মুসলমানকে সালাম দেওয়া ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু অমুসলিমকে আগে সালাম দেওয়া নিষেধ। একই বৈঠকে মুসলিম ও অমুসলিম সম্মিলিতভাবে থাকলে সালাম কিভাবে দিবে সে বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীছ।-

উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, একবার নবী করীম (ছাঃ) এমন একটি গাধার উপর সওয়ার হ’লেন, যার জিনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাদর ছিল। তিনি উসামা বিন যায়েদকে নিজের পিছনে বসিয়েছিলেন। তখন তিনি হারিছ বিন খাযরাজ গোত্রের সা‘দ বিন উবাদাহর দেখাশোনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মূর্তিপূজক, মুশরিক ও ইহূদী ছিল। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনু সালূলও ছিল। আর এ মজলিসে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা-ও হাযির ছিলেন।

যখন সওয়ারীর পদাঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলাবালি মজলিসকে ঢেকে ফেলছিল, তখন আব্দুল্লাহ বিন উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বলল, তোমরা আমাদের উপর ধূলাবালি উড়ায়ো না। তখন নবী করীম (ছাঃ) তাদের সালাম করলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল বলল, হে আগন্তুক! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যদিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মজলিসে এসব বলে আমাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি  আপনার  নিজ  বাসস্থানে  ফিরে  যান।

এরপর আমাদের মধ্য হ’তে কোন লোক আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের মজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পসন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইহূদীদের মধ্যে পরস্পর গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমনকি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হ’ল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের নিরস্ত করতে লাগলেন। শেষে তিনি তাঁর সাওয়ারীতে উঠে রওয়ানা হ’লেন এবং সা‘দ ইবনু উবাদাহর কাছে পৌঁছলেন। তারপর তিনি বললেন, হে সা‘দ! আবূ হুবাব অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন উবাই কী বলেছে, তা কি তুমি শুননি? সা‘দ (রাঃ) বললেন, সে এমন কথাবার্তা বলেছে।

তিনি আরো বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যেসব নে‘মত দান করার ছিল তা সবই দান করেছেন। অন্যদিকে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজমুকুট পরাবে। আর তার শিরে রাজকীয় পাগড়ী বেঁধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করেছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (দুঃখের আগুনে) জ্বলছে। এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা আপনি নিজেই দেখেছেন। তারপর নবী (ছাঃ) তাকে মাফ করে দিলেন’ (বুখারী হা/৬২৫৪; মুসলিম হা/১৭৯৮)

এই হাদীছে মুসলিম-অমুসলিম একত্রে থাকলে সালাম কিভাবে দিতে হয়, সে পদ্ধতি বাৎলে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে মুনাফিক আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের রাসূলের সাথে বিরোধের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে সাথে শত্রুকে ক্ষমা করে দেওয়ার মহানুভবতা ফুটে উঠেছে। আল্লাহ আমাদেরকে এ হাদীছের প্রতি আমল করার তাওফীক দিন-আমীন!






সন্তানের প্রতি নূহ (আঃ)-এর অন্তিম উপদেশ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আল্লাহর উপর ভরসার প্রতিদান - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
জান্নাত-জাহান্নামের সৃষ্টি ও জাহান্নামের কতিপয় শাস্তি - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি অপবাদের ঘটনা - আত-তাহরীক ডেস্ক
খুৎবাতুল হাজাতের গুরুত্ব ও ব্যক্তির উপরে তার প্রভাব - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
হানযালা (রাঃ)-এর আল্লাহভীতি - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
শয়তান ও জিনদের বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
যু-ক্বারাদ ও খায়বার যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর মু‘জেযা এবং ছাহাবীগণের অতুলনীয় বীরত্ব - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
আসমা বিনতু আবী বকর (রাঃ)-এর সীমাহীন দৃঢ়তা - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
মূসা (আঃ)-এর লজ্জাশীলতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
যুলুম হ’ল অন্ধকার - মুসাম্মাৎ শারমিন আখতার
সর্বাবস্থায় পূণ্যবান স্বামীর অনুগত হওয়াই পূণ্যবতী স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আরও
আরও
.