সাকীনাহ বা প্রশান্তি লাভের মাধ্যম সমূহ :

সাকীনাহ হ’ল প্রশান্তি লাভের একটি পবিত্র অনুভূতি, যা মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়। জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার জন্য সকীনাহর কোন বিকল্প নেই। কেননা টাকা-পয়সা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি কখনো মানুষকে প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে পারে না। এই পৃথিবীতে প্রকৃত সুখী হ’তে পারে সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যার অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন। নিমেণ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি লাভ করার কতিপয় উপায় ও মাধ্যম আলোকপাত করা হ’ল।

(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর পরিচয় জানা :

দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রশান্তি লাভ করার প্রধান উপায় হ’ল আল্লাহর প্রতি নির্জলা ঈমান রাখা এবং তাঁর পরিচয় জানা। আল্লাহর পরিচয় জানার অর্থ হ’ল তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা। তাওহীদের জ্ঞান ছাড়া কোন বান্দার ঈমান পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর এটাই সাকীনাহ লাভ করার প্রধান শর্ত। কারণ কোন কাফের, ফাসেক ও মুনাফিকের অন্তরে সাকীনাহ নাযিল করা হয় না। এই সাকীনাহ কেবল পরহেযগার মুমিনদের বক্ষদেশে অবতীর্ণ হয়। আবূ আলী আদ-দাক্কাক্ব (রহঃ) বলেন, المعرفة توجب السكينة فِي القلب كَمَا أَن العلم يوجب السكون فمن ازداد معرفته ازدادت سكينته، ‘তাওহীদের জ্ঞান হৃদয়জুড়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। যেমনভাবে জ্ঞান বিবেকের শান্তভাব নিয়ে আসে। সুতরাং তাওহীদের জ্ঞান যার যত বেশী হবে, তার প্রশান্তিও তত বেশী বৃদ্ধি পাবে’।[1]

(২) কুরআন তেলাওয়াত করা :

কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেকী অর্জিত হয়, তেমনি জীবনজুড়ে প্রশান্তি লাভ করা যায়। কুরআনের অমিয় বাণী হৃদয়ে নিয়ে আসে প্রশান্তি। এই কুরআন দুনিয়াবী যিন্দেগীতে মানব জীবনকে সজীব করে তোলে এবং আখেরাতে পাঠকারীর পক্ষে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে। দিন ও রাতের যে কোন সময়েই কুরআন তেলাওয়াতের এই ফযীলত লাভ করা যায়। তবে রাতের তেলাওয়াত এ ব্যাপারে বেশী কার্যকর। কেননা ক্বিয়ামতের দিন কুরআন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে বলবে,أَيْ رَبِّ، إِنِّي... مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ، ‘হে আমার রব! আমি তাকে রাতের বেলা ঘুমাতে বাধা দিয়েছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন’। অতঃপর আল্লাহ কুরআনের সুপারিশ কবুল করবেন।[2] এই ফযীলত লাভের জন্য ছাহাবায়ে কেরাম রাতের বেলা কুরআন তেলাওয়াত করতেন।

বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, একবার এক ছাহাবী রাতের বেলা সূরা কাহ্ফ তেলাওয়াত করছিলেন। সেই সময় তার বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন লাফালাফি করতে লাগল। তিনি দেখলেন, একখন্ড কুয়াশা বা মেঘ এসে তাকে ঢেকে দিয়েছে। পরক্ষণেই দেখলেন সেই মেঘমালা আর নেই। ফলে সকাল বেলা উঠে তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। তখন তিনি বললেন, اقْرَأْ فُلاَنُ، فَإِنَّهَا السَّكِينَةُ نَزَلَتْ لِلْقُرْآنِ، أَوْ تَنَزَّلَتْ لِلْقُرْآنِ، ‘হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করবে। এটা তো প্রশান্তি (সাকীনাহ) ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল’।[3] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,تلك السكينة نزلت لقراءة القرآن لأن السكينة تنزل عند قراءة القرآن إذا قرأه الإنسان بتمهل وتدبر فإن السكينة تنزل حتى تصل إلى قلب القارئ فينزل الله السكينة في قلبه، ‘সেই সাকীনাহ বা প্রশান্তি নাযিল হয়েছিল কুরআন তেলাওয়াতের কারণে। কেননা কুরআন পাঠের সময় সাকীনাহ নাযিল হয়। যখন মানুষ অনুধাবন করে ধীরে-সুস্থে কুরআন তেলাওয়াত করে, তখন সাকীনাহ বর্ষিত হয়ে পাঠকারীর হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এভাবেই আল্লাহ তার অন্তরজগতে প্রশান্তি ঢেলে দেন’।[4]

