পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব ।
(৪) কুরআনুল কারীম অর্থ বুঝে পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা :
ঈমান বৃদ্ধি ও তা সুদৃঢ় করণের অন্যতম উপায় হ’ল অর্থ বুঝে পবিত্র কুরআন
পড়া, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা। মহান আল্লাহ
বলেন, وَهَـذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِيْ
بَيْنَ يَدَيْهِ ‘আমরা এই বরকতময় কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা তার পূর্বের সকল
কিতাবকে সত্যায়নকারী’ (আন‘আম ৬/৯২)। অর্থ বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করলে এবং
তার প্রতি আমল করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং সঠিক পথের দিশা পাওয়া যায়।
মহান আল্লাহ বলেন, وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ
وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ ‘আমরা এই বরকতময় কিতাব (কুরআন)
অবতীর্ণ করেছি! সুতরাং তোমরা এটা অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যেন তোমাদের প্রতি
দয়া করা হয়’ (আন‘আম ৬/১৫৫)। তিনি আরো বলেন, وَلَقَدْ جِئْنَاهُمْ بِكِتَابٍ
فَصَّلْنَاهُ عَلَى عِلْمٍ هُدًى وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ
‘আমরা তাদের নিকট এমন একখানা কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম, যা পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা
বিশদ ব্যাখ্যা করেছিলাম এবং যা ছিল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্যে হেদায়াত ও
রহমত’ (আ‘রাফ ৭/৫২)।
পবিত্র কুরআন মানব জাতির জন্য হেদায়াত স্বরূপ। এতে জীবনের প্রত্যেক বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَاناً لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرَى لِلْمُسْلِمِيْنَ- ‘আমরা আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা, স্বরূপ, পথ-নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি’ (নাহল ১৬/৮৯)।
পবিত্র কুরআন বুঝে-শুনে পড়ে আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ ‘এ এক কল্যাণময় কিতাব। এটা আমরা তোমার উপর এজন্য অবতীর্ণ করেছি যে, যাতে মানুষ এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)। পবিত্র কুরআনই মানব জাতিকে হেদায়াতের পথ দেখায়। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يِهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْراً كَبِيْراً ‘এ কুরআন (সৃষ্টিকুলকে) সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়াতের পথ নির্দেশ করে এবং সৎপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৯)। পবিত্র কুরআনই মানব জাতির জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য স্বরূপ। আল্লাহ বলেন, وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلاَ يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ إَلاَّ خَسَاراً ‘আমরা অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা যালেমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৮২)।
মহান আল্লাহ কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে এবং সঠিক অর্থ বুঝে আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন, أَفَلاَ يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اخْتِلاَفاً كَثِيْراً ‘তারা কেন কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি ওটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হ’তে হ’ত তবে তারা ওতে বহু অসংগতি পেত’ (নিসা ৪/৮২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, أَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوْبٍ أَقْفَالُهَا ‘তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করে না, না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ’? (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)।
কুরআন পড়া, অর্থ বুঝা, গবেষণা
করা এবং আমল করা এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, وَاللهِ
الَّذِى لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ مَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ
إِلاَّ أَنَا أَعْلَمُ أَيْنَ أُنْزِلَتْ وَلاَ أُنْزِلَتْ آيَةٌ مِنْ
كِتَابِ اللهِ إِلاَّ أَنَا أَعْلَمُ فِيْمَ أُنْزِلَتْ، وَلَوْ أَعْلَمُ
أَحَدًا أَعْلَمَ مِنِّىْ بِكِتَابِ اللهِ تُبَلِّغُهُ الإِبِلُ لَرَكِبْتُ
إِلَيْهِ ‘আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই, আল্লাহর কিতাবের
প্রতিটি সূরা সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি
আয়াত সম্পর্কেই জানি যে, তা কোন ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম
যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে
উট পৌঁছতে পারে, তাহ’লে আমি সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম’।[1]
মুজাহিদ
(রহঃ) বলেন, ‘আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট কুরআন পেশ করতাম। সূরা ফাতেহা
থেকে শেষ (নাস) পর্যন্ত প্রত্যেক আয়াতের নিকট থামতাম এবং সেখানে কি বলা
