যে সকল কথা ও কাজের জন্য আকাশের দরজা খোলা হয় না :
সকল উত্তম কথা ও কাজ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় অর্থাৎ কবুল করা হয়। কিন্তু এমন কতিপয় কথা ও কাজ আছে, যার জন্য আকাশের দরজা খোলা হয় না; বরং বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাসূল (ছাঃ) এমন কাজ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। এ জাতীয় কিছু কথা ও কর্ম নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. মুছল্লীদের অপসন্দনীয় ইমামের এবং স্বামীর আহবান প্রত্যাখ্যানকারিণী স্ত্রীর ছালাত :
যদি কোন ইমামকে মুছল্লীবৃন্দ অপসন্দ করেন এবং তিনি যদি তাদের ছালাতের ইমামতি করেন, তাহ’লে ঐ ইমামের ছালাত কবুল করা হয় না। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি অনুমতি ছাড়াই জানাযার ছালাতে ইমামতি করে, তার ছালাত আকাশে উঠানো হয় না। আতা ইবনে দীনার আল-হুযায়লী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
ثَلَاثَةٌ لَا تُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاةٌ، وَلَا تَصْعَدُ إِلَى السَّمَاءِ، وَلَا تُجَاوِزُ رُءُوْسَهُمْ: رَجُلٌ أَمَّ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُوْنَ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤْمَرْ، وَامْرَأَةٌ دَعَاهَا زَوْجُهَا مِنَ اللَّيْلِ فَأَبَتْ عَلَيْهِ.
‘তিন শ্রেণীর লোকের
ছালাত কবুল করা হয় না, আকাশে উত্তোলন করা হয় না এবং (তাদের ছালাত) তাদের
মাথাও অতিক্রম করতে পারে না। (১) যে ব্যক্তি কোন কওমের লোকদের ইমামতি করল,
যারা তাকে অপসন্দ করে। (২) যে ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া কোন জানাযার ছালাতের
ইমামতি করে এবং (৩) ঐ মহিলার ছালাত, রাতের বেলা যাকে তার স্বামী আহবান করে,
কিন্তু সে স্বামীর আহবানকে প্রত্যাখ্যান করে’।[1] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ
فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ-
‘যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে, আর স্ত্রী এমতাবস্থায়
অস্বীকার করে, স্বামী যদি স্বীয় স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রি যাপন
করে, তাহ’লে ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীর প্রতি সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত করতে
থাকেন’।[2]
২. গরীব-মিসকীনকে সাহায্য না করার জন্য যে নেতা ঘরের দরজা বন্ধ রাখে :
যে
সকল নেতা তাদের অধীনস্তদের অভাব-অনটনের প্রতি লক্ষ্য করে না এবং
গরীব-মিসকীনকে সহযোগিতা করার ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে, আল্লাহ তাদের
জন্য আকাশের দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে সেই সমাজ নেতাদের কোন দো‘আ আল্লাহর
কাছে পৌঁছে না। আমর ইবনে মুররাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে
শুনেছি,مَا مِنْ إِمَامٍ يُغْلِقُ بَابَهُ دُوْنَ ذَوِي الحَاجَةِ،
وَالخَلَّةِ، وَالمَسْكَنَةِ إِلَّا أَغْلَقَ اللهُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ
دُونَ خَلَّتِهِ، وَحَاجَتِهِ، وَمَسْكَنَتِهِ- ‘যখন কোন নেতা অভাবী,
গরীব-মিসকীদের জন্য নিজের দরজা বন্ধ করে রাখে, আল্লাহ সেই নেতাদের
দারিদ্র্য, অভাব ও প্রয়োজনের সময় আকাশের দরজা বন্ধ করে রাখেন’।[3] তাছাড়া
প্রজাদের সাথে রূঢ় আচরণকারী নেতার জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বদদো‘আ করেছেন।
তিনি বলেছেন,اللهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِيْ شَيْئًا فَشَقَّ
عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي
شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ. ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার
উম্মতের কোন বিষয়ে নেতৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমিও তার
উপর কঠোর হও। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ে নেতৃত্ব লাভ করে তাদের
প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করে, তুমিও তার উপর কোমলতা প্রদর্শন কর’।[4]
এই হাদীছগুলোতে কঠিন হুঁশিয়ারী রয়েছে সেই সকল নেতাদের জন্য, যারা গরীবের ঘাড়ে পা রেখে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছেন। গরীব-মিসকীনের স্বার্থকে পদদলিত করেছেন। আর রাসূলের আদর্শকে পায়ে দলে পশ্চিমাদের আদলে বস্তাপঁচা সস্তা থিওরী দিয়ে আমাদের সমাজটাকে অগ্নিকুন্ডে পরিণত করেছেন।
৩. রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠহীন দো‘আ :
আল্লাহর
নিকট দো‘আ করার অন্যতম আদব হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করা। যেমন
