‘হজ্জ’ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। এটি
বিশ্ব মুসলিমের বার্ষিক সম্মেলনের প্রতীক। ‘হজ্জ’ অর্থ সংকল্প করা। ‘ওমরাহ’
অর্থও তাই। কিসের সংকল্প? আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ যেয়ারতের সংকল্প।
বায়তুল্লাহ কেন? কারণ এটি আল্লাহর হুকুমে ভূপৃষ্ঠে নির্মিত প্রথম ইবাদত গৃহ
(আলে ইমরান ৩/৯৬)। যা ফেরেশতাগণ বা আদম (আঃ) অথবা তাঁর সন্তানগণের কেউ প্রথম নির্মাণ করেন (ইবনু কাছীর)। এটি পৃথিবীর নাভিস্থল। এটি আল্লাহর গৃহ। তিনি তার বান্দাদের এ গৃহ প্রদক্ষিণের আদেশ দিয়েছেন (হজ্জ ২২/২৯)।
সূর্য-চন্দ্র-পৃথিবী সহ সবকিছু বাম থেকে ডাইনে আবর্তিত হয়। যদিও ঘড়ির কাটা
ডাইন থেকে বামে আবর্তিত হয় সম্ভবতঃ ইংরেজী লিখন পদ্ধতির অনুসরণে।
ত্বাওয়াফের সময় পুরা প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে আমরা কা‘বাকে বামে রেখে ডাইনে
প্রদক্ষিণ করি এবং সকলের সাথে আমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করি। ভূ-কেন্দ্রে
অবস্থিত হওয়ায় সারা পৃথিবীর সময় নির্ধারণের মূল কেন্দ্র এটাই। তাই
বর্তমানের গ্রীনিচ মান পরিবর্তিত হয়ে বিজ্ঞানের দাবী অনুযায়ী বায়তুল্লাহ
একদিন মানবজাতির সময় কেন্দ্র হবে ইনশাআল্লাহ।
মুমিন ছুটে চলে কা‘বার পানে। সে ইবাদত করে কা‘বার দিকে ফিরে। তার হৃদয় ঝুলন্ত থাকে কা‘বার সাথে। কিন্তু কেন? এটাতো শিকড়ের টান! সৃষ্টির সূচনায় এখানে আরাফা ময়দানে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল আদম সন্তানকে জমা করে আল্লাহ ওয়াদা নিয়েছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? আমরা বলেছিলাম হ্যাঁ’ (আ‘রাফ ৭/১৭২; আহমাদ হা/২৪৫৫; মিশকাত হা/১২১)। আর সেজন্যেই আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাকে হজ্জ বলা হয়েছে। নইলে হজ্জই হবে না। এতে পিছনের কথাই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। যেন সে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করে। বায়তুল্লাহর আশপাশের স্থানগুলি আল্লাহর বড় বড় নিদর্শনে ভরপুর। এখানেই আরাফাতের ময়দানে আমাদের আদি পিতা ও আদি মাতার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী মাটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি মূসাকে দেখতে পাচ্ছি দু’কানে আঙ্গুল দিয়ে জোরে জোরে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে চলে যাচ্ছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি ইউনুস তার লাল উটে চড়ে তালবিয়া পাঠ করতে করতে এই উপত্যকা অতিক্রম করছেন’ (মুসলিম হা/১৬৬)।
এই বায়তুল্লাহ কেবলমাত্র আব্দুল্লাহদের ক্বিবলা। যারা নিরংকুশভাবে কেবল এক আল্লাহর দাসত্ব করে ও এক নবীর আনুগত্য করে। এখানে মুশরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ (তওবা ৯/২৮)। যে ব্যক্তি এখানে নাস্তিক্যবাদী কর্মকান্ডের এরাদা করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন’ (হজ্জ ২২/২৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মের ৫০ বা ৫৫ দিন পূর্বে ইয়ামনের খৃষ্টান গবর্ণর আবরাহা ৬০ হাযার সেনাদল নিয়ে কা‘বা ধ্বংস করতে এসেছিল। কিন্তু আল্লাহ পক্ষীকুল পাঠিয়ে তাদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেন। আবরাহার প্রধান হস্তী ‘মাহমূদ’ মুযদালিফার অনতিদূরে ‘মুহাসসির’ উপত্যকায় অক্ষম হয়ে বসে পড়ে। তার পথপ্রদর্শক ত্বায়েফের ছাক্বীফ গোত্রের আবু রিগাল মক্কার নিকটবর্তী ‘মুগাম্মিস’ নামক স্থানে পৌঁছে মৃত্যুবরণ করে। এভাবে আল্লাহর অদৃশ্য বাধায় বায়তুল্লাহ নিরাপদ থাকে। সেকারণ এই গৃহকে আল্লাহ ‘মুক্ত গৃহ’ বলেছেন (হজ্জ ২২/২৯)। অর্থাৎ কাফের-মুনাফিকদের অধিকার হ’তে এই গৃহ সর্বদা মুক্ত থাকবে।