হচ্ছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম (অর্থ জিজ্ঞেস করতাম)। হাসান বাছরী (রহঃ)
বলেন, পবিত্র কুরআনে কোন আয়াত অবতীর্ণ হ’লে সেটির অর্থ এবং কি উদ্দেশ্যে
নাযিল হয়েছে তা জানতে ভালবাসতাম।[2]
সুতরাং অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে এবং আমল করার চেষ্টা করতে হবে, তাহ’লে ঈমান বাড়বে। আর কুরআনের প্রতি অবহেলা করে আমল না করলে সঠিক পথের দিশা পাওয়া যাবে না; বরং পথভ্রষ্ট হ’তে হবে। পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,قَدْ كَانَتْ آيَاتِيْ تُتْلَى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ تَنْكِصُوْنَ، مُسْتَكْبِرِيْنَ بِهِ سَامِراً تَهْجُرُوْنَ، أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوْا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُمْ مَّا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِيْنَ- ‘আমার আয়াত তোমাদের কাছে পাঠ করা হ’ত; কিন্তু তোমরা দম্ভভরে পিছন ফিরে সরে পড়তে এই বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে করতে। তবে কি তারা এই বাণী অনুধাবন করে না? অথবা তাদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি’? (মুমিনূন ২৩/৬৬-৬৮)।
যে ব্যক্তি অর্থ বুঝে কুরআন পড়বে ও তদনুযায়ী আমল করবে তার পক্ষে কুরআনই কথা বলবে, আর আমল না করলে তার বিপক্ষে কথা বলবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ ‘পবিত্র কুরআন তোমার পক্ষে কথা অথবা বিপক্ষে দলীল’।[3] সুতরাং মুসলমানের উপর ওয়াজিব পবিত্র কুরআন অর্থসহ পড়া এবং আমল করা।
(৫) নবী করীম (ছাঃ)-এর জীবনী অধ্যয়ন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবন চরিত অধ্যয়ন করলে ও তার আখলাক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের ঈমান বাড়বে। মহান আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে বলেন, لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ ‘তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট আগমন করেছে একজন রাসূল যাঁর কাছে তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অতি কষ্টদায়ক মনে হয়। তিনি তোমাদের হিতাকাংখী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও দয়ালু’ (তওবা ৯/১২৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রে অধিকারী’ (কলাম ৬৮/৪)।
তিনি আরো বলেন,لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْ اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْراً ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত আছে’ (আহযাব ৩৩/২১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের যা দিয়েছেন সেগুলি জীবনে বাস্তবায়ন করলে ঈমান সুদৃঢ় হবে এবং পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوْا ‘রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর’ (হাশর ৫৯/৭)।
মূলতঃ সম্পূর্ণ কুরআন মজীদই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনাদর্শ। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلاَّ أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا، فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ، وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ، إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ بِهَا.
‘নবী করীম (ছাঃ)-কে যখনই (আল্লাহর নিকট
থেকে) দু’টো কাজের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হ’ত, তখন তিনি
দু’টোর মধ্যে থেকে সহজটি বেছে নিতেন, যদি না সেটা গুনাহর কাজ হ’ত। যদি সেটা
গুনাহর কাজ হ’ত তাহ’লে তিনি তা থেকে বহু দূরে থাকতেন। আল্লাহর কসম! তিনি
কখনও তাঁর ব্যক্তিগত কারণে কোন কিছুর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি যতক্ষণ না
আল্লাহর হারামসমূহকে ছিন্ন করা হ’ত। সেক্ষেত্রে আল্লাহর জন্য তিনি প্রতিশোধ
নিতেন’।[4]
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, خَدَمْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ سِنِيْنَ، فَمَا
قَالَ لِىْ أُفٍّ. وَلاَ لِمَ صَنَعْتَ وَلاَ أَلاَّ صَنَعْتَ ‘আমি দশটি
বছর নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনও আমার প্রতি উফ শব্দটি
উচ্চারণ করেননি। একথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে
না?[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا، وَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ أَخْيَرِكُمْ أَحْسَنَكُمْ خُلُقًا. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না, তিনি অশালীন কথা বলতেন না। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে স্বভাব-চরিত্রে সর্বোত্তম’।[6] বর্ণিত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি মুসলমানদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে এবং তাঁর অনুসরণ করার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি মিলবে।
