দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নানা ধরনের কটূক্তি শুনেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে অপমানের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তিনি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন এবং অবস্থার প্রেক্ষিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। নিম্নোক্ত হাদীছে যা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।-
উসামাহ ইবনু যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করেছিলেন। তার গায়ে ছিল ফাদাকের তৈরী মোটা পাড় বিশিষ্ট চাদর। উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ)-কে তাঁর পিছনে বসিয়েছিলেন। তিনি বনু হারিছ ইবনু খাযরাজ গোত্রে অসুস্থ সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ)-কে দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধপূর্ব ঘটনা। যেতে যেতে নবী করীম (ছাঃ) এমন একটি মজলিসের কাছে পৌঁছলেন, যেখানে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইও ছিল। সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। ঐ মজলিসে মুসলিম, মুশরিক, প্রতিমাপূজারী ও ইহূদী সকল প্রকারের লোক ছিল। এমনকি আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)ও ছিলেন।
গাধার পদধূলি যখন মজলিসকে আচ্ছন্ন করল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই আপন চাদরে নাক ঢেকে বলল, আমাদের এখানে ধূলো উড়িয়ো না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উপস্থিত সবাইকে সালাম করলেন। অতঃপর বাহন থেকে নেমে তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দিলেন। তাদের নিকটে কুরআন তেলাওয়াত করলেন। এসময় আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই বলল, এই লোক! তুমি যা বলছ তা যদি সত্য হয় তাহ’লে এর চেয়ে উত্তম কিছুই নেই। কিন্তু তুমি এই মজলিসে আমাদেরকে জ্বালাতন করো না। বরং তুমি তোমার তাঁবুতে যাও। তোমার কাছে যে যাবে তাকে তুমি তোমার কথা বলবে।
অন্যদিকে আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এখানে যা বলছেন তা বলুন! কারণ আমরা এসব কথা পসন্দ করি। ফলে মুসলিম, মুশরিক ও ইহূদীরা পরস্পর ঝগড়া শুরু করল। এমনকি তারা মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হ’ল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রচেষ্টায় একসময় তারা থামল। তারপর রাসূল (ছাঃ) তাঁর বাহনের চড়ে রওয়ানা হ’লেন এবং সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ)-এর নিকটে পৌঁছলেন।
নবী করীম (ছাঃ) সা‘দ (রাঃ) কে বললেন, হে সা‘দ! আবূ হুবাব (আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই) কি বলেছে শুনেছ? সে এরূপ এরূপ বলেছে। সা‘দ (রাঃ) বললেন, হে রাসূল! তাকে ক্ষমা করে দিন। তার দিকে ভ্রূক্ষেপ করবেন না। যিনি আপনার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনার উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তা সত্য। এতদঞ্চলের অধিবাসীরা চুক্তি সম্পাদন করেছিল যে, তাকে শাহী তাজ পরাবে এবং নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করবে। যখন আল্লাহ তা‘আলা সত্য প্রদানের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা ব্যর্থ করলেন, তখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে আপনার সাথে এরূপ ব্যবহার করছে।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। এভাবেই নবী করীম (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ মুশরিক ও আহলে কিতাবদেরকে ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করতেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৬)। তিনি আরো বলেছেন, ‘সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও হিংসাবশতঃ কিতাবধারীদের অনেকে তোমাদেরকে ঈমান আনার পরেও কাফের বানাতে চায়। এমতাবস্থায় তোমরা ওদের ক্ষমা কর এবং এড়িয়ে চলো যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশ এসে পড়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান’ (বাক্বারাহ ২/১০৯; বুখারী হা/৪৫৬৬, ৬২০৭)।
শিক্ষা :
১. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত।
২. মুসলিম ও অমুসলিম একত্রে থাকলে তাদেরকে সালাম দেওয়া যায়।
৩. বিরোধীদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করা দাওয়াতের অন্যতম কৌশল।
৪. দুর্ব্যবহার প্রতিকারের জন্য নিকটজনকে জানানো যায়।
৫. মানুষের মধ্যে মারামারি শুরু হ’লে তা বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা কর্তব্য।
৬. কারো অসদাচরণের কারণ জানা থাকলে তা প্রকাশ করা যায়।
৭. অপরাধীকে ক্ষমা করা রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত হাদীছের উপরে আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ
নওদাপাড়া, রাজশাহী।