বিতর্ক ও ঝগড়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মুমিনের ইসলামী জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান অন্বেষণ ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে এবং বিতর্ক ও ঝগড়া করতে নিষেধ করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, ছাহাবী-তাবেঈগণের যুগে কখনোই তাঁরা পরস্পরে শারঈ বিষয়ে নিজের মতকেই সঠিক সাব্যস্ত করতে বিতর্কে লিপ্ত হননি। বিভিন্ন সময়ে মতভেদের ক্ষেত্রে পরস্পরে একে অপরের দলীল জানার চেষ্টা করেছেন বা নিজের দলীলটি ব্যাখ্যা করেছেন। অবশেষে আববাসীয় যুগে মু‘তাযিলীগণের প্রাদুর্ভাবের মাধ্যমেই ধর্মীয় বাহাছ বা বিতর্কের প্রসার ঘটতে শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে এটি ছিল মু‘তাযিলী ও অন্যান্য বিদ‘আতী ফিরক্বার মূল কাজ। ক্রমান্বয়ে তা মূলধারার মুসলিমদের মধ্যেও প্রবেশ করে। নিম্নে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-
শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ :
আরবীতে جِدَال (জিদাল) অর্থ হ’ল ঝগড়া, বিবাদ, তর্ক-বিতর্ক, কলহ ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করে নিজের কথা সত্য প্রমাণ করা। আবু ইয়ালা বলেন, বিতর্ক হ’ল পক্ষ-বিপক্ষ উভয়ের মাঝে কথার বিনিময় হওয়া এবং এর দ্বারা একে অপরের উপর বিজয়ী হওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা’।[1]
আরবীতে বিতর্কের আরেকটি প্রতিশব্দ হ’ল مِرَاء (মিরা)। অনেকে বলেন, উভয় শব্দের অর্থ একই। তবে মিরা হ’ল নিন্দনীয় বিতর্ক। কারণ এটি হ’ল, হক প্রকাশ পাওয়ার পরও তা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক করা। তবে ‘জিদাল’ এ রকম নয়। কখনও এটি ভাল অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে ২৯ জায়গায় ‘জিদাল’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে’।[2] তন্মধ্যে মাত্র কয়েকটি জায়গা ব্যতীত বাকী জায়গায় মন্দ অর্থে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ، ‘তোমরা কিতাবধারীদের সঙ্গে বিতর্ক করবে না উত্তম পন্থা ব্যতীত’ (আনকাবূত ২৯/৪৬)।
বিতর্ক বা ঝগড়ার কারণ :
বিতর্কের নানা কারণ রয়েছে। তনমধ্যে দু’টি কারণ উল্লেখযোগ্য। যেমন-
১. নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। ২. সত্যকে মিটিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ وَيُجَادِلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَمَا أُنْذِرُوا هُزُوًا ‘অথচ আমরা রাসূলগণকে প্রেরণ করে থাকি কেবল জান্নাতের সুসংবাদ দানকারী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর অবিশ্বাসীরা মিথ্যা দিয়ে ঝগড়া করে সত্যকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে ও যে শাস্তির ভয় তাদের দেখানো হয় সেগুলিকে ঠাট্টার বস্ত্তরূপে গ্রহণ করে’ (কাহাফ ১৮/৫৬)।
মুমিনদের বিতর্কে জড়ানো :
তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়ায় উভয়পক্ষই নিজের জ্ঞানকে চূড়ান্ত বলে মনে করেন এবং যে কোনভাবে নিজের মতের যথার্থতা ও অন্য মতের ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞানের ভুল স্বীকার করাকে ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করেন। এ কারণে ইসলামে ঝগড়া-তর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَرَكَ المِراءَ وَهُوَ مُبْطِلٌ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ تَرَكَهُ وَهُوَ مُحِقٌّ، بُنِيَ لَهُ فِيْ وَسَطَهِا، وَمَنْ حَسُنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِيْ أَعْلاَهَا، ‘নিজের মত বাতিল হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের মত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যার চরিত্র সুন্দর তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে’।[3]
