যিয়াদ বিন জুবায়ের
বিন হাইয়্যা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন
যে, ওমর ইবনুুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হারমুযানকে (বন্দি পারসিক সেনাপতি) বললেন,
তুমি যখন নিজেকে আমার তুলনায় দুর্বল ভেবেই নিয়েছ, তখন আমাকে উপদেশমূলক কিছু
কথা বল। তাকে তিনি এ কথাও বললেন যে, তোমার যা ইচ্ছা তাই বল, তোমার কোন
ক্ষতি হবে না। অতঃপর তিনি তাকে জীবনের নিরাপত্তবা দান করলেন। তখন হারমুযান
বলল, হ্যাঁ, বর্তমানে পারসিক সেনাবাহিনীর তিনটি ভাগ রয়েছে। শিরদেশ বা
অগ্রবর্তী দল এবং দু’টি ডানা বা দল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অগ্রবর্তী দল এখন
কোথায়? সে বলল, তারা বুনদারের অধীনে নাহাওয়ান্দে অবস্থান করছে। তার সাথে
রয়েছে কিসরার জেনারেলগণ ও ইস্পাহানের অধিবাসীগণ। তিনি বললেন, আর ডানা দু’টো
(অর্থাৎ অন্য দু’টি দল) কোথায় আছে? হারমুযান একটা জায়গার নাম বলেছিল
কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়েছি। হারমুযান তাঁকে এটাও বলল, আপনি দল দু’টো কেটে
ফেলুন, দেখবেন শিরদেশ বা মাথা আপনা থেকেই দুর্বল হয়ে পড়বে। ওমর (রাঃ) তাকে
বললেন, আল্লাহর শত্রু, তুই অসত্য বলেছিস। আমি বরং ওদের মাথা ধ্বংসের
সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, যাতে আল্লাহ তা বিচ্ছিন্ন করে দেন। যখন আল্লাহ আমার পক্ষ
থেকে মাথাটা কেটে দিবেন তখন দল দু’টো এমনিতেই কাটা পড়ে যাবে। অতঃপর ওমর
(রাঃ) নিজেই উক্ত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রায় বের হওয়ার অভিমত প্রকাশ
করেন। কিন্তু তাঁরা (উপদেষ্টামন্ডলী/মুসলিমজনতা) তাঁকে বলল, হে আমীরুল
মুমিনীন, আমরা আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করতে বলছি। আপনি যদি নিজে এই অনারব
বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান আর (আল্লাহ না করুন) আপনি যদি শাহাদাত বরণ
করেন, তাহ’লে মুসলমানদের মধ্যে শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। তার চেয়ে আপনি
বরং অনেকগুলো সেনাদল প্রেরণ করুন। তিনি তখন মদীনাবাসীদের একটি দল প্রেরণ
করলেন, যাদের মাঝে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)। আরও প্রেরণ করলেন
আনছার ও মুহাজিরদের একটি দল। সেই সঙ্গে তিনি আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-কে
বছরার সেনাদল এবং হুযায়ফা ইবনুুল ইয়ামান (রাঃ)-কে কুফার সেনাদল নিয়ে
নাহাওয়ান্দে সকলকে জমায়েত হতে পত্র লিখলেন। তিনি একথাও লিখে দিলেন যে,
তোমরা সব দল একত্রিত হলে তোমাদের আমীর হবে নু‘মান ইবনু মুকাররিন মুযানী।
যখন তারা সবাই নাহাওয়ান্দে সমবেত হলেন তখন বুনদার (আলাজ) তাঁদের নিকট এই
মর্মে আবেদন জানিয়ে একজন দূত পাঠাল যে, হে আরব জাতি, তোমরা আমাদের নিকট
পারস্পরিক আলোচনার জন্য একজন লোক পাঠাও। লোকেরা তখন মুগীরাহ ইবনু শু‘বাকে
