পর্ব ১ 

[দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ] :

৯. পণ্যের স্বল্পতা : অনেক সময় পণ্যের স্বল্পতা বা কতিপয় নাগরিকের পণ্য মজুদের প্রবণতার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সম্পদশালী ব্যক্তিরা বাজারে আসে এবং পণ্য ক্রয় করে জমা করে রাখে। এদিকে বাজারে পণ্যের স্বল্পতার দরুন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। চাই সে ব্যক্তি নিজের জন্য পণ্য সংগ্রহ করুক বা পরবর্তীতে চড়া দামে বিক্রির লক্ষ্যে মজুদদারির উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করুক। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শায়খ আতিইয়া সালিম বলেন,فَهَذَا هُوَ مُوْجِبُ غَلاَءِ السِّعْرِ- ‘এটাই হল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ’।[1]

১০. বিলাসিতা : বিলাসিতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিলাসী ব্যক্তিরা তাদের চাহিদা পূরণের জন্য যেকোন মূল্যে পণ্য কিনতে তৎপর ও উৎসাহী থাকে। এজন্য ইসলাম আমাদেরকে বিলাসিতা থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে। কারণ বিলাসিতার কারণে পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِنْ قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّنْ أَنْجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ، وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ-

‘অতএব তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগুলির মধ্যে এমন দূরদর্শী লোক কেন হ’ল না, যারা জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিত? তবে অল্প কিছু লোক ব্যতীত, যাদেরকে আমরা তাদের মধ্য হ’তে (আযাব থেকে) রক্ষা করেছিলাম। অথচ যালেমরা তো ভোগ-বিলাসের পিছনে পড়ে ছিল। আর তারা ছিল মহা পাপী। আর তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, সেখানকার অধিবাসীরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও জনপদ সমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দিবেন’ (হূদ ১১/১১৬-১১৭)

মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়েমেনে প্রেরণের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন,إِيَّاكَ وَالتَّنَعُّمَ فَإِنَّ عِبَادَ اللهِ لَيْسُوْا بِالْمُتَنَعِّمِيْنَ ‘তুমি বিলাসিতা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ আল্লাহর বান্দারা বিলাসী নন’।[2]

১১. যাকাত প্রদান না করা : সম্পদের যাকাত প্রদান না করা বালা-মুছীবত ও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ। যাকাত প্রদান করলে সম্পদে বরকত বৃদ্ধি পায় এবং ধনী-গরীব নির্বিশেষে সমাজের মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকে।

১২. দালালী : ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে দালালের অনুপ্রবেশ ঘটলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَبِعْ حَاضِرٌ لِبَادٍ دَعُوا النَّاسَ يَرْزُقِ اللهُ بَعْضَهُمْ مِنْ بَعْضٍ ‘কোন শহুরে যেন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি না করে। তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের কারো দ্বারা কাউকে রিযিক প্রদান করবেন’।[3]

উক্ত হাদীছের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে তাউস (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন,مَا قَوْلُهُ لاَ يَبِيعُ حَاضِرٌ لِبَادٍ قَالَ لاَ يَكُونُ لَهُ سِمْسَارًا ‘কোন শহুরে গ্রাম্য লোকের পক্ষে পণ্য বিক্রি করবে না, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একথার অর্থ কি? তিনি বললেন, ‘সে যেন তার জন্য দালালের ভূমিকা পালন না করে’।[4]

ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন,وَالْمَعْنَى فِي ذَلِكَ، أَنَّهُ مَتَى تُرِكَ الْبَدَوِيُّ يَبِيْعُ سِلْعَتَهُ، اشْتَرَاهَا النَّاسُ بِرُخْصٍ، وَيُوَسِّعُ عَلَيْهِمِ السِّعْرَ، فَإِذَا تَوَلَّى الْحَاضِرُ بَيْعَهَا، وَامْتَنَعَ مِنْ بَيْعِهَا، إِلَّا بِسِعْرِ الْبَلَدِ ضَاقَ عَلَى أَهْلِ الْبَلَدِ- ‘হাদীছের মর্মার্থ হ’ল, গ্রাম্যলোককে যখন তার পণ্য বিক্রি করার সুযোগ দেয়া হবে, তখন মানুষ তা সস্তা দামে ক্রয় করতে পারবে এবং বিক্রেতাও তাদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু শহুরে (দালাল) যখন সেই পণ্য বিক্রি করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং শহরের প্রচলিত দামে ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে অসম্মত হবে, তখন নগরবাসীর জন্য তা কষ্টসাধ্য হবে’।[5]

ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ প্রণেতা বলেন,

وهذا من البيوع المحرمة للنهى عنه، والنهى يقةضى الفساد وكذلك للإضرار بالمسلمين فالبادى يقدم على البلد ويبيع سلعةه بما يعود عليه بالكسب الحلال ويقضى الناس حوائجهم، لكن إذا ةولى الةسعير له سمسار يعرف حاجة الناس وفاقةهم زاد فى السعر بربح قد يصل أضعافًا مضاعفة- وهذا مخالف لسماحة الإسلام ويسر الشارع الكريم، ولهذا جاء فى الحديث : دَعُوا النَّاسَ يَرْزُقِ اللهُ بَعْضَهُمْ مِنْ بَعْضٍ-

