন পাঠকগণ নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারেন। মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমগুলোর দ্বারা আহলেহাদীছ বিদ্বেষীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তার জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আত-তাহরীকের মাধ্যমে যেন জবাব দেয়া হয়। যাতে করে পাঠকগণ সত্য বিষয়সমূহ জানতে পারে। পত্রিকায় ‘সাহিত্যাঙ্গন’ নামে একটা অংশ রাখা যেতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।  

নূরুল ইসলাম প্রধান (গাইবান্ধা) বলেন, আমার মায়ের ভাষা বাঁচানোর স্বার্থে ৫২তে ভাষা সংগ্রাম করেছিলাম, প্রিয় স্বদেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন ভূখন্ডের জন্য ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজও মুক্তিযুদ্ধ করছি, তবে ধরণটা ভিন্ন। এখন শিরক-বিদ‘আতে পূর্ণ ধর্মীয় রীতি-নীতিকে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের অনুসৃত পথে পরিচালনার লক্ষ্যে পুরো মানবতার কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির লক্ষ্যে আহলেহাদীছ আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনের মুখপত্র-ই হচ্ছে প্রিয় মাসিক আত-তাহরীক। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে মাসিক আত-তাহরীকের চলমান সমাজ সংস্কারের একজন গর্বিত সদস্য হ’তে পেরে আমি মনে করি আমার মুক্তিযুদ্ধ এখনও চলছে এবং নিঃশ্বাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ। এই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে মানবতার মুক্তিযুদ্ধ। সকল মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির যুদ্ধ।

অধ্যাপক আব্দুল লতীফ (রাজশাহী) বলেন, আমরা জানি যে, প্রয়োজন আবিষ্কারের জননী। ভারতবর্ষে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের জন্য বিশেষ করে আহলেহাদীছদের জন্য তেমন কোন লেখনী ছিল না বললেই চলে। তাই জাতির সামনে শিরক ও বিদ‘আতমুক্ত ছহীহ দ্বীন পৌঁছানোর লক্ষ্যে আমীরে জামা‘আত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন। যার অন্যতম ও নিয়মিত প্রকাশনা হচ্ছে মাসিক আত-তাহরীক। আত-তাহরীক যেভাবে সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখছে তেমনি হাদীছ ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বইসমূহও একই ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে। আল্লাহ যেন এই খেদমত কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন-আমীন!  

অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর) বলেন, মাসিক আত-তাহরীক আমাদের জীবনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী পত্রিকা। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আত-তাহরীক দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। যা বাংলাদেশে একমাত্র পত্রিকা হিসাবে পরিগণিত। অধঃপতিত মানবতার সংশোধনের লক্ষ্যে আত-তাহরীক আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জামা‘আতবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছে। আত-তাহরীকের লেখনীর সাথে যারা জড়িত আছেন, তাদের নিকট আবেদন, আপনাদের লেখার উদ্দেশ্য হবে একমাত্র জান্নাত লাভ। লেখাটা যেন নিজের জন্য ছাদাকায়ে জারিয়া হিসাবে আল্লাহ কবুল করেন। আত-তাহরীকে লেখার মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার সুপরিচিত একজন প্রফেসরকে আত-তাহরীকে লেখার কথা বললে তিনি বলেন, তাহরীকের লেখার মান, এর ভাষাশৈলী, দলীল প্রমাণ এত সমৃদ্ধ যে, তা জোগাড় করে একটি লেখা তৈরী করতে আমার যে সময় ব্যয় হবে, এ সময়ে অন্য পত্রিকার জন্য অন্তত দশটি লেখা প্রস্ত্তত করা সম্ভব। উত্তর শুনে আমি বিস্মিত হ’লাম। দো‘আ করি মাসিক আত-তাহরীকের যাত্রাপথ সর্বদা নিরাপদ থাকুক! আত-তাহরীককে সত্যানুসন্ধানীগণ হৃদয়ে প্রোথিত রাখুন এবং আত-তাহরীকের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মহান আল্লাহ হেফাযতে রাখুন-আমীন!