আল্লাহর নিকট তর্কপ্রিয় মানুষ অপ্রিয় :
অধিকাংশ মানুষ হক জানে না। আবার অনেকে হক জানলেও তা মানে না এবং হক গ্রহণে উদারতা প্রদর্শন করে না। বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। হক মানতে তর্ক-বিতর্ক করে। অথচ তর্কপ্রিয় মানুষ মহান আল্লাহর নিকট অপসন্দনীয়। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الأَلَدُّ الْخَصِمُ ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হ’ল কঠিন ঝগড়াটে ব্যক্তি’।[4]
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তর্ক করে না, তার জন্য পরকালীন জীবনে রয়েছে জান্নাত। আবূ উমামাহ বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ، ‘আমি ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার যামিন হচ্ছি, যে হক হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া বর্জন করে। ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের যামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের যামিন হচ্ছি, যার চরিত্র উত্তম’।[5]
পক্ষান্তরে অন্যায় দাবীর পক্ষে বিতর্ক করা আরো ঘোরতর অপরাধ। এমন ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হিসাবে গণ্য হবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنْ خَاصَمَ فِى بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ لَمْ يَزَلْ فِى سَخَطِ اللهِ حَتّٰـى يَنْزِعَ عَنْهُ ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোন বাতিল (অন্যায়) বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রোষাণলে থাকে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে’।[6]
এরপর যুগ-যুগান্তর ধরে বিতর্ক ছিল। এমনকি পরকালেও থাকবে। নিম্নে বিভিন্ন যুগের কিছু উল্লেখযোগ্য বিতর্ক তুলে ধরা হ’ল।-
ইবরাহীমী যুগে বিতর্ক :
ইবরাহীম (আঃ) ফেরেশতা মন্ডলীদের সাথে বিতর্ক করেছিলেন, যখন তারা লূত (আঃ)-এর কওমকে ধ্বংস করতে এসেছিল। মহান আল্লাহ বলেন,فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَى يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ، ‘অতঃপর যখন ইবরাহীমের ভয় দূর হ’ল ও তার নিকট (ইসহাক জন্মের) সুসংবাদ এসে গেল, তখন সে লূতের কওমকে ধ্বংস করার ব্যাপারে আমাদের (ফেরেশতাদের) সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল’ (হূদ ১১/৭৪)।
সাঈদ বিন যুবাইর (রাঃ) বলেন, যখন জিবরীল ও তাঁর সাথীরা এসে বলল,إِنَّا مُهْلِكُو أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوا ظَالِمِينَ، ‘আমরা এই (লূতের) জনপদের অধিবাসীদের ধ্বংস করে দেব। নিশ্চয়ই এর অধিবাসীরা সীমালংঘনকারী’ (আনকাবূত ২৯/৩১)। তখন ইবরাহীম (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন গ্রামকে ধবংস করবে যেখানে ৩০০ মুমিন রয়েছে? ফেরেশতাগণ বলল, না। তিনি আবারো বললেন, তোমরা কি এমন গ্রামকে ধ্বংস করবে যেখানে ২০০ মুমিন রয়েছে? ফেরেশতাগণ বলল, না। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কি এমন গ্রামকে ধ্বংস করবে যেখানে একজন মুমিন রয়েছে? তারা বলল, না। তখন ইবরাহীম (আঃ) বললেন, إِنَّ فِيْهَا لُوطًا ‘ঐ জনপদে তো লূত রয়েছে! তারা বলল, نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَنْ فِيهَا لَنُنَجِّيَنَّهُ وَأَهْلَهُ إِلَّا امْرَأَتَهُ، ‘সেখানে কারা আছে তা আমরা ভালভাবে জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করব। তবে তার স্ত্রী ব্যতীত’ (আনকাবূত ২৯/৩২)। অবশেষে ইবরাহীম (আঃ) তাদের কথায় চুপ থাকলেন এবং প্রশান্ত হ’লেন’।[7]
নূহ (আঃ)-এর যুগে বিতর্ক :
