দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় আঙ্গুর
আঙ্গুরে আছে প্রচুর ভিটামিন, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দেহের প্রোটিন লেভেল বাড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি গবেষকরা জানালেন, আঙ্গুর চোখের সুরক্ষায়ও কাজ করে থাকে। নিউইয়র্কের ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এ তথ্য জানান। তারা জানান, আঙ্গুরে এমন এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বার্ধক্যজনিত অন্ধত্বকে দূরে রাখে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এটা এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের (এএমডি’র) বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফোর্ডহাম ইউনিভার্সিটির গবেষক দলের প্রধান সিলভিয়া ফিনেমেন বলেন, ‘প্রতিদিনের ডায়েট চার্টে নিয়মিত আঙ্গুর রাখলে তা জীবনের শেষদিকে গিয়ে চোখের সুরক্ষায় ঢাল হিসাবে কাজ করবে’। চোখের বিশেষ করে রেটিনার সুরক্ষায় আগেভাগেই আঙ্গুর খাওয়া শুরু করতে হবে। যখন অন্ধত্ব কাছাকাছি চলে আসবে, তখন আঙ্গুর খেলে কোন লাভ হবে না।
কামরাঙ্গা কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হ’তে পারে
এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার একটি জনসচেতনতামুলক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, কামরাঙ্গা ফল বা এর রস খাওয়ার ফলে কোন ব্যক্তি হঠাৎ কিডনির কার্যক্ষমতা হারিয়ে কিডনি ফেইলিয়রের শিকার হ’তে পারেন। জানা যায়, পঞ্চাশ বছর বয়স্ক একজন সুস্থ ও সবল লোক তার বাসায় কামরাঙ্গা থেকে তৈরি ৩০০ কামরাঙ্গার জুস খালিপেটে পান করে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে তিনি অস্বস্তিবোধ, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা নিয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। কামরাঙ্গার রস পান করার চার দিন পর তার প্রস্রাবের পরিমাণ অত্যধিক কমে যায় এবং কিডনির অকার্যকারিতা দেখা দেয়।
পরবর্তীতে আরো ভাল চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য এই রোগী এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার নেফ্রোলজি কনসালটেন্ট ডাঃ গুলশান কুমার মুখিয়ার কাছে এলে, তিনি তাকে কিডানি বায়োন্সি করার পরামর্শ দেন। এই হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষায় প্রচুর পরিমাণ রংবিহীন ক্ষুদ্রাকৃতির অক্সালেট স্ফটিক কনিকা পাওয়া যায়। যেহেতু রোগীর অতি স্বল্প পরিমাণ প্রস্রাব নির্গত হচ্ছিল এবং বুকে জমাট বেধে কষ্ট হচ্ছিল সেজন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার্থে দুইবার হেমো-ডায়ালাইসিস প্রদান করা হয়। তিনি এ্যাপোলো হাসপাতালে ৬ দিন ভর্তি থাকার পর ডিসচার্জ হয়ে বাড়ি ফিরে যান এবং এই কিডনি ফেইলিয়র হবার ২০ দিনের মাথায় তার কিডনির কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ স্বাভাবিকে ফিরে আসে।
এই সম্পর্কে এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার নেফ্রোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ গুলশান কুমার মুখিয়া বলেন, কামরাঙ্গা একটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ফল, যা যে কারো কিডনি ফেইলিয়র ও স্বল্প পরিমাণ প্রস্রাব নির্গমনের কারণ হ’তে পারে। বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালেও প্রমাণসহ এই ধরনের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। কামরাঙ্গা খাওয়ার পর এই ধরনের স্বল্প পরিমাণ প্রস্রাব নির্গমনের সমস্যা দেখা দিলে একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ বা নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেয়ার জন্য ডাঃ মুখিয়া সাধারণ জনগণকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত স্থূলকায় ভুগছেন এবং কিডনি রোগের ঝুকিতে আছেন অথবা যাদের কিডনিজনিত রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের কামরাঙ্গা ফল না খাওয়াই উত্তম।
জলপাইয়ের গুণাগুণ
মানুষের শরীরের শান্তির দূত হ’ল জলপাইয়ের তেল বা অলিভ ওয়েল। ভেষজ গুণে ভরা এই ফলটি লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও পরিচিত। গ্রিক সভ্যতার প্রারম্ভিককাল থেকে এই তেল ব্যবহার হয়ে আসছে রান্নার কাজে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণ এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, জলপাই তেলে এমন উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখে। জলপাই তেল পেটের জন্য খুব ভাল। এটা শরীরে এসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তারা দিনে এক চা চামচ জলপাই তেল খেলে উপকার পাবেন। গবেষকরা বলেন, জলপাই তেল গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কুচকানো প্রতিরোধ হয়। গবেষকরা বিভিন্ন লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, প্রতিদিন দুই চা চামচ জলপাই তেল ১ সপ্তাহ ধরে খেলে তা দেহের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেষ্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। অন্যদিকে স্প্যানিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, খাবারে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। এটা পেইন কিলার হিসাবেও কাজ করে। গবেষকরা আরো জানান, গোসলের পানিতে চার ভাগের এক ভাগ চা চামচ জলপাই তেল ঢেলে গোসল করলে স্বস্তি পাওয়া যায়।