এজন্য মনোনীত করল। আমার (বর্ণনাকারীর) পিতা জুবায়ের (রাঃ) বলেন, আমার চোখে
এখনও যেন সেই দৃশ্য ভাসছে- লম্বা, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, এক চোখওয়ালা একজন
(দুর্বল) লোক যাচ্ছেন। তিনি তার নিকট গিয়ে যখন আলোচনা শেষে ফিরে এলেন তখন
আমরা তাঁকে বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাদের বললেন, আমি গিয়ে দেখলাম
আলাজ (বুনদার) তার পারিষদবর্গের সাথে পরামর্শ করছে- তোমরা এই আরবীয়র বিষয়ে
কী করতে বল? আমরা কি তার সামনে আমাদের জাঁকজমক, ঠাটবাট, ক্ষমতার আড়ম্বর
তুলে ধরব, নাকি তাকে আমাদের অনাড়ম্বর সাদামাটা অবস্থা দেখাব এবং আমাদের
বিত্তবৈভব ও শক্তিমত্তার দিকটা তার থেকে আড়াল করে রাখব? তারা বলল, না বরং
আমাদের যে ঐশ্বর্য ও শক্তি সামর্থ্য আছে তার সেরাটাই তার সামনে তুলে ধরতে
হবে। অতঃপর আমি যখন তাদের দেখা পেলাম তখন তাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র
বল্লম, ঢাল ইত্যাদি আমার দৃষ্টিগোচর হ’ল। সেগুলো এতই জাক-জমকপূর্ণ ছিল যে,
চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছিল।
আলাজের পারিষদবর্গকে আমি তার মাথা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলাম। সে ছিল স্বর্ণ নির্মিত চেয়ারে বসা। তার মাথায় মুকুট শোভা পাচ্ছিল। আমি আমার মত হেঁটে তার কাছে পৌঁছলাম এবং তার সাথে চেয়ারে আসন গ্রহণের জন্য আমার মাথা একটু নিচু করলাম। কিন্তু আমাকে বাধা দেওয়া হল এবং ধমক দেওয়া হল। আমি তখন বললাম, দূতদের সাথে তো এমন অশোভন আচরণ করা বিধেয় নয়। তারা তখন আমাকে বলল, আরে তুই তো একটা কুকুর! একজন রাজার সাথে তুই কি বসতে পারিস? আমি বললাম, তোমাদের মাঝে এই লোকটার (বুনদারের) যে মর্যাদা, আমি আমার জাতির মাঝে তার থেকেও বেশী মর্যাদার অধিকারী। এবার বুনদার আমাকে ধমক দিয়ে বলল, আরে বস। আমি তখন বসে পড়লাম। একজন দোভাষী তার কথা আমাকে অনুবাদ করে দিল। সে বলল, হে আরব জাতি, তোমরা মানবজাতির মাঝে সবচেয়ে বেশী ক্ষুধার ক্লেশভোগী, তোমাদের মত হতভাগাও আর দ্বিতীয় নেই, তোমরা এতই নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত যে এ ভুবনে তার জুড়ি নেই, বাড়ি-ঘরের সঙ্গেও তোমাদের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই (তোমরা মরুচারী যাযাবর বেদুঈন)। সব রকম কল্যাণ থেকে তোমরা বহু দূরে অবস্থিত। এখন আমার চারপাশে যে জেনারেলদের দেখছ, এদেরকে আমি কেবল এই হুকুমই দেব যে, তারা তীরধনুক ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের দ্বারা তোমাদের গায়ের দুর্গন্ধ দূর করে তোমাদেরকে একেবারে শায়েস্তা করে দেবে। কারণ তোমরা দুর্গন্ধযুক্ত (অর্থাৎ তারা তোমাদেরকে মেরে ফেলবে)। এখন যদি তোমরা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাও তোমাদের রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। আর