পাহাড়-পর্বত,
নদী, সাগর ও সবুজ ভূমি বেষ্টিত দেশ আজারবাইজান এশিয়া মহাদেশের একটি সমৃদ্ধ
মুসলিম রাষ্ট্র। যা দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সর্ব পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্র।
আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির
উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া,
উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া। দেশটিতে রয়েছে তেল, গ্যাস ও লোহার মতো মূল্যবান
প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে তেলশিল্পের ওপরই টিকে আছে দেশটির অর্থনীতি। রাজধানী
বাকুর তেলক্ষেত্রগুলো বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্র
হিসাবে গণ্য।
আজারবাইজানের ১০ কোটি জনসংখ্যার ৯৬.৯ শতাংশই মুসলিম। তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শী‘আ। ইরানের পর এটিও সর্বাধিক শী‘আ অধ্যুষিত দেশ। হিজরী প্রথম শতকেই আজারবাইজানে ইসলামের আগমন ঘটে। দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাঃ)-এর সময়ে আজারবাইজানে ইসলামের জয়যাত্রা শুরু হয়। উৎবা ইবনে ফারকাদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান, মুগীরা ইবনে শু‘বা, সুরাকা ইবনে আমর (রাঃ) সহ বহু ছাহাবী-তাবেঈ সেখানে অভিযানে গমন করেন। ফলে আজারবাইজানের অধিকাংশ ভূমি ইসলামী খেলাফতের অধীনে চলে আসে। ইসলামের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে এ অঞ্চলে। মাত্র এক শতকের ব্যবধানে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে পরিণত হয়। এরপর উমাইয়া ও আববাসীয় আমলে এ অঞ্চলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে। হিজরী পঞ্চম শতকে আজারবাইজান সেলজুকদের শাসনাধীন হয়। এসময় এই অঞ্চলে প্রথমে ছূফীবাদ, তারপর শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি ঘটে। সেলজুকদের পর দেশটি উছমানীয় খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
আঠারো শতকের শেষভাগে প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকদের দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকলে রাশিয়া তাদের ওপর চড়াও হয়। অতঃপর ১৮০১ ও ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে দুই দফা হামলা করে রাশিয়া ও জর্জিয়া, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিস্তৃত ভূমি দখল করে নেয়। এর পূর্ণ ভূমি রাশিয়া পুরোপুরি দখল না করলেও এই অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিরোধ উসকে দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হ’ত। অবশেষে ১৯২০ সালে রাশিয়া আজারবাইজানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
এসময় সব ধরনের ধর্মচর্চার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় দেশটিতে মসজিদের সংখ্যা দুই হাযার থেকে মাত্র ১৬-তে নেমে আসে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আজারবাইজান।
বর্তমানে দেশটিতে ধর্মীয় প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় পুরো আজারবাইজানে মাত্র একটি মাদ্রাসা ছিল। ২০০০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০-এ। যার মধ্যে সরকার অনুমোদিত ৩০টি মাদ্রাসাও রয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার ঘোষণা করেছে ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।