জলপাইয়ের পাতা ও ফল দু’টোই ভীষণ উপকারী। জলপাইয়ের রস থেকে যে তেল তৈরি হয় তার রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। প্রচন্ড টক এই ফলে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। এই ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে হৃৎপিন্ডের রক্তপ্রবাহ ভাল রাখে। ফলে হৃৎপিন্ড থেকে অধিক পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পেঁŠছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সিদ্ধ জলপাইয়ের চেয়ে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিমূল্য অধিক। এই ফলের আয়রণ রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে অাঁশজাতীয় উপাদান। এই অাঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এই পাতা ছেঁচে কাটা, ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে ঘা দ্রুত শুকায়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, ক্রমাগত মুটিয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া উপকারী পথ্য হিসাবে কাজ করে। মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করতেও এ পাতার গুঁড়া ব্যবহৃত হয়। রিউমাটিয়েড আর্থ্রাইটিসে জলপাই পাতার গুঁড়া ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা কমে। জলপাইয়ের তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়াতে ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ভাল হয়, চুলের ঝরে যাওয়া তুলনামুলকভাবে হ্রাস পায়। সর্দি-কাশি হ’লে শরীর একেবারে রোগা-পাতলা হয়ে যায়। তরিতরকারি রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়। কারণ এ তেলের ফ্যাটি খুব সহজে হজম হয়। এটি কডলিভার অয়েলের চেয়েও ভাল কাজ করে। তাছাড়া কডলিভার অয়েলের বদলে জলপাইয়ের তেলও কাঁচা খেতে পারলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা খেতে অসুবিধা হ’লে কমলালেবুর রস বা অন্য যেকোন ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
কাশি কমাতে কিছু পরামর্শ
শীতকালে অনেক মানুষই কাশির সমস্যায় ভোগেন। কাশি থেকে কি করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়, এ সম্পর্কে কিছু পরামর্শ।
১. আদা শুকিয়ে তা পিষে গরম পানির মধ্যে অনেকক্ষণ ফোটাতে হবে। সেই পানিটা হালকা গরম করে দিনে তিনবার পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
২. গোলমরিচ, হরীতকীর গুঁড়ো ও পিপ্পল পানির মধ্যে মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে ঐ পানি দিনে দু’বার পান করলে কাশি একেবারে কমে যাবে।
৩. হিং, গোলমরিচ এবং নাগরমোথা পিষে গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরী করে ঐ বড়ি প্রতিদিন খাওয়ার পর খেতে হবে। এতে কাশি কমে যাবে। বুকে জমে যাওয়া কফও বেরিয়ে আসবে।
৪. পানির মধ্যে লবণ, হলুদ, লবঙ্গ এবং তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানিটা ছেঁকে নিয়ে রাতে শোয়ার আগে ঐ পানি হালকা গরম করে পান করতে হবে। নিয়মিত পান করলে ৭ দিনের মধ্যে কাশি কমে যাবে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাজর
সম্প্রতি ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানান, গাজরে আছে এক ধরনের হলুদ বর্ণের রঞ্জক পদার্থ, যার নাম ক্যারোটিনোয়েডস। এ উপাদানটি আমাদের ত্বক কোষে পৌঁছে একে পরিষ্কার করে। সেই রঞ্জক পদার্থের আভাই আমাদের ত্বকে পরিলক্ষিত হয় এবং কম সময়েই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা যায়। এই গবেষণার প্রধান ইয়ান স্টেফেন জানান, নিয়মিত গাজর খেলে দুই মাসের মধ্যেই ত্বকে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়।
বাড়তি ওযন কমাতে পেঁয়াজ
আমাদের দেশে রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার হয় অহরহ। কিন্তু এটি সরাসরি তরকারী হিসাবেও ব্যবহৃত হ’তে পারে এবং তা হ’তে পারে শরীরের জন্য খুবই পুষ্টিকর। একই সঙ্গে এটি কমাতে পারে শরীরের বাড়তি ওযনও। কারণ পেঁয়াজে আছে উচ্চমানের সালফার যৌগ। আর এ কারণেই পেঁয়াজ কাটলে নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ লাগে, চোখে পানি চলে আসে। তবে এ বস্ত্তটিই আবার আমাদের অনেক উপকারে আসে।
গবেষকরা বলছেন, পেঁয়াজ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত পেঁয়াজসমৃদ্ধ তরকারী বা পেঁয়াজের তরকারী খেলে উপকার পাবেন। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমায়। পেঁয়াজ ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর ২০ ভাগ মেটানো সম্ভব একটা পেঁয়াজ থেকেই।
\ সংকলিত \