হজ্জ ঐক্যবদ্ধভাবে তাওহীদ ঘোষণার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। সকলে একই পোষাকে এবং একই ভাষায় ও বাক্যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সরবে বলে, লাববাইকাল্লা-হুম্মা লাববায়েক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকা লাক’ (মুসলিম হা/২১৩৭)। ‘আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও রাজত্ব সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’। অথচ জাহেলী আরবের মুশরিকরা বলত, লাববাইকা লা শারীকা লাক, ইল্লা শারীকান হুয়া লাক; তামলিকুহু ওয়া মা মালাক’ (আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, কেবল ঐ শরীক ব্যতীত যা তোমার জন্য রয়েছে। তুমি যার মালিক এবং সে যা কিছুর মালিক’ (মুসলিম হা/১১৮৫)। তারা কা‘বার তত্ত্বাবধায়ক হবার অহংকারে ‘হারাম’ এলাকার মধ্যে মুযদালিফায় হজ্জের উদ্দেশ্যে সমবেত হ’ত। কিন্তু হারামের বাইরে হওয়ায় আরাফাতের ময়দানে যেত না। ইসলাম তাদের এই অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছে এবং সকলকে আরাফাতের ময়দানে জমা হ’তে, অতঃপর সেখান থেকে মক্কায় ফিরে আসতে নির্দেশ দিয়েছে। তারা আরাফাত থেকে মুযদালিফা যেত সন্ধ্যার পূর্বে। ইসলাম সবাইকে মাগরিবের পরে যেতে বাধ্য করেছে। তারা মুযদালিফা থেকে মিনায় যেত সূর্যোদয়ের পর। ইসলাম তাদেরকে সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা হবার আদেশ দিয়েছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে সূদী কারবার সহ জাহেলী যুগের সকল কুপ্রথা নিষিদ্ধ করে শেষনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘোষণা করেন, তোমরা শুনে রাখ! জাহেলী যুগের সকল রীতি আমার দু’পায়ের তলে নিক্ষিপ্ত হ’ল (মুসলিম হা/৩০০৯)। সেকারণ হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, শরী‘আত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বিশেষ করে হজ্জের ব্যাপারে মুশরিকদের বিরোধিতার উদ্দেশ্য নিয়ে’ (তাহযীবুস সুনান ১/১৯৯)।
হজ্জ মুসলমানকে মাটির মানুষে পরিণত করে। সবাই ইহরামের দু’চিলতে সেলাই বিহীন সাদা পোষাক পরে আল্লাহর ঘরে সমবেত হয়। হাইরাইজ বিল্ডিং ও বস্তি ঘরের অধিবাসী একাকার হয়ে সবাইকে দিনের বেলায় আরাফাতের শূন্য ময়দানে অবস্থান করতে হয় এবং রাতের বেলায় মুযদালিফা পাহাড়ের পাদদেশে শয্যাহীন কংকর ভূমিতে কাফন পরিহিতের ন্যায় ঘুমাতে হয়।
হজ্জ মুমিনকে আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। তাকে মীক্বাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসতে হয়। আগে-পিছে করার অনুমতি নেই। বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করে এলে তাকে ফিদইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হয়। মক্কায় এসেই তাকে বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ করতে হয়। বায়তুল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে তওয়াফের অনুমতি নেই। অতঃপর হজ্জের জন্য তাকে আরাফা ময়দানে ৯ই যিলহাজ্জ তারিখে অবস্থান করতে হয়। অন্য কোন তারিখে অবস্থান করলে হজ্জ হবে না। মিনায় কংকর কেবল জামরাতেই মারতে