মহান আল্লাহ বলেন,الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِ أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ، ‘যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহকে স্মরণ করলে যাদের অন্তরে প্রশান্তি আসে। মনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই কেবল হৃদয় প্রশান্ত হয়’ (রা‘দ ১৩/২৮)। আলোচ্য আয়াতে কেবল মুমিনদের হৃদয় প্রশান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।[5] আর যিকির বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أَنَّ ذِكْرَ اللهِ هَاهُنَا الْقُرْآنُ، وَهُوَ ذِكْرُهُ الَّذِي أَنْزَلَهُ عَلَى رَسُولِهِ. بِهِ طُمَأْنِينَةُ قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ، فَإِنَّ الْقَلْبَ لَا يَطْمَئِنُّ إِلَّا بِالْإِيمَانِ وَالْيَقِيْنِ، وَلَا سَبِيلَ إِلَى حُصُولِ الْإِيمَانِ وَالْيَقِينِ إِلَّا مِنَ الْقُرْآن، ‘আল্লাহর যিকির বলতে এখানে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এটা আল্লাহর যেই যিকির যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। এর মাধ্যমেই মুমিনের হৃদয় সমূহ প্রশান্তি লাভ করে। কেননা ঈমান ও ইয়াক্বীন ছাড়া হৃদয় প্রশান্ত হয় না। আর কুরআন ছাড়া ঈমান ও ইয়াক্বীন লাভেরও কোন পথ নেই’।[6] আব্দুর রহমান আস-সা‘দী (রহঃ) বলেন, এখানে ‘যিকরুল্লাহ’ বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। মুমিনগণ যখন এই কুরআনের মর্ম অনুধাবন করবেন এবং এর বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবেন, তখন তাদের সামনে সত্য প্রকাশিত হবে, বিশ্বাস সুদৃঢ় হবে এবং হৃদয় প্রশান্ত হবে’।[7] তবে জমহুর মুফাসসিরীনে কেরামের মতে, ‘যিকরুল্লাহ’ বলতে শুধু কুরআনকে বুঝানো হয়নি; বরং আল্লাহকে স্মরণ করার প্রত্যেক মাধ্যমকেই বুঝানো হয়েছে।

তবে প্রশান্তি লাভের জন্য সাকীনাহর আয়াত সমূহের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়া (রহঃ) বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) যখন কোন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হ’তেন, তখন সাকীনাহর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করতেন’।[8] অসুস্থতা, অক্ষমতা, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা, শয়তানী ওয়াসওয়াসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি সাকীনাহর আয়াত তেলাওয়াত করতেন এবং বলতেন,فَلَمَّا اشْتَدَّ عَلَيَّ الْأَمْرُ، قُلْتُ لِأَقَارِبِي وَمَنْ حَوْلِيَ: اقْرَءُوا آيَاتِ السَّكِينَةِ، قَالَ: ثُمَّ أَقْلَعَ عَنِّي ذَلِكَ الْحَالُ، وَجَلَسْتُ وَمَا بِي قَلْبَةٌ، ‘কোন কঠিন পরিস্থিতি যখন আমার উপর জেকে বসে, তখন আমি আমার আত্মীয়-স্বজন এবং আমার আশপাশের কাউকে বলি, আমাকে সাকীনাহর আয়াতগুলো পড়ে শুনাও। তারপর (আয়াতগুলো শুনে) আমার থেকে সেই কঠিন অবস্থা দূর হয়ে যায় এবং আমি এমন হয়ে যাই যে আমার অন্তরেরও কোন রোগ থাকে না’। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, وَقَدْ جَرَّبْتُ أَنَا أَيْضًا قِرَاءَةَ هَذِهِ الْآيَاتِ عِنْدَ اضْطِرَابِ الْقَلْبِ بِمَا يَرِدُ عَلَيْهِ. فَرَأَيْتُ لَهَا تَأْثِيرًا عَظِيمًا فِي سُكُونِهِ وَطُمَأْنِينَتِهِ، ‘আমিও মনের অস্থিরতা ও অশান্তির মুহূর্তে এই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে দেখেছি এবং খেয়াল করেছি যে, মনের সুস্থিরতা ও প্রশান্তি লাভে এই আয়াতগুলির বিরাট প্রভাব রয়েছে’।[9] সুতরাং সাকীনাহর আয়াত তেলাওয়াত করে অথবা শুনে আমরা আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে পারি। ইউটিউবে যে কোন ভাষায় সাকীনাহর আয়াত লিখে সার্চ দিলে একসাথে সব আয়াতের তেলাওয়াত পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

ইতালির বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ৩৮ বছর বয়স্ক রোকসানা ইলিনা নেগ্রা ইসলাম গ্রহণের পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছি। যতই পড়েছি, ততই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এই মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী। আমি সব সময় প্রশান্তির জন্য, অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা ও গবেষণা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ইসলামেই রয়েছে সবকিছুর সঠিক সমাধান’।[10]

(৩)ছালাত আদায় করা :

