ইরাক থেকে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহার
যুক্তরাষ্ট্র গত ১৮ ডিসেম্বর ইরাক থেকে তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর ফলে ৯ বছরের ইরাক যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল। কিন্তু পড়ে রইল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতিগতভাবে বিভক্ত অনিশ্চিত এক ইরাক। মার্কিন বাহিনীর প্রায় ১১০টি গাড়ির একটি বহর গত ১৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসিরিয়া শহরের ইমাম আলী ঘাঁটি থেকে বের হয়। ঐ বহরে ছিল মার্কিন ফাস্ট ক্যাভালরি ডিভিশনের থার্ড ব্রিগেডের প্রায় ৫০০ সেনাসদস্য। মরুভূমির ভেতর দিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গাড়ি বহরটি ইরাক সীমান্ত অতিক্রম করে কুয়েতে ঢোকে। এখন ইরাকের মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তায় কেবল সেখানে ১৫৮ জন সেনাসদস্য রয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ইরাকের পাঁচ শতাধিক ঘাঁটিতে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭০ হাযার মার্কিন সেনা নিয়োজিত ছিল। এর আগে দীর্ঘ নয় বছর পর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শেষ মার্কিন পতাকাটি নামায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। গত ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এই পতাকা নামানোর মাধ্যমে ইরাকে মার্কিন অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধে আমেরিকার খরচ হয় ৩৫ হাযার কোটি ডলার। এতে প্রায় ১০ লাখ ইরাকী নিহত হয়েছে এবং পঙ্গু ও উদ্বাস্ত্ত হয়েছে কয়েক মিলিয়ন। তাছাড়া এতে প্রায় সাড়ে চার হাযার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
প্রথম পশ্চিমা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তীন
ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে আইসল্যান্ড ফিলিস্তীনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তীনকে স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতির পক্ষে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে ৬৩-৩৮ ভোটে পাস হয়েছে। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের সময়কার সীমানার ভিত্তিতে ফিলিস্তীন ভূখন্ড গঠিত হওয়ার পক্ষে পার্লামেন্ট সদস্যরা ভোট দিয়েছেন।
আরো ৫৫০ ফিলিস্তীনী বন্দীকে মুক্তি দিল ইসরাঈল : ইসরাঈল গত ১৮ ডিসেম্বর আরো ৫৫০ ফিলিস্তীনী বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরাঈলী সেনা গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে গত অক্টোবরের চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় এই বন্দীদের মুক্তি দেয়া হ’ল। দুই মাস আগে প্রথম দফায় ৪৭৭ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরাঈল।
কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর বর্বরতায় ২২ বছরে ৯৩ হাযারের বেশি নিহত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর বর্বরতায় ৯৩ হাযারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের গবেষণা শাখা জানিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৭ হাযার ব্যক্তি বন্দী অবস্থায় নিহত হয়েছেন। ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঐ একই সময়ে ভারতীয় বাহিনীর হাতে ১০ হাযারেরও বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছে।
ইরাকে দশ লাখ বিধবা
ইরাকে ১০ লাখ বিধবা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইরাক জুড়ে এখন তাদের হাহাকার। মাসে সরকারী সাহায্য ৮০ মার্কিন ডলার দিয়ে সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। ১৯৮০-এর দশকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ, ১৯৯১-এ কুয়েত দখল ও যুদ্ধ, দেশের ভিতর কুর্দীদের সঙ্গে সংঘাত এবং সবশেষ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন বাহিনী ও তার মিত্রদের আগ্রাসী হামলায় বিধবাদের সংখ্যা এ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।
তিউনিসিয়ায় আন-নাহযাহ পার্টির বিজয়; মারযূকী নতুন প্রেসিডেন্ট
প্রায় ১০ মাস আগে তিউনিসিয়ায় ঘটে যায় তথাকথিত ‘জেসমিন বিপ্লব’। বিপ্লবের শেষদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রেসিডেন্ট যায়নুল আবেদীন বিন আলী জানুয়ারীর ১৪ তারিখ সঊদী আরব পালিয়ে যান। তারপর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে গত ২৩শে অক্টোবর দেশটিতে হয়ে গেল প্রথম সাধারণ নির্বাচন। প্রথম সাংবিধানিক পরিষদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ মধ্যপন্থী ইসলামিক দল ‘আন-নাহযাহ’কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। উক্ত ফলাফলে দেখা যায়, নাহযা ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে মোট ২১৭টি আসনের মধ্যে ৯০টি আসনে জয়ী হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস প্রজাতন্ত্র (সিপিআর) ১৪ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে ৩০টি আসন জিতেছে। আর ১০ শতাংশ ভোটে ২১টি আসন নিয়ে তৃতীয় হয়েছে বামপন্থী ইত্তাকাতোল। আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পর আন-নাহযার প্রধান রশীদ ঘানুসি বলেন, ‘নতুন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিউনিসিয়ার প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা হবে’। নাহযা পার্টির এক মুখপাত্র বলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে তিউনিসিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মাদক নিষিদ্ধ করা হবে না বা বিদেশীদেরকে সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরিধান নিষিদ্ধ করা হবে না। ইসলামী ব্যাংকিংকে বাধ্যতামূলক করা হবে না। কেননা তাঁর মতে তিউনিসিয়া সবার দেশ। রশীদ ঘানুসির ভাষায়- ‘এখানে আল্লাহ, মুহাম্মাদ (ছাঃ), নারী, পুরুষ, ধার্মিক, অধার্মিক নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত করা হবে, যেহেতু তিউনিসিয়া সকলের’।
মারযূকী তিউনিসিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট : বিপ্লব-পরবর্তী তিউনিসিয়ায় গত ১২ ডিসেম্বর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মুনছেফ মারযূকী (৬৬)। স্বাধীনতার পর দেশটির দুই একনায়ক হাবীব বুরকিবা ও সর্বশেষে ক্ষমতাচ্যুত শাসক বিন আলীর দেশে মারযূকীই হলেন প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ১২ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ঐ নির্বাচনে তিনি ২১৭ ভোটের মধ্যে ১৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
[একে আদৌ ইসলামী দল বলা উচিত নয়। বরং এদের হাতেই ইসলাম সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের এই বিজয় মূলতঃ বিগত সরকারের যুলুমের বিরুদ্ধে নেগেটিভ বিজয় এবং নতুনের স্বাদ গ্রহণের আবেগের বিজয় মাত্র- (স.স.)]