হবে, অন্যত্র নয়। কুরবানী কেবল মিনা ও হারাম এলাকার মধ্যে করতে হবে, বাইরে নয়। কুরবানীর পরে মাথা মুন্ডন করতে হয় অথবা সমস্ত চুল ছাটতে হয়। এভাবে হজ্জ তার প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় মানুষের দম্ভ চূর্ণ করার ও আল্লাহর বিধান সমূহের প্রতি আত্মসমর্পণের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘(হজ্জের) বিধান সমূহ পালন করা ছাড়াও যে ব্যক্তি আল্লাহকৃত হারাম সমূহকে সম্মান করবে (অর্থাৎ পাপ সমূহ হ’তে বিরত থাকবে), সেটি তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য উত্তম হবে’ (হজ্জ ২২/৩০)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ইবাদতের রূহ হ’ল আল্লাহর বিধান সমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা’ (মাদারেজুস সালেকীন ২/৪৬৪)। হজ্জ মুমিন হৃদয়ে সেটারই উজ্জীবন ঘটায়। আর সেকারণেই প্রায় দেড়-দু’ মাস একত্রে অবস্থান করা সত্ত্বেও বিশ-পঁচিশ লাখ মানুষের এই মহা সম্মেলনে কোন অনৈতিক বা অমানবিক ঘটনার কথা শোনা যায় না। অথচ পৃথিবীর নামকরা সব গীর্জায় ও মন্দিরে নোংরা ঘটনা সমূহের খবর প্রকাশিত হচ্ছে অহরহ।
কা‘বাগৃহ যেমন দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত আল্লাহর প্রথম ইবাদত গৃহ, তেমনি এটি সপ্তম আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতগৃহ বায়তুল মা‘মূর বরাবরে নির্মিত। যেখানে দৈনিক ৭০ হাযার ফেরেশতা ইবাদতের জন্য প্রবেশ করে। কিন্তু ভিড়ের কারণে তারা পুনরায় প্রবেশের সুযোগ পায় না। কা‘বাগৃহে তেমনি প্রতিদিন হাযার হাযার মুমিন ত্বাওয়াফ করেন। যা বলতে গেলে কখনোই খালি থাকে না। আর এই গৃহের নিকটেই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্মগ্রহণ করেছেন এবং মানবজাতির মধ্যে কেবলমাত্র তিনিই আল্লাহর অনুগ্রহে ভূমন্ডল ও নভোমন্ডল পেরিয়ে মি‘রাজে গিয়ে সরাসরি আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হয়েছেন। যেখানে আল্লাহ তার উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেন।
ইহরামের পোষাকে কা‘বাগৃহ ত্বাওয়াফকালে ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে কাফন পরিহিত মাইয়েতের দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর নিকট গমনের করুণ অনুভূতি। সৃষ্টি হয় সৃষ্টির সূচনাকালে আরাফাতের এই পুণ্যভূমিতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিকট তার দাসত্ব করার প্রতিশ্রুতি দানের অনুভূতি, সৃষ্টি হয় দুনিয়ার এই শ্রেষ্ঠ মাটিতে অবস্থানের মহা সৌভাগ্যের অনুভূতি এবং সেখানে আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়ার প্রথম দুনিয়াবী সাক্ষাতের অনুভূতি। অতঃপর মুযদালিফায় গিয়ে সৃষ্টি হয় কা‘বার দুশমন আবরাহার হস্তী ও বিশাল সেনাবাহিনীর ধ্বংসকর পরিণতির অনুভূতি; সেখান থেকে মিনায় ফিরে গিয়ে স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে পিতা ইব্রাহীমের পাথর ছুঁড়ে মারার সাহসী অনুভূতি; অতঃপর কুরবানীর সময় ভেসে ওঠে ইবরাহীম ও ইসমাঈলের অতুলনীয় কুরবানীর নিঃশ্বাস বন্ধকারী অনুভূতি। অতঃপর সেখান থেকে মক্কায় গিয়ে ত্বাওয়াফে ইফাযাহর সময় হজ্জ পূর্ণ হওয়ার আনন্দে ও বিদায়ের বেদনার অশ্রুভরা মিশ্র অনুভূতি। হজ্জের গুরুত্ব এত বেশী যে, যারা হজ্জে আসেননি বা আসতে পারেননি, তারা যদি এদিন আরাফার ছিয়াম রাখেন, তাহ’লে তাদের বিগত ও আগত মোট দু’বছরের সকল ছগীরা গোনাহ মাফ করা হয় (মুসলিম হা/১১৬২)। নিজেদের মহা সৌভাগ্যবান মনে হয় এজন্য যে, ঈমানের অমূল্য সম্পদের অধিকারী হওয়ার কারণেই আজ আমরা পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ ভূমি যিয়ারতের সুযোগ পেয়েছি। দুঃখ হয় তাদের জন্য, যারা ঈমানী সম্পদ থেকে মাহরূম হয়েছে এবং এখানে আসার সুযোগ থেকে চির বঞ্চিত হয়েছে।