(৬) ইসলামের সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা : দ্বীন ইসলামের প্রতিটি কাজ-কর্ম সেŠন্দর্যমন্ডিত, এর সবই মানুষের জন্য কল্যাণকর। ইসলামের আক্বীদাসমূহ সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও উপকারী। এর নীতি-নৈতিকতা সবচেয়ে সুন্দর ও প্রশংসিত। এর আমল ও বিধি-বিধানসমূহ সুন্দর ও ন্যায়-নীতিপূর্ণ। দ্বীনের এই সেŠন্দর্যের দিকে লক্ষ্য করলে মুসলমানদের ঈমান বাড়বে বৈ কমবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَكِنَّ اللهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيْمَانَ وَزَيَّنَهُ فِيْ قُلُوْبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ ‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং উহাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। তারাই সুপথপ্রাপ্ত’ (হুজুরাত ৪৯/৭)।
মানুষ তার জীবনকে ঈমানের বলে বলিয়ান করলেই সে সুখময় জীবন যাপন করবে। ইসলামের সকল সৎ কাজ জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে এবং সকল অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। নিজেকে ঈমানদার হিসাবে তৈরী করার চেষ্টা করবে। এভাবে সমাজ ও পরিবার সুখময় করতে সক্ষম হবে। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيْمَانِ أَنْ يَكُوْنَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُوْدَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ. ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হ’তে অধিক প্রিয় হওয়া। কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা। কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপসন্দ করা’।[7] হাদীছটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভাল কাজের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজ দ্বারা ঈমান হ্রাস পায়।
(৭) সালাফে ছালেহীনের জীবনচরিত পড়া : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবী এবং তাঁদের অনুসারীগণ ইসলামের শ্রেষ্ঠ যুগের মানুষ। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ أُمَّتِىْ قَرْنِىْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ‘আমার উম্মাতের শ্রেষ্ঠ হ’ল আমার যুগের লোক (অর্থাৎ ছাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবেঈগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবে তাবেঈগণ)[8] তারাই ইসলামের রক্ষক ও সৃষ্টিজগতের সঠিক পথের দিশা লাভের কান্ডারী। ঈমানের দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী। এই পুন্যাত্মা ব্যক্তিগণই দ্বীনের ঝান্ডাবাহী। অতএব তাঁদের প্রশংসা করতে হবে, তাদেরকে ভালবাসতে হবে এবং তাদের জন্য দো‘আ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَالسَّابِقُوْنَ الأَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ‘মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে (ঈমান আনয়নে) যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। তিনি তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্ত্তত করে রেখেছেন যার নীচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য’ (তওবা ৯/১০০)। মুহাজির ও আনছারদের সবাইকে ভালবাসতে হবে। কারণ এটা ঈমানের পরিচায়ক।
আমরা যদি ছাহাবীগণের জীবনের দিকে লক্ষ্য করি
তাহ’লে সহজেই বুঝতে পারব যে, তাঁরা দ্বীন প্রচারের জন্য কত কষ্ট স্বীকার
করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে আমার সঠিক দ্বীনের বুঝ পেয়েছি। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ তাঁরা পূর্ণভাবে পালন করে গেছেন। তাঁদেরকে দ্বীন
প্রচারের জন্য ঘরবাড়ী ছাড়তে হয়েছে। দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতে হয়েছে। তাই
আমাদের উপর ওয়াজিব তাঁদের জন্য দো‘আ করা, তাঁদেরকে মুহাববত করা, তাঁদের
নিন্দা না করা, গালি-গালাজ না করা। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تَسُبُّوْا أَصْحَابِى، فَلَوْ أَنَّ
أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ
وَلاَ نَصِيْفَهُ ‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি
ওহোদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাঁদের এক মুদ বা
অর্ধ মুদের সমপরিমাণ ছওয়াব হবে না’।[9]
ছাহাবীগণকে
ভালবাসা ঈমানের পরিচয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, آيَةُ الإِيْمَانِ
حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ ‘ঈমানের আলামত
হ’ল আনছারকে ভালবাসা এবং মুনাফিকীর চিহ্ন হ’ল আনছারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ
করা’।[10]
মোদ্দাকথা সালাফে ছালেহীনের জীবন পর্যালোচনা করলে মানুষের ঈমান বাড়বে।
(৮) আল্লাহর সৃষ্টি জগত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করা : আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে মানুষ চিন্তা-গবেষণা করলে ঈমান বাড়বে। যেমন আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, নক্ষত্ররাজি, দিন-রাত্রী, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, সমুদ্র, নদ-নদী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা, বর্ণ-গোত্র, ভাষা ও বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। অতএব এসব বিষয় নিয়ে মানুষ চিন্তা-গবেষণা করলে তাদের ঈমান বাড়বে। মহান আল্লাহ বলেন, تَبَارَكَ الَّذِيْ جَعَلَ فِي السَّمَاء بُرُوْجاً وَجَعَلَ فِيْهَا سِرَاجاً وَقَمَراً مُّنِيْراً، وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُوْراً- ‘কত মহান তিনি যিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন বড় বড় তারকাপুঞ্জ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র। যে উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হ’তে চায় তার জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি এবং দিবসকে পরস্পরের অনুগামীরূপে’ (ফুরক্বান ২৫/৬১-৬২)। দিবা-রাত্রির বিবর্তন, চন্দ্র-সূর্যের নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ, আহ্নিকগতি ও বার্ষিকগতি এবং ঋতুর পরিবর্তন সবই আল্লাহর হুকুম মত চলছে। আল্লাহর হুকুমের কোন বিপরীত হচ্ছে না। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِيْ تَجْرِيْ فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخِّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ ‘নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে, যা মানুষের কল্যাণ সাধন করে তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ হ’তে বৃষ্টি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে প্রত্যেক জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থিত নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৬৪)।
মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পুনরায় তাকে মাটির বুকে ফিরে যেতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا أَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এখন তোমরা মানুষ হিসাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ’ (রূম ৬০/২০)।
মানুষের একে অপরের মাঝে সৃষ্টিগত ও ভাষার দিক দিয়ে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِيْنَ ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ (রূম ৬০/২২)।
মহান আল্লাহ বলেন,أَفَلَا يَنْظُرُوْنَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ، وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ، وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ، وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ- ‘তবে কি তারা উষ্ট্রপালের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে যে, কিভাবে তাকে সমুচ্চ করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং যমীনের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?’ (গাশিয়াহ ৮৮/১৭-২০)। উপরোক্ত আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর সৃষ্টি জগত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করলে মানুষের ঈমান বৃদ্ধি পাবে।
(১০) নেক আমল : সকল সৎ আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে। শরী‘আত নির্দেশিত পন্থায় ও খাঁটি নিয়তে যেকোন সৎ আমল করলে তা ঈমান বৃদ্ধি করে। কারণ অত্যধিক আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
অন্তরের ইবাদত বা
আমল হ’ল ইখলাছ, মুহাববাত-ভালবাসা, আশা-ভরসা, ভয়-ভীতি, ধৈর্য্য সন্তুষ্টি
ইত্যাদি। জিহবার আমল হ’ল আল্লাহর যিকির ও তাঁর প্রশংসা করা, কুরআন তেলাওয়াত
করা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করা, ভাল কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজ
থেকে নিষেধ করা, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, দো‘আ-ইসতেগফার পড়া ইত্যাদি। আর
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল হ’ল ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, ছাদাকাহ, জিহাদ
ইত্যাদি। এসব আমল দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায়।[11]
মোদ্দাকথা যে যত বেশী ভাল আমল করবে, তার ঈমান তত বৃদ্ধি পাবে। তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পর কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী সকল আমল করার চেষ্টা করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায়ের চেষ্টা করতে হবে এবং আউয়াল ওয়াক্তে পড়তে সচেষ্ট হ’তে হবে। ছিয়াম সঠিক নিয়মে আদায় করতে হবে। যার উপর হজ্জ ও যাকাত ফরয হয়েছে তাকে সেগুলো ঠিকভাবে আদায় করতে হবে। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক ভালবাসতে হবে। সকল আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ইত্তেবা করতে হবে। বেশী বেশী যিকর-আযকার করতে হবে। সকল মুসলমানদের জন্য কল্যাণ কামনা করতে হবে। এসব আমলের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করার তাওফীক দান করুন আমীন!
[চলবে]
হাফেয আব্দুল মতীন
লিসান্স ও এম.এ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. বুখারী হা/৫০০২।
[2]. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ, দারউত তা‘আরুয বায়নাল আকল ওয়ান নাকল, তাহকীক : ডঃ মুহাম্মাদ রাশাদ সালেম, ১৪১১ হিঃ ১/২০৮।
[3]. মুসলিম হা/২২৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়।
[4]. বুখারী হা/৬৭৮৬।
[5]. বুখারী হা/৬০৩৮।
[6]. বুখারী হা/৬০২৯।
[7]. বুখারী হা/১৬।
[8]. বুখারী হা/৩৬৫০; মুসলিম হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/৬০০১।
[9]. বুখারী হা/৩৬৭৩।
[10]. বুখারী হা/১৭।
[11]. ড. আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, যিয়াদাতুল ঈমান ওয়া নুকছানিহি, পৃঃ ১৮৩-২৩৭।