মরক্কোয় ইসলামপন্থী দল পিজেডির জয়লাভ; প্রধানমন্ত্রী বিন কিরানে
মরক্কোর সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থী ‘জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা পিজেডি জয়লাভ করেছে। ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পিজেডি ১০৭টি আসন পেয়েছে অর্থাৎ মরক্কোর সংসদের ৩৯৫টি আসনের মধ্যে এক চতুর্থাংশ আসনে তারা বিজয়ী হয়েছে। এ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে জাস্টিস পার্টির প্রধান আব্দুল্লাহ বিন কিরানেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গত ২৯ নভেম্বর নিয়োগ দিয়েছেন রাজা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ। নির্বাচনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী আববাস আল-ফাসির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনালিস্ট পার্টি ৪৫টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। মরক্কোর তিনটি রাজনৈতিক দল মিলে ‘সেক্যুলার ফ্রন্ট’ নামে জোট গঠন করেছিল। এ ফ্রন্ট নির্বাচনে ১১৭টি আসন পেয়েছে। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন সাত হাজার। আর যেসব দল সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা দেশটির রাজতন্ত্র অব্যাহত থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। ফলে অন্যান্য দলের সঙ্গে পিজেডির জোট সরকার গঠন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
পিজেডির প্রধান আব্দুল্লাহ বিন কিরানে বলেছেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অন্য দলগুলোকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করা হবে। পিজেডি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইসলামের কোনো বিধান চাপিয়ে দেবে না। বরং তারা ইসলামী অর্থনীতি অনুসরণ করে দেশকে উন্নয়ন, অধিকতর সমবণ্টন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করবে। তবে মাদক এবং মহিলাদের পর্দার মত বিষয়গুলোতে তারা কোন মতামত দেবে না। কেননা মরক্কো পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। যদিও ইতিপূর্বে তারা সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল। তারা শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র মেনে নিয়েছে। এ ব্যবস্থায় বাদশাহ কেবল শাসনতান্ত্রিক প্রধান হবেন। দেশ পরিচালনা করবে পার্লামেন্ট এবং মন্ত্রীসভা।
মিসরে ইসলামপন্থী দলগুলোর একচেটিয়া সাফল্য
মিসরে সংসদ নির্বাচনের তিন দফার প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৮-২৯ নভেম্বর। ৬০ বছরের মধ্যে দেশটিতে এটিই প্রথম অবাধ নির্বাচন। নির্বাচন হাইকমিশনের প্রধান আব্দুল মোয়েয ইবরাহীম বলেন, ‘ফেরাঊন থেকে আজ পর্যন্ত এটিই সর্ববৃহৎ নির্বাচন। এর আগে কখনোই ৬২ শতাংশ লোক কোনো নির্বাচনে ভোট দেয়নি’। নির্বাচনে মিসরের জনপ্রিয় ইসলামী দল ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নিয়ন্ত্রিত ‘ফ্রীডম এন্ড জাস্টিস পার্টি’ ৩৭% ভোট পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত সালাফী সংগঠন ‘আন-নূর’ পার্টি ২৪% ভোট পেয়ে ২য় স্থানে রয়েছে। এছাড়া ধর্মনিরপেক্ষ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি লাভ করেছে ১৩% ভোট এবং মধ্যপন্থী আল-ওয়াসাত ৪.২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ৬০%-এর বেশী ভোট পাওয়ায় নির্বাচনে ইসলামপন্থী জোট নিশ্চিতভাবেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে। কেননা এখনো পর্যন্ত দেশের যে দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে নির্বাচন হয়নি সেসব অঞ্চলের অধিকাংশ ভোটারই ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থক। আগামী ১১ জানুয়ারীতে পরবর্তী দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিল অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কামাল আল-গানজৌরিকে নিয়োগ দিয়েছে। এর আগেও তিনি হুসনী মুবারকের শাসনামলে মিসরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানী কায়রোর এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শপথ নিয়েছে। সামরিক শাসক হুসাইন তানতাবী মন্ত্রীদের শপথ পাঠ করান। মিসরের ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদ দাবী করেছে, দেশটিতে চলমান নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এককভাবে মিসরের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে না; বরং সামরিক সরকার সংবিধান প্রণয়নের কাজ নিয়ন্ত্রণ করবে। অথচ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট দেশটির জন্য সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১০০ সদস্যের একটি সাংবিধানিক আইনসভা গঠন করার কথা আছে। সেনা পরিষদ আরো দাবী করেছে, দেশটিতে চলমান পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে মিসরের জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয়নি।
[এইসব নামকাওয়াস্তে ইসলামী দল কখনোই জনগণের ইসলামী আকাংখা পূরণ করবে না। বরং আপোষকামিতার চোরাবালিতে এদের হাতেই জনগণের ইসলামী আকাংখাকে হত্যা করা হবে- (স. স.)]