বান্দার সার্বিক জীবনে সাকীনাহ লাভ করার অন্যতম প্রধান উপায় হ’ল ছালাত আদায়। আল্লাহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যেন একজন বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে প্রশান্তিময় জীবনের দিকে অগ্রসর হ’তে পারে। যারা যত বেশী মনোযোগী হয়ে ছালাতে নিবিষ্ট হ’তে পারেন, প্রশান্তির ফল্গুধারা তাদেরকে তত বেশি সিক্ত করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে বলতেন, قُمْ يَا بِلَالُ فَأَرِحْنَا بِالصَّلَاةِ، ‘হে বিলাল! আযান দাও, আমাদেরকে ছালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভের ব্যবস্থা করো’।[11] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, أرحنا بها فإن فيها الراحة والطمأنينة والسكينة، ‘ছালাতের মাধ্যমে আমাদের প্রশান্তি দাও- এই কথা বলেছেন এজন্য যে, ছালাতে রয়েছে আত্মিক শান্তি, মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি’।[12] শুধু ছালাত নয়, আল্লাহর যে কোন ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করা যায়। কবি বলেন, 

من يطع ربه تطعه الليالي * وتجيئه الورى وهم خدام

هو رضوان في سكينة رضوى * رضي الله عنه والإسلام

‘যে ব্যক্তি তার রবের আনুগত্য করে, রাত তার অনুগত হয় এবং গোটা সৃষ্টিকূল তার সেবক হয়ে যায়। সে আনন্দচিত্তে প্রশান্তির মাঝে অবস্থান করে। আল্লাহ তার প্রতি এবং তার লালিত ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান’।[13]

(৪) দ্বীন শিক্ষার মজলিস বা তা‘লীমী বৈঠকে অংশগ্রহণ করা:

আল্লাহ প্রদত্ত সাকীনাহ লাভের উত্তম উপায় হ’ল দ্বীন শিক্ষার মজলিসে অংশগ্রহণ করা। দ্বীনের জ্ঞান বিতরণের জন্য হোক কিংবা আহরণের জন্য হোক, যারাই এই তা‘লীমী বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করে, তাদের উপর আসমান থেকে প্রশান্তি নাযিল হয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ، ‘যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন’।[14] এই হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন, হাদীছে আলোচিত সাকীনাহর মাধ্যমে হৃদয় প্রশান্ত ও আলোকিত হয়।[15] শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, সাকীনাহ মহান আল্লাহর বিশাল বড় একটি নে‘মত, যা তিনি বান্দার কলবে নাযিল করেন। ফলে সে প্রশান্ত, দৃঢ় প্রত্যয়ী ও বিনয়ী হয়ে যায়। তার মনে কোন দুশ্চিন্তা, সন্দেহ, সংশয় অবস্থান করতে পারে না। বরং সে আল্লাহর নির্ধারিত তাক্বদীরের যাবতীয় ফায়ছালাতে খুশি থাকে, প্রশান্ত চিত্তে সেটা মেনে নেয় এবং সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।[16] পার্থিব জীবনের পরিবেশে দুশ্চিন্তা, টেনশন ও মানসিক চাপ মুক্ত করে। জীবন হয়ে ওঠে নির্মল ও শান্তিময়। নিজের জীবনকে প্রশান্ত করতে হ’লে দ্বীন শিক্ষার মজলিস, কুরআন তেলাওয়াতের মজলিস, তা‘লীমী বৈঠক প্রভৃতিতে সশরীরে অংশগ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এই বৈঠকগুলোতে সাকীনাহ বর্ষিত হয়।

(৫) নেককার জীবনসঙ্গী :

প্রশান্তি লাভের বাহ্যিক উপাদান হ’ল নেককার জীবনসঙ্গী। দাম্পত্য জীবনে নেককার স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য নে‘মত স্বরূপ। একজন স্বামীর যতই টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি থাক না কেন, তার স্ত্রী যদি দ্বীনদার সৎকর্মশীলা ও অনুগত্যশীলা না হয়, তাহ’লে তার সংসার কখনোই সুখের হয় না। অনুরূপভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যদি তাদের কর্তব্য পালনে গাফেল থাকে এবং একে অপরের অধিকার আদায়ে সচেতন না থাকে, তাহ’লে তাদের সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠা স্বাভাবিক। কেননা দাম্পত্য জীবনে বিশুদ্ধ দ্বীনের অনুশীলন ও শারঈ দিক-নির্দেশনার প্রতিপালন ছাড়া প্রশান্তিময় জীবন লাভ করা আদৌ সম্ভব নয়। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিবাহের সময় জীবনসঙ্গী গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দ্বীনদারীকে প্রধান্য দিতে বলেছেন।[17] আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ- ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হ’তে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন সমূহ রয়েছে’ (রূম ৩০/২১)। স্বামী-স্ত্রী যদি পরহেযগার, দ্বীনদার ও সৎকর্মশীল হয়, তাহ’লে তাদের অকৃত্রিম ভালবাসার বন্ধন চির অটুট থাকে। একে অপরের মধ্যমে তাদের চক্ষু শীতল হয়। হৃদয় প্রশান্ত হয়। সংসারে চিরকাল সুখের সমীরণ প্রবহমান থাকে। কিন্তু তারা যদি আল্লাহর অনুগত্য ও পরিবারে দ্বীনের অনুশীলন অব্যাহত না রাখে, তাহ’লে প্রশান্তির চৌহদ্দি থেকে তারা ছিটকে পড়ে যায় এবং নিমিশেই অশান্তির ঘেরাটোপে আটকে যায় জীবন। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী যত বেশী নেককার হবেন, তাদের সংসার তত বেশী প্রশান্তিময় হয়ে উঠবে। আর সন্তান-সন্ততিও গড়ে উঠবে পিতা-মাতার আদর্শ ধন্য হয়ে। নেককার দম্পতির ভালবাসা শুধু দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তা প্রলম্বিত হয় জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আবূ সুলাইমান আদ-দারানী (রহঃ) যথার্থই বলেছেন,الزوجة الصالحة ليست من الدنيا فإنها تفرغك للآخرة، ‘নেককার স্ত্রী শুধু দুনিয়াতে নয়; বরং তোমাকে আখেরাতের দিকেও পুরোপুরি নিয়োজিত করে তোলে’।[18]