‘এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ হওয়ার কারণে এটি হারাম ক্রয়-বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত। আর নিষেধ ক্রয়-বিক্রয় বাতিলের দাবী করে। অনুরূপভাবে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণেও এটি নিষিদ্ধ। কারণ গ্রাম্য ব্যক্তি শহরে এসে তার পণ্য বিক্রি করতে পারলে হালাল কামাই করতে পারবে এবং মানুষেরাও তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে। কিন্তু দালাল যদি তার জন্য পণ্যমূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে, যে মানুষের প্রয়োজন ও তাদের দরিদ্রতা সম্পর্কে সম্যক অবগত, তখন সে লাভ সহ এমনভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে দিবে যে, কখনো তা দ্বিগুণ-বহুগুণে গিয়ে ঠেকতে পারে। এটি ইসলামের উদারতা ও শরী‘আত প্রণেতার সহজতার বিরোধী। এজন্যই হাদীছে এসেছে, ‘তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের কারো দ্বারা কাউকে রিযিক দিবেন’।[6]

আনাস (রাঃ) বলেছেন,نُهِيْنَا أَنْ يَبِيْعَ حَاضِرٌ لِبَادٍ وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ أَوْ أَبَاهُ ‘কোন শহরবাসী (দালাল) যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি না করে- এ বিষয়ে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও সে ব্যক্তি তার নিজের ভাই বা পিতা হয়’।[7]

১৩. নাজাশ : ‘Najash means to offer a high price for something without having the intention to buy it but just to cheat somebody else who really wants to buy it’. ‘কোন পণ্য ক্রয়ের ইচ্ছায় নয়; বরং প্রকৃত ক্রেতাকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে পণ্যের উচ্চদাম হাঁকা হল নাজাশ’।[8]

এটা এক ধরনের প্রতারণা। এ ধরনের কর্মকান্ডের ফলেও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয়কে নিষেধ করে বলেন, وَلاَ تَنَاجَشُوْا ‘তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করো না’।[9] ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,وَقَالَ ابْنُ أَبِى أَوْفَى النَّاجِشُ آكِلُ رِبًا خَائِنٌ وَهْوَ خِدَاعٌ بَاطِلٌ، لاَ يَحِلُّ- ‘ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) বলেন, দালাল হল সূদখোর, খিয়ানতকারী। এটি প্রতারণা, যা বাতিল ও অবৈধ’।[10]

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,وَأطلق بنُ أَبِي أَوْفَى عَلَى مَنْ أَخْبَرَ بِأَكْثَرَ مِمَّا اشْتَرَى بِهِ أَنَّهُ نَاجِشٌ لِمُشَارَكَتِهِ لِمَنْ يَزِيْدُ فِي السِّلْعَةِ وَهُوَ لَا يُرِيْدُ أَنْ يَشْتَرِيَهَا فِيْ غُرُوْرِ الْغَيْرِ فَاشْتَرَكَا فِي الْحُكْمِ لِذَلِكَ وَكَوْنُهُ آكِلَ رِبًا بِهَذَا التَّفْسِيْرِ- ‘যে ব্যক্তি ক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে ক্রয় করেছি বলবে ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাকে নাজিশ বলেছেন। এক্ষেত্রে সে ঐ ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য রাখে যে অন্যকে ধোঁকা দেয়ার জন্য পণ্যের বেশী দাম হাঁকে, অথচ তা কেনার ইচ্ছা তার নেই। এজন্য হুকুমের ক্ষেত্রে তারা উভয়েই সমান। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী নাজিশ (দালাল) সূদখোর’।[11]

শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন,

والنجش محرم؛ لأن النبي صلّى الله عليه وسلّم نهى عنه فقال: لا تناجشوا ولأنه يورث العداوة والبغضاء بين المسلمين؛ لأنه إذا علم أن هذا ينجش من أجل الإضرار بالمشترين كرهوه وأبغضوه، ثم عند الفسخ في الغبن ربما لا يرضى البائع بالفسخ، فيحصل بينه وبين المشتري عداوة أيضاً-

‘নাজাশ হারাম। কেননা নবী করীম (ছাঃ) এ থেকে নিষেধ করে বলেছেন, ‘তোমরা দালালী করো না’। এটি নিষিদ্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হ’ল, তা মুসলমানদের মাঝে ঘৃণা ও শত্রুতার বীজ বপন করে। কারণ যখন জানা যাবে যে, ক্রেতাদের ক্ষতি সাধন করার জন্য এই ব্যক্তি দালালী করে তখন তারা তাকে অপসন্দ ও ঘৃণা করবে। অতঃপর ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে বিক্রয় ভঙ্গ করার সময় হয়ত বিক্রেতা তাতে সম্মত হবে না। তখন বিক্রেতা ও ক্রেতার মাঝেও শত্রুতার সৃষ্টি হবে’।[12]