লেখকদের মধ্য হ’তে অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা) বলেন, প্রচলিত নিয়মনীতির বাইরে থেকে সঠিক সুন্দর এবং কল্যাণকর সামগ্রিক সমাজ সংস্কারমূলক কিছু পদ্ধতি যে হ’তে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হ’ল মাসিক আত-তাহরীক। আর প্রকৃত অর্থে সমাজ সংস্কারের ভূমিকা সেই-ই পালন করতে পারে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নির্ভীকভাবে যার সাহসী পদচারণা সামনের দিকে ধাবিত হয়। আত-তাহরীক সেই কাজটাই করছে। প্রচলিত ধারায় যদি আত-তাহরীক চালিত হ’ত, তাহ’লে আত-তাহরীকের অনন্য সাধারণ অবস্থান ব্যক্তি ও সমাজের নিকট সমাদৃত হ’ত না। আত-তাহরীক-এর বানানরীতি থেকে আরম্ভ করে প্রতিটা বিষয়ই ব্যতিক্রমধর্মী। সমাজে পুঞ্জীভূত কুসংস্কার, ধর্মীয়, পারিবারিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে পদচারণা করে সত্য সুন্দর ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে সফল হয়েছে আত-তাহরীক। রাজনৈতিক দৈন্যদশায় প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের মডেল উপস্থাপন করে আত-তাহরীক যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা এখন পর্যন্ত কেউ পারেনি। মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, মাসিক আত-তাহরীক-এর সাথে যারা সম্পৃক্ত যতদিন তারা বেঁচে থাকেন, আত-তাহরীকে কলম চালনার মতো সুস্থতা যেন মহান আল্লাহ তাদের দান করেন-আমীন!

ক্বামারুযযামান বিন আব্দুল বারী (জামালপুর) বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লেখকদের মিলনমেলায় সমবেত হ’তে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। নবীন লেখক হিসাবে মাসিক আত-তাহরীক-এর মাধ্যমে লেখার যে প্রয়াস আমি পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমার লেখার হাতেখড়ি আত-তাহরীক-এর মাধ্যমেই। আত-তাহরীক-এর সাথে যেভাবে আমার পথচলা তাহ’ল ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে রচনা প্রতিযোগিতা আহবান করা হ’ত। দেশ ও দেশের বাহির থেকে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। আমিও একজন প্রতিযোগী হিসাবে ‘প্রচলিত সমাজ বনাম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত সমাজ’ এই বিষয়ের উপর ১৯৯৯ সালে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করি। পরবর্তীতে মাসিক আত-তাহরীক আমার সেই লেখাটি পরিমার্জন করে প্রকাশ করে। তখন থেকেই আত-তাহরীক-এর সাথে আমার সুদৃঢ় সম্পর্ক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই পত্রিকার মাধ্যমে আমরা যারা লেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছি, পরিচিত হয়েছি লেখক হিসাবে তাদের পারস্পরিক কোন পরিচয় বা যোগাযোগ নেই। সেকারণ মাননীয় সম্পাদক ছাহেবকে আমাদের পারস্পরিক পরিচিতি ও লেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার স্বার্থে লেখক সম্মেলন করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আজকে যা বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। ফালিল্লাহিল হামদ। সমবেত লেখক বৃন্দের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন, মাসিক আত-তাহরীক-কে আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা সকলেই নিজেদের অবস্থান থেকে সময়ের সাথে সাথে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পাঠানোর মাধ্যমে আত-তাহরীক-কে আরো সমৃদ্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ) বলেন, আত-তাহরীক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজ সংস্কারের যে আন্দোলন শুরু করেছে তার অগ্রযাত্রা অবারিত হোক, ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক এটাই বিশেষভাবে কামনা করছি। মুসলিম জাতি হিসাবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দৃঢ় অবস্থানের পরিবর্তে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আজ আমরা ঘৃণিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত জাতি হিসাবে দিনাতিপাত করছি। মুসলমানদের এই অবস্থার অন্তর্নিহিত কারণ ও প্রতিকারের চেতনা বিশেষভাবে আত-তাহরীক জাগ্রত করে যাচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতেও করে যাবে ইনশাআল্লাহ। উন্নত জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমারোহে পদচারণা করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এ বিষয়গুলোতে আমরা পশ্চাৎপদ জাতি হিসাবে পরিগণিত। আশা করছি আত-তাহরীক এ বিষয়টি সুবিবেচনা করবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক মাসের আত-তাহরীক আমার হস্তগত হওয়ার পর প্রথমেই সম্পাদকীয়টা পড়ি। কেননা সম্পাদকীয়তে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে জাতির জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, গত সংখ্যার (অক্টোবর’১৬) সম্পাদকীয়’র মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালের জগত সম্পর্কে উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করা হয়েছে। আত-তাহরীকে যেভাবে কোটেশন দেয়া থাকে, তা অন্য কোন পত্রিকার মাঝে দেখা যায় না। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাংলাদেশের অন্যান্য পত্রিকার পথিকৃৎ হিসাবে আত-তাহরীক সমাদৃত হবে। তবে পত্রিকার কলেবরটা ছোট। আমি জানি না এর সুনির্দিষ্ট কারণটা কি? পত্রিকার লেখক সংখ্যা কম হ’তে পারে অথবা পরিচালকদের আর্থিক সংগতির টানাপোড়েনও থাকতে পারে। আমি একজন লেখক হিসাবে অনুধাবন করি লেখার মান আরও সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আমাদের জন্য সুপরামর্শ আসবে। বাংলাদেশে বাংলা ভাষার বানান রীতি যেহেতু এখন পর্য্যন্ত স্থির হয়নি, সেক্ষেত্রে আত-তাহরীক তার নিজস্ব বানান পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা অন্যদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আত-তাহরীকের নিজস্ব বানান পদ্ধতিরও সফলতা কামনা করছি।