(৬) আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী হওয়া :

কোন ব্যক্তির দ্বীনদার হওয়া আর দ্বীনের সাহায্যকারী হওয়া এক জিনিস নয়। বরং দ্বীনের সাহায্যকারী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর বান্দার সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ হযয়েছেন। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাগুলো দৃঢ় করবেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا أَنْصَارَ اللهِ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহয্যকারী হয়ে যাও’ (ছফ ৪১/১৪)। শুধু মুখে দাবী করার মাধ্যমে এবং শরী‘আতের আদেশ-নিষেধ পালন না করে দ্বীনের সাহায্যকারী হওয়া যায় না। বরং নিজের ব্যক্তি জীবনে, পরিবার ও সমাজ জীবনে নিষ্ঠার সাথে সেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার কোশেশ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দ্বীনের সাহায্যকারী হওয়া যায়। যারা এই কাজে নিয়োজিত হ’তে পারেন, আল্লাহ আসমান থেকে তাদের উপর সাকীনাহ নাযিল করেন, তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেন এবং দান করেন ইহকালীন ও পরকালীন বিজয়। যেমন ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপনের আগে নাজুক পরিস্থিতিতে ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর দ্বীনের কালেমাকে উচ্চকিত করার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করেছিলেন। এতে আল্লাহ এত খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি তাদের উপর সরাসরি সাকীনাহ বা প্রশান্তি নাযিল করেন এবং মক্কা বিজয়ের পূর্বাভাস দেন। এ মর্মে আল্লাহ বলেন,لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন মুমিনদের প্রতি, যখন তারা বৃক্ষের নীচে তোমার নিকট বায়‘আত করেছে। এর মাধ্যমে তিনি তাদের অন্তরে যা ছিল তা জেনে নিলেন। ফলে তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়’ (ফাৎহ ৪৮/১৮)। সুতরাং আমরাও যদি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে শারঈ বিধিবিধান পালনের মাধ্যেমে এবং সমাজ জীবনে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে সহযোগিতা করার যাবতীয় কাজের আঞ্জাম দিতে পারি, তাহ’লে মহান আল্লাহ ছাহাবায়ে কেরামের মতো আমাদের জীবনজুড়েও প্রশান্তির বারিধারা বর্ষণ করবেন ইনশাআল্লাহ।

(৭) সকল কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করা :

মানুষের প্রকৃত সুখ নির্ভর করে তার মানসিক প্রশান্তির উপর। মানসিক প্রশান্তির জন্য মানুষ যতই উপায় অবলম্বন করুক না কেন, তাতে কোন না কোন ফাঁক-ফোকর থাকবেই, যা সে কখনোই বন্ধ করতে পারবে না। কিন্তু যখনই সে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয় এবং তাঁর উপর ভরসা করে, তখনই সে সণায়ুবিক দুর্বলতা থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। মানসিকভাবে শক্তিশালী হয় এবং আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করে। শাক্বীক্ব ইবনে ইবরাহীম বলখী (রহঃ) বলেন, التَّوَكُّلُ طُمَأْنِينَةُ الْقَلْبِ بِمَوْعُودِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، ‘তাওয়াক্কুল হ’ল মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুত আত্মিক প্রশান্তি’।[19] একদিন জনৈক ব্যক্তি হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, عَلَى ما بَنَيْتَ أَمْرَكَ؟ ‘আপনি আপনার জীবন কিভাবে পরিচালনা করেন? তিনি বললেন, عَلَى التَّوَكُّلِ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ،.. عَلِمْتُ أَنَّ رِزْقِي لا يَأْكُلُهُ غَيْرِي، فَاطْمَأَنَّتْ بِهِ نَفْسِيْ، ‘আল্লাহর উপরে ভরসার ভিত্তিতে (আমি আমার জীবন পরিচালনা করি)। আমি জানি আমার জন্য বরাদ্দ রিযিক আমি ব্যতীত অন্য কেউ খেতে পারবে না। তাই সে ব্যাপারে আমার আত্মা প্রশান্ত থাকে’।[20]

