সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেণ্ট জো বাইডেন। পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে বাইডেন ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন ৩০৬টি এবং রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেণ্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। পপুলার ভোটেও বাইডেন পেয়েছেন ৫০.৯ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৭.৩ শতাংশ ভোট। এই জয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক পপুলার ভোট পাওয়ার ইতিহাসও সৃষ্টি করেন ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন।
ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাম্প তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ভোট গণনায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মামলা করেছেন। তবে ইতিমধ্যে অধিকাংশ মামলায় তিনি হেরেও গেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভোট গণনায় কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি সফটওয়্যার বা অন্য কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির খবরও কোথাও পাওয়া যায়নি।
সাবেক ডেমোক্র্যাট ও নোবেল জয়ী প্রেসিডেণ্ট বরাক হোসেন ওবামা বলেন, আমরা এই মুহূর্তে একটি বিভাজিত জাতি। ২০০৮ সালে আমি যখন নির্বাচিত হই, তখন এতটা বিভাজন ছিল না। বিষয়টি এবারের নির্বাচনের ফলের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে এই বিভাজনে উসকানি দিয়েছেন। এবার বাইডেন ও ট্রাম্প দুই প্রার্থীই সাত কোটির বেশী ভোট পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা একই সঙ্গে বিপরীতমুখী দু’টি সত্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করছি। এভাবে গণতন্ত্র কাজ করে না।
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সহজে বের হতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল থেকে স্পষ্ট যে, গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এ দেশ। তিনি আরও বলেন, এই ক্ষত এক নির্বাচনে সারবে না।
জীবনী : জো বাইডেন ১৯৪২ সালে পেনসিলভেনিয়ার খুবই সাধারণ এক যৌথ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। তার পরিবার ছিল খুবই ধার্মিক। ছেলেবেলায় তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। হাই স্কুলে তথা উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
১৯৭৩ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা ৩৬ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার উদ্যোগ নিলে লজ্জাজনক ঘটনার কারণে তা হোঁচট খায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরির ও অসততার অভিযোগ আনা হ’লে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ২০০৯ সালে বারাক ওবামার সময়কালে ৮ বছর (২০০৯-২০১৭) তিনি
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও মেয়েকে হারান বাইডেন। ২০১৬-এর নির্বাচনে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে প্রস্ত্ততি নেওয়ার সময় ২০১৫ সালের মে মাসে তার বড় ছেলে ৪৬ বছরের বো বাইডেন ব্রেইন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান।
১৯৭৭ সালে বিবাহ করা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা ড. জিল জ্যাকবস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন পরিপূর্ণ পেশাজীবী নারী হিসেবে প্রথম ফার্স্ট লেডি হ’তে যাচ্ছেন। কারণ ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও তিনি শিক্ষকতা পেশা চালিয়ে যেতে চান।