ওমর ফারূক (রাঃ) বলেছেন,إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوْفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ
وَالأَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ، حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. ‘নিশ্চয়ই দো‘আ আকাশ ও যমীনের মধ্যবর্তী
স্থানে ঝুলন্তথাকে, কোন কিছুই উপরে উঠানো হয় না, যতক্ষণ না নবী (ছাঃ)-এর
উপরে দরূদ পাঠ করা হয়’।[5] একদিন রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববীতে বসেছিলেন। এমন
সময় এক ব্যক্তি মসজিদে এসে ছালাত আদায় করল এবং ছালাত শেষে দো‘আ করে বলল,
‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর’। তখন আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,عَجِلْتَ أَيُّهَا الـمُصَلِّي، إِذَا
صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدِ اللهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، وَصَلِّ
عَلَيَّ ثُمَّ ادْعُهُ- ‘হে ছালাত আদায়কারী! তুমি তো তাড়াহুড়া করলে। যখন
তুমি ছালাত আদায় করে বসবে, তখন শুরুতে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং
আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, তারপর আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে’। রাবী বলেন, ‘এরপর
লোকটি আবার ছালাত আদায় করল। ছালাতের পর আল্লাহর প্রশংসা করল এবং নবীর প্রতি
দরূদ পেশ করল’। এবার রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ
تُجَبْ، وَسَلْ تُعْطَ، ‘হে মুছল্লী! এবার দো‘আ কর, কবুল করা হবে। আল্লাহর
কাছে চাও, দান করা হবে’।[6]
ইমাম নববী (রহঃ)
বলেন, ‘ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, দো‘আ করার শুরুতে
এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব’।[7]
প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর নিকটে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল পেশ করা হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ، فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا، إِلَّا رَجُلًا كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ: أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا، أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا، أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا.
‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা
সমূহ খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, যে আল্লাহর
সাথে কাউকে শরীক করেনি। তবে সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না, যার ভাই ও তার
মাঝে শত্রুতা রয়েছে। তখন বলা হয়, এই দু’জনকে রেখে দাও বা অবকাশ দাও যতক্ষণ
না তারা আপোষে মীমাংসা করে নেয়’।[8] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ أَعْمَالَ
بَنِي آدَمَ تُعْرَضُ كُلَّ خَمِيْسٍ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، فَلَا يُقْبَلُ
عَمَلُ قَاطِعِ رَحِمٍ، ‘প্রত্যেক বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবার রাতের
প্রথম ভাগে আদম সন্তানের আমলগুলো (আল্লাহর কাছে) পেশ করা হয়, কিন্তু
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কোন আমল কবুল করা হয় না’।[9]
আকাশের
দরজা ছাড়া কোন আমল আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে না। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্নকারীর আমল যেহেতু আল্লাহর কাছে পেশ করা হয় না, সেহেতু বোঝা গেল- তাদের
জন্য আকাশের দরজা খোলা হয় না। এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর পরিণাম
হবে জাহান্নাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[10]
অযথা কারো প্রতি অভিশাপ দেওয়া এমন একটি পাপ যার জন্য আকাশের দরজা এবং যমীনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর যার উপর অভিশাপ করা হয়েছে, তিনি যদি এর যোগ্য না হন, তাহ’লে অভিশাপকারীর উপরেই ঐ অভিশাপ প্রত্যাবর্তিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُونَهَا، ثُمَّ تَهْبِطُ إِلَى الْأَرْضِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُوْنَهَا، ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِيْنًا وَشِمَالًا، فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَاغًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِيْ لُعِنَ، فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلًا وَإِلَّا رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا.