উপরন্তু বান্দা যখন জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও ভরসা করতে পারে, তখন তার শারীরিক ও মানসিক সংকটে বালা-মুছীবত আরো উপভোগ্য ওঠে। তখন সে বিপদাপদ, রোগ-ব্যাধিসহ জীবনের সকল মুছীবতকে আল্লাহর নে‘মত মনে করে প্রশান্তি লাভ করে এবং আখেরাতে এর পুরস্কারের আশায় আল্লাহর নির্ধারিত যাবতীয় ফায়ছালাকে গ্রহণ করে। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,تَفْوِيضُ الْأَمْرِ إِلَيْهِ رَدُّهُ إِلَى اللهِ سُبْحَانَهُ، وَذَلِكَ يُوجِبُ سُكُونَ الْقَلْبِ وَطُمَأْنِينَتَهُ، وَالرِّضَى بِمَا يَقْضِيهِ وَيَخْتَارُهُ لَهُ مِمَّا يُحِبُّهُ وَيَرْضَاهُ، ‘সকল বিষয় আল্লাহর কাছে সমর্পণ করার বৈশিষ্ট্য বান্দাকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনে। এটা তার মনের সুস্থিরতা ও প্রশান্তিকে সুনিশ্চিত করে এবং সে যেটা পসন্দ করে ও ভালোবাসে সে ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও ফায়ছালাতে সন্তুষ্ট হওয়াকে আবশ্যক করে দেয়’।[21] যেমন ভাবে ইবরাহীম (আঃ) জ্বলন্ত হুতাশনে বসে আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রশান্তি লাভ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাওর গুহাতে আল্লাহর উপর ভরসা করে সাকীনাহপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য নবী-রাসূল, তাদের সঙ্গী-সাথীবৃন্দ এবং যুগে যুগে তাদের সনিষ্ঠ অনুসারীবৃন্দ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে, মানসিক ও শারীরিক কষ্টে, নির্যাতনের কষাঘাতে আল্লাহর উপর ভরসা করে অনাবিল প্রশান্তি লাভ করেছেন।

­­­­­­­­­­­(৮) অল্পে তুষ্ট থাকা ও তাক্বদীরের ফায়ছালাতে সন্তুষ্ট থাকা :

প্রশান্তি লাভের অন্যতম বড় মাধ্যম হ’ল আল্লাহ কর্তৃক তাক্বদীরের নির্ধারিত ভালো-মন্দ ফায়ছালাতে খুশি থাকা এবং সকল পার্থিব বিষয়ে অল্পে তুষ্ট থাকা। এই দু’টি গুণ যার মধ্যে যত বেশী থাকবে, পৃথিবীতে তিনি তত বেশী সুখী মানুষ হ’তে পারবেন। তার জন্য প্রশান্তি লাভ করা তত বেশী সহজ হবে। কেননা আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে, তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত। দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও পেরেশানির মাধ্যমে তা পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব নয়। সেজন্য তাক্বদীরের ফায়ছালাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ، وَأَنَّ مَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ، ‘কোন বান্দা মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না সে তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে। এমনকি তার নিশ্চিত বিশ্বাস থাকতে হবে যে, যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত থাকত না এবং যা কিছু ঘটেনি তা কখনোও তাকে স্পর্শ করার ছিল না’।[22] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন,الرِّضَا بِالْقَضَاءِ مِنْ أَسْبَابِ السَّعَادَةِ، وَالتَّسَخُّطُ عَلَى الْقَضَاءِ مِنْ أَسْبَابِ الشَّقَاوَةِ، ‘তাক্বদীরের ফায়ছালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা সুখের অন্যতম উপকরণ। আর এর প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া দুঃখ-দুর্দশার কারণ’।[23]

আবূ হাতেম বুস্তী (রহ.) বলেন, من قنع لم يتسخط وعاش آمنا مطمئنًا، ‘যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্ট থাকে, সে কখনো (তাক্বদীরের প্রতি) অসন্তুষ্ট হয় না। সে নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত চিত্তে জীবন নির্বাহ করে’।[24] কবি বলেন,

هي القناعة لا تبغي بها بدلا * فيها النعيم وفيها راحة البدن،

‘অল্পে তুষ্টির কোন তুলনা হয় না, এতে রয়েছে মনের সুখ এবং দেহের প্রশান্তি’।[25] বিদ্বানগণ বলেন, السّكينة تؤدّى إلى الرضا بما قسم الله عزّ وجلّ وتمنع من الشّطط والغلوّ، ‘সাকীনাহ (বান্দাকে) আল্লাহর বণ্টিত তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে শেখায় এবং বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করে’।[26]

গবেষণায় উঠে এসেছে, মুসলিমরাই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। কারণ মুসলিমরা একজন সৃষ্টিকর্তার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে জীবন পরিচালনা করেন। মুসলিমরা তাক্বদীর বা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। ফলে অল্পতেই তারা সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি বোধ করেন। মুসলিমদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে বদ্ধমূল। ফলে তারা বহুবিধ পাপাচার থেকে বিরত থাকেন। আল্লাহর একত্ব আর আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস মুসলিমদের প্রভাবিত করায় হতাশা ও উদ্বেগ তাদের খুব বেশী গ্রাস করতে পারে না। গবেষণায় দেখা যায়, অতিমাত্রায় একত্ববাদে বিশ্বাস বিষণ্ণতা, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও আত্মহত্যার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ধর্ম ও সুখের সঙ্গে একটি ইতিবাচক সংযোগ আছে।[27]