নূহ (আঃ)-এর কওম তাঁর সাথে বিতর্ক করেছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَالْأَحْزَابُ مِنْ بَعْدِهِمْ وَهَمَّتْ كُلُّ أُمَّةٍ بِرَسُولِهِمْ لِيَأْخُذُوهُ وَجَادَلُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ فَأَخَذْتُهُمْ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ، ‘তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল। প্রত্যেক দল নিজ নিজ রাসূলদের পাকড়াও করার সংকল্প করেছিল। তারা তাদের সাথে মিথ্যা দিয়ে বিতর্ক করেছিল যেন সত্যকে পর্যুদস্ত করা যায়। অতঃপর আমি তাদের পাকড়াও করলাম। তখন কেমন ছিল আমার শাস্তি’? (মুমিন ৪০/৫)।
রাসূলের যুগে বিতর্ক :
রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেও ছাহাবীগণ কোন কোন সময় বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হ’তেন। যেমন একটি হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন,
إنَّ نَفَراً كَانُوا جُلُوساً بِبَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلِ اللهُ كَذَا وَكَذَا. وَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلِ اللهُ كَذَا وَكَذَا فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَأَنَّمَا فُقِئَ فِى وَجْهِهِ حَبُّ الرُّمَّانِ فَقَالَ بِهَذَا أُمِرْتُمْ أَوْ بِهَذَا بُعِثْتُمْ أَنْ تَضْرِبُوا كِتَابَ اللهِ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ إِنَّمَا ضَلَّتِ الأُمَمُ قَبْلَكُمْ فِى مِثْلِ هَذَا إِنَّكُمْ لَسْتُمْ مِمَّا هَاهُنَا فِى شَىْءٍ انْظُرُوا الَّذِى أُمِرْتُمْ بِهِ فَاعْمَلُوا بِهِ وَالَّذِى نُهِيتُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا،
‘কিছু মানুষ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরজায় বসেছিল। তাদের কেউ বলে, আল্লাহ কি একথা বলেননি? আবার কেউ বলে, আল্লাহ কি একথা বলেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একথা শুনতে পান। তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল ক্রোধে লাল হয়ে যায়, যেন তাঁর মুখমন্ডলে বেদানার রস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এরূপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের বিপরীতে দাঁড় করাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগুলি এরূপ করার কারণেই বিভ্রান্ত হয়েছে। তোমাদের কাজ এটি নয়। তোমাদেরকে কি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দেখ এবং তা পালন কর। আর যা তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে তা বর্জন কর’।[8]
ক্বিয়ামতের পূর্বক্ষণে বিতর্ক :
মানুষের তর্ক-বিতর্কের কোন শেষ নেই। একটা শেষ হ’লে আরেকটা শুরু হয়। এভাবে একের পর এক চলতেই থাকে। এমনকি ক্বিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও মানুষ পরস্পরের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত থাকবে। আল্লাহ বলেন,مَا يَنْظُرُونَ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُونَ، ‘বস্ত্ততঃ তারা কেবল একটা নিনাদের অপেক্ষায় আছে। যা তাদেরকে ধরবে পরস্পরে ঝগড়ারত অবস্থায়’ (ইয়াসীন ৩৬/৪৯)।
আল্লাহর সাথে মুমিনদের বিতর্ক :
ক্বিয়ামতের দিন ফায়ছালা শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত মুমিনগণ জাহান্নামীদের জন্য আল্লাহর সাথে বিতর্ক করবে। এ মর্মে একটি হাদীছে এসেছে, আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِذَا خَلَّصَ اللهُ الْمُؤْمِنِينَ مِنَ النَّارِ وَأَمِنُوا فَمَا مُجَادَلَةُ أَحَدِكُمْ لِصَاحِبِهِ فِى الْحَقِّ يَكُونُ لَهُ فِى الدُّنْيَا أَشَدَّ مُجَادَلَةً مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِرَبِّهِمْ فِى إِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ أُدْخِلُوا النَّارَ. قَالَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا وَيَصُومُونَ مَعَنَا وَيَحُجُّونَ مَعَنَا فَأَدْخَلْتَهُمُ النَّارَ فَيَقُولُ اذْهَبُوا فَأَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ مِنْهُمْ فَيَأْتُونَهُمْ فَيَعْرِفُونَهُمْ بِصُوَرِهِمْ لاَ تَأْكُلُ النَّارُ صُوَرَهُمْ فَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ النَّارُ إِلَى أَنْصَافِ سَاقَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ إِلَى كَعْبَيْهِ فَيُخْرِجُونَهُمْ