১৪. তালাক্কী : গ্রামের কৃষকরা পণ্য নিয়ে শহরের বাজারে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদের কাছ থেকে পাইকারীভাবে তা ক্রয় করে নেয়াকে তালাক্কী বলে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,كُنَّا نَتَلَقَّى الرُّكْبَانَ فَنَشْتَرِى مِنْهُمُ الطَّعَامَ، فَنَهَانَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ نَبِيْعَهُ حَتَّى يُبْلَغَ بِهِ سُوْقُ الطَّعَامِ- ‘আমরা ব্যবসায়ী দলের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের নিকট থেকে খাদ্য ক্রয় করতাম। নবী করীম (ছাঃ) খাদ্যের বাজারে পৌঁছানোর পূর্বে আমাদের তা ক্রয় করতে নিষেধ করলেন’।[13] ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَلاَ تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتَّى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوقِ ‘তোমরা পণ্য ক্রয় করো না তা বাজারে হাযির না করা পর্যন্ত’।[14] ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,بَابُ النَّهْىِ عَنْ تَلَقِّى الرُّكْبَانِ وَأَنَّ بَيْعَهُ مَرْدُوْدٌ، لِأَنَّ صَاحِبَهُ عَاصٍ آثِمٌ إِذَا كَانَ بِهِ عَالِمًا، وَهُوَ خِدَاعٌ فِى الْبَيْعِ، وَالْخِدَاعُ لاَ يَجُوْزُ- ‘অনুচ্ছেদ : সস্তায় পণ্য ক্রয় করার মানসে অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে মিলিত হয়ে কিছু ক্রয় করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা। এ ধরনের ক্রয় প্রত্যাখ্যাত। কেননা জেনেশুনে এমন ক্রয় সম্পাদনকারী ব্যক্তি অবাধ্য ও পাপী। এটা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ধোঁকা প্রদান করা। আর ধোঁকা দেয়া জায়েয নয়’।[15]

এভাবে পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে বাজারে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। সেজন্য  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ ক্রয়-বিক্রয়কে নিষিদ্ধ করে বলেন,  لاَ تَلَقَّوُا الرُّكْبَانَ‘তোমরা (পণ্যবাহী) কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করবে না’।[16]  

১৫. একজন ক্রেতা যখন কোন দ্রব্য কেনার জন্য বিক্রেতার সাথে দর-দাম করে, তখন অন্য কেউ যদি তার দামের উপর দাম বলে তাহ’লে বিক্রেতা দ্রব্যের চাহিদা দেখে অনেক সময় দাম বাড়িয়ে দেয়।

১৬. পণ্যদ্রব্য বিদেশে পাচার : আমাদের দেশের একশ্রেণীর মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের আশায় সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশে তেল, চামড়াসহ অন্যান্য দ্রব্য পাচার করে। ফলে দেশে সেসব পণ্যের ঘাটতি পড়ে এবং মূল্য বেড়ে যায়।

১৭. বিভিন্ন পণ্যের উপর আরোপিত আমদানী শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও অনেক সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে করণীয় :

১. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ কিংবা যোগান বন্ধ করে মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে গোয়েন্দা সংস্থা ও জনগণের সহযোগিতায় শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। যাতে কেউ পরবর্তীতে এ ধরনের অপকর্ম করার দুঃসাহস না দেখায়।

২. বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য যথাযথ কর্মসূচী হাতে নেয়া।

৩. সূদভিত্তিক অর্থনীতির কবর রচনা করে ন্যায় ও ইনছাফপূর্ণ ইসলামী অর্থনীতি চালু করা।

৪. মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে অত্যধিক মুনাফা লাভের মানসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য কার্যকর নিয়ম-নীতি প্রণয়ন ও দন্ডবিধির ব্যবস্থা করা।

৫. হালাল উপায়ে উপার্জনের বন্দোবস্ত করা। অন্যদিকে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং সরকার কর্তৃক জনগণের সম্পদের হিসাব গ্রহণ করা।

৬. সকল প্রকারের চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, যাতে পণ্য আমদানী ও পরিবহনের খরচ কমে যায়।

৭. নাজাশ ও তালাক্কী জাতীয় প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় যাতে না চলে সেজন্য বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা।

৮. একজন ক্রেতা কোন জিনিসের দাম করলে তার উপর দাম না বলা। কারণ রাসূল (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।[17] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَبِيْعُ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ وَلاَ يَسُوْمُ عَلَى سَوْمِ أَخِيْهِ- ‘কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তার ভাইয়ের দামের উপর দাম বলবে না’।[18] তিনি আরো বলেন, لاَ يَبِعِ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيهِ وَلاَ يَخْطُبْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ إِلاَّ أَنْ يَأْذَنَ لَهُ ‘কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। তবে তাকে অনুমতি দিলে ভিন্ন কথা’।[19] ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَبِيْعُ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ حَتَّى يَبْتَاعَ أَوْ يَذَرَ ‘কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাবের উপর বেচাকেনার প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না সে ক্রয় করে বা ছেড়ে যায়’।[20]