যদি না যেতে চাও তবে মৃত্যুর ঠিকানাতেই আমরা তোমাদের আবাস গড়ে দেব। (এবার মুগীরা (রাঃ)-এর বলার পালা)। মুগীরা (রাঃ) বলেন, আমি তখন আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলাম। তারপর বললাম, আল্লাহর কসম, আমাদের গুণ ও অবস্থা বর্ণনায় তুমি একটুও ভুল করনি। আসলেই বাড়িঘর তথা সভ্যতার থেকে আমরা সকল মানব জাতির তুলনায় অনেক দূরে ছিলাম। ক্ষুধার তীব্র জ্বালাও আমরা সব মানুষের থেকে বেশী সয়েছি, দুর্ভাগ্যের বোঝাও আমাদের সবচে বেশী বইতে হয়েছে, সব রকম কল্যাণ থেকে আমরা অনেক দূরে ছিলাম। শেষ অবধি আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মাঝে একজন রাসূল পাঠালেন। তিনি আমাদেরকে দুনিয়াতে বিজয় এবং আখিরাতে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সেই রাসূলের আগমন থেকে নিয়ে তাঁর (আল্লাহর) মহান কৃপায় কল্যাণ ও বিজয়ের সঙ্গে আমরা এখন পরিচিত হয়েছি। শেষাবধি আমরা তোমাদের দরজায় হাযির হয়েছি। আল্লাহর কসম, আমরা তোমাদের যে রাজ্য ও জীবন-জীবিকা দেখছি তাতে আমরা আর ঐ দুর্ভাগ্যের পানে কখনই ফিরে যাব না। হয় আমরা তোমাদের মালিকানাধীন যা আছে তা সব জয় করব, নয় তোমাদের দেশেই নিহত হব।
বুনদার বলল, এই কানা লোকটা তার মনের কথা সত্যই তোমাদের বলেছে। অতঃপর আমি তার নিকট থেকে উঠে এলাম। আল্লাহর কসম, ইতোমধ্যে আমার চেষ্টায় আমি আলাজের মনে ভয় ধরাতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আলাজ আমাদের নিকট দূত পাঠাল যে, তোমরা (দজলা নদী) পাড়ি দিয়ে নাহাওয়ান্দে আমাদের নিকট
এসে যুদ্ধ করবে, নাকি আমরা পাড়ি দিয়ে তোমাদের নিকট গিয়ে যুদ্ধ করব? আমাদের সেনাপতি নু‘মান আমাদেরকে বললেন, তোমরা নদী পার হও। ফলে আমরা নদী পার হলাম। আমার পিতা বলেন, এ দিনের মত দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি। আলাজের পারসিক বাহিনী যেন লোহার পাহাড় হয়ে ধেয়ে আসছিল। তারা পরস্পর অঙ্গীকারা বদ্ধ হয়েছিল যে, তারা আরবদের ভয়ে পলায়ন করবে না। তাদের একজনকে অন্য জনের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল সাত। তারা তাদের পেছনে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে রেখেছিল। তারা বলাবলি করছিল, আমাদের মধ্যে যে পালাতে চেষ্টা করবে সে লোহার কাঁটাতারে জড়িয়ে খুন হবে। মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) তাদের সংখ্যাধিক্য দেখে বললেন, আজকের মত হতাশা আর কোন দিন লক্ষ করিনি। আমাদের শত্রুরা আজ ঘুম ত্যাগ করবে, তারা আগে আক্রমণ করবে না। আল্লাহর কসম, যদি দায়িত্ব আমার কাঁধে থাকত তাহ’লে আমি তাদের আগে আক্রমণ করতাম। এদিকে সেনাপতি নু‘মান (রাঃ) ছিলেন অধিক কাঁন্নাকাটি করা মানুষ। তিনি মুগীরা (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যদি আপনাকে অনুরূপ অবস্থার মুখোমুখি করেন, তখন যেন তিনি আপনাকে