সালাফী দাওয়াত হ’ল রহমতের নবীর রেখে যাওয়া শান্তি ও রহমতের দাওয়াত। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর দিকে মানুষকে ফিরিয়ে নেবার দাওয়াত। যে দাওয়াতের মধ্যে হেদায়াত ব্যতীত কোন ভ্রষ্টতা নেই। প্রশান্তি ব্যতীত কোন ভীতি নেই। সৌভাগ্য ব্যতীত কোন দুর্ভাগ্য নেই। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, সে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং হতভাগ্য হবে না’ (ত্বোয়াহা ২০/১২৩)। এই দাওয়াত ক্ষতিকর হ’ল তাদের জন্য, যারা নানাবিধ শিরক ও বিদ‘আতের মাধ্যমে রূযী তালাশ করে ও মানুষের পরকাল নষ্ট করে। এই দাওয়াত ভীতিকর হ’ল ঐ লোকদের জন্য, যারা দ্বীনকে হুকূমত থেকে পৃথক করেছে ও মানুষকে আল্লাহর আইনের গোলামী থেকে বের করে নিজেদের মনগড়া আইনের শৃংখলে আবদ্ধ করেছে। এই দাওয়াত ভয়ংকর হ’ল ঐসব মূর্খ জিহাদীদের জন্য, যারা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের মাধ্যমে দ্রুত জান্নাত লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে গেছে।
এই দাওয়াত ঐসব ভানকারী লোকদের বিরুদ্ধে, যারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে প্রতিনিয়ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যাচ্ছে। এই দাওয়াত সর্বদা মানুষকে রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া পরিচ্ছন্ন দ্বীনের প্রতি আহবান জানায়। যে দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে ধ্বংস হবে। এই দাওয়াত মানুষকে রায় ও ক্বিয়াসের ধূম্রজাল থেকে বের করে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকোজ্জ্বল সরল পথে পরিচালিত করে। এই দাওয়াত তাওহীদকে শিরকের দূষণমুক্ত এবং আমলকে বিদ‘আতের কলুষমুক্ত করতে চায় এবং আনুগত্য ও অনুসরণকে স্রেফ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য খাছ করতে চায়। এই দাওয়াতকে জিহাদী ও ত্বাগূতী বা চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী বলে ভাগাভাগি করার কোন সুযোগ নেই। যখনই কেউ এই দাওয়াতের মধ্যপন্থী আক্বীদা ও পরিচ্ছন্ন নীতি থেকে বের হয়ে যাবে, তখনই সে সালাফী তরীকা থেকে বিচ্যুৎ হবে। এই দাওয়াত কোন কবীরা গোনাহগার মুসলিমকে কাফের বলে না। তার রক্তকে হালাল মনে করে না। এই দাওয়াত জীবনের প্রতিটি শাখা এবং প্রতিটি দিক ও বিভাগকে বিশুদ্ধ ইসলামের বিধান অনুযায়ী ঢেলে সাজাতে চায়। যদি কোন একটি শাখায় সে ব্যর্থ হয়, তাহ’লে ঐ শাখায় সে সালাফী থাকে না এবং তখন সে বিকলাঙ্গ হবে, পূর্ণাঙ্গ সালাফী হবে না। যদি কেউ মনে করে আল্লাহর বিধান এ যুগে অচল, অথবা মনে করে যে, আল্লাহর বিধানের চাইতে মানুষের মনগড়া বিধান উত্তম বা সমান বা দু’টিই চলবে, তাহ’লে সে নিঃসন্দেহে কুফরী করবে এবং কবীরা গোনাহগার হবে। সুস্থ ও সক্ষম অবস্থায় খালেছ তওবা ব্যতীত আখেরাতে তার বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। এই দাওয়াতের অনুসারীরা মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং পরস্পরে যুদ্ধ করাকে কুফরী বলে মনে করে। তারা ক্ষমতার জন্য দলাদলি ও তার জন্য ব্যালট ও বুলেট দু’টি পদ্ধতিকেই নিষিদ্ধ গণ্য করে এবং সর্বত্র দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ও শূরা পদ্ধতি সমর্থন করে। তারা সূদী ও পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে হারাম মনে করে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা বাদ দিয়ে মানুষের মনগড়া শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিলযোগ্য মনে করে।
সালাফী দাওয়াত স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাওহীদে ইবাদত ও ছহীহ সুন্নাহর ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য কামনা করে এবং এজন্য সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালায়। তারা পারস্পরিক বিনয় ও সহনশীলতাকে ঐক্যের পূর্বশর্ত বলে গণ্য করে এবং পরস্পরে গীবত-তোহমত ও হিংসা-প্রতিহিংসাকে এপথে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করে। এই দাওয়াত মুসলমানদের সকল দল-মতের আলেম ও সমাজনেতাকে সম্মান করে ও তাদের সকল সৎকর্মে সহযোগিতা করে। তারা মনে করে যে, শিরক বিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস ও বিদ‘আত মুক্ত ইত্তেবায়ে সুন্নাহ ব্যতীত কারু সাথে পুরাপুরি ঐক্যের কোন সুযোগ নেই। তারা সর্বাবস্থায় হাদীছের অনুসারী হিসাবে কাজ করে এবং হাদীছ বিরোধী সবকিছু পরিত্যাগ করে। তারা সর্বাবস্থায় ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধকে তাদের স্থায়ী কর্মপদ্ধতি হিসাবে গণ্য করে এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে সমাজ সংস্কারকে তাদের প্রধান কর্মসূচী হিসাবে নির্ধারণ করে। উক্ত মহতী লক্ষ্যে তারা দ্বীনদার আমীরের অধীনে সম আক্বীদাসম্পন্ন মুমিনদের সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে অপরিহার্য বলে বিশ্বাস করে। তারা জামা‘আতবদ্ধ জীবনকে আবশ্যিক ও বিচ্ছিন্ন জীবনকে নিষিদ্ধ মনে করে। তারা সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা করে ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে এবং আইনের চোখে সরকার ও সাধারণ নাগরিক সকলে সমান বলে বিশ্বাস করে।
তারা মনে করে, প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি নয়। তবে ইসলাম বিরোধী হুকুম মানতে কোন মুসলিম নাগরিক বাধ্য নয়। এমতক্ষেত্রে সরকারের নিকটে কুরআন ও হাদীছের বক্তব্য তুলে ধরাই বড় জিহাদ; যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। তাদের মতে, একজন মুমিন যেখানেই বসবাস করুক, সর্বদা তার জিহাদী চেতনা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’-এর মূলনীতি থেকে সে মুহূর্তের জন্যও বিরত থাকতে পারবে না। বাতিলের সঙ্গে আপোষ করে নয়, বরং বাতিলের মুকাবিলা করেই তাকে এগোতে হবে। এজন্য নিরন্তর দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে সংস্কার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এভাবেই সমাজে স্থায়ী পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ। বস্ত্ততঃ এটাই হ’ল নবীগণের তরীকা। আর প্রকৃত প্রস্তাবে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া পবিত্র আমানতই হ’ল সালাফী দাওয়াত। যা উপমহাদেশে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ বলে পরিচিত। সালাফী দাওয়াত সম্পর্কে অজ্ঞ কল্পনা বিলাসী রাই নানাবিধ রঙ চড়িয়ে এই মহান দাওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। অতএব প্রকৃত সালাফীরা সাবধান! (স.স.)।