শামসুল আলম (যশোর) বলেন, আমি ১৯৮৯ সালে আমীরে জামা‘আতের মাধ্যমে আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর সদস্য হই। তখন থেকে আজ অবধি আমার কাছে সর্বাধিক আকর্ষণীয়, ঐতিহাসিক, জ্ঞানগর্ভ এবং সর্বাধিক স্মরণযোগ্য হচ্ছে আজকের এই লেখক সম্মেলন। প্রথমত, আত-তাহরীক-এর সাথে পুরোনো স্মৃতির কিছুটা অংশ সবার মধ্যে বণ্টন করতে চাচ্ছি। ১৯৯৫ সাল। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র ছাত্র। পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত। আমীরে জামা‘আত মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকা নিবন্ধনের দায়িত্বটা আমাকে দিলেন। সেই বছরই আমরা আবেদন করি, কিন্তু ছাড়পত্র পাইনি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনেক চেষ্টার পর ছাড়পত্র পেলাম। মহান আল্লাহর রহমতে কোনরকম উপঢৌকন ছাড়াই আমরা পত্রিকাটির ছাড়পত্র পেয়েছি। ফালিল্লাহিল হামদ। আমি আশা করব কোন অন্যায় ও বাধার কাছে মাসিক আত-তাহরীক কখনই মাথা নত করবে না ইনশাআল্লাহ।

পত্রিকা সম্পর্কে কি বলব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। কারণ আত-তাহরীক মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রেখে চলেছে। যেমন- অক্টোবর ২০১৫ সংখ্যার মাসিক আত-তাহরীক-এর সম্পাদকীয়তে সিরিয়ার সাগরতীরে পড়ে থাকা ছোট্ট তিন বছরের শিশু আইলানের মৃতদেহের করুণ আকুতি ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে সচেতন করার প্রেক্ষিতে লেখাটা এখনও হৃদয়ে রেখাপাত করে আছে। ঐ সম্পাদকীয়তে সুন্নী-শী‘আ দ্বন্দ্বের মাধ্যমে পশ্চিমা পরাশক্তিরা কিভাবে তাদের স্বার্থ হাছিল করছে, সে বিষয়ে বিশদভাবে তথ্যসহ আলোচিত হয়েছে।

ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ) বলেন, পৃথিবীতে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু লেখনী এমন একটা বিষয় যার জন্য নির্দিষ্ট কোন শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান নেই। বরং এটা মহান আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত। একজন মানুষ নিজস্ব প্রতিভার মাধ্যমে অব্যাহত চর্চার দ্বারা তা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে মাসিক আত-তাহরীক-এর দ্বিতীয় বর্ষের ২য় সংখ্যায় আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। সেটি ছিল বিশিষ্ট ছাহাবী, সর্বাধিক হাদীছ বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর জীবনী। সেই থেকে অদ্যাবধি আত-তাহরীকের সাথে আমার সম্পর্ক অটুট আছে। আমি কেন লিখি? আমার লেখার উদ্দেশ্য কি? আমি মনে-প্রাণ চাই আমার লেখা যেন সর্বদা জাতির কল্যাণে ও ইসলামের প্রচার-প্রসারে কাজে লাগে। এই লেখনীর মাধ্যমে কোন একজন মানুষের মধ্যে যদি সামান্যতম পরিবর্তন আসে, তার ভুল আমলগুলো সংশোধন হয়, তাহ’লে সেটা পারলৌকিক জীবনে আমার জন্য ছাদাকায়ে জারিয়া হিসাবে গণ্য হবে। আমি সেজন্যই লেখার চেষ্টা করি।

মাসিক আত-তাহরীকের ফৎওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত প্রথম সংখ্যা আত-তাহরীকে মাত্র ৩টি ফৎওয়া প্রদান করা হয়েছিল। দ্বিতীয় সংখ্যায় ১০টি এবং পর্যায়ক্রমে বর্তমানে ৪০টি করে ফৎওয়া প্রদান করা হয়। নভেম্বর’১৬ পর্যন্ত সর্বমোট ৮২৩০টি ফৎওয়া মাসিক আত-তাহরীকে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে বিভিন্ন বিষয়ে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমাদের মাননীয় মুফতীগণ ফৎওয়া সমূহ লিখে থাকেন। এক্ষেত্রে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেন সম্পাদক মন্ডলীর সম্মানিত সভাপতি। তিনি রাত-দিন কষ্ট করে এই ফৎওয়াসমূহ সংশোধন ও পরিমার্জন করে আত-তাহরীকে প্রকাশ করেন। মহান আল্লাহর বাণী মোতাবেক সার্বিক জীবনের সকল বিষয়ের ফৎওয়া সমূহ আমরা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেয়ার চেষ্টা করি। এজন্যই অন্যান্যদের ফৎওয়া’র সাথে মাসিক আত-তাহরীক-এর ফৎওয়ার মিল পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রায় সবাই আত-তাহরীকের ফৎওয়ার মুখাপেক্ষী থাকে।

গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম (রাজশাহী) বলেন, মাসিক আত-তাহরীক একটি নাম, একটি ইতিহাস। প্রতিভা বিকাশের এক অনন্য শিক্ষাকেন্দ্র। আমরা আজ যারা তরুণ লেখক মোটামুটি কলমটা সোজা করে লিখতে পারি, কলমের খোঁচায় নিজের অব্যক্ত ভাবগুলোকে প্রকাশ করতে পারি, এই সুযোগ যেখান থেকে আমরা পেয়েছি, এই শিক্ষা যেখান থেকে লাভ করেছি, সেটা হচ্ছে মাসিক আত-তাহরীক। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাস, সদ্য দাখিল পাশ করা তরুণ আমি। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত আমাকে আত-তাহরীকের প্রুফ রিডার হিসাবে নিয়োগ দান করলেন। সেই থেকে আত-তাহরীকের সাথে আমার পথচলা শুরু এবং অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আত-তাহরীকে যে বিষয়গুলো লিখি, আমাদের লেখকরা লিখেন, এ লেখাগুলোকে আত-তাহরীকে প্রকাশের যোগ্য করে তোলার জন্য সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যার, মাননীয় সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক এবং সম্পাদনা বিভাগের সাথে যারা জড়িত আছেন, তাদেরকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই একটা লেখার পুরো খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হয় আত-তাহরীকে প্রকাশযোগ্য করার জন্য। সেজন্যই আত-তাহরীক হচ্ছে শিক্ষাকেন্দ্র, মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ কেন্দ্র। আমরা জানি প্রতিভা অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু প্রতিভা বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম প্রয়োজন হয়। আর সে প্লাটফর্ম আমাদের দিয়েছে আত-তাহরীক। সুতরাং আত-তাহরীকের সাথে আমরা যারা সম্পৃক্ত হ’তে পেরেছি তারা ধন্য। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশে’র অনন্য মুখপত্র মাসিক আত-তাহরীক টিকে থাকবে যুগ যুগান্তরে এটাই আমাদের অন্তরের একান্ত কামনা।

আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া) বলেন, মাসিক আত-তাহরীক এক ঝাঁক যোগ্য লেখকের লেখনীর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সমাজ সংস্কারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কথা বললে শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু লেখার স্থায়ীত্ব হবে সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত। যাতে নতুন প্রজন্ম বিশ্লেষণ করে তাদের সময়ের সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও অন্যান্য নবী-রাসূলগণের মৌলিক কাজ ছিল সমাজ সংস্কার করা। তাই  তাবলীগ, তানযীম ও তারবিয়াতের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের কামনা করছি। তিনি সমবেত প্রবীণ ও নবীন লেখকদের নিকটে আত-তাহরীকের পাশাপাশি ‘যুবসংঘে’র মুখপত্র ‘তাওহীদের ডাকে’ও লেখা প্রেরণের আহবান জানান।

আব্দুল হালীম (রাজশাহী) বলেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন এই পৃথিবীতে আমাদেরকে যত নে‘মত দান করেছেন, যত সম্পদ দান করেছেন, এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে আমার আপনার ছোট্ট সোনামাণিরা। অভিভাবক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমরা নিজেরা যেমন জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করব, তেমনি আমাদের সোনামণি ও আমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। আহলেহাদীছ আন্দোলন ও তার অঙ্গ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। একই লক্ষ্যে মাসিক আত-তাহরীক, তাওহীদের ডাক ও সোনামাণি প্রতিভা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা ‘সোনামণি প্রতিভায়’ লেখা পাঠাতে সোনামণিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আপনাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

উন্মুক্ত আলোচনায় লেখকদের পক্ষ হ’তে ড. মুহাম্মাদ আবু তাহের (গাইবান্ধা) দু’টি প্রস্তাব পেশ করেন। (১) আত-তাহরীক এর লেখার মান আরও বৃদ্ধি ও যোগ্য লেখক তৈরীর লক্ষ্যে মাঝে মধ্যে  লেখক প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করা ও (২) মাসিক আত-তাহরীক-এর পাশাপাশি একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করা। যার মাধ্যমে সারা দেশে অনেক লেখক ও সাংবাদিক তৈরী হবে।  

উন্মুক্ত আলোচনায় আত-তাহরীক-এর অসুস্থ প্রবীণ কবি আমীরুল ইসলাম মাষ্টার (রাজশাহী) স্বরচিত নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করে শুনান-

জামা‘আতী ঐক্যের ডাক

নভোমন্ডল ভূমন্ডল ও বিশ্ব বসুধা

সৃজিলেন যিনি তিনিইতো রব বিশ্ব পালনকর্তা।

তাঁর দেয়া পথে চলি একসাথে এক অভিন্ন দলে

সে পথেই যাই নবী ও রাসূল যে পথে গেছেন চলে।

আখেরী নবীর উম্মত মোরা তাই উম্মাতে মুহাম্মাদী

সরল পথের পথিকেরে মোরা একই সূত্রে বাঁধি।

এক মন এক প্রাণ একই ঈমান লয়ে

একই পথে যাই এক কাফেলায় থাকি এক হয়ে।

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আশা-আকাঙ্ক্ষা একটাই সবার তাই