দুঃখ-বেদনার মুখোমুখি না করেন এবং আপনার ভূমিকায় আপনাকে দোষী না বানান। আল্লাহর কসম! তাদের সাথে দ্রুত যুদ্ধে লিপ্ত হতে আমার একটাই বাধা , যা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে লক্ষ করেছি। তিনি যখন যুদ্ধে যেতেন তখন দিনের পূর্ব ভাগে আক্রমণ করতেন না। যতক্ষণ না ছালাতের ওয়াক্ত হয়, বাতাস বইতে থাকে এবং যুদ্ধ অনুকূলে হয় ততক্ষণ তিনি আগবাড়িয়ে আক্রমণে যেতেন না। তারপর নু‘মান (রাঃ) এই বলে দো‘আ করলেন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তুমি এমন বিজয় দ্বারা আমার চোখ ঠান্ডা করবে যাতে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মান এবং কুফর ও কাফিরদের লাঞ্ছনা নিহিত থাকবে। তার পরে তুমি শাহাদাতের অমিয় সুধা পানের মাধ্যমে আমার জীবনের অবসান ঘটাবে। দো‘আ শেষে তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুন, তোমরা সবাই আমীন বল। আমরা বললাম, আমীন (হে আল্লাহ, কবুল কর)। দো‘আ করে তিনি কেঁদে ফেললেন, আমরাও কেঁদে ফেললাম। তারপর আক্রমণ কীভাবে শুরু হবে সে প্রসঙ্গে নু‘মান (রাঃ) বললেন, আমি যখন আমার পতাকা দুলাব তখন তোমরা অস্ত্র নিয়ে প্রস্ত্তত হবে। দ্বিতীয়বার যখন আমি পতাকা দুলাব তখন তোমরা তোমাদের বরাবর যে শত্রু থাকবে তার উপর হামলার প্রস্ত্ততি নেবে। তৃতীয়বার দুলালে প্রত্যেকেই যেন তার সামনাসামনি অবস্থিত শত্রুর উপর আল্লাহর বরকত কামনা করে আক্রমণ চালিয়ে যাবে।
অতঃপর যখন ছালাতের সময় হল এবং বাতাস বইতে লাগল তখন সেনাপতি আল্লাহু আকবার ধ্বনি করলেন, আমরাও তাঁর সাথে আল্লাহু আকবার বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ চাহে তো এটি বিজয়ের বাতাস। আমি নিশ্চিত আশা করি যে, আল্লাহ আমাদের দো‘আ কবুল করবেন এবং আমাদের বিজয় অর্জিত হবে। এই বলে তিনি পতাকা দুলালেন। সৈন্যরা সবাই যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্তত হল। তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার পতাকা দুলালেন, তখন আমরা একযোগে প্রত্যেকেই নিজের সামনের জনের উপর আক্রমণ করলাম। মহান সেনাপতি নু‘মান (রাঃ) যুদ্ধের প্রারম্ভে বলেন, আমি নিহত হ’লে হুযায়ফা ইবনুুল ইয়ামান (রাঃ) দলপতি হবেন। যদি হুযায়ফা নিহত হন তবে অমুক (তারপর অমুক)। এভাবে তিনি সাত জনের নাম উল্লেখ করেন যাঁদের সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ)। আমার পিতা বলেন, আল্লাহর কসম, মুসলমানদের এমন একজনও আমার জানামতে ছিল না, যে নিহত কিংবা জয় ব্যতীত নিজ পরিবারে ফিরে যেতে আগ্রহী ছিল। প্রতিপক্ষ আমাদের বিপক্ষে স্থির দাঁড়িয়ে গেল। তখন আমরা কেবল লোহার উপর লোহার আঘাত ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। এতে করে মুসলমানদের মধ্য থেকে একটি বড় দল নিহত হ’ল কিন্তু যখন তারা আমাদের ধৈর্য ও দৃঢ়তা দেখতে পেল এবং বুঝতে পারল যে আমরা ফিরে যেতে