(৯) সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকা :

জীবনে সন্দেহপূর্ণ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে মুমিন বান্দা প্রশান্তি লাভ করতে পারে। শয়তান সবসময় হারাম বিষয়কে মানুষের সামনে সুশোভিত করে ফুটিয়ে তোলে। ফলে মানুষ সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায়। ঐ সময় যারা এই সন্দেহপূর্ণ বিষয়টি পরিত্যাগ করতে পারে, আল্লাহর তাদের অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দেন। হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ মুখস্থ করে রেখেছি, তিনি বলেছেন, دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ، ‘সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে সন্দেহহীন বিষয়ের দিকে ধাবিত হও। কেননা সত্য ও ন্যায়ের মধ্যে প্রশান্তি আছে, আর মিথ্যার মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়’।[28] অনেক সময় আমরা কোন চাকুরী, ব্যবসা কিংবা যে কোন ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে সংশয়ের মধ্যে পড়ে যাই যে, এটা করা ঠিক হবে কি-না? সেই ক্ষেত্রে ঐ কাজটি পরিহার করাই হবে ঈমানের পরিচায়ক। যতক্ষণ না কোন বিজ্ঞ আলেমের মাধ্যমে তার বৈধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشبهاب استبرَأَ لدِينهِ وعِرْضِهِ ومَنْ وقَعَ فِي الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ، ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এতদুভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহপূর্ণ বিষয় আছে, যেগুলোর ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় হ’তে বিরত থাকবে, তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে’।[29] এই হাদীছ দু’টি মুসলিম জীবনের মূলনীতি স্বরূপ। যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে থেকে বিরত থেকে সংশয়হীন বিষয়কে গ্রহণ করার এই মূলনীতি গ্রহণ করতে পারবে, আল্লাহ তার দ্বীনকে হেফাযত করবেন এবং দুশ্চিন্তামুক্ত প্রশান্তির জীবন দান করবেন।

(১০) আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা :

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। বান্দা আল্লাহর কাছে আবেদন ছাড়াই মহামূল্যবান জীবন, প্রখর মেধা ও তীক্ষ্ম জ্ঞান-বুদ্ধি, নাক, কান, চোখ, মুখ, জিহবা, হাত-পাসহ অসংখ্য নে‘মত লাভ করেছে। বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ, আলো, বাতাস, পানি ও প্রয়োজনীয় বহু নে‘মত সম্ভারে এ সুন্দর পৃথিবীকে সাজানো হয়েছে কেবল মানুষের কল্যাণের জন্য। এর বিনিময়ে আল্লাহ মানুষের কাছে কোন কিছুই চান না। শুধু চান বান্দারা তার শুকরিয়া আদায় করুক। শুকরিয়া আদায়ের বড় একটি উপকারিতা হ’ল এর মাধ্যমে বান্দা মানসিক প্রশান্তি লাভ করে থাকে। বান্দা যখন কোন নে‘মত লাভের পরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়, তখন তার হৃদয় প্রদেশে এক অনাবিল শান্তি ও তৃপ্তি অনুভূত হয়। ভেতরে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। সে যত বেশী শুকরিয়া আদায় করে, তার মানসিক প্রশান্তি ততই বেড়ে যায়। ইবরাহীম ইবনু আদহাম (রহঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَجْعَلُ السَّكِينَةَ عَلَى الشَّاكِرِ مِنَ النَّاسِ، ‘মহান আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকে শুকরিয়া আদায়কারীকে সাকীনাহ বা প্রশান্তি দান করেন’।[30]

(১১) বিপদাপদকে নেকী লাভের মাধ্যম মনে করা :

মুমিন বান্দার জন্য দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ জীবনের একটি অপরিহার্য অনুসঙ্গ। বালা-মুছীবত উপেক্ষা করে মুমিন বান্দাকে জান্নাতের পথে চলতে হয়। দ্বীনের পথে এই কষ্ট স্বীকারের মধ্যেই রয়েছে সফলতা। সেকারণ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বিপদগ্রস্থ মানুষ ছিলেন নবী-রাসূলগণ এবং তাদের সনিষ্ঠ অনুসারীবৃন্দ।[31] মুমিনগণ ইবাদতের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর কাছে নেকীর প্রত্যাশা করেন, ঠিক তেমনি বিদাপদকেও নেকী লাভের মাধ্যম মনে করেন। ফলে এই বিপদাপদ তার মানসিক প্রশান্তির উপাদানে পরিণত হয়। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلَاءِ، كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ، ‘তাদের কেউ বিপদে এতটা প্রশান্ত ও উৎফুল্ল থাকতেন, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে’।[32] অর্থাৎ মানুষ সম্পদ লাভ করে যেমন আনন্দিত হয়, তারা বিপদাপদে পড়ে তেমনি খুশি হ’তেন। কেননা তারা মুছীবতকে ছওয়াব লাভের মাধ্যম মনে করতেন এবং এটিকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার ওসীলা মনে করতেন। সেজন্য তারা অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে যেমন প্রশান্তি পেতেন, তেমনি বিপদাপদের মাধ্যমেও প্রশান্তি লাভ করতেন।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,

