দালালের দেŠরাত্ম্য, ঘুষের ছড়াছড়ি, সেবাপ্রার্থীর প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম অবহেলা, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিল ঘোরা, দিনের পর দিন হয়রানি এই হ’ল সারা দেশে ভূমি অফিসগুলির সাধারণ চিত্র। রাজশাহীর পবা উপযেলা ভূমি অফিসও একসময় তা-ই ছিল। কিন্তু সবকিছু বদলে দিয়েছেন একজন শাহাদত হোসেন (৩৬)। কিশোরগঞ্জের অধিবাসী এই সহকারী কমিশনার (ভূমি) দু’বছর আগে রাজশাহীর এই কার্যালয়ে যোগ দেন। সবকিছু দেখে শুরু করেন সংস্কার।
এখন প্রধান ফটকের ডান দিকে একটি টিনশেড ঘর, নাম ‘মাটির মায়া’। তাতে টেবিল নিয়ে বসে আছেন এসি ল্যান্ড স্বয়ং। সেবাপ্রার্থীরা প্রথমেই সরাসরি কথা বলছেন তার সাথে। তিনি শুনছেন, তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন অথবা নির্দিষ্ট কর্মচারীকে ডেকে কাজটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দেখে মনে হবে, চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখছেন ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।
চত্বরে বোর্ডে বিভিন্ন ফি সমূহ এবং জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের নিয়ম-কানুন লেখা রয়েছে। একদিকে হেলপ ডেস্ক থেকে তথ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কার্যালয়ের প্রত্যেক কক্ষের ওপরে কর্মচারীর নাম ও কার কাছে কোন সেবা পাওয়া যাবে তা লেখা। প্রতিটি কক্ষে ছোট সাদা বোর্ডে কর্মচারীদের প্রতিদিনের কাজ লেখা। দিন শেষে এসি ল্যান্ড সেগুলো ধরে মূল্যায়ন করেন। একটি বড় ডিসপ্লে বোর্ডে কোন ধরনের মামলার শুনানি কোন দিন, তা লেখা আছে।
আগে যেকোন নথি খুঁজতে দিন পরে হয়ে যেত। বর্তমানে দেড় লাখের মত নথি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে যেকোন নথি এক মিনিটের মধ্যে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মামলার শুনানির তারিখ বাদী ও বিবাদীকে মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মামলার সর্বশেষ অবস্থাও ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে। ফেসবুক পেজেও এসি ল্যান্ডের কাছে যেকোনো সমস্যা জানানো যাবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, এটি শাহাদত হোসেনের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এই মডেলটাকে তিনি রাজশাহী বিভাগের সব উপযেলায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে শাহাদত হোসাইন বলেন, বিভাগীয় কমিশনার স্যারের অনুপ্রেরণাতেই তিনি একাজ শুরু করেছেন।
[অসংখ্য ধন্যবাদ উক্ত জেলারকে এবং প্রাণভরা দো‘আ তরুণ এসি ল্যান্ডের জন্য। পরকালীন মুক্তির প্রেরণা নিয়ে যেন তারা এরূপ জনসেবায় উদ্বুদ্ধ হৌন এবং জাতির জন্য আদর্শ হৌন- এই দো‘আ করি (স.স.)]