‘যখন কোন বান্দা কোন বস্ত্তকে অভিশাপ দেয়, তখন ঐ
অভিশাপ আকাশের দিকে আরোহন করতে থাকে। তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অতঃপর সেই অভিশাপ যমীনের দিকে নামতে থাকে, কিন্তু যমীনের দরজাও তার জন্য
বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার সে ডানে-বামে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর যখন কোন দিকে
যাওয়ার পথ না পায়, তখন যার উপর অভিশাপ করা হয়েছে, সে বস্ত্ত যদি ঐ অভিশাপের
যোগ্য হয়, তাহ’লে তার উপর পতিত হয়, নতুবা অভিশাপকারীর দিকেই তা
প্রত্যাবর্তিত হয়’।[11]
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এক ব্যক্তির চাদর বাতাসে উল্টে গেলে লোকটি বাতাসকে অভিশাপ দিল। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন,لَا تَلْعَنْهَا، فَإِنَّهَا مَأْمُوْرَةٌ، وَإِنَّهُ مَنْ لَعَنَ شَيْئًا لَيْسَ لَهُ بِأَهْلٍ رَجَعَتِ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ، ‘তুমি বাতাসকে লা‘নত করো না, কারণ সে তো আদেশের গোলাম মাত্র। কেউ যদি এমন কোন কিছুকে লা‘নত করে, যার সে যোগ্য নয়, তাহ’লে লা‘নতকারীর উপরেই সেই লা‘নত প্রত্যাবর্তিত হবে’।[12] সুতরাং মানুষ তো দূরের কথা কোন পশু-পাখি, জীব-জন্তু বা কোন জড় বস্ত্তকেও লা‘নত করা থেকে সাবধান থাকা মুমিনের একান্ত কর্তব্য।
অযথা লা‘নতকারীরা দুনিয়াতে নিজেরাই নিজেদের লা‘নতে পতিত হবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তারা দু’টি সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হবে।-
ক. লা‘নতকারীরা ক্বিয়ামতের দিন নবীদের রিসালাতের সাক্ষ্য দিতে পারবে না :
ক্বিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী নবীদের রিসালাতের সাক্ষ্যদাতা হবেন মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর উম্মাতগণ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
يُدْعَى نُوْحٌ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَيَقُوْلُ : لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَبِّ، فَيَقُوْلُ: هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُوْلُ: نَعَمْ، فَيُقَالُ لِأُمَّتِهِ : هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ: مَا أَتَانَا مِنْ نَذِيْرٍ، فَيَقُوْلُ: مَنْ يَّشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُوْلُ : مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ، فَتَشْهَدُوْنَ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ... فَذَلِكَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ : وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوْا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا.
‘ক্বিয়ামতের
দিন নূহ (আঃ)-কে ডাকা হবে। তখন তিনি বলবেন, হে আমার রব! আমি আপনার নিকটে
হাযির। আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন,
হ্যাঁ। এরপর তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞেস করা হবে, তিনি কি তোমাদের কাছে
(আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছে? তারা বলবে, আমাদের কাছে কোন ভীতি
প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য
দিবে কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর উম্মাতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য
দিবে যে, নূহ (আঃ) তাঁর উম্মাতের নিকটে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। আর
এটাই আল্লাহর বাণী, ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাত করেছি,
যাতে তোমরা মানবজাতির সাক্ষী হ’তে পার এবং রাসূল তোমাদের সাক্ষী হন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)।[13]
কিন্তু
সাক্ষ্য দেওয়ার এই মহান সৌভাগ্য থেকে অনর্থক লা‘নতকারীরা বঞ্চিত হবে। আবূ
দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَكُوْنُ اللَّعَّانُوْنَ
شُفَعَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘ক্বিয়ামতের দিন (অনর্থক)
অভিসম্পাতকারীরা সুফারিশকারী হ’তে পরবে না এবং সাক্ষ্যদাতাও হ’তে পরবে না’।[14]
খ. কারো পক্ষে সুফারিশ করতে পারবে না :
ক্বিয়ামতের দিন অনর্থক অভিসম্পাতকারীদেরকে সুফারিশ করার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হবে। তারা তাদের জাহান্নামী ভাইদেরকে চিনতে পেরেও আল্লাহর কাছে সুফারিশ করতে পারবে না। যদিও সেদিন মুমিনগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর তাদের জাহান্নামী ভাইদের জন্য আল্লাহর কাছে সুফারিশ করার সুযোগ লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ بِأَشَدَّ مُنَاشَدَةً لِلَّهِ فِيْ اسْتِقْصَاءِ الْحَقِّ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ لِلَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِيْنَ فِي النَّارِ، يَقُوْلُوْنَ: رَبَّنَا كَانُوْا يَصُوْمُوْنَ مَعَنَا وَيُصَلُّوْنَ وَيَحُجُّوْنَ، فَيُقَالُ لَهُمْ : أَخْرِجُوْا مَنْ عَرَفْتُمْ، فَتُحَرَّمُ صُوَرُهُمْ عَلَى النَّارِ، فَيُخْرِجُوْنَ خَلْقًا كَثِيْرًا قَد أَخَذَتِ النَّارُ إِلَى نِصْفِ سَاقَيْهِ، وَإِلَى رُكْبَتَيْهِ-