ইচ্ছুক নই তখন তারা পিঠ টান দিল। তখন তাদের একজন লোক ঘায়েল হ’লে রশিতে আবদ্ধ সাত জনই পড়ে যাচ্ছিল এবং সবাই নিহত হচ্ছিল। আর পিছন থেকে লোহার কাঁটা তারের বেড়া তাদের প্রাণহানি ঘটাচ্ছিল। তখন নু‘মান (রাঃ) বললেন, তোমরা পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। আমরা পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম, আর তাদের হত্যা ও পরাস্ত করতে লাগলাম। তারপর নু‘মান (রাঃ) যখন দেখলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দো‘আ কবুল করেছেন এবং তিনি বিজয়ও দেখতে পেলেন ঠিক তখনই একটি তীর এসে তাঁর কোমরে বিঁধল, আর তাতেই তিনি শাহাদত বরণ করলেন।
এ সময় তাঁর ভাই মা‘কাল ইবনু মুকার্রিন এগিয়ে এসে একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে ঢেকে দেন। তারপর তিনি পতাকা ধারণ করে এগিয়ে যান এবং বলেন, আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুন, তোমরা সামনে এগিয়ে চল। আমরা তখন এগিয়ে চললাম এবং তাদের পরাস্ত ও হত্যা করতে লাগলাম। তারপর আমরা যখন যুদ্ধ শেষ করলাম এবং লোকেরা এক জায়গায় জমা হ’ল তখন তারা বলল, আমাদের আমীর (সেনাপতি) কোথায়? তখন মা‘কাল বললেন, এই যে তোমাদের আমীর। আল্লাহ বিজয় দ্বারা তাঁর চোখকে ঠান্ডা করেছেন, আর তাঁর শেষ যাত্রায় শাহাদাত নছীব হয়েছে। তারপর লোকেরা হুযায়ফা ইবনুুল ইয়ামান (রাঃ)-এর হাতে বায়‘আত হ’ল।
রাবী বলেন, এদিকে ওমর ইবনুুল খাত্ত্বাব (রাঃ) মদীনায় বসে আল্লাহর কাছে দো‘আ করছিলেন। আর প্রসূতি যেমন সদ্যপ্রসূত সন্তানের কান্নার আওয়ায শোনার প্রতীক্ষা করে তেমন করে তিনি যুদ্ধের সংবাদ শোনার প্রতীক্ষা করছিলেন। ইত্যবসরে হুযায়ফা (রাঃ) একজন মুসলিমের হাতে ওমর (রাঃ)-এর নিকট বিজয় বার্তা লিখে পাঠালেন। সে তাঁর নিকট পৌঁছে যখন বলল, আমীরুল মুমিনীন, এমন একটা বিজয়ের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যার মাধ্যমে আল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানিত করেছেন এবং শিরক ও মুশরিকদের অপদস্থ করেছেন। তখন তিনি বললেন, তোমাকে কি নু‘মান পাঠিয়েছে? সে বলল, আমীরুল মুমিনীন, নু‘মান (রাঃ) পরপারে যাত্রা করেছেন। একথা শুনে ওমর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং ইন্নালিল্লাহ পড়লেন। তারপর বললেন, তোমার উপর রহম হোক, আর কে কে মারা গেছে? সে বলল, অমুক, অমুক- এভাবে সে বেশ কিছু লোকের নাম বলল, তারপর বলল। হে আমীরুল মুমিনীন, অন্য আরো অনেকে মারা গেছেন, যাদের আপনি চিনবেন না। ওমর (রাঃ) তখন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ওমর তাঁদের না চিনলেও তাঁদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁদের অবশ্যই চিনবেন।
(ইবনু হিববান হা/৪৭৫৬, বুখারী হা/৩১৫৯, ৩১৬০, সংক্ষিপ্তাকারে; তাবারানী, তারীখ ২/২৩৩-২৩৫; সিলসিলা ছহীহা হা/২৮২৬)।
-আব্দুল মালেক
ঝিনাইদহ।