‘যখন আল্লাহ তা‘আলা (ক্বিয়ামতের দিন) মুমিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, তখন ঈমানদারগণ তাদের জাহান্নামী ভাইদের ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের সাথে এত কঠিন তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে যে, তারা দুনিয়াতে অবস্থানকালে তাদের কেউ তার বন্ধুর পক্ষে ততটা প্রচন্ড বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে ছালাত আদায় করত, ছিয়াম রাখত এবং হজ্জ করত। অথচ আপনি তাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করেছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমরা যাও এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা চিনতে পার তাদের বের করে নিয়ে এসো। অতএব তারা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের আকৃতি দেখে তাদের চিনতে পারবে। জাহান্নামের আগুন তাদের দৈহিক আকৃতি ভক্ষণ (নষ্ট) করবে না। আগুন তাদের কারো পদদ্বয়ের জংঘার হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অর্ধাংশ পর্যন্ত এবং কারো পদদ্বয়ের গোছা পর্যন্ত স্পর্শ করবে। তারা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে...।[9]
শয়তান ও মানুষের মাঝে বিতর্ক :
পাপী লোকেরা আল্লাহর সামনেও শয়তানের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে। তারা তাদের পাপের সব দায়ভার শয়তানের ওপর চাঁপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু শয়তান সে দায়ভার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিতর্ক করতে নিষেধ করবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قَالَ قَرِيْنُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ كَانَ فِيْ ضَلَالٍ بَعِيْدٍ، قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُمْ بِالْوَعِيدِ، ‘তার সহচর (শয়তান) বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমি তাকে অবাধ্য করিনি। বরং সে ছিল দূরতম ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত’। (আল্লাহ বলবেন,) তোমরা আমার নিকট ঝগড়া করো না। আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে সাবধান করেছিলাম’ (ক্বাফ ৫০/২৭-২৮)।
বিতর্কের কিছু ক্ষতিকর দিক
(১) শত্রুতা সৃষ্টি হয় :
মন্দ বিতর্কের ফলে কখনও কখনও প্রাচীন বন্ধুত্ব ও সুদৃঢ় বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। কখনওবা বিপক্ষ দলের উপর চড়াও হওয়ার মানসিকতা তৈরী হয়। ফলে উভয়ের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।
(২) কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া :
আল্লাহ তা‘আলা শবে কদরের মত মহান রাতের সুনির্দিষ্ট সময়ের বিষয়টি কেবল বিতর্ক বা ঝগড়ার কারণে তুলে নেন’।[10] একইভাবে বিতর্কের অকল্যাণ সম্পর্কে মা‘রূফ কারখী বলেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا فَتَحَ عَلَيْهِ بَابَ الْعَمَلِ وَأَغْلَقَ عَلَيْهِ بَابَ الْجَدَلِ، وَإِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ شَرًّا أَغْلَقَ عَلَيْهِ بَابَ الْعَمَلِ وَفَتَحَ عَلَيْهِ بَابَ الْجَدَلِ، ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তার আমলের দরজা খুলে দেন এবং বিতর্কের দরজা বন্ধ করে দেন। পক্ষান্তরে তিনি যখন কোন বান্দার অকল্যাণ চান তখন সে ব্যক্তির আমলের দরজা বন্ধ করে দেন এবং বিতর্কের দরজা খুলে দেন’।[11]