‘সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! সে দিন মুমিনগণ
তাদের জাহান্নামী ভাইদের জন্য এত অধিক বিতর্কে লিপ্ত হবে যে, তোমাদের
পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হয় না। তারা বলবে, ‘হে আমার
রব! তারা তো আমাদের সাথেই ছিয়াম পালন করত, ছালাত আদায় করত এবং হজ্জ করত।
তখন তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে, যাও! তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আনো। আর
(তারা জাহান্নামে পতিত হ’লেও) তাদের মুখমন্ডল আগুন থেকে রক্ষিত থাকবে (তাই
তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না)। মুমিনগণ জাহান্নাম হ’তে বিরাট একটি
দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারো পায়ের নলা পর্যন্ত,
আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত আগুন তাদের দেহকে দগ্ধ করে দিয়েছে। আল্লাহ
মুমিনদেরকে আবার বলবেন,ارْجِعُوْا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِيْ قَلْبِهِ
مِثْقَالَ دِيْنَارٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوْهُ، ‘তোমরা আবার যাও! যাদের
অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনো’।
মুমিনরা আরো একটি বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। মহান আল্লাহ
বলবেন,ارْجِعُوْا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالَ نِصْفِ
دِيْنَارٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوْهُ، ‘আবার যাও! যার অন্তরে অর্ধদীনার
পরিমাণ ঈমান পাবে, তাকেও বের করে আনো’। মুমিনরা আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার
করে এনে বলবে, رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيْهَا مِمَّنْ أَمَرْتَنَا أَحَدًا،
‘হে রব! আপনি যাদেরকে উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি’। এবার
আল্লাহ বলবেন,اذْهَبُوا، فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ
دِينَارٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُ، ‘যাও! যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান
পাবে, তাকেও বের করে নিয়ে এসো’। তখন মুমিনরা আবারও একটি বিরাট দলকে
জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে’।[15] কিন্তু পরিতাপের ব্যাপর হ’ল, অযথা লা‘নতকারীরা তাদের ভাইদেরকে চিনতে পারলেও তারা সুফারিশ করার কোন অধিকার পাবে না।[16]
উপসংহার :
আকাশের দরজা একটি গায়েবী বিষয়। মুমিন বান্দারা চর্ম চোখে তা দেখতে না পেলেও তার প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস করেন। সেই দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার সময়গুলো মুমিনের হৃদয়ে প্রেরণা যোগায়। কারণ এই মুহূর্তগুলোতে আল্লাহ বান্দার প্রার্থনা শ্রবণ করেন, তার দো‘আ কবুল করেন এবং তার আমলের নেকীগুলো সাত আসমানের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর কাছে চলে যায়। তাই মুমিন অলসতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহর ইবাদতে রত হয়। আল্লাহ আমাদের হৃদয়সমূহকে তাক্বওয়া ও ইখলাছ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন- আমীন!!
[1]. ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫১৮; ছহীহহুত তারগীব হা/৪৮৫; মিশকাত হা/১১২৮; সনদ ছহীহ।
[2]. বুখারী হা/৩২৩৭; মুসলিম হা/১৭৩২; আবূদাঊদ হা/২১৪১; মিশকাত হা/৩২৪৬;
[3]. আহমাদ হা/১৮০৩৩; তিরমিযী হা/১৩৩২; ছহীহুত তারগীব হা/২২০৮; সনদ ছহীহ।
[4]. আহমাদ হা/২৪৬২২; মুসলিম হা/১৮২৮; ইবনু হিববান হা/৫৫৩।
[5]. তিরমিযী হা/৪৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৭৬; মিশকাত হা/৯৩৮।
[6]. তিরমিযী হা/৩৪৭৬;ইবনু খুযায়মাহ হা/৭০৯; মিশকাত হা/৯৩০; সনদ ছহীহ।
[7]. নববী, আল-আযকার আন-নববীয়্যাহ, ৬০৯ পৃ:।
[8]. আহমাদ ১৯/২৩৮; মুসলিম হা/২৫৬৫; আবূদাউদ হা/৪৯১৬; তিরমিযী হা/২০২৩।
[9]. আহমাদ হা/১০২৭২; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫৯৫; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৩৮;
[10]. বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬; আবূদাঊদ হা/১৬৯৬; তিরমিযী হা/১৯০৯।
[11]. তিরমিযী হা/৪৯০৫; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭২; সনদ হাসান।
[12]. আবূদাউদ হা/৪৯০৮; তিরমিযী হা/১৯৭৮; ছহীহাহ হা/৫২৮।
[13]. বুখারী হা/৪৪৮৭; তিরমিযী হা/২৯৬১; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮৪; মিশকাত হা/৫৫৫৩।
[14]. মুসলিম হা/২৫৯৮; আবূদাঊদ হা/৪৯০৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮৬।
[15]. বুখারী হা/৭৪৩৯; মুসলিম হা/১৮৩; মিশকাত হা/৫৫৭৯।
[16]. মুসলিম হা/২৫৯৮।