উল্লেখ্য যে, পণ্যের মালিক ও ক্রেতা কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করল, কিন্তু তা সম্পাদিত হ’ল না। এমন সময় অন্য আরেকজন এসে বিক্রেতাকে বলল, আমি এটি ক্রয় করব। মূল্য নির্ধারণের পর এটি হারাম। পক্ষান্তরে বিক্রিত পণ্যের দাম যে বেশী বলবে তার কাছে পণ্য বিক্রি করা হারাম নয়।[21]

৯. কোন দ্রব্যের উৎপাদন-সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে বা ঘাটতির আশংকা দেখা দিলে আমদানী উৎসাহিত করতে সরকার কর্তৃক শুল্ক কমিয়ে দেয়া এবং জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বেশী বেশী আমদানী করা।

১০. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আশংকা দেখা দিলে সরকার কর্তৃক পণ্যদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করা। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জাতীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। জাতীয় কমিটির অধীনে প্রতিটি মহানগরে বিভাগীয় কমিশনারকে এবং যেলায় যেলা প্রশাসককে প্রধান করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ কমিটি গঠিত হবে।

১১. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যেলায় যেলায় যে টাস্কফোর্স আছে তাকে সক্রিয় করতে হবে এবং পণ্য সরবরাহ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

১২. দেশে কৃষিপণ্যের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল মার্কেট গড়ে তুলতে হবে।

১৩. রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসলাদি সংগ্রহ করা। যাতে উৎপাদনকারীরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। যেমন এবার ধানের দাম পড়ে গেলে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ সময় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য ডিসিকে নির্দেশ দেন।[22] তাঁর নির্দেশমত নড়াইলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়। এতে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যায়। কৃষকও লাভবান হয়। এ দৃষ্টান্ত অন্যরাও অনুসরণ করতে পারে।

১৪. ব্যাংকগুলোতে এলসি (Letter of credit) বা ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে এক মাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহ’লে আমদানীকারকরা মজুদের সময় পাবে না এবং আমদানীর সাথে সাথে আমদানীকৃত পণ্যদ্রব্য বাজারে চলে যাবে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।

১৫. সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নযরদারী জোরদার করে চামড়া, তেলসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ভারতে পাচার রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে সেগুলো থেকে ভারতে তেল পাচার না হয়।

১৬. উৎপাদনকারীরা যাতে অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপন্ন করে সেজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং উৎসাহ দেয়া দরকার।

১৭. খাদ্যশস্য ও অন্যান্য আবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য ভর্তুকী সহকারে রেশনিং পদ্ধতিতে বিতরণ করা।

১৮. রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার আওতায় ব্যাপকভাবে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বণ্টনের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১৯. অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সরকারীভাবে খোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে পূর্ব থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরকার মজুদ করে রাখবেন।

মূল্যবৃদ্ধির সময় শারঈ দৃষ্টিতে কিছু করণীয় :

১. দো‘আ ও তওবা-ইস্তিগফার : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে সমাজের মানুষের উপর আপতিত একটি বিপদ। এত্থেকে মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যই আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতিসহ দো‘আ করতে হবে এবং বেশী বেশী তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا، يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا، وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا-

‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগিচাসমূহ সৃষ্টি করবেন ও নদীসমূহ প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ৭১/১০-১২)। ইবনু ছাবীহ বলেন, এক ব্যক্তি হাসান বাছরী (রহঃ)-এর নিকটে এসে অনুর্বরতার অভিযোগ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, اِستَغْفِرِ اللهَ ‘তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। অন্য আরেকজন এসে দরিদ্রতার অভিযোগ করলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। আরেকজন এসে বলল, আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে একটি সন্তান দান করেন। তিনি তাকে বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। অপর এক ব্যক্তি তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযাগ করলে তিনি তাকেও বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। আমরা এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূহে একথাগুলিই বলেছেন। এরপর তিনি উক্ত আয়াতগুলো পাঠ করলেন।[23]

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা তোমার পূর্বেকার সম্প্রদায় সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে তারা কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হ’ল না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখালো’ (আন‘আম ৬/৪২-৪৩)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ এর ব্যাখ্যায় বলেন,أَيْ: يَدْعُوْنَ اللهَ وَيَتَضَرَّعُوْنَ إِلَيْهِ وَيَخْشَعُوْنَ ‘অর্থাৎ আল্লাহর নিকটে দো‘আ করে, তাঁর নিকটে কাকুতি-মিনতি করে এবং বিনীত হয়’।[24]

জনৈক পূর্বসূরী বিদ্বানকে বলা হ’ল, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, أَنْزِلُوْهَا بِالْاِسْتِغْفَارِ ‘তোমরা ইস্তিগফারের মাধ্যমে এর মূল্য হ্রাস করে দাও’। এর প্রমাণে তিনি সূরা নূহের ১০-১২ আয়াত তেলাওয়াত করলেন।[25]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে একজন ব্যক্তি এসে তাঁকে মূল্য নির্ধারণের আবেদন জানালেন। তখন তিনি বললেন, بَلْ أَدْعُوْ ‘বরং আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করব’।[26] এ হাদীছ থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে আল্লাহর নিকট মূল্য হ্রাসের জন্য বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে। এ সময় নিম্নোক্ত দো‘আগুলি পড়া যায়।-

১. لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘(হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (আম্বিয়া ২১/৮৭)

২. اَللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلاَ تَكِلْنِىْ إِلَى نَفْسِىْ طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِىْ شَأْنِىْ كُلَّهُ لَآ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমত কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাতে ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই’।[27]

৩.لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ الْعَظِيْمُ الْحَلِيْمُ، لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ، لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ- ‘সহনশীল মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যিনি মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যিনি আসমান সমূহ ও যমীনের রব এবং মহান আরশের রব’।[28]

২. অপচয় পরিহার : অপচয় যেকোন সময় পরিত্যাজ্য। বিশেষতঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় এটি আরো বেশী পরিত্যাজ্য। মহান আল্লাহ বলেন,وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ‘তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِى غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلاَ مَخِيلَةٍ ‘তোমরা খাও, পান করো, পরিধান করো এবং অপচয় ও অহংকার ছাড়াই দান করো’।[29]

৩. অল্পে তুষ্টি : অল্পে তুষ্টি মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ ‘ তোমার ভাগ্যে আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতে খুশী থাকলে তুমি সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে গণ্য হবে’।[30] তিনি আরো বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ‘যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিযিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তাতে পরিতৃপ্ত হওয়ার শক্তি দিয়েছেন, সেই সফলতা লাভ করেছে’।[31]

৪. বর্ধিত মূল্যের জিনিস পরিহার : ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর যুগে লোকেরা তাঁর নিকটে এসে বলল, আমরা আপনার নিকটে গোশতের মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ করছি। অতএব আপনি আমাদের জন্য এর মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও (أَرْخِصُوْهُ أَنْتُمْ)। তখন তারা বলল, আমরা মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করছি। গোশত কসাইদের নিকটে আছে এবং আমরা এর প্রয়োজন অনুভব করছি। আর আপনি কি-না বলছেন, তোমরা নিজেরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও? আমরা কি গোশতের মালিক যে, এর মূল্য কমিয়ে দিব? যে জিনিস আমাদের হাতে নেই, তার মূল্য আমরা কিভাবে হ্রাস করব? তখন তিনি তার সেই মূল্যবান উক্তিটি করলেন, أُتْرُكُوْهُ لَهُمْ ‘তাদের নিকট থেকে গোশত কেনা ছেড়ে দাও’।

আলে আববাস-এর মুক্তদাস রাযীন বিন আল-আ‘রাজ বলেন, মক্কায় কিশমিশের দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে আলী (রাঃ)-কে জানালাম। তখন তিনি জবাবে লিখলেন, তোমরা খেজুর দ্বারা এর মূল্য হ্রাস করে দাও। অর্থাৎ তোমরা কিশমিশের পরিবর্তে খেজুর ক্রয় করো। যেটি হিজাযে পর্যাপ্ত ছিল এবং তার মূল্যও কম ছিল। এতে কিশমিশের চাহিদা কমে যাবে এবং তা সস্তা হয়ে যাবে।[32]

আববাসীয় কবি মাহমূদ আল-অর্রাক (মৃঃ ৮৪৪ খৃ.) বলেন,

وَإِذَا غَلَا شَيْءٌ عَلَيَّ تَرَكْتُهُ * فَيَكُوْنُ أَرْخَصَ مَا يَكُوْنُ إِذَا غَلَا

‘যখন আমার উপর কোন জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তখন আমি তা ক্রয় করা পরিহার করি। তখন মূল্যবৃদ্ধির সময় তা সস্তায় পরিণত হয়’।[33]

৫. আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা : যেকোন বিপদ-আপদ আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলে এবং তাঁর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করলে আল্লাহ তা আমাদের জন্য সহজ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন’ (তালাক ৬৫/২-৩)

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণের ক্ষেত্রে ৪টি বিষয় লক্ষ্যণীয় :

(ক) আল্লাহর প্রতি কেউ সুধারণা পোষণ করলে আল্লাহ তাকে সেই জিনিসটি দান করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَقُولُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِىْ بِىْ ‘আল্লাহ বলেন, আমি সে রকমই, যে রকম আমার প্রতি বান্দা ধারণা রাখে’।[34]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,

وَالَّذِي لَا إِلَهَ غَيْرُهُ، مَا أُعْطِيَ عَبْدٌ مُؤْمِنٌ شَيْئًا خَيْرًا مِنْ حُسْنِ الظَّنِّ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ- وَالَّذِي لَا إِلَهَ غَيْرُهُ، لَا يُحْسِنُ عَبْدٌ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ الظَّنَّ إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ ظَنَّهُ ذَلِكَ بِأَنَّ الْخَيْرَ فِيْ يَدِهِ-

‘যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই সেই সত্তার কসম করে বলছি, মহান আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণের চেয়ে উত্তম কোন জিনিস মুমিন বান্দাকে প্রদান করা হয়নি। যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই তার কসম করে বলছি, কোন বান্দা যদি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে তাহ’লে আল্লাহ তাকে তার ধারণাকৃত জিনিসটি প্রদান করেন। এ কারণে যে, যাবতীয় কল্যাণ আল্লাহর হাতে রয়েছে’। [35]

