১৮ই
সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান থেকে দেশে জুয়া ও দুর্নীতি বিরোধী
শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে স্বাগত
জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপকর্মের মাধ্যমে যারা
রাজনীতির নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড়
গড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযানকে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন দেশের
বিশিষ্টজনেরা।
দেশে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সরকারী দলে এবং প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ক্যাসিনোকান্ডে ধরা পড়ছে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া শত শত জুয়াড়ী। জুয়ার বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসছে মদ, নারী, অর্থপাচার সহ হাযারো অনৈতিকতার গল্প। অভিযানে পাকড়াও হচ্ছেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ডাকসাইটে নেতারা।
বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ৩৩ জন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীর তথ্য-প্রমাণ এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। এছাড়া আরো অন্তত ৫৭ জন এমপির তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে যারা বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করেছেন। শীর্ষ সমালোচনায় আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ (রমনা-মতিঝিল-পল্টন) আসনের এমপি রাশেদ খান মেনন (৭৬)। যিনি ঢাকার ফকিরাপুলের ক্যাসিনো চালানো ইয়ংমেন্স ক্লাবের সভাপতি।
ইতিমধ্যে ৫ এমপিসহ মোট ৭১ জনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। এরই মধ্যে তাদের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে যে তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে তার প্রথম ধাপে আছে- গুলশানের স্পা সেন্টারের মালিক অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমূদ ভূঁইয়া, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দানকারী জি কে শামীম, দফতর সম্পাদক কাযী আনীসুর রহমান আনীস, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা ইয়াবা সম্রাট শফীকুল আলম ফিরোয, বিগত ২৫ বছর যাবত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসাইন ভূঁইয়া ও গুলশানের বিতর্কিত ব্যবসায়ী আযীয মোহাম্মদ ভাই সহ ২৩ জন। জানা গেছে, এদের হিসাবে আমানতের স্থিতির পরিমাণ ১ হাযার ২৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে জি কে শামীমের ১৯ ব্যাংকের ১৩২ হিসাবে ৪৫৯ কোটি টাকা।
ইসমাঈল হোসাইন সম্রাটের দেশীয় একাউন্টে উল্লেখযোগ্য অর্থ পাওয়া না গেলেও সিঙ্গাপুর তার ৭০০ কোটি টাকা মূল্যে সম্পদ রয়েছে। যার ভিত্তিতে গোয়েন্দাদের একটি দল বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছে। এছাড়া ক্যাসিনো জুয়া বিরোধী অভিযানের সমালোচক চট্টগ্রামের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামের আবাহনী ক্লাবের জুয়া থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয় করেন বলে প্রকাশ। এছাড়াও রয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসাইন রতন সহ কাউন্সিলর, প্রকৌশলী ও ব্যাংকার সহ বিভিন্ন পেশার অর্ধশতাধিক ব্যক্তির প্রতি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মাদ আফযাল ধরা খেয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’বারে ৭৩ কোটি টাকা স্বেচ্ছায় ফেরৎ দিয়েছেন। এখনও সম্ভবতঃ ৫০০ কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে ধরা পড়তে যাচ্ছেন।
দুদক কমিশনার ড. মোযাম্মেল হক খান বলেছেন, অন্তত ১শ’ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রক্রিয়াধীন। কাজ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এছাড়া তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।