১০. মাদকাসক্তি :

মাদকাসক্তির সাথে দারিদ্রে্যর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এর ফলে জনগণের একটি বিরাট অংশ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে পিছনের দিকে টেনে ধরছে। এতে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মাদকাসক্তি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক দিককে ক্রমঅবনতির দিকে নিয়ে যায় এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পঙ্গু করে দেয়। মদখোর যখন সব সম্পত্তি হারিয়ে ফেলে, তখন তার জীবন পর্যুদস্ত দরিদ্র ও রাস্তায় পড়ে থাকা ভিক্ষুকের ন্যায় হয়ে যায়। তার পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিজন মাদকাসক্ত গড়ে মাসে প্রায় ৪,০০০ টাকা খরচ করে।[1]

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইউএনডিপি’র দেয়া ১৯৯৯ সালের এক তথ্যে জানা যায়, সারা পৃথিবীতে মাদকাসক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩.৮ ভাগ। এ হিসাবে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি।[2]

মাদকাসক্তি শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। দেশে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ করা গেলে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০ হাযার কোটি টাকা। মাদকাসক্তির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, মাদকাসক্তি রোধ করা গেলে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা। পুনর্জীবন দান করতে পারে বিপর্যস্ত ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে।[3] তাই ইসলাম দারিদ্রে্যর হাতিয়ার মাদকতাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরশাদ হচ্ছে, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণকামী হও’ (মায়েদা ৯০)

১১. শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ববোধের অভাব :

শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ববোধের অভাব দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অনেক বার ক্ষমতার হাত বদল হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেক সরকার কমবেশী দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করার পরেও দারিদ্র্য হ্রাস তো দূরের কথা বরং দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ওমর (রাঃ)-এর মত দায়িত্বসচেতন শাসক হ’লে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন হ’ত। ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, ‘ফোরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও ভুখা অবস্থায় মারা যায়, তার জন্য ওমরকেই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে’।[4]

ভাগ্যবিড়ম্বিত, বঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা দেশের শাসক তথা সরকারেরই অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা দারিদ্রে্যর মূলোৎপাটন, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং প্রবৃদ্ধির কাম্য হার অর্জনের লক্ষ্য কেবল সরকারের কার্যকর ও সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই অর্জিত হ’তে পারে। মোটকথা, সরকারের দায়িত্বসচেতনতাই দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যকর হাতিয়ার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ. ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেকেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[5]

১২. সীমাহীন দুর্নীতি :

দুর্নীতি ও দারিদ্র্য যমজ ভাইয়ের ন্যায়। যে দেশে যত বেশী দুর্নীতি থাকবে সেদেশে তত বেশী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে। এদেশের প্রতিটি সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতিতে এক মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ জঘন্য ব্যাধির করালগ্রাসে অমিত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রমশঃ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বড়ই লজ্জার কথা যে, Transparency International-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ এ পাঁচ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।[6]

ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিবিরুদ্ধ যে কোন কাজই দুর্নীতি এবং মারাত্মক অপরাধ। ঘুষ, জুয়া, মওজুদদারী, চোরাচালানী, ফটকাবাজারী, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, চাঁদাবাজী, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতী, আত্মসাৎ, জবরদখল, লুণ্ঠন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, খেয়ানত, ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন, প্রতারণা, ওযনে কম দেয়া, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি ইত্যাদি সবই দুর্নীতির আওতাভুক্ত।

পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় ও ঈমানী চেতনাই কেবলমাত্র মানুষকে দুর্নীতি থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, هَذَا كِتَابُنَا يَنْطِقُ عَلَيْكُمْ بِالْحَقِّ إِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ- ‘এটা আমার কিতাব (রেকর্ড), যা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে সত্যতা সহকারে। তোমরা যা করতে তা আমি লিপিবদ্ধ করতাম’ (জাছিয়া ২৯)

১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :

সাগরবেষ্টিত নদীমাতৃক আমাদের এদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায় লেগেই থাকে। ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘর-বাড়ী, গাছ-পালা, ফসলাদি, গবাদীপশু ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের অকাল মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্রে্যর নিকষকালো অাঁধার। নদী ভাঙ্গনে প্রতি বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় হাযার হাযার হেক্টর জমি, ভূমিহীন নিঃস্ব দরিদ্র হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে অসংখ্য বনু আদম। মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখেরী হয়ে পড়ে অনেক বিত্তশালী পরিবার। এ সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে যে সাহায্য আসে তার অর্ধেকও পায় না ক্ষতিগ্রস্তরা। সিংহভাগই চলে যায় সরকারী আমলা, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পকেটে।