(খ) আল্লাহ কষ্টের পর সহজতার ওয়াদা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا، إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا ‘অতঃপর নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে’ (শরহ ৫-৬)

(গ) আল্লাহর চেয়ে বান্দার প্রতি অধিক দয়ালু আর কেউ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِى كِتَابِهِ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِى غَلَبَتْ غَضَبِى ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাবে (লওহে মাহফূযে) লিখেন, যা আরশের ওপর তাঁর নিকট আছে। ‘নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল’।[36]

(ঘ) আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য রিযিক লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা অন্য কিছু আপনার ও রিযিকের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِيْنٍ ‘আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিক আল্লাহর যিম্মায় নেই। আর তিনি জানেন তার অবস্থানস্থল ও সমর্পণস্থল। সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লওহে মাহফূযে) লিপিবদ্ধ রয়েছে’ (হূদ ১১/৬)। তিনি আরো বলেন,وَكَأَيِّنْ مِنْ دَابَّةٍ لَا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘এমন কত প্রাণী আছে যারা (আগামীকালের জন্য) তাদের খাদ্য সঞ্চয় করে না। আল্লাহ তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরকেও দেন। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (আনকাবূত ২৯/৬০)। আল্লাহ আরো বলেন, وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ ‘আর আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ’ (যারিয়াত ৫১/২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَوْ أَنَّ ابْنَ آدَمَ هَرَبَ مِنْ رِزْقِهِ كَمَا يَهْرُبُ مِنَ الْمَوْتِ لَأَدْرَكَهُ رِزْقُهُ كَمَا يُدْرِكُهُ الْمَوْتُ ‘আদম সন্তান যদি তার রিযিক থেকে পলায়ন করত, যেমন সে মৃত্যু থেকে পলায়ন করে, তবুও তার রিযিক তার নাগাল পেয়ে যেত, যেভাবে মৃত্যু তার নাগাল পায়’।[37]

৬. রিযিকে বরকত বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রিযিক বৃদ্ধি হয় এমন কর্ম সমূহ সম্পাদনে মনোযোগী হ’তে হবে। কারণ সম্পদ বেশী হওয়াটা মুখ্য নয়; বরং মুখ্য হ’ল তাতে বরকত লাভ। রিযিকে বরকত বৃদ্ধির মৌলিক কয়েকটি উপায় হ’ল :

(ক) আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِى رِزْقِهِ، وَيُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، ‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে’।[38]

(খ) বরকতের দো‘আ করা। নবী করীম (ছাঃ) দো‘আ করতেন,اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى صَاعِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى مُدِّنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِى مَدِينَتِنَا اللَّهُمَّ اجْعَلْ مَعَ الْبَرَكَةِ بَرَكَتَيْنِ ‘হে আল্লাহ! আমাদের ছা-য়ে বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের মুদে বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের মদীনায় বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আরো দু’টি বরকত দান করুন’।[39]

(গ) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। প্রত্যেক দিন সকালে দানশীল ব্যক্তির জন্য ফেরেশতা দো‘আ করেন,اَللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقاً خَلَفًا ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন’।[40]

(ঘ) ঋণ পরিশোধ করা। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,مَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ يَنْوِيْ أَدَاءَهُ كَانَ مَعَهُ مِنَ اللهِ عَوْنٌ وَسَبَّبَ اللهُ لَهُ رِزْقًا ‘যে তার ঋণ পরিশোধের নিয়ত করে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ করে এবং আল্লাহ তার জন্য  রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন’।[41]

৭. দুর্বল ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো : দুর্বল, অসহায় ও গরীব-দুঃখীদের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য বালা-মুছীবত থেকে মুক্তির উপায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’।[42] আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ابْغُونِي الضُّعَفَاءَ فَإِنَّمَا تُرْزَقُونَ وَتُنْصَرُونَ بِضُعَفَائِكُمْ ‘তোমরা দুর্বলদের মধ্যে আমাকে অনুসন্ধান করো। কারণ তোমরা তোমাদের মধ্যকার দুর্বলদের কারণেই রিযিক এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাক’।[43]

৮. ইবাদতে মনোযোগী হওয়া : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় রিযিকের চিন্তায় বিভোর হয়ে আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল থাকা যাবে না। বরং ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতঃ (বাক্বারাহ ২/৪৩, ১৫৩) রিযিকের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকতে হবে। জনৈক পূর্বসূরী বিদ্বানের যুগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। তাকে এ খবর জানানো হলে তিনি বললেন, والله لا أبالي ولو أصبحت حبة الشعير بدينار! عليَّ أن أعبده كما أمرني، وعليه أن يرزقني كما وعدني-  ‘আল্লাহর কসম! যবের দানার মূল্য যদি এক দীনারও হয় তাতে কুছ পরোয়া নেই। আমার কর্তব্য হ’ল আল্লাহ আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁর ইবাদত করা আর আল্লাহর কর্তব্য হ’ল তাঁর ওয়াদা মোতাবেক আমাকে রিযিক দেওয়া’।[44]