হজ্জ মুমিনকে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল জীবনের প্রশিক্ষণ দেয়। মক্কার নির্জনভূমিতে দুগ্ধপোষ্য ইসমাঈল ও তার মা হাজেরাকে ফেলে আসার সময় অসহায় স্ত্রী যখন বুঝলেন যে, এটি আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে, তখন তিনি বলেছিলেন, তাহ’লে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না’। অতঃপর তিনি পানির জন্য মানুষের সন্ধানে ছাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ে সাত বার ওঠানামা করেন। হঠাৎ নীচে দেখতে পান মাটির বুক চিরে পানি বের হচ্ছে এবং গায়েবী আওয়ায পান, ‘ধ্বংস হওয়ার ভয় করবেন না। এখানেই বায়তুল্লাহ। যা নির্মাণ করবেন এই সন্তান ও তার পিতা। আর আল্লাহ কখনো তার বাসিন্দাদের ধ্বংস করবেন না’ (বুখারী হা/৩৩৬৪)। এই পানিই হ’ল ‘যমযম’ কুয়া। যা থেকে বিগত প্রায় সাড়ে চার হাযার বছর যাবৎ মানুষ পান করছে, কিন্তু কখনোই তার পরিমাণ কমেনি এবং তা নষ্ট হয়নি। ‘যা ভূ-পৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। যার মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য ও আরোগ্য’ (ছহীহাহ হা/১০৫৬)। এভাবেই আল্লাহ তাঁর উপরে নির্ভরশীল বান্দাদের বাঁচার পথ খুলে দেন। ছাফা-মারওয়া সাঈ করার সময় হৃদয়ে যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীলতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তবেই সাঈ সার্থক হবে।
বায়তুল্লাহ, মিনা-আরাফা-মুযদালিফা, জামরা প্রভৃতি দো‘আ কবুলের স্থান সমূহে বহু বান্দা অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করে। তাতে সে শুচিশুদ্ধ হয়ে নতুন জীবন লাভ করে। সে আল্লাহর এসব অনন্য নিদর্শনকে হৃদয়ের গভীর থেকে শ্রদ্ধা করে। ফলে সে আল্লাহর অতি নৈকট্যে পৌঁছে যায়। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির বহিঃপ্রকাশ’ (হজ্জ ২২/৩২)।
আরাফাতের ময়দানে লক্ষ লক্ষ মুমিন একত্রিত হয়ে ইহরামের সাদা পোষাকে দু’হাত তুলে আল্লাহকে কাতর কণ্ঠে ডাকে ও তাঁর কাছেই সবকিছু নিবেদন করে। এ সময় আল্লাহ নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়? (মুসলিম হা/১৩৪৮)। ‘ওরা এসেছে আমার কাছে জীর্ণ-শীর্ণ বেশে বহু দূর-দূরান্ত হ’তে। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি ওদের সবাইকে মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলে, হে আল্লাহ! অমুক পুরুষ ও নারী অমুক অমুক পাপ করেছে। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি ওদের ক্ষমা করে দিলাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আরাফার দিনের ন্যায় এত অধিক সংখ্যক মুমিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায় না’ (শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/২৬০১; ছহীহ আত-তারগীব হা/১১৫৪-৫৫)। এজন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দো‘আ (তিরমিযী হা/৩৫৮৫)। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবনে হজ্জ ও ওমরা করার তাওফীক দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন!- আমীন! (স.স.)।