মূলতঃ ইসলামী অনুশাসন না মানায়, অন্যায়-অবিচার, ব্যভিচার, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করার জন্যই মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ- ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৪১)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُوْنَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ‘গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সাজদাহ ২১)

১৪. বেকারত্ব :

দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ বেকারত্ব। কোন সমাজেই বেকারত্ব থাকাবস্থায় দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব নয়। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকারের কেবল স্বীকৃতিই দেননি; বরং তা নিশ্চিতও করেছেন। বস্ত্তত এ অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মানুষই সমান এবং এটি একটি মানবাধিকারও বটে।

মদীনার কল্যাণ রাষ্ট্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ অধিকার লাভের সুযোগ সকলের জন্য সমানভাবে অবারিত করেছিলেন। এর সকল মানুষই দক্ষতা বলে উপার্জন করে বিত্তবান হ’তে পারত। অবশ্য নিজের অক্ষমতার কারণে অনেকে সচ্ছলতা হারাত। কিন্তু তাই বলে কোন লোককেই তার মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হ’ত না। স্বীয় দক্ষতার পরীক্ষায় কেউ ব্যর্থ হ’লে সে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থাদি পাকাপোক্ত দেখতে পেত। ফলে কারুরই দারিদ্রে্যর কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।

১৫. অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী :

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, Education is the backbone of a nation. অর্থাৎ ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি দারিদ্র্যমুক্ত তথা স্বাবলম্বী হ’তে পারে না। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশী উন্নত। আর যে জাতি যত বেশী অশিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি দরিদ্র। আর অশিক্ষা দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণও বটে।

ইসলাম যেহেতু স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর, উন্নতজাতি হ’তে অনুপ্রেরণা যোগায়, তাই ইসলামের সর্বপ্রথম নির্দেশ হ’ল, اِقْرأْ ‘পড়’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘শিক্ষার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয’।[7] ইসলামের বিধান মেনে ১০০% নাগরিক শিক্ষিত হ’লে বাংলাদেশ ১০০% দারিদ্র্যমুক্ত স্বাবলম্বী উন্নত জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ।

১৬. অপচয়, অপব্যয় ও বিলাসিতা :

অপচয়-অপব্যয়, বিলাসিতা এগুলো দারিদ্র্য সমস্যার কারণ। এদেশের বিত্তশালীগণ অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় যে অর্থ ব্যয় করে তা দিয়ে হাযার হাযার ভুখা-নাঙ্গা বনু আদমের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। ইসলাম মানুষকে মিতব্যয়ী হ’তে শিক্ষা দেয়। অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় অর্থ ব্যয় না করে নিকটাত্মীয়, ফকীর-মিসকীন ও মুসাফিরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا- إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا- ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর অবাধ্য’ (বনী ইসরাঈল ২৬-২৭)। ইসলামের উক্ত বিধান মেনে চললে অবশ্যই দারিদ্র্য বিদূরিত হবে ইনশাআল্লাহ।

১৭. খনিজ সম্পদ আহরণে ব্যর্থতা :

নানাবিধ খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের এ বাংলাদেশ। তেল, গ্যাস, কয়লা, ইউরেনিয়াম সহ প্রায় সকল ধরনের খনিজ সম্পদ রয়েছে এ দেশে। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, এগুলো উত্তোলনের জন্য আমাদের নিজস্ব কোন প্রযুক্তি নেই। দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো বিদেশী কোম্পানীর কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। এখন তাদের কাছ থেকে নিজেদের গ্যাস আন্তর্জাতিক বাজার দরে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে লাভ তো দূরে থাক, প্রতি বছরে ২৫০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এমন অসম চুক্তিতে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, যাতে এদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। উদাহরণ স্বরূপ ফুলবাড়ী কয়লাখনি। চুক্তি মোতাবেক এ খনি থেকে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ৬% আর বৃটিশ কোম্পানী এশিয়া এনার্জি পাবে ৯৪%। ৬% গ্যাস বাবদ বাংলাদেশ বছরে পাবে ১৫০০ কোটি টাকা। বিপরীতে বছরে ক্ষতি হবে ১৮০০ কোটি টাকা। ফলে ৩০ বছরে ক্ষতি হবে ৯ হাযার কোটি টাকা।[8]