৯. লেনদেনে সহজতা অবলম্বন : সহজতা ইসলামী শরী‘আতের অনন্য বৈশিষ্ট্য। দৈনন্দিন লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষেরা সহজতার প্রয়োজন বেশী অনুভব করে। বিশেষত মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত সংকটের সময়। এজন্য সৎ ব্যবসায়ীর বৈশিষ্ট্য হ’ল তার সাথে যারা লেনদেন করে তাদের সাথে সহজতা অবলম্বন করা। উক্ববা বিন আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সম্পদ দান করেছিলেন তাঁর এমন এক বান্দাকে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত করে বলবেন, তুমি দুনিয়ায় কি আমল করেছ? সে বলবে,مَا عَمِلْتُ مِنْ شَيْءٍ يَا رَبِّ إِلاَّ أَنَّكَ آتَيْتَنِيْ مَالًا، فَكُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ، وَكَانَ مِنْ خُلُقِيْ أَنْ أُيَسِّرَ عَلَى الْمُوْسِرِ وَأُنْظِرَ الْمُعْسِرَ قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَنَا أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْكَ تَجاوَزُوْا عَنْ عَبْدِيْ- ‘প্রভু হে! আমি কোন আমল করিনি। তবে আপনি আমাকে সম্পদ দান করেছিলেন। আমি মানুষের নিকট কেনাবেচা করতাম। আমার বৈশিষ্ট্য ছিল, আমি স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজতা অবলম্বন করতাম এবং গরীব ব্যক্তিদের অবকাশ দিতাম। আল্লাহ বলেন, তোমার চেয়ে আমিই এর অধিক হকদার। তোমরা আমার বান্দার দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে  যাও’।[45]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَدْخَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْجَنَّةَ رَجُلاً كَانَ سَهْلاً مُشْتَرِيًا وَبَائِعًا وَقَاضِيًا وَمُقْتَضِيًا ‘মহান আল্লাহ এমন একজন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে ক্রেতা, বিক্রেতা, বিচারক ও বিচারপ্রার্থী অবস্থায় সহজতা অবলম্বনকারী ছিল’।[46] আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَ اللهَ يُحِبُّ سَمْحَ الْبَيْعِ، سَمْحَ الشِّرَاءِ، سَمْحَ الْقَضَاءِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয়, বিক্রয় ও বিচারের ক্ষেত্রে উদারতাকে পসন্দ করেন’।[47]

১০. তাক্বওয়া অবলম্বন করা : সর্বোপরি তাক্বওয়া অবলম্বন করা একান্ত কর্তব্য। কারণ তাক্বওয়াই রিযিকে বরকত ও প্রশস্ততা আনয়ন করে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি বিশ্বাস স্থাপন করত ও আল্লাহভীরু হ’ত, তাহ’লে আমরা তাদের উপর আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের দরুণ আমরা তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (আ‘রাফ ৭/৯৬)। তিনি আরো বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন’ (ত্বালাক ৬৫/২-৩)

উপসংহার :

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন দেশের জনগণ এতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। এটি আমাদের উপর মুছীবত হিসাবে আপতিত হয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিকতাবোধের উজ্জীবন ঘটাতে হবে। এর দুনিয়াবী প্রতিকারের সাথে সাথে শারঈ যেসব করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি পরিপালন করতে হবে। বেশী বেশী দো‘আ ও তওবা-ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে। সর্বোপরি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে। তাহ’লে সব চিন্তা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যাবে। বিশর ইবনুল হারিছ যথার্থই বলেছেন,إذا اهتممت لغلاء السعر فاذكر الموت فانه يذهب عنك هم الغلاء ‘তুমি যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য উদ্বিগ্ন হবে তখন মৃত্যুকে স্মরণ করবে। কারণ মৃত্যুকে স্মরণ তোমার মন থেকে মূল্যবৃদ্ধির দুঃশ্চিন্তা দূরীভূত করে দিবে’।[48]


[1]. শায়খ আতিইয়া মুহাম্মাদ সালিম, শারহু বুলূগিল মারাম, মাকতাবা শামেলাহ দ্র.।

[2]. আহমাদ হা/২২১১৮; ছহীহ তারগীব হা/২১৪৬; মিশকাত হা/৫২৬২।

[3]. মুসলিম হা/১৫২২; আবূদাঊদ হা/৩৪৪২; নাসাঈ হা/৪৪৯৫; মিশকাত হা/২৮৫২।

[4]. বুখারী হা/২১৫৮; মুসলিম হা/১৫২১।

[5]. আল-মুগনী ৬/৩০৯।

[6]. আবূ মালেক কামাল বিন সাইয়িদ সালিম, ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : আল-মাকতাবাতুত তাওফীকিয়্যাহ, ১৫তম সংস্করণ, ২০১৬), ৪/৩৯৩।

[7]. বুখারী হা/২১৬১.; মুসলিম হা/১৫২৩.; নাসাঈ হা/৪৪৯৩।

[8] A. B. M. Hossain, Commercial Laws in Islam (Dhaka: Islamic Foundation Bangladesh, 1983), P. 25.