(৩) শয়তানের সুযোগ সৃষ্টি :
বিতর্কের সময় ব্যক্তি তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে। হোক সেটা বৈধ বা অবৈধ উপায়। সেই সুযোগে শয়তান যে কোন ব্যক্তিকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। সে বিষয়ে মুসলিম ইবনু ইয়াসার বলতেন,إِيِّاكُمْ وَالْمِرَاءَ، فَإِنَّهَا سَاعَةُ جَهْلِ الْعَالِمِ وَبِهَا يَبْتَغِى الشَّيْطَانُ زَلَّتَهُ، ‘তোমরা অবশ্যই ঝগড়া-বিবাদ থেকে সাবধান থাকবে। কেননা এটি একজন আলেমের অজ্ঞতার মুহূর্ত। আর এই মুহূর্তে শয়তান এর দ্বারা তার ত্রুটি বা বিভ্রান্তি কামনা করে’।[12]
(৪) হেদায়াত প্রাপ্তিতে অন্তরায় :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিতর্ক বা ঝগড়াকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের বিভ্রান্ত হওয়ার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلاَّ أُوتُوا الْجَدَلَ، ‘কোন সম্প্রদায়ের সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার পরে বিভ্রান্ত হওয়ার একটিই কারণ যে, তারা ঝগড়া বা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে’। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এই আয়াত পাঠ করলেন,مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ، ‘তারা কেবল তোমার সাথে ঝগড়ার জন্যই একথা বলে। বরং তারা হ’ল ঝগড়াকারী সম্প্রদায়’ (যুখরুফ ৪৩/৫৮)।[13]
(৫) আল্লাহর নিকট ঘৃণিত হওয়া :
ঝগড়া বা বিতর্ককারী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَبْغَضُ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الأَلَدُّ الْخَصِمُ، ‘আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে’।[14]
(৬) আল্লাহর রোষানলে পতিত হওয়া :
কোন অবস্থাতেই অন্যায় বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করা উচিত নয়। আর যে ব্যক্তি এই কাজ করবে সে আল্লাহর রোষানলে পড়বে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ خَاصَمَ فِى بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ لَمْ يَزَلْ فِى سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোন বাতিল (অন্যায়) বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করে, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রোষানলে থাকে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে’।[15]
(৭) আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত :
যারা অন্যায়ভাবে বিতর্ক বা ঝগড়া করবে তারা আল্লাহর ক্ষমা হ’তে বঞ্চিত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِى كُلِّ اثْنَيْنِ وَخَمِيسٍ فَيَغْفِرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِكَلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً إِلاَّ الْمُتَشَاحِنَيْنِ يَقُولُ اللهُ لِلْمَلاَئِكَةِ ذَرُوهُمَا حَتَّى يَصْطَلِحَا، ‘প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন যারা আল্লহর সাথে শরীক করে না, তবে ঝগড়াকারী দু’ব্যক্তি ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলেন, এদেরকে অবকাশ দাও, যতক্ষণ না তারা মীমাংসা করে নেয়’।[16]
(৮) ইসলামকে ধ্বংসকরণ :
যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ওমর (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলতে পার, ইসলাম ধ্বংস করবে কোন জিনিস? আমি বললাম, না, তখন তিনি বললেন,يَهْدِمُه زَلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ، ‘(১) আলেমদের পদস্খলন, (২) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) নিয়ে মুনাফিকদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং (৩) পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসন’।[17]