মরণের পরে আখেরাতে যেন জান্নাতে ঠাঁই পাই।

তবে কেন এই ভোগ বিলাসের বৃদ্ধিটারে অাঁকড়ে ধরি

দু’দিনের তরে এই খেলাঘরে লোভ-লালসা হিংসা-নিন্দায় মরি।

সন্তান-সন্ততি বিষয়-সম্পত্তি চমক লাগায় এ ভবে

জান্নাতের পথে আল্লাহর মতে এরাইতো বাধা হবে।

সুনাম-সুখ্যাতি নেতৃত্ব কৃতিত্ব লয়ে

এত দ্বন্দ্ব এত মারামারি সব পড়ে রবে

ধরার ধূলায় ছেড়ে যাবে যবে জীবন তরী।

ইবাদত-বন্দেগী সারা যিন্দেগী করে কিবা হবে লাভ

মিথ্যা ভবের রোষানলে পুড়ে সব যদি হয় ছাফ।

এসো এসো ভাই একই কাফেলায় আল্লাহর পথে চলি

অতীতের যত হিংসা-নিন্দা দ্বন্দ্ব-বিভেদ আল্লাহর ওয়াস্তে ভুলি।

এসো আজি সবে কুরআন ও হাদীছের সঠিক পথটি ধরি

যাবার বেলায় মরণ খেলায় মুসলিম হয়ে মরি।

রফীক আহমাদ (৮২) (দিনাজপুর) বলেন, সনদপত্রের আধিক্য না থাকলেও শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি বাংলা ভাষা চর্চা আমার প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। ভাষা চর্চার সাথে সাথে যৌবনের প্রারম্ভে হৃদয়ে লেখালেখির সুপ্ত বাসনাটাও উপলব্ধি করতাম। লালিত স্বপ্ন বিকশিত করার ক্ষেত্রে আত-তাহরীক আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে। তাই এটা আমার জীবনের অত্যন্ত প্রিয় পত্রিকা ও সঙ্গী। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও আমি আত-তাহরীককে ঘিরে স্বপ্নে বিভোর থাকি। আমার লেখনী, আমার কল্যাণকামীতা সবসময় ছায়া হয়ে আত-তাহরীককে সমৃদ্ধ করবে এই কামনা করছি। উপস্থিত সকলের নিকট অনুরোধ আপনারা আমার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করবেন যাতে আমি মৃত্যু পর্যন্ত আত-তাহরীকের জন্য কলম চালিয়ে যেতে পারি।

যহূর বিন উছমান (দিনাজপুর) বলেন, আমি আত-তাহরীকের শুরু থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মসজিদের গেইটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আত-তাহরীক বিক্রি করেছি। ঘাড় ধাক্কা খেয়েছি, মার খেয়েছি, অপমানিত হয়েছি। কিন্তু আত-তাহরীকের প্রচার থেকে বিরত হই নাই। তিনি বলেন, এ দেশের পঞ্চাশের অধিক ইসলামী পত্রিকা আমার সংগ্রহে আছে। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের মাটিতে যতগুলো ইসলামী পত্রিকা আছে তার মধ্যে প্রথম সারির প্রথম নম্বর পত্রিকা হচ্ছে মাসিক আত-তাহরীক। একজন আলেম বলেছিলেন, এদেশে হয়তো ইতিপূর্বে ছহীহ হাদীছের কথা কেউ বলেছেন, কিন্তু ছহীহ হাদীছ ব্যাপকভাবে সর্বত্র প্রচারের কাজটি করেছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। আর এর জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করেছে মাসিক আত-তাহরীক। এই পত্রিকার উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করছি।

লেখক সম্মেলনে ৪০ জন লেখক-লেখিকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাদের অধিকাংশ উপস্থিত হন। এছাড়াও ছিলেন মহানগরীর উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চপদস্থ বিদ্বানমন্ডলী ও সুধীমন্ডলী। সবশেষে পরিচালক কর্তৃক সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও বৈঠকভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে ‘লেখক সম্মেলন’ সমাপ্ত হয়। ফালিল্লাহিল হামদ








আরও
আরও
.