[9]. বুখারী হা/২১৪০; আবূদাঊদ হা/৩৪৩৮; নাসাঈ হা/৩২৩৯।

[10]. বুখারী হা/২১৪২-এর পূর্বে।

[11]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী (রিয়াদ : দারুস সালাম, ১৪২১/২০০০), ৪/৪৪৯-৪৫০।

[12]. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, আল-শারহুল মুমতে‘ (কায়রো : দারু ইবনিল জাওযী, ৩য় সংস্করণ, ১৪৩৩ হিঃ), ৮/৩০০।

[13]. বুখারী হা/২১৬৬।

[14]. বুখারী হা/২১৬৫; মুসলিম হা/১৫১৭।

[15]. বুখারী ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭১, হা/২১৬২-এর পূর্বে।

[16]. বুখারী  হা/২১৫০।

[17]. বুখারী  হা/২৭২৭;মুসলিম হা/১৫১৫ ।

[18]. ইবনু মাজাহ হা/২১৭২, হাদীছ ছহীহ।

[19]. বুখারী হা/৫১৪২; মুসলিম হা/১৪১২।

[20]. নাসাঈ হা/৪৫০৪, হাদীছ ছহীহ।

[21]. ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ৪/৩৯০।

[22]. দৈনিক যুগান্তর, ২১শে মে’১৯।

[23]তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০২।

[24]তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/২৯০।

[25]https://www.saaid.net/Doat/mehran/87.htm

[26]আবুদাঊদ হা/৩৪৫০, হাদীছ ছহীহ।

[27]. আবূদাঊদ হা/৫০৯০, সনদ হাসান; মিশকাত হা/২৪৪৭।                                                                            

[28]. বুখারী হা/৬৩৪৬; মুসলিম হা/২৭৩০; মিশকাত হা/২৪১৭।

[29]নাসাঈ হা/২৫৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৫; মিশকাত হা/৪৩৮১, হাদীছ হাসান।

[30]তিরমিযী হা/২৩০৫, হাদীছ হাসান।

[31]মুসলিম হা/১০৫৪; মিশকাত হা/৫১৬৫।

[32]https://www.saaid.net/Doat/hamesabadr/133.htm

[33]. দীওয়ানু মাহমূদ আল-অর্রাক, সংকলনে : ড. ওয়ালীদ কাছ্ছা, ১ম প্রকাশ, ১৪১২/১৯৯১, পৃঃ ১৬৫

[34]বুখারী হা/৭৪০৫; মুসলিম হা/২৬৭৫।

[35]. ইবনু আবিদ দুনয়া, হুসনুয যন্ন বিল্লাহি, রাসাইলু ইবনু আবিদ দুনয়া (সংযুক্ত আরব আমিরাত : আল-মারকাযুল আরাবী লিল-কিতাব, ১ম প্রকাশ, ১৪২১/২০০০), ১ম খন্ড, পৃঃ ১২২, হা/৮৩।                                                                      

[36]বুখারী হা ৩১৯৪/; মুসলিম হা/২৭৫১।

[37]সিলসিলা ছহীহা হা/৯৫২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৪০, হাদীছ হাসান।

[38]বুখারী হা/৫৯৮৬; মুসলিম হা/২৫৫৭।

[39]বুখারী হা/২৮৮৯; মুসলিম হা/১৩৭৪।

[40]বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/১০১০।

[41]তাবারানী আওসাত হা/৭৬০৮; সিলসিলা ছহীহা হা/২৮২২।

[42]মুসলিম হা/২৬৯৯।

[43]. আবুদাঊদ হা/২৫৯৪, হাদীছ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহা হা/৭৭৯

[44]https://www.saaid.net/Doat/mehran/87.htm

[45]হাকেম হা/৩১৯৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৫।

[46]নাসাঈ হা/৪৬৯৬; ইবনু মাজাহ হা/২২০২; আহমাদ হা/৪১০; সিলসিলা ছহীহা হা/১১৮১।

[47]তিরমিযী হা/১৩১৯; হাকেম হা/২৩৩৮; সিলসিলা ছহীহা হা/৮৯৯।

[48]হিলয়াতুল আওলিয়া ৮/৩৪৭।





ইসলামের আলোকে হালাল রূযী - মুহাম্মাদ আতাউর রহমান
পণ্যে ভেজাল প্রদান : ইসলামী দৃষ্টিকোণ - ড. নূরুল ইসলাম
ইসলামের দৃষ্টিতে মজুদদারী - ড. নূরুল ইসলাম
বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যা : কারণ ও প্রতিকার - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যা : কারণ ও প্রতিকার (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং আমাদের প্রস্তাবনা - আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক
ঘুষের ভয়াবহ পরিণতি - আব্দুল মান্নান, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
ইসলামের দৃষ্টিতে মজুদদারী (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
ইসলামী ব্যাংকিং-এর অগ্রগতি : সমস্যা ও সম্ভাবনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মাহে রামাযানের পূর্ব প্রস্ত্ততি - আব্দুল মুহাইমিন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
পুঁজিবাদী অর্থনীতির স্বরূপ এবং এর সাথে ইসলামী অর্থনীতির তুলনামূলক আলোচনা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
হালাল জীবিকা - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
আরও
আরও
.