ইসলাম মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং দেশের শাসকগোষ্ঠীকে দেশের অভিভাবক হিসাবে তার সমস্ত সম্পদ হেফাযত করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। যদি ইসলামের উক্ত বিধান পরিপূর্ণভাবে মানা হ’ত তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না এবং অপরিমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্রে্যর নির্মম কশাঘাতে নিষ্পেষিত হ’তে হ’ত না।

১৮. স্বার্থান্ধ প্রতিবেশী :

বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার জন্য স্বার্থান্ধ প্রতিবেশী কম দায়ী নয়। বাংলাদেশকে তিন দিক দিয়ে বেষ্টন করে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ দেশটি মরণফাঁদ ফারাক্কা, গজলডোবা ব্যারেজ, টিপাইমুখ বাঁধ, সারি নদীর উজানে বাঁধ ও অন্যান্য সকল নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশ হিসাবে এ দেশকে শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে ও বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হ’তে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন টিপাইমুখ বাঁধ এটাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া দক্ষিণ তালপট্টি, বেরুবাড়ী, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল, মহুরীর চর প্রভৃতি দখল করে নিয়েছে। প্রতিদিন বিএসএফ-এর মাধ্যমে গড়ে ১ জন করে নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করার ফলে প্রতিদিন একটি করে পরিবার অভিভাবকহীন নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয় নাগরিকরা ঢুকে মূল্যবান সম্পদ পাচার ও চুরি করে নিয়ে গেলেও সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলি করার অনুমতি পর্যন্ত নেই। তারা যেন সীমান্তের সাক্ষী গোপাল।

ইসলাম উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। অন্যের অধিকার যথাযথ সংরক্ষণের গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ, দখল, চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। অপরের ১ ইঞ্চি ভূমি দখল করে নিলেও সাত স্তবক জমি হাশরের মাঠে দখলকারীর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে।[9] ইসলাম এ অনুশাসন মানলে কিছুতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না।

উপসংহার :

আলোচিত দারিদ্র্য সমস্যার কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ক পর্যালোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে মুক্তির গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলামের প্রতিটি বিধান যথার্থভাবে মেনে চললে কিছুতেই দারিদ্র্য থাকবে না এবং বাংলাদেশ স্বনির্ভর সমৃদ্ধশালী, উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী

প্রধান মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদরাসা, জামালপুর।


[1]. খুশী মোহন বিশ্বাস, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও এর নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের ভূমিকা (ঢাকা : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), পৃঃ ৪৮।

[2]. দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ অক্টোবর ২০০৪, পৃঃ ৩।

[3]. মোঃ মোশাররফ হোসাইন, ‘মাদকাসক্তি : বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, এপ্রিল-জুন/১০, পৃঃ ১০৮।

[4]. ইসলামী অর্থনীতির রূপরেখা, পৃঃ ১২।

[5]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫।

[6]. প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি প্রতিরোধ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১০ইং, পৃঃ ৪৭।

[7]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২১৮।

[8]. বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ভ্যানগার্ড’ বুলেটিন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১০ইং, পৃঃ ১।

[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৩৮ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়






হালাল জীবিকা - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
ইসলামী ব্যাংকিং-এর অগ্রগতি : সমস্যা ও সম্ভাবনা (পূর্বে প্রকাশিতের পর) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ইসলামী ব্যাংকিং-এর অগ্রগতি : সমস্যা ও সম্ভাবনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
জীবিকা থেকে বরকত দূরীভূত হওয়ার কারণ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইসলামী অর্থনীতি ও প্রচলিত অর্থনীতির মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা - বিকাশ কান্তি দে, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার
উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে যাকাত-এর ভূমিকা - বিকাশ কান্তি দে, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: ইসলামী দৃষ্টিকোণ - ড. নূরুল ইসলাম
দুর্নীতি ও ঘুষ : কারণ ও প্রতিকার (পূর্ব প্রকাশিতের) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : ইসলামী দৃষ্টিকোণ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
ইসলামে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
মাহে রামাযানের পূর্ব প্রস্ত্ততি - আব্দুল মুহাইমিন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং আমাদের প্রস্তাবনা - আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক
আরও
আরও
.