এডভোকেট সা‘দ আহমাদের ইন্তেকাল : বাংলাদেশ
সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ‘আহলেহাদীছ
আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কুষ্টিয়া যেলার সাবেক প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট সা‘দ
আহমাদ গত ২রা ফেব্রুয়ারী সোমবার ভোর ৫-টায় কুষ্টিয়া শহরের ১০০ ঝিনাইদহ
রোডের বাসায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও চার মেয়ে রেখে
গেছেন। একই দিন বিকাল ৩-টায় আদালত চত্বরে তার প্রথম জানাযা ও বিকাল ৫-টায়
দ্বিতীয় জানাযা শেষে পৌর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাযার ছালাতে
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম,
কুষ্টিয়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ আমীনুদ্দীন সহ যেলা
‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র নেতৃবৃন্দ, যেলার পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা,
কর্মচারী, আইনজীবি সহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
জীবনী : এডভোকেট সা‘দ আহমাদ ১৯২৭ সালের ১লা মে কুষ্টিয়া যেলার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতের আলীগড় বিশ্বব্যিালয় থেকে বিকম প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৪৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ (অর্থনীতি) প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় এবং এলএলবিতে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। অতঃপর ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ১৯৫২ সালে আইনজীবী হিসাবে অবিভক্ত কুষ্টিয়া বারে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি অবিভক্ত কুষ্টিয়া যেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জুট এডভাইজারি বোর্ডের সদস্য, পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশনের ডাইরেক্টর এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আমলে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৩, ১৯৫৯ ও ১৯৬২ সালে নিবর্তনমূলক আইনে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ করেন। অতঃপর আইডিএলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ও মাওলানা আব্দুর রহীমের মৃত্যুর পর কিছুদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনীর আমন্ত্রণে তিনি ইরান সফর করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি আহলেহাদীছ হন। ২০০৪ সালের ১৪ই এপ্রিল তিনি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতকে প্রধান অতিথি করে রিযিয়া সা‘দ ইসলামিক সেন্টারে ‘ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা’র উপরে একটি সফল সেমিনার করেন (দ্রঃ আত-তাহরীক ৭/৮ সংখ্যা, মে ২০০৪)। ২০০৫ সালে আমীরে জামা‘আত গ্রেফতার হ’লে তিনি তাঁর পক্ষে বগুড়া যেলা আদালতে জোরালো এবং দীর্ঘ শুনানী করেন। এছাড়া তাঁর মুক্তির দাবীতে ১৭ই জুন’০৫ তারিখে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মেলনে তিনি লিখিত ভাষণ প্রেরণ করেন (দ্রঃ আত-তাহরীক ৮/১০ সংখ্যা, জুলাই ২০০৫)।
তিনি শহরের ঝিনাইদহ রোডে প্রতিষ্ঠিত ‘রিযিয়া সা‘দ ইসলামিক সেন্টারে’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৩০শে জুন তিনি উক্ত ইসলামিক সেন্টারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের উপর কোর্টে রেজিষ্ট্রিকৃত ডীড-এর মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। মৃত্যুর আগে প্রায় চার বছর তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
তিনি বেশ কয়েকটি বইয়ের রচয়িতা ছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল- আমার দেখা সমাজ ও রাজনীতির তিন কাল, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর দাওয়াত ও আজকের মুসলমান, ইসলামের অর্থনীতি, সূরা আল-আসরের আলোকে আমাদের সমাজ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সাঃ), ইসলামে মসজিদের ভূমিকা প্রভৃতি।
[আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।-সম্পাদক]