(৯) জাহান্নামে প্রবেশ :
তর্ক-বিতর্কের ন্যায় গর্হিত কাজ যে ব্যক্তির কাছে প্রিয় হয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এ সম্পর্কে একটি হাদীছে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ وَلاَ لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ وَلاَ تَخَيَّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ-
‘জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা আলেমদের মাঝে গর্ব করা, অজ্ঞদের সাথে বিতর্ক করা এবং (প্রসিদ্ধ) মজলিস লাভ করার উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করো না। যে ব্যক্তি তা করে (তার জন্য) জাহান্নাম, জাহান্নাম’।[18]
(১০) তদন্ত ছাড়া বিতর্ক না করা :
তদন্ত করে নিশ্চিত না হয়ে শুধু কোন কথা নিয়ে মানুষের সাথে বিতর্ক করা উচিত নয়। কারণ শোনা কথা সত্যও হ’তে পারে আবার মিথ্যাও হ’তে পারে। এজন্য শোনাকথা যাচাই না করে প্রচার করলে পাপের অংশীদার হ’তে হবে। এহেন কাজে রাসূল (ছাঃ) সতর্ক করে বলেছেন,كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ ‘একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে বেড়ায়’।[19]
(১১) উত্তম পন্থায় বিতর্ক :
কথা বলা বা বিতর্ক হ’তে হবে উত্তম পন্থায়। যেন এতে কারও ক্ষতি না হয়। মানসিকভাবে কেউ যেন আঘাত না পায়। কাউকে খাটো করা না হয় বা তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ প্রকাশ না পায়। মহান আল্লাহ বলেন,ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ، ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল ১৬/১২৫)।
অন্যত্র আল্লাহ যখন মূসা (আঃ) এবং তাঁর ভাই হারূন (আঃ)-কে ফের‘আউনের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, তখন তিনি তাঁদেরকে বলে দিয়েছিলেন, فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى، ‘অতঃপর তার সাথে নরমভাবে কথা বল। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৪৪)।
[চলবে]
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
এম.এ. দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[1]. কাযী আবু ইয়া‘লা, আল-ইদ্দাহ ফী উছূলিল ফিক্বহ ১/১৮৪ পৃ.।
[2]. ড. সাইয়েদ আলী খিযির, আল-হিওয়ার ফিস সীরাতিন নাবী, ১৮ পৃ.।
[3]. মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৭৭পৃ.; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৮।
[4]. বুখারী হা/২৪৫৭; মুসলিম হা/২৬৬৮; মিশকাত হা/৩৭৬২।
[5]. আবূদাঊদ হা/ ৪৮০০; ছহীহাহ ১/৪৯১ পৃ.।
[6]. আবূদাউদ হা/৩৫৯৭; ছহীহাহ হা/৪৩৭; ছহীহুল জামে’ হা/৬১৯৬।
[7]. ইবনু কাছীর ৪/৩৩৫ পৃ.।
[8]. আহমদ হা/৬৮৪৫, শুআইব আরনাউত হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/৬০; আহমাদ হা/১১৯১৭; ছহীহাহ হা/২২৫০।
[10]. বুখারী হা/৪৯; মুসলিম হা/২০৯৫; ছহীহ ইবনু খুযাইমাহ হা/৩৬৮৯।
[11]. বায়হাক্বী ২/২৯৫ পৃ.; আবু নুআইম, হিলইয়া ৮/৩৬১পৃ.; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/৩৪০ পৃ.।
[12]. দারেমী হা/৪১৯; আবু নু‘আইম ফিল হিলইয়া ২/২৯৪ পৃঃ।
[13]. তিরমিযী হা/৩২৫৩; ইবনু মাজাহ হা/৪৮; মিশকাত হা/১৮০।
[14]. বুখারী হা/২৪৫৭; মুসলিম হা/২৬৬৪; মিশকাত হা/৩৭৬২।
[15]. আবূ দাঊদ হা/৩৫৯৭; আহমাদ হা/৫৩৮৫; মিশকাত হা/৩৬১১।
[16]. আহমাদ হা/৭৬২৭।
[17]. মিশকাত হা/২৬৯; সুনানুদ দারিমী হা/২১৪, হাদীছ ছহীহ।
[18]. ইবনু মাজাহ হা/২৫৪; হাকেম হা/২৯০; বায়হাক্বী হা/১৭৭১; দারেমী হা/৫৫; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৭৭।
[19]. মুসলিম হা/৫; ছহীহাহ হা/৮৬৬; মিশকাত হা/১৫৬।