পানি চুক্তি ও পার্বত্য চুক্তির পর বর্তমানে প্রক্রিয়ারত করিডোর চুক্তি, সীমান্তে বিএসএফ-এর নিয়মিত হামলা, ফারাক্কা ও গোজলডোবা ব্যারেজ ও অন্যান্য বাঁধ সমূহের মাধ্যমে উজানে পানি শাসন, খরা ও বন্যা সৃষ্টি, অসম বাণিজ্য, প্রায় উন্মুক্ত চোরাচালান, অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, মুদ্রা পাচার, আদম পাচার, মেধা পাচার, দক্ষিণ তালপট্টি দখল, বেরুবাড়ী দখল, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সহ ছিট মহল সমস্যা, মুহুরীর চর দখল প্রক্রিয়া, সবশেষে গত ১৩ই আগস্ট’৯৯ রাতে রাজশাহী শহরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম পুলিশের কথিত দুঃসাহসিক গোপন অভিযান, সাথে সাথে ক্ষমতাসীন সরকারের উৎকট পরদেশ প্রীতি সবকিছু মিলিয়ে আজ এ প্রশ্ন আপনা থেকেই বেরিয়ে আসছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কি সত্যিই বিপন্ন? নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য যাই-ই থাকুক না কেন, আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা আছে বলেই আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে পারছি। যদি মাটির স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, তাহলে মাটির মানুষের স্বাধীনতা থাকবে কিভাবে? দুর্ভাগ্য এই যে, আমরা সাধারণ মানুষ নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবি ও স্বাধীন মেযাজ নিয়ে চলাফেরা করি। কিন্তু যাদেরকে আমরা নির্বাচন করে সংসদে পাঠিয়ে দিই, তারা ওখানে গিয়ে বাস্তবে পরাধীন হয়ে যান। বিরোধী দলে থাকার সময় প্রচন্ড দেশপ্রেমিক। ক্ষমতায় গেলেই হন পরদেশ তোষণকারী। এই ডিগবাজি খেলা চলছে প্রত্যেক সরকারের আমলে।

অন্য দেশের পরোক্ষ শাসন-শোষণ ও চোখরাঙানীকে উপেক্ষা করে স্বাধীন নীতি-আদর্শ নিয়ে চলার মত শক্ত-সমর্থ ও সৎসাহসী সরকার এযাবত বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটেনি। বরং যত দিন যাচ্ছে, তত যেন আমরা হতাশ হচ্ছি। গণতন্ত্রের নামে যে দলতান্ত্রিক রাজনীতি এদেশে চলছে, তাতে সৎ ও নিরপেক্ষ কোন লোক এদেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে মনে হয় না। যদি কেউ ভাগ্যক্রমে এসেও যান, তবে তিনি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না দলের কারণে। দলীয় শাসন কখনোই সুশাসন নয়। এরপরেও যদি সেই দলের নিকটে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় না থাকে, তবে তা হিংস্র বাঘের মত কেবল অন্য দলকে হামলা করতেই থাকে। হেন নোংরা কাজ নেই, যা তারা করতে পারে না। গত ২২শে আগস্ট’৯৯ বিরোধী দলীয় হরতালের দিন ঢাকায় একটি তরতাযা তরুণকে ফাঁকে পেয়ে হরতাল বিরোধী কয়েকজন ব্যক্তি চড়, কিল, ঘুষি মেরে ধরাশায়ী করল। বুকে-পিঠে-মুখে উপর্যুপরি লাথির আঘাতে ছেলেটি আর্ত চিৎকার করতে করতে একসময় যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ল, তখন ঐ লোকগুলি অসহায় তরুণটির অমূল্য দু’টো চোখ তুলে নিয়ে হৈ হৈ করতে করতে চলে গেল। শত শত লোকের সামনে এই লোমহর্ষক কান্ড ঘটল। কিন্তু কিছুই করার নেই। ওরা যে দেশপ্রেমিক দলের লোক, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি...। এর নাম যদি গণতন্ত্র হয়, তাহলে পশুতন্ত্র কাকে বলে আমরা জানি না। ধিক শত ধিক ঐ গণতন্ত্রের! যেখানে মানুষের জান-মাল ইযযতের কোন মূল্য নেই। যেখানে স্বাধীনভাবে মানুষ তার মত ও পথের বিকাশ ঘটাতে পারে না। যেখানে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই। নেই কোন নিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা। আর তাই ঢাকা শহরে প্রাচীন ইসলামী পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পুনরায় চালু হ’তে যাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। বলা বাহুল্য যে, পঞ্চায়েত আমলে ঢাকায় কোন খুন-ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, হাইজ্যাকিং ইত্যাদি ছিল না। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার পর এগুলো মহামারী আকারে রাজধানী সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষণে আমাদের ভাবতে হচ্ছে, যে ব্যবস্থা দেশের জনগণের ঘুম হারাম করেছে। মা-বোনের ইযযত কেড়ে নিয়েছে। জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ শাসন ও বিচার ব্যবস্থা নস্যাৎ করেছে। সেই অমানবিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণ কেন তাদের জান-মাল, সময় ও শ্রম ব্যয় করবে? সত্যিকারের স্বাধীনতা সেটাই, যেখানে মানবতার বিকাশ ঘটে। পশুত্বের প্রসার ঘটানোর জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। বরং পশুত্ব পরাজিত হউক ও সর্বত্র মানবতার বিজয় ঘটুক- এটাই ছিল সকলের একান্ত কাম্য।

আমরা দেশের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ দেখতে চাই। দেশের স্বাধীনতা কেবল তাদের হাতেই নিরাপদ হ’তে পারে, যারা দেশবাসীর আক্বীদা-আমল ও তাহযীব-তমদ্দুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যারা পার্শ্ববর্তী বা দূরবর্তী কোন অমুসলিম দেশের গৃহীত আদর্শকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে চায়, তারা কখনোই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নয়। আজকের যুগ সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের যুগ। সাম্রাজ্যবাদীরা সর্বাগ্রে তাদের টার্গেটকৃত দেশের আক্বীদা-বিশ্বাসের উপর হামলা করে। এদেশের ইসলামী আক্বীদার বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র, খ্রিষ্টানী ধর্মনীতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে যারা আপন মনে করে, তাদের হাতে এদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কখনোই নিরাপদ নয়। অতএব কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। যেন কাশ্মীরের মত দুর্ভাগ্যজনক অবস্থার শিকার আমাদের না হ’তে হয়।... আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন।






প্রসঙ্গ : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চাই লক্ষ্য নির্ধারণ ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব জাতির ভবিষ্যৎ হ’ল ইসলামী খেলাফতে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জেরুযালেম দখলে ট্রাম্প - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হাদীছ অস্বীকারের ফিৎনা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ক্বিয়ামতের গুজব ও বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ড - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল্লাহদ্রোহীদের আস্ফালন ও মুসলমানদের সরকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হকিং-এর পরকাল তত্তব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হজ্জ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর তাকীদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাবলীগী ইজতেমা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.