فَلَا رَيْبَ أَنَّ الْمُبْتَلَى إِذَا قَوِيَتْ مُشَاهَدَتُهُ لِلْمَثُوبَةِ سَكَنَ قَلْبُهُ وَاطْمَأَنَّ بِمُشَاهَدَةِ الْعِوَضِ. وَإِنَّمَا يَشْتَدُّ بِهِ الْبَلَاءُ إِذَا غَابَ عَنْهُ مُلَاحَظَةُ الثَّوَابِ. وَقَدْ تَقْوَى مُلَاحَظَةُ الْعِوَضِ حَتَّى يَسْتَلِذَّ بِالْبَلَاءِ وَيَرَاهُ نِعْمَةً،

‘এটা নিশ্চিত যে, যখন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির নেকী লাভের উদ্দেশ্য সুদৃঢ় হয়, তখন সেই নেকীর প্রত্যাশায় তার হৃদয় আরামবোধ করে এবং প্রশান্তি লাভ করে। কিন্তু নেকী লাভের প্রত্যাশা যদি না থাকে, তাহ’লে বিপদটি তার কাছে খুবই কঠিন মনে হয়। তাই পুরস্কার লাভের উদ্দেশ্য মযবূত হ’লে বালা-মুছীবতে সে আনন্দ উপভোগ করে এবং এটাকে (আল্লাহর) নে‘মত মনে করে’।[33] সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, لَيْسَ بِفَقِيهٍ مَنْ لَمْ يَعُدَّ الْبَلَاءَ نِعْمَةً، وَالرَّخَاءَ مُصِيبَةً، ‘সেই ব্যক্তি প্রকৃত জ্ঞানী নয়, যে বিপদকে নে‘মত মনে করে না এবং প্রাচুর্য-ঐশ্বর্যকে মুছীবত হিসাবে গণ্য করে না’।[34]

সুতরাং মুমিন বান্দার কর্তব্য হ’ল জীবনে সকল ভালো কাজ ও দুঃখ-কষ্টকে ছওয়াব লাভ ও আল্লাহর রেযামন্দি হাছিলের মাধ্যম মনে করা। তাহ’লে তিনি সকল কাজে প্রশান্তি লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন,أَيُّهَا النَّاسُ! احْتَسِبُوا أعمالَكم؛ فَإِنَّ مَنِ احْتَسَبَ عمَله كُتب لَهُ أجْرُ عَمَله وَأَجْرُ حِسْبَتِهِ؛ ‘হে মানব সকল! তোমারা তোমাদের আমলে ছওয়াব লাভের প্রত্যাশা কর। যে ব্যক্তি তার আমলে নেকী লাভের আশা করে, তাহ’লে সে আমল সম্পাদনের নেকী পাবে এবং প্রত্যাশা করারও নেকী পাবে’।[35]

(১২) আল্লাহর পথে উৎসর্গ করা :

আল্লাহর পথে কোন কিছু উৎসর্গ করার মাধ্যমে বান্দা মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি লাভ করে। কারণ তার এই পরিতৃপ্তির অনুভূতিটা আসে স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তাঁর জন্য উৎসর্গকারী ও ত্যাগ স্বীকারকারী মুমিন বান্দার হৃদয়তন্ত্রীতে সাকীনাহ বা প্রশান্তি নাযিল করেন। ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,إن العبد إذا جاد بنفسه لله أورث الله قلبه الهدى والتقى، وأعطي السكينة والوقار والحلم الراجح والعقل الكامل، ‘যখন বান্দা স্রেফ আল্লাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে, তখন আল্লাহ তার হৃদয়কে হেদায়াত ও তাক্বওয়ার অধিকারী বানিয়ে দেন। আর তাকে দান করেন প্রশান্তি, সুস্থিরতা, সার্বিক সহনশীলতা এবং পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা’।[36] সুতরাং মুমিন বান্দা তার সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর পথে জান-মাল, সময়-শ্রম উৎসর্গ করবে, আর বিনিময়ে লাভ করবে দুনিয়াতে প্রশান্তিময় পবিত্র জীবন এবং আখেরাতে চির শান্তিময় জান্নাত।

(১৩) আল্লাহর কাছে দো‘আ করা :

সাকীনাহ নামক প্রশান্তি লাভ করার আরেকটি মোক্ষম উপায় হ’ল আল্লাহর কাছে দো‘আ করা। ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর কাছে সাকীনাহ লাভের জন্য দো‘আ করতেন এবং রাসূল (ছাঃ) সেটা সমর্থন করেছেন। বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাটি বহন করছিলেন এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)-এর কবিতা আবৃত্তি করছিলেন,

اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا ­­+ وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا،

فَأَنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا + وَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا،

‘হে আল্লাহ! আপনি যদি আমাদের হেদায়াত না দিতেন, তাহ’লে আমরা হেদায়াত পেতাম না। আমরা ছাদাক্বাহ করতাম না, ছালাতও আদায় করতাম না। সুতরাং আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন এবং দুশমনের সম্মুখীন হওয়ার সময় আমাদের দৃঢ়পদ রাখুন’।[37]

