বাংলাদেশে
দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে বসবাস করছে এক কোটি ৯০ লাখেরও অধিক শিশু। তারা
ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের
হুমকিতে রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ‘ইউনিসেফ’ প্রকাশিত নতুন এক
গবেষণা প্রতিবেদনে এসব ঝুঁকির কথা প্রকাশ করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত
দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো বেশী করে উদ্যোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ
কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সুনির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতায় বদলে যায় আবহাওয়া। মানুষ সৃষ্ট কারণেই এই স্বাভাবিক বদলের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, বিশ্ব বহুদিন থেকে এক আকস্মিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্তি জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উষ্ণায়নের কারণে গলছে হিমবাহের বরফ, উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, স্থানচ্যুত হচ্ছে মানুষ। অভিবাসী কিংবা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে তারা।
জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এক কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে এক কোটি ২০ লাখ শিশু নদী ভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে থাকতে হয় তাদের। তাছাড়া খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় ৩০ লাখ শিশু। এসব ঝুঁকির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষেরা শহরের দিকে ধাবিত হ’তে বাধ্য হচ্ছে। আর সেখানে যাওয়ার পর নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হ’তে হচ্ছে শিশুদের।
বৈশ্বিক আবহাওয়া ঝুঁকি সূচক ২০১৯-এ নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ঐ তালিকা অনুযায়ী, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঐ সময়ের মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।