‘হেফাজতে ইসলামে’র নতুন আমীর নির্বাচিত হয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক সহকারী পরিচালক মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী (৬৭), চট্টগ্রাম। মহাসচিব নিযুক্ত হয়েছেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (৭৪), ঢাকা। একই সাথে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটির সদস্যদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই কমিটিতে হেফাজতের পরলোকগত আমীর মাওলানা আহমাদ শফীর কনিষ্ঠ পুত্র আনাস মাদানী ও তাঁর অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি। তবে আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।

‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’-এর আমীর এবং চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী (১০৩) গত ১৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সংগঠনের এক টাল-মাটাল অবস্থায় হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণের প্রায় দু’মাস পর গত ১৫ই নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় এক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সারা দেশ থেকে সংগঠনটির প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ১২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি হেফাজতের নতুন এই কমিটির প্রস্তাব দেন। ১৫১ সদস্যের এই কমিটিতে ২৪ জন উপদেষ্টা, ৩২ জন নায়েবে আমীর, ৪ জন যুগ্ম মহাসচিব, ১৮ জন সহকারী মহাসচিবের পদ ঘোষণা করা হয়। উপদেষ্টা কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী সহ, আব্দুল হালীম বোখারী, সুলতান যওক নদভী, মুফতী ওয়াক্কাস প্রমুখ আছেন। এছাড়া নায়েবে আমীর হিসাবে হাফেয আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর, নুরুল ইসলাম অলিপুরী, প্রফেসর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রমুখ আছেন।

হেফাজতে ইসলাম ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হিসাবে পরিচিত হ’লেও বিএনপি জোটের শরীক ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’-এর সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এবং ‘খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ’-এর মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের সহ অন্তত ২০ জন নেতা এসেছেন কমিটিতে। মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে’র মহাসচিব। তবে দায়িত্বে আসার পর জমিয়তের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি ব্যারিষ্টার আনীসুল ইসলাম মাহমূদ হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে যাতে নূর হোসেন কাসেমী মহাসচিবের দায়িত্বে না আসতে পারেন, সে বিষয়ে নেতাদের ইঙ্গিত দেন। 

গত ১৭ই সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী মারা যান। এরপর থেকেই আমীর নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। গত ১৪ই নভেম্বর ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাহ আহমদ শফীর অনুসারীর দাবীদার একটি অংশ। যেখানে তাঁর শ্যালক মুহাম্মাদ মঈনুদ্দীন  উপস্থিত ছিলেন। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ।

[উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে সরকারের হামলায় নিহত অগণিত কর্মীর আত্মদানকে ভুলানোর জন্য ২০১৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর আহমাদ শফীর সভাপতিত্বে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কওমী মাদ্রাসা সমূহের সর্বোচ্চ শ্রেণী দাওরায়ে হাদীছ (তাকমীল) সনদকে স্নাতকোত্তরের (ইসলামী শিক্ষা ও আরবী) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মীদের মধ্যে এটা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব আজও অব্যাহত রয়েছে। বাবুনগরী তখন মহাসচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি আমীর হ’লেন। ভবিষ্যৎ বলে দেবে তিনি কোন পথে যাবেন। তাছাড়া একটি ইসলামী সংগঠনে কর্মীদের খুশী করার জন্য অসংখ্য পদ সৃষ্টির এই ইসলামী রীতি বিরোধী প্রয়াস ক্ষতিকর দৃষ্টান্ত হয়ে রইল (স.স.)]






আরও
আরও
.