পরিশেষে বলা যায়, সাকীনাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত একটি পবিত্র অনুভূতির নাম। মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার হৃদয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই সাকীনাহ অবতীর্ণ করে তাকে প্রশান্তি দান করেন। ঈমানদার ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ এই পবিত্র অনুভূতি দান করেন না। সুতরাং সকীনাহপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রথমত ঈমানদার হওয়া অবশ্যক। মহান আল্লাহ আমাদেরকে পূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমাদের হৃদয়জুড়ে সাকীনাহ বর্ষণ করে পার্থিব জীবনকে প্রশান্তিময় করুন এবং আখেরাতে জান্নাতুল ফেরদাউসে প্রবেশের সুযোগ দান করুন- আমীন!

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[1]. আব্দুল কারীম আল-কুশাইরী, আর-রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ ২/৪৭৮।

[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/৬৬২৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/১৯৬৩; সনদ ছহীহ।

[3]. বুখারী হা/৩৬১৪, ৪৮৩৯।

[4]. ছালেহ আল-উছাইমিন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ৪/৬৫১।

[5]. তাফসীরে কুরতুবী ৯/৩১৫।

[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/৪৮০।

[7]. তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৪১৮।

[8]. পবিত্র কুরআনে তিনটি সূরায় মোট ছয়টি আয়াতে ‘সাকীনাহ’র কথা আলোকপাত করা হয়েছে। এই ছয়টি আয়াতকে সাকীনাহর আয়াত বলা হয়। সেগুলো হ’ল সূরা বাক্বারাহ ২/২৪৮; সূরা তাওবাহ ৯/২৬, ৪০; সূরা ফাৎহ ৪৮/৪, ১৮, ২৬।

[9]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ২/৪৭১।

[10]. দৈনিক ইনকিলাব, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭।

[11]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৮৮; আবূদাঊদ হা/৪৯৮৬, সনদ ছহীহ।

[12]. ছালেহ আল-উছায়মীন, মাকারিমুল আখলাক্ব (রিয়াদ: দারুল ওয়াত্বান, তাবি) পৃ. ২১।

[13]. ফাৎহ ইবনে খাক্বান, ক্বালাইদুল ‘ইক্বয়ান (আল-মাকতাবাতুশ শামেলাহ), পৃ. ২৬২।

[14]. মুসলিম হা/২৬৯৯; আবূদাঊদ হা/১৪৫৫; তিরমিযী হা/২৯৪৫; মিশকাত হা/২০৪।

[15]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ১/২৮৭।

[16]. উছাইমিন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ৪/৭০৮-৭০৯।

[17]. বুখারী হা/৫০৯০; মুসলিম হা/১৪৬৬; মিশকাত হা/৩০৮২।

[18]. গাযালী, ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ২/৩১।

[19]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ২/৪৫৬।

[20]. শামসুদ্দীন যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৮৫; ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ২/৩৪০।

[21]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/২২৪।

[22]. তিরমিযী হা/২১৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৮১, সনদ ছহীহ।

[23]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/২০২।

[24]. আবূ হাতেম বুস্তী, রাওযাতুল ‘উক্বালা, পৃ. ১৫১।

[25]. তাফসীরে কুরতুবী, ১৩/৩১৪।

[26]. নাযরাতুন নাঈম ৬/২২৭১।

[27]. দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই ২০১৯।

[28]. তিরমিযী হা/২৫১৮; নাসাঈ হা/৫৭১১; মিশকাত হা/২৭৭৩, ছহীহ।

[29]. বুখারী হা/৫২; মুসলিম হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/ ২৭৬২।

[30]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃ. ৮৩।

[31]. তিরমিযী হা/ ২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/১৫৬২; সনদ হাসান।

[32]. ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ‘ফিতান’ অধ্যায়-৩০, ‘বিপদে ধৈর্য ধারণ’ অনুচ্ছেদ-২৩; সনদ ছহীহ।

[33]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/৪৮৩।

[34]. আবূ নু‘আইম আছ্ফাহানী, হিলয়াতুল আউলিয়া ৭/৫৫।

[35]. ইবনুল আছীর, আন-নিহায়া ফী গারীবিল হাদীছ ১/৩৮২।

[36]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/৪৫৭।

[37]. বুখারী হা/৪১০৬; মুসলিম হা/১৮০৩; মিশকাত হা/৪৭৯২।






মাসায়েলে কুরবানী - আত-তাহরীক ডেস্ক
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম (৭ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-ই সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (পূর্বে প্রকাশিতের পর) - আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রাযযাক
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
এক নযরে হজ্জ - আত-তাহরীক ডেস্ক
ক্বলব : মানব দেহের রাজধানী - খাইরুল ইসলাম বিন ইলইয়াস
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ - ড. মুহাম্মাদ কামরুয্যামান
জান্নাতের পথ - ড. নূরুল ইসলাম
শারঈ ঝাড়-